দীপক রাওয়ের খবরটা প্রথম পাই মে ২০০১-এ। দীপক রাওয়ের নাকি অসাধারণ অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তাও আবার এক রকম নয়। দু’রকম। একঃ জড় পদার্থের উপর মানসিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন। দুইঃ ‘টেলিপ্যাথি’ করার ও ধরার ক্ষমতা আছে। “এ সবই দীপকের ফাঁকা দাবি”—এমন বলে এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া মুশকিল। কারণ দীপক ইতিমধ্যেই তাঁর শক্তির প্রমাণ দিয়েছেন। তাও আবার যে সে জায়গায় নয়। আই আই টি বোম্বাই (মুম্বাই নয় )

ও আই আই টি খড়্গপুরে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন-গবেষণার ক্রিম দুটি জায়গায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন অধ্যাপক, ছাত্র ও কর্মীরা। চোখের সামনে যা দেখেছেন, তাতে তাঁরা অভিভূত হয়েছেন, আপ্লুত হয়েছেন। দরাজ মনে উল্লসিত প্রশংসা করছেন।

কী কী অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন—পরে আসছি। তার আগে বরং দীপক-এ আসি। দীপক মুম্বাইবাসী। অত্যন্ত স্মার্ট, ফর্সা, টিপটপ। দীপকের নিজস্ব একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা আছে। দীপকের কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী। ছোটো-খাটো, ফর্সা, সুন্দরী।

দীপকের স্পষ্ট দাবি, তিনি যা দেখান, তা কোনও ‘জাদু কা খেল’ নয়। নির্ভেজাল অলৌকিক ক্ষমতার প্রয়োগ। ই.এস.পি বা অতীন্দ্রিয় অনুভূতির অস্তিত্ব যে সত্যিই আছে— এটা প্রমাণ করার ঠিক জায়গা মনে করেই তাঁর আই আই টি পরিভ্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ। কিছু পেশাদার অবিশ্বাসীরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান ই.এস.পি-র (Extra-sensory perception) মতো বিষয়কে৷ এইসব পেশাদার অবিশ্বাসীরা আবার নিজেদের পরিচয় দেন ‘যুক্তিবাদী’ বলে। কিন্তু মজার কথা হল সাইকোলজির-ই একটি শাখা প্যারাসাইকোলজির চর্চার বিষয়ই হল ই.এস.পি। এমন কথা শুধু যে দীপক রাও বলেন, তা কিন্তু নয়।

সম্প্রতি দুরদর্শন কলকাতা কেন্দ্রের ‘যুক্তি-তক্কো’ অনুষ্ঠানে ‘ভূত আছে কী না নেই” এই বিতর্কে জনৈকা নীলাঞ্জনা সান্যাল চিবিয়ে চিবিয়ে গুছিয়ে-গাছিয়ে আমাদের শোনালেন সাইকোলজির একটা শাখা প্যারাসাইকোলজি। যেখানে ই এস পি নিয়ে গবেষণা চলছে। ভূতের অস্তিত্বকে তাঁরা অস্বীকার করতে পারছেন না। অবাক কাণ্ড—এখন সব অদ্ভুতুড়ে বিজ্ঞান বিরোধী কথা বলার পরও তিনি বিজ্ঞানের পক্ষে আলোচক হিসেবে বার-বার ডাক পান। জানি না এর পিছনে দূরদর্শনের বোধের অভাব কাজ করে, না কী দুর্নীতি ?

অন্ধ বিশ্বাসী না হলে এবং সাইকোলজি ও মনস্তত্ত্ব বিষয়ে জ্ঞান থাকলে স্বীকার করতেই হবে যে—প্যারাসাইকোলজি না সাইকোলজির শাখা, না বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনও ভাবে সম্পর্কিত। বরং এটা বললে ঠিক হয় যে— প্যারাসাইকোলজির তত্ত্বগুলো স্পষ্টতই বিজ্ঞান-বিরোধী। ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান’ বিজ্ঞানের শাখা, আর ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ বিজ্ঞান-বিরোধী। দু’য়ের মধ্যে উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত মিল আছে। এই উচ্চারণগত মিলকেই প্রতারকরা ভাঙিয়ে খাচ্ছে। ‘সাইকোলজি’ আর ‘প্যারাসাইকোলজি’র মিল-অমিলটাও একই ধরনের। তারপরও কিছু অবোধ বিজ্ঞানের শিক্ষক শিক্ষিকা জ্যোতিষ ও প্যারাসাইকোলজির পক্ষে ওকালতি করেন। তা করুন। তাতে বিজ্ঞানের ‘সত্য’-কে ‘মিথ্যে’ করা যাবে না।

