বাংলা সাংবাদিক-জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন রণজিৎ রায়। বয়স আশি পেরিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না। হঠাৎ হারিয়ে গেলেন। বিভিন্ন পত্রিকা ও পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে খুঁজে পায়নি আজও
হারিয়ে যাওয়ার বছর কয়েক আগেই শ্রীরায়ের মধ্যে দেখা গিয়েছিল স্মৃতিভ্রংশতা। পরিচিতদের নাম ভুলে যেতেন। মনে রাখতে পারতেন না বাড়ির ঠিকানা, নিজের নাম, খেয়েছেন কিনা—এমনি অনেক কিছুই। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন, এটা কোনও রোগ নয়, বার্ধক্যের দোষ। ভুল ভেবেছিলেন।
দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু জনারণ্যে হারিয়ে গেলে, পাওয়া অসম্ভব না হলেও বড়-ই কঠিন। এতো অপরাধীর লুকিয়ে থাকা নয় যে, ইনফরমার খবর দেবে, বেশ্যালয়ে অভিযান চালালে খোঁজ মিলবে। যিনি নিজের পরিচিয় ভুলে গেছেন, তাঁর হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
পরিচয় ভুলে যাওয়া, খেয়েছেন কিনা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি স্মৃতিভ্রংশ অবস্থাকে ‘বার্ধক্যের অনুসঙ্গ’ ভাবার মধ্যেই রয়েছে ভুল। স্নায়ুবিদকে দেখালে তাঁরা সম্ভবত বলতেন, ‘অলজাইমারস্ ডিজিজ’। এই অসুখটিকে চিহ্নিত করতে পারলে তাঁর হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা হয়ত ঘটত না। ঠিক ঠিক দেখভালের জন্যেই ঘটত না।
অলজাইমারস কি বৃদ্ধ বয়সের রোগ?
অলজাইমারস্ (Alzheimer’s) রোগ ষাট-পঁয়ষট্টির আগে হয় না—এমন একটা ধারণা চালু আছে। ধারণাটা ঠিক নয়। এখন স্নায়ুবিদরা যে কোনও বয়সের গুরুতর স্মৃতিভ্রংশকেই অলজাইমারস বলে চিহ্নিত করে থাকেন।
শীলা ধারালো বুদ্ধির বিদুষী মহিলা। বয়স পঞ্চাশ। বেশ কিছু বছর ধরেই অফিস, ছেলে-মেয়ে, বর, মা সব সামলে চলেছে। বরের বন্ধু, নিজের বন্ধু, বিশাল সংখ্যক আত্মীয় ও পরিচিতদের নিত্য আনাগোনা। সবাইকে সন্তুষ্ট করার ‘মহান’ দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। রাত দুপুরের অনেক পরে আড্ডা দিয়ে বা হোটেলে খেয়ে বাড়ি ফেরার পর বর যখন ছ-আট ঘণ্টা নিশ্চিন্তে ঘুম দেন, তখন তিন-চার ঘণ্টার বেশি ঘুমোবার ‘শৌখিনতা’ দেখানো সম্ভব হয় না শীলার। সকাল বেলায় উঠেই ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবার তৈরি করা, বাজার করা, বাস ধরে অফিস দৌড়নো। অফিসে স্টাফ আর অফিসারদের সামলাতে হয় ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শীলাকে। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি এসেই বন্ধু-আত্মীয়দের আগমনে মুখের হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়। বর ন’টায় উঠবেন। বউয়ের তৈরি করা খাবার খেয়ে ড্রাইভ করে অফিস যাবেন। প্রায়ই ফিরবেন এক দঙ্গল বন্ধু বা চামচা নিয়ে। তাদের আপ্যায়নের দায়িত্ব অবশ্যই শীলাকেই নিতে হয় ।
