অলৌকিক নয়, লৌকিক

৪র্থ খন্ড

প্রবীর ঘোষ ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক এবং যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ। তাঁর নেতৃত্বেই ‘যুক্তিবাদী-চিন্তা’ আজ ব্যক্তি গণ্ডি অতিক্রম করে আন্দোলনের রূপ পেয়েছে; আন্দোলিত হয়েছেন সমাজের লক্ষ-কোটি মানুষ, আন্দোলিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী-সংস্থা, নাট্য-সংস্থা, বিজ্ঞান-ক্লাব সহ বহু সংগঠন; এরা অংশ নিয়েছে যুক্তিবাদী-চিন্তার বাতাবরণ সৃষ্টিতে।

আন্দোলিত হয়েছে সমাজের দর্পণ সাহিত্য, নাটক ইত্যাদি। আজ বহু জনপ্রিয় লেখকের গল্প উপন্যাস নাটকে বিরাজ করে প্রবীরের আদলে গড়া একটি চরিত্র, অথবা হাজির হয় বুজরুকি ফাঁসের কাহিনী। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে, কি সম্পাদকীয়তে বার বার ঘুরে ফিরে যে ভাবে ‘যুক্তিবাদী’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে, মাত্র কয়েক বছর আগেও তা ছিল অকল্পনীয়। যুক্তিবাদী-চিন্তার এই সার্বজনীনতার পিছনে রয়েছে প্রবীরের জনগণকে আন্দোলনে শামিল করার দক্ষতা, আপসহীন লড়াই, দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা, বলিষ্ঠ লেখনী এবং চ্যালেঞ্জ, প্রলোভন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে নিরবচ্ছিন্ন জয়।

এ-সবই তাঁকে করেছে জীবন্ত কিংবদন্তি, তাঁর সৃষ্টি ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’, একটি দর্শন, অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের দর্শন। প্রবীর ঘোষ ‘ভারতের মানবতাবাদী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী সভাপতি, যে মানবতাবাদী সমিতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে, ‘ধর্ম’ হিসেবে ‘মনুষ্যত্ব’ লেখার আইনি অধিকার ছিনিয়ে এনেছে, যুক্তিবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছে চিরকালের সর্বাধুনিক ‘নারীবাদ’ – ‘মানবতাবাদী নারীবাদ’।

বিশ শতকের শেষ লগ্নে এই অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে টিকিয়ে রাখতে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী ‘সাংস্কৃতিক মগজ ধোলাই’, ‘চিন্তার যুদ্ধ’ – ইতিহাস অন্তত এ-কথাই বলে। সাম্যের সমাজ গড়ার আবশ্যিক শর্ত তাই পাল্টা চিন্তার যুদ্ধে নামা। এই যুদ্ধের আর এক নামই ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন’, ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ – যে নামেই ডাকুন। চিন্তার যুদ্ধে জয়ী হতে গেলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের যোদ্ধাদের স্পষ্ট ও গভীর ভাবে বুঝে নিতে হবে ‘অসাম্যের সমাজ-কাঠামো’ বা ‘সিস্টেম’-এর নিয়ন্তা কে? কারাই বা নিয়ন্তার সহায়ক শক্তি? সমন্বয়কারী শক্তিই বা কি? চিরায়ত গ্রন্থ ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ –এর এই খন্ডটিতে যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ ও ‘মানবতাবাদী নারীবাদ’ –এর প্রবক্তা প্রবীর ঘোষ ‘সিস্টেম’কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন তাঁর দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে। সেই সঙ্গে দেখিয়েছেন এই ‘সিস্টেম’কে ভাঙ্গার দিশা। ‘সিস্টেম’ নিয়ে এমন বিশ্লেষণী আলোচনা পৃথিবীর কোনও ভাষায় ইতিপূর্বে লেখা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। সে দিক থেকে এই রচনা অবশ্যই ঐতিহাসিক। গ্রন্থে এ-ছাড়াও আছে ‘যুক্তিবাদ’ প্রসঙ্গে আলোচনা। আছে ‘অধ্যাত্মবাদ’, ‘আত্মা’, ‘পরমাত্মা’, ‘পরলোক’, ‘পুনর্জন্ম’। বিখ্যাত প্যারাসাইকোলজিস্টদের দ্বারা উল্লিখিত প্রায় সবকটি তথাকথিত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেস লেখক বিপুল অধ্যাবসায় দ্বারা সত্যানুসন্ধান চালিয়ে উন্মোচিত করেছেন। একই সঙ্গে উন্মোচিত করেছেন মিথ্যা প্রচারে ফুলিয়ে বিশাল বানান অধ্যাত্মবাদী নেতাদের মিথ্যাচার, অজ্ঞতা ও মূর্খতাকে। ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলী এই গ্রন্থ প্রকাশকে ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন’, সাংস্কৃতিক বিপ্লব-এর পথে এক উল্লেখযোগ্য ও অনিবার্য পদক্ষেপ বলে মনে করে।

উৎসর্গ

আমার আত্মা’কে

আমি

error: Content is protected !!