প্যারাসাইকোলজির অন্যতম মূল তত্ত্ব হল, Extra-sensory perception (সংক্ষেপে E.S.P.)-এর অস্তিত্ব, অর্থাৎ অতীন্দ্রিয় অনুভূতির অস্তিত্ব আছে। E.S.P -কে সাধারণভাবে চারটিভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। (১) Telepathy (দূরচিন্তা) (২) Precognition (ভবিষ্যৎ দৃষ্টি) (৩) Clairvoyance (অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি) (8) Psycho – Kinesis বা Pk ( জড় পদার্থের উপর মানসিক শক্তি প্রয়োগ)।

দীপক রাও সাইকো-কাইনেসিস ও টেলিপ্যাথির অস্তিত্ব প্রমাণ করেছিলেন। ঠিক কী কী ঘটিয়েছিলেন, আমি দেখিনি। তবে শুনেছি। আই আই টি খড়্গপুরের কম্পিউটর সাইন্স-এর ছাত্র বিকাশ-এর কাছে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। বিকাশ আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য। তবে ওর বর্ণনাতে কিছু ফাঁক ছিল। অভিজ্ঞতার অভাবে এই ফাঁক। এও ঠিক— অভিজ্ঞতা নিয়ে কেউ জন্মায় না। অলৌকিক বিষয়ে সত্যানুন্ধানের ক্ষেত্রে বিকাশের বিশালভাবে বিকাশ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে—আমার বোধ এ’কথাই বলে।

দীপক জিজ্ঞেস করলেন, কারও সঙ্গে কি চাবি আছে? একাধিক হাত চাবির গোছা বের করে দিলেন। “দরকার শুধু একটি চাবির।” দীপক বললেন। তারপর একজন স্টাফের হাত থেকে নিলেন বড়ো-সড় একটা চাবির গোছা। গোছা থেকে একটা লোহার চাবি খুলে হাতে তালুতে রাখলেন। তালুটা মুঠোবন্দি করলেন। মুঠো খুলতেই অবাক কাণ্ড! চাবিটা বেকে গেছে। মিস্টার ইউনিভার্সের পক্ষে যা অসম্ভব, তাই সম্ভব করলেন মিস্টার রাও।

বিকাশের কাছ থেকে ঘটনার যে বর্ণনা পেয়েছি, তাতে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না, কী কৌশলের সাহায্যে দীপক রাও চাবি বাঁকিয়েছেন। তবে সম্ভাব্য একাধিক কৌশল এখানে তুলে ধরছি, যার সাহায্যে চাবি বাঁকানো যায়। সেইসঙ্গে এটুকু নিশ্চিত করছি যে, শ্রীরাও কোনও অলৌকিক ক্ষমতার সাহায্যে চাবি বাঁকাননি। কারণ অতীন্দ্রিয় শক্তি, অলৌকিক ঘটনা অর্থাৎ কার্য-কারণহীন ঘটনার অস্তিত্ব সম্ভব নয় ।

এই বিষয়ে ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় ২৮ মে ২০০১ এই লেখকের সাপ্তাহিক কলম ‘দ্য সার্কেল অফ রিজন’-এ খোলা চ্যালেঞ্জ রাখি মিস্টার রাও-এর সামনে। শ্রীরাও- এর ই-মেলে পৌঁছে দেওয়া হয় সেই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চতুর বুজরুকের মতোই শ্রীরাও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে হারার চেয়ে চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন। অতএব চুপ মেরে ডুব দিয়েছেন।

চাবি বাঁকানোর সম্ভাব্য কৌশল তুলে ধরছি।

◊ কৌশল একঃ ধরুন, আমি চাবি বাঁকনোর খেলায় নেমেছি। আমি এমন একজনের কাছ থেকে চাবির গোছা নেবো, যার সঙ্গে আগে থাকতেই একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছি। নতুন জায়গায় গিয়ে ‘নিজের লোক’ তৈরি করে নেন যে কোনও পেশাদার জাদুকর। এইসব ‘নিজের লোক’ অনেক সময় না জেনেই জাদুকরকে অসাধারণ জাদু সৃষ্টিতে সাহায্য করেন। অনেক সময় জেনে-বুঝে।