দীর্ঘ বছর এভাবেই চলছিল। দশ রকম কাজে বাধ্য হয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছিল। কিছু দিন হল কয়েকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক নাম, অনেক কথা ভুলে যাচ্ছেন। এমনকি ক্ষিদের অনুভূতি কমেছে। দিকভ্রম হয়। অতি চেনা পথে নেমেও উত্তরকে মনে হয় দক্ষিণ, পূর্বকে পশ্চিম। কখনও অস্থিরতা দেখান। যে কাজে এসেছেন, সে কাজ শুরু করার আগেই ছট্ফট্ করতে থাকেন। অথবা দোটানায় ভোগেন। আবার কখনও বা অতি উদাসীন হয়ে পড়েন, নির্লিপ্ত হয়ে পড়েন। ডাক্তার দেখাবার প্রয়োজন অনুভব করেন না—বাঙালি মেয়েদের ‘সহনশীলতা’ নামের ব্যায়রামের জন্যে।
হাউজ ফিজিসিয়ান দেখালে তিনি অবশ্যস নিউরোলজিস্ট দেখাতে বলতেন। নিউরোলজিস্ট দেখলে বলতেন, ‘অলজাইমারস্’-এর প্রথম ধাপ।
রঞ্জন পঁয়তাল্লিশের স্বাস্থ্যবান যুবক। মাঝে মাঝে বুঝতে পারে খবরের কাগজে মন বসছে না। যে বই অন্ত প্রাণ, তার কাছে বই পড়াটা হঠাৎ-ই বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। যে বইটা পড়তে খুবই ভালো লাগছিল, সে বইটাই অসহ্য লাগছে। আট-দশ বা পনের দিন বই পড়ায় চূড়ান্ত বিরাগ। হঠাৎ হঠাৎ অতি চেনা রাস্তা গুলিয়ে যায়। জানা নাম মনে পড়ে না। এও অলজাইমারস্-এর একটি ধাপ।
সাঁতারু মিহির সেন ছিলেন অলজাইমারস্ রোগী। তাঁর অতি পরিচিত বড়বাজার এলাকায় পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিছুই যখন চিনতে পারছেন না, তখন এক পথচারী তাঁকে চিনতে পেরে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যান। না হলে মিহির সেনও হয়তো সাংবাদিক রণজিৎ রায়ের মতো হারিয়ে যেতেন।
কবি নজরুল ইসলাম, ভাস্কর রামকিংকর বেজ অলজাইমাস্ নামের ভয়ংকর রোগের শিকার হয়েছিলেন। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের মেধা-বুদ্ধি-সৃজনশীলতা হারিয়ে বেঁচে মরে থাকা যে কি ভয়ংকর কষ্টের—ভাব যায় না ।
‘অলজাইমারস্’ রোগটা ঠিক কী ?
‘অলজাইমারস্’ রোগে যে কোনও বয়সের রোগী তার মস্তিষ্কের গুণাবলিগুলো হারিয়ে ফেলতে থাকে। মেধা, বুদ্ধি, বিশ্লেষণের ক্ষমতা হারায়। দেখা দেয় নামবিস্মৃতি, দিগ্বিস্মৃতি, শব্দ-স্মরণে অক্ষমতা। আসে অতি উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা।
পরিচিত মানুষ, পরিচিত ছাপার অক্ষর অপরিচিত, অজানা হয়ে যায়। পরিচিত
ভাষার কথার অর্থ মগজে ঢোকে না। আবার দেখা দিতে পারে অস্থিরতা। মল-মুত্র ত্যাগের মতো ব্যাপারে সামাজিক নিয়মগুলোও ভুলে যেতেই পারেন। হারিয়ে ফেলতে পারেন পোশাক পরার প্রয়োজনীয়তা বোধ। ভুলে যেতে পারেন নিজের নাম, পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা। হাত-পা চালনা শক্তি হারাতে পারেন। লোপ পেতে পারে ক্ষিদে বোঝার ক্ষমতা। এমন হতে পারে পরম আত্মীয় বা প্রিয়জনকে সন্দেহের চোখে দেখতে পারেন। স্মৃতিভ্রংশতার জন্য হয়তো ভুলে গেছেন কোথায় রয়েছে চটি জোড়া, পাজামা-পাঞ্জাবি। খুঁজে না পেয়ে মনে করলেন পরিবারেরই কেউ ওসব লুকিয়ে রেখেছে।
