সহজ-সরল উত্তর—হ্যাঁ, বাড়ানো যায়। একটি স্বাভাবিক মানুষ চাইলেই তার ‘আই কিউ’ বাড়াতে পারে।
‘আই কিউ’ আর ‘মেধা’ দু’টোকে আমরা অনেকেই
সমার্থক শব্দ ভেবে নিই। ভুলটা এখানেই।
‘আই কিউ’ আসলে মেধা-বুদ্ধির
পরিমাপক নয়।
কোনও দিন ছিলও না। ‘আই কিউ’ মাপাতে সন্তানকে নিয়ে যাঁরা দৌড়োন কোনও মনোবিদের কাছে, তাঁদেরও ‘আই কিউ’ নিয়ে ধারণাটা ধোঁয়াশায় ভরা।
I.Q.’ শব্দের পুরো কথাটা হল “Intellignece Qudient’। বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘বুদ্ধির ভাগফল’।
ফরাসি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড’ বিনেট এই ‘I. Q. পদ্ধতির জনক! ফ্রান্সের একটা স্কুলের ছাত্রদের পাশ করার হার কমে যাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বিনেটের সাহায্য চাইলেন। সময়টা ১৯০৪-০৫ সাল। বিনেট বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রদের জন্য প্রশ্নাবলী তৈরি করেছিলেন। এক একটা ক্লাশের ছাত্রদের জন্য এক এক ধরনের গড় বয়েস ধরা হতো। যেমন—ক্লাশ ওয়ান সাত ; ক্লাশ টু আট, ক্লাস থ্রি নয় ইত্যাদি। উত্তরদাতা যে বয়সের, সেই বয়সের জন্য নির্ধারিত সঠিক উত্তর দিলে উত্তরদাতার মানসিক বয়স (mental age) ও প্রকৃত বয়স (chronological age ) সমান বলে ধরে নিয়ে তাকে দেওয়া হতো ১০০ নম্বর। অর্থাৎ দশ বছরের কোনও বালক দশ বছরের জন্য নির্দিষ্ট সমস্ত প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারলে তাকে দেওয়া হবে ১০০। এর অর্থ দশ বছর বয়সে সাধারণ মানের ছেলেমেয়েদের যে ধরনের বুদ্ধি থাকা উচিত, তা আছে। ১০ বছরের বালকটি ২০ বছর বয়সের জন্য নির্দিষ্ট প্রশ্নের সবগুলোর ঠিক উত্তর দিতে পারলে তার প্রাপ্য বুদ্ধি পরিমাপক সংখ্যাটি বার করতে হলে যে বয়সের উপযোগী প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, সেই মানসিক বয়সের সংখ্যাটিকে উত্তরদাতার প্রকৃত বয়সের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে ১০০ দিয়ে গুণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বালকটির বুদ্ধি পরিমাপক সংখ্যাটি হবে (২০/১০)X১০০ = ২০০। আবার দশ বছরের বালকটি যদি কেবল মাত্র ৫ বছরের একটি শিশুর বয়সের উপযোগী প্রশ্নগুচ্ছের উত্তর দিতে সক্ষম হয়, তবে তার মানসিক বয়স ধরা হবে ৫। অতএব বালকটির বুদ্ধি পরিমাপক সংখ্যাটি হবে (৫/১০)× ১০০= ৫০ মানসিক বয়স ভাগ প্রকৃত বয়স X ১০০ করলে বেরিয়ে আসবে বুদ্ধি পরিমাপক সংখ্যাটি।
বিশ শতকের প্রথম দশকে আলফ্রেড বিনেট যে বুদ্ধি পরিমাপক প্রশ্নাবলী তত্ত্ব হাজির করেছিলেন, বিভিন্ন সময়ে তার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের নামে বিকৃতকরণের পর আমরা পেলাম বর্তমান ‘আই কিউ’-এর রূপ। ব্রিটেন ও আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষীরা আই কিউকে সামাজিক শ্রেণী ও জাতি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ শুরু করলো। অর্থাৎ, যে বিনেট আই কিউ প্রয়োগ করা শুরু করেছিলেন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তাই প্রযুক্ত হতে লাগলো সমষ্টির ক্ষেত্রে। বিকৃতকারীরা এই প্রয়োগের দ্বারা তথ্যসংগ্রহের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইলো, সাদা চামড়াদের আই-কিউ কালো চামড়াদের চেয়ে অনেক বেশি ; আই কিউ মেধা বা বুদ্ধির পরিমাপক এবং মেধা বা বুদ্ধি অপরিবর্তনশীল। অর্থাৎ জন্মগতভাবে সাদা চামড়াদের মেধা ও বুদ্ধি কালো চামড়াদের তুলনায় অনেক উন্নত—এই ছিল তাঁদের বক্তব্য।
আই কিউ-এর প্রয়োগ সামাজিক শ্রেণী, বর্ণ বা জাতি গোষ্ঠীর উপর প্রয়োগ না করে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেই আই কিউ প্রশ্নাবলী নির্ভরযোগ্যতা পাবে, এমনটা ভাবারও কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। কারণ প্রয়োজনীয় বা উপযুক্ত অনুশীলনে আই কিউ বাড়ানো সম্ভব, এমনকি স্মৃতিকেও বাড়ানো সম্ভব। প্রতিভা সম্পূর্ণ অন্য জিনিস, যা আই কিউ-এর প্রাপ্ত সংখ্যা বা পরীক্ষা সাফল্যের ওপর সব সময় নির্ভর করে না। বহু ক্ষেত্রেই আই কিউ-এর সাহায্যে জিনিয়াস দূরে থাক, বুদ্ধি বৃত্তির কোনও হদিশ মেলে না। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সংখ্যার ‘নিউ সাইনটিস্ট’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। লেখক একজেটার (Exeter) বিশ্ববিদ্যালয়ের Human cognition বিভাগের অধ্যাপক এম হাও (M. Howe) সত্তর জন বিরল সংগীত প্রতিভার জীবন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন।
জিনিয়াস তৈরি হয়, জন্মায় না
(Geniuses may be made rather than born)
আমরা আই কিউ পরীক্ষার সাফল্য নিয়ে বিচারে বসলে আইনস্টাইন, ডারউইন, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, সমরেশ বসু প্রমুখ বহু প্রতিভাধরদের ক্ষেত্রে একেবারে বোকা বনে যেতাম।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