চাবি রিং তাঁরয়ার পথকেই এবার যার যার বই কটা সুন্দর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পেরেছি। তিনি চাবির গোছা এনে তার ভিতর থাকবে আমারই দেওয়া একটা সীসার তৈরি চাবি। অথবা তিনিই গোছা থেকে সীসার তৈরি চাবিটাই আমার হাতে তুলে দিতে পারেন। বিখ্যাত ও শ্রদ্ধেয় থেকে নিজের সহযোগী হিসেবে কাজে লাগানো কোনও অসম্ভব ব্যাপার নয় । অনেক জাদুকর-ই আচার এই ধরনের বিশিষ্টদের সাহায্য নিয়ে থাকেন

সীসার চাবি হাতের মুঠোর চাপে বাঁকিয়ে ফেলা কোনও ব্যাপারই নয়। কারণ সীসা নরম ধাতু অথচ দেখতে লোহার মতো।

◊ কৌশল দুইঃ আগে থেকেই এমন একজনের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলব, যাঁর কাছে কোনও একটা ডিপার্টমেন্টের চাবির গোছা থাকে। চাবির গোছায় অবশ্যই থাকতে হবে অন্তত একটি লোহার চাবি। কোনওভাবে তাঁর চাবির গোছা থেকে কোনও একটা লোহার চাবির ছাঁচ নরম সাবানে চাপ দিয়ে তুলে নেব। যেহেতু চাবি বাঁকানো আমার পেশা, তাই ছাঁচ পেলে সীসা গরম করে ছাঁচে ঢেলে নকল বানিয়ে ফেলব। তারপর ওই বিশেষ মানুষটিকেই মঞ্চে ডেকে নেব, যার চাবির নকল আছে আমার কাছে। রিং থেকে আসল চাবিটি খুলব। হাতের কৌশলে আসলটি লুকোব, নকলটি বের করব। হাত সাফাইয়ের এই কৌশলকে ম্যাজিকের পরিভাষায় বলে ‘পামিং’। নকলটি দেখিয়ে মুঠোবন্দি করা ও বেঁকিয়ে দেওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। কতটা সময় আগডুম-বাগডুম বকে দর্শকদের বেশি করে প্রভাবিত করব— সেটা আমার ব্যাপার। সেটা দীপক রাওয়ের ব্যাপার।

 

দীপক রাও ও শ্রীমতী রাওয়ের টেলিপ্যাথি

শ্রী ও শ্রীমতী রাও আই আই টি ক্যাম্পাসে যে টেলিপ্যাথি করে দেখিয়েছিলেন, তা দেখার সুযোগ আমার হয়নি। আমি শুনেছি। এও শুনেছি—শ্রী ও শ্রীমতী রাওয়ের প্রোগ্রামের ভিডিও ফোটো তোলা হয়েছিল। তুলেছিল আই আই টি কর্তৃপক্ষ। শ্রীরাও যাওয়ার সময় ভিডিও ক্যাসেটটা নিয়ে যান। বলেন—কপি করে পাঠিয়ে দেবেন। আজ পর্যন্ত পাঠাননি। সম্ভবত বার-বার ক্যাসেটটি দেখে আই আই টি’র কেউ শ্রীরাওয়ের আসল রহস্য ধরে ফেলতে পারেন, এই ভয়ে ক্যাসেট পাঠাননি ।

স্টেজে ছিলেন শ্রীমতী রাও। মুখ দর্শকদের দিকে ফেরানো। চোখ বাঁধা। এক হাতে রাইটিং প্যাড, অন্য হাতে পেনসিল।

দর্শকদের মধ্যে একজনকে এগিয়ে আসতে বললেন শ্রীরাও। একজন এলেন। তাঁর হাতে এক টুকরো কাগজ দিয়ে বললেন, ১ থেকে ৯৯-এর মধ্যে যে কোনো সংখ্যা কাগজটায় লিখুন। দেখবেন, আর কেউ যেন না দেখেন।