এই ধরনের স্মৃতিভ্রংশ রোগীকে প্রথম চিহ্নিত করেন জার্মান চিকিৎসক অ্যলইস অলজাইমার (Alois Alzheimer)। সালটা ১৯০৭। রোগীনি ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। পরবর্তীকালে ডাঃ অলজাইমারের নামে-ই চিহ্নিত করা হয় রোগীটিকে।
অলজাইমারস্-এর কারণ
মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের দ্রুত মৃত্যুর ফলেই তৈরি হয় অলজাইমারস্-এল উপসর্গগুলি। কোনও রোগীর কোন্ অঞ্চলের স্নায়ুকোষের কতগুলোর মৃত্যু হল, তার উপর নির্ভর করে কার কোন উপসর্গগুলো কত বেশি প্রবল হবে।
এই দ্রুত কোষের মৃত্যুকে বলা হয় মস্তিষ্ক ক্ষয় (Cerebral atrophy)। মস্তিষ্ককোষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে মস্তিষ্ক বা মগজের ওজন। কুড়ি বছর বয়সের পর সবারই মস্তিষ্কের ওজন কমতে থাকে। কিন্তু অলজাইমারস্ রোগীর বেলায় এই ওজন কমার ব্যাপারটা ঘটতে থাকে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে।
অলজাইমারস্ রোগের গোটা-চারেক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ইলেকট্রন মাইক্রোসকোপ যন্ত্রের সাহায্যে। (১) স্নায়ুজট (neurofibrillary tangle) (2) জরা চাপড়া (senile plaque) (৩) মঙ্গল রোগ (mongolism) (৪) পারকিনসন্স্ রোগ (Parkinsons disease) ।
জরা চাপড়া হল অতি ক্ষুদ্র কণা বা দানা যা মস্তিষ্ক স্নায়ুপথের আশেপাশে বেশি করে জমা হয়ে স্মৃতির যাওয়া-আসার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
স্নায়ুকোষের প্রাচীরে থাকে বিটা প্রোটিন। স্নায়ুকোষের মৃত্যুর পর পড়ে থাকে এই প্রোটিন। বিটা প্রোটিন ঘিরে থাকে মৃত স্নায়ুকোষের অবশিষ্টাংশ। এই জমা হওয়া বিটা প্রোটিন ও মৃত স্নায়ুকোষের অবশিষ্টাংশের দানাগুলোকেই বলে জরা চাপড়া জরা চাপড়ার উপস্থিতি থাকলেই অলজাইমারস্ রোগ হবে, এমনটি নয় ।
যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন হাজার পাঁচেক করে স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটতে থাকে, তাই বৃদ্ধদের মগজে কম বেশি খুঁজে পাওয়া যাবেই জরা চাপড়া। জরা চাপড়া যখন স্মৃতির যাওয়া-আসার পথে বাধার সৃষ্টি করে, তখনই অলজাইমারস্ রোগ দেখা দেয়। স্নায়ুজট বা স্নায়ুজ্যাম হল একগাদা চিন্তার ভিড়ে মগজে খবর পৌঁছতে গোলমাল হয়ে যাওয়া।
সাধারণভাবে রাজনীতিবিদ্ শিল্পপতি, প্রশাসক শ্রেণীর মানুষদের কাজকর্মের ধারা একটু একটু করে মস্তিষ্কের গতিময়তা বাড়িয়ে তোলে।
চিন্তাবিদ্ গবেষক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিল্পী শ্রেণীর মানুষরা সাধারণভাবে কোনও বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে ভালোবাসেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে বা ভাবতে ভালোবাসেন না। এঁরা আত্মস্থ বা ফ্লোগমাটিক (Phlegmatic) ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারী। এই আত্মস্থ বা ফ্লেগমাটিক মস্তিষ্কের অধিকারী মানুষ পাঁচটা কাজে মাথা ঘামালে স্নায়ুকোষগুলোর কাজে অনেক সময়ই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিভিন্ন স্নায়ুকোষের মাধ্যমে মগজে বিভিন্ন খবর পৌঁছতে গিয়ে জট পাকিয়ে যায়। ব্যাপারটা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের মতো।