এগিয়ে আসা দর্শকটি সংখ্যা লিখলেন। শ্রীরাওয়ের নির্দেশ মত কাগজটা ভাঁজ করলেন। টেবিলের ওপর রাখলেন। টেবিলটা ছিল স্টেজের এক কোণে ।

শ্রীরাও এবার অনুরোধ করলেন, আপনি যে সংখ্যাটা লিখেছেন, সেটা ভাবতে থাকুন। আমি আপনার চিন্তার তরঙ্গ ধরার চেষ্টা করব। আমার চিন্তার তরঙ্গ ধরার চেষ্টা করবেন আমার স্ত্রী। আলো এবং শব্দের যেমন তরঙ্গ আছে, তেমন-ই চিন্তারও তরঙ্গ আছে। এই চিন্তা তরঙ্গকে ধরার নামই ‘টেলিপ্যাথি’। আপনারা এখন দেখবেন টেলিপ্যাথির প্র্যাকটিক্যাল ডেমোনস্ট্রেশন। দু-তিন মিনিট পার হতেই দেখা গেল শ্রীমতী রাও তাঁর রাইটিং প্যাডে খস্থ করে সংখ্যাটা লিখে পেনসিলটা হাত থেকে মঞ্চে ফেলে দিলেন। পেনসিল পড়ার আওয়াজ শুনে চমকালেন। একজন দর্শককে ডাকলেন। অনুরোধ করলেন, মঞ্চের টেবিলে রাখা কাগজটা তুলে সংখ্যাটা উচ্চকণ্ঠে পড়তে। সংখ্যাটা পড়লেন। দর্শকরা শুনলেন।

“এই সংখ্যাটাই লিখেছিলেন তো? নাকি কাগজ পালটে গেছে?” শ্রীরাও জিজ্ঞেস করলেন। যিনি লিখেছিলেন তিনি জানালেন, এই সংখ্যাটিই লিখেছিলেন।

যিনি উচ্চকণ্ঠে কাগজের সংখ্যাটি পড়েছিলেন তাঁকে শ্রীরাও অনুরোধ করলেন, “কাইন্ডলি দেখুন তো মিসেস রাও কত লিখেছেন ?”

ভদ্রলোক গেলেন। শ্রীমতী রাওয়ের হাত থেকে রাইটিং প্যাডটি নিলেন। সংখ্যাটি জোরে পড়লেন। অবাক কাণ্ড ! এই সংখ্যাটিই আমন্ত্রিত দর্শক লিখেছিলেন।

“প্যাডের অন্য পৃষ্ঠাগুলো কাইন্ডলি দেখুন। সেখানে আবার আরও নানা সংখ্যা লেখা নেই তো?” শ্রীরাও বললেন।

“না। আর কিছুই লেখা নেই। সব পৃষ্ঠাই সাদা।”

উ-ফ্ কী সাংঘাতিক ব্যাপার বলুন তো? ভাবা যায়? শ্রীরাওকে কাজে লাগিয়ে পাক প্রেসিডেন্ড মুশারফের সব চিন্তা ধরে নেবার সুযোগ কী বোকার মতো ছেড়ে দেবেন আডবানি? চলচ্চিত্র উৎসবে অপ্সরাদের দেখে আমাদের সংস্কৃতিবান মন্ত্রীরা কতটা হিজিবিজি নীল-চিন্তায় ব্যস্ত— সে’সব চিন্তা ধরে লিখলে ছাপার জন্য অনেক বিদেশি ট্যাবলয়েট পত্রিকা পাঁচ-দশ লাখ ডলার, ইউরো বা পাউন্ড অ্যাডভান্স ধরাবার জন্য হুড়োহুড়ি ফেলে দেবে—গ্যারান্টি। রাতা-রাতি টেলিপ্যাথির প্রতিষ্ঠা— ভাবা যায়? শ্রীরাও কেন যে এত কিছু ভেবেও এসব ব্যাপার নিয়ে ভাবেননি, সত্যিই অবাক কাণ্ড! তার টেলিপ্যাথির এমন বিশাল প্রতিভা শতরূপে প্রস্ফুটিত হোক ।

জড় পদার্থের উপর মানসিক শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতাকেও দারুণভাবে ভাঙানো যায়। শত্রুপক্ষের সফেস্টিকেটেড যুদ্ধাস্ত্রগুলো অকেজো করতে তাদের কম্পিউটার ব্যবস্থায় গোলমাল পাকিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। ভাবা যায়—কী অসাধারণ অস্ত্র আমাদের ভারতীয়দের হাতে আছে !