একসঙ্গে বিভিন্ন কাজে যতটা মগজ খেলান সম্ভব। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে বেশি কাজে মাথা ঘামালে স্নায়ুজট হবার সম্ভাবনা বাড়ে। আবার কোনও একজন চিন্তাশীল এবং একই সঙ্গে মাঝারি মাপের প্রশাসক যদি সবাইকে সন্তুষ্ট করার মতো নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন, ঘুমের সময় কম দেন, কিছুক্ষণের জন্য একা থাকার, বিশ্রাম নেওয়ার মতো সময় বের করতে না পারেন, শরীর ও মনকে কিছুক্ষণের জন্য রিল্যাক্সেশন দিতে না পারেন, গভীরভাবে চিন্তা করার, একটা ঘটনা বা বিষয়কে বিশ্লেষণ করার মতো সময় বের করতে না পারেন, মগজ খেলাবার মতো সময় না পান, তবে স্নায়ুজট ও অলজাইমারস্ রোগী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
মোঙ্গল রোগ (mongolism) মঙ্গলজাতীয় লোকেদের কোনও অসুখ নয়। মঙ্গল রোগী হল তারা যারা জিনের অস্বাভাবিকতার জন্য বা প্রজননগত ত্রুটির জন্য একটি বাড়িতি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায়।
স্বাভাবিক মানবকোষে থাকে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম। কখনও কখনও কেউ কেউ একটি বেশি ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায়। অর্থাৎ তাদের ২৩ × ২ = ৪৬ ক্রোমোজোমের পরিবর্তে থাকে ৪৭ টি। এই বাড়তি ক্রোমোজোমের জন্যেই যত গণ্ডগোল।
৪৬ টি ক্রোমোজোম তৈরি করছে লক্ষাধিক জিন। এই লক্ষাধিক জিনের মধ্যে তিনটি জিনকে দায়ী করলেন জিন-বিজ্ঞানীরা (genetists)। জিন তিনটির নাম দিলেন ‘প্রেসিনিলাইন-১’ (preseniline-1), ‘প্রেসিনিলাইন-২’ (preseniline-2) এবং অ্যাপোলাইপোপ্রোটিন-ই’ (apolipoprotin E)।
মঙ্গল রোগীরা খুব অল্প বয়সেই অলজাইমার রোগের শিকার হচ্ছেন। ২০-২৫ বছরেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পারকিন্সনস্ রোগের উপসর্গগুলো দৈহিক। অলজাইমারস্ রোগের মতো মানসিক নয়। এই রোগে পেশীর নমনীয়তা কমে যায়। ফলে হাঁটা, কথা, খাওয়া সবই অতি স্লথগতিতে সম্পন্ন হয়। হাত-পা-মাথা সবই কাঁপতে থাকে। কথা জড়িয়ে যায়। মুখ দিয়ে লালা পড়ে।
বক্সার ও ফুটবলারদের মধ্যে ‘পারকিন্সন্স্’ রোগের সম্ভাবনা বেশি। মাথায় ঘুসি ও হেড দেওয়ার কারণে গুরুতর ধরনের মস্তিষ্ক ক্ষয়ের শিকার হন। নরওয়ের জাতীয় খেলোয়াড়দের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন কম-বেশি ৬০ বছর বয়সে মস্তিষ্ক ক্ষয়ে ভোগেন।
জেমস্ পারকিন্সন (James Parkinson) নামের এক ব্রিটিশ চিকিৎসক এই রোগটিকে চিহ্নিত করেন। বর্তমানে রোগটি ‘পারকিন্সনস্’ নামে বেশি পরিচিত হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় রোগটির নাম ‘প্যারালাইসিস অ্যাজিটেন্স (paralysis agitans)। প্