শুধু কাশ্মীর কেন, গোটা পৃথিবীকে দখল করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। অথচ আমরা তা কাজে লাগাচ্ছি না।

যাঁরা সাইকোকাইনেসিস (জড় পদার্থের উপর মানসিক শক্তি প্রয়োগ) ও টোলিপ্যাথির পক্ষে গল্প বানায়, তাঁরাও কিন্তু কখনই এইসব হিজিবিজিতে বিশ্বাস করেন না। করলে এ’সব শক্তিকে দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে কেন সোচ্চার নন ?

যাক গে ওসব ঢপের বিশ্বাসের কথা। আসুন আমরা যুক্তির আলোয় বিষয়টিকে ফিরে দেখি। ‘থট্ ওয়েভ’ বা চিন্তার তরঙ্গের বাস্তব অস্তিত্ব নেই। সুতরাং থট্ ওয়েভ ধরা বা টেলিপ্যাথি ব্যাপারটাই স্রেফ টুপি পরানো ব্যাপার। প্রশ্ন উঠতেই পারে—টেলিপ্যাথি যদি লোকঠকানো ব্যাপার-ই হয়, তবে ঘটনাটা ঘটল কী করে?

◊ কৌশলঃ আমি নিজের চোখে শ্রী ও শ্রীমতী রাওয়ের ওই টোলিপ্যাথি দেখিনি। বিকাশ বাড়ুইয়ের কাছে যা শুনেছি, তাতে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাই সুনির্দিষ্টভাবে কৌশলটি বলতে পারছি না। তবে সম্ভাব্য কৌশল এখানে তুলে দিচ্ছি। এভাবে অবশ্যই একই ঘটনা ঘটানো যাবে।

শ্রীমতী রাও যে হাতে রাইটিং প্যাড ধরেছিলেন, সেই হাতের বুড়ো আঙুলের নখের খাঁজে আটকানো ছিল একটা ‘নেইল-রাইটার’। জাদুর সাজ-সরঞ্জাম যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের কাছে খোঁজ করলেই ‘নেইল-রাইটার’ পাবেন। নখের খাঁজে ঢুকিয়ে দিলে সুন্দরভাবে আটকে থাকে । বাইরে দেখা দেখা যায় না। ‘নেইল-রাইটার’-এ থাকে একটা ছোট্ট হোল্ডার। দৈর্ঘে দু থেকে তিন মিলিমিটার। হোল্ডারে গুঁজে দিতে হয় সরু পেনসিল-সীস। এই সীস ‘নেইল-রাইটার’-এর সঙ্গে পাওয়া যায়। আলাদা কিনতে চাইলে তাও মিলবে।

শ্রীমতী রাও প্যাডে পেনসিল দিয়ে লেখার ভান করেছিলেন। আসলে কিছুই লেখেননি । তারপর পেনসিলটা ফেলে দিলেন। দর্শকরা ভাবলেন—উনি লিখলেন এবং তারপর পেনসিল ফেলে দিলেন। সংখ্যাটি উচ্চকণ্ঠে ঘোষিত হওয়ার পর বাঁ হাতে ধরা রাইটিং প্যাডের পৃষ্ঠায় বাঁ হাতের আঙুল নাড়িয়ে লিখে ফেললেন সংখ্যাটি। বুড়ো আঙুলের খাঁজের ‘নেইল-রাইটার’ দিয়েই যে লিখলেন, এটা এতক্ষণ আপনারা সব্বাই বুঝে গেছেন।

শেষে শ্রী ও শ্রীমতী রাওয়ের কাছে একটি বিনীত চ্যালেঞ্জ—আমার মুখোমুখি হবেন নাকি আপনাদের টেলিপ্যাথি ক্ষমতা নিয়ে ?

ডঃ নীলাঞ্জনা সান্যাল-কে বিনীত অনুরোধ— প্যারাসাইকোলজির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে আমার ও আমাদের সমিতির চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করুন। হাতেকলমে প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ থাকতে ‘মুখে’ কেন ?

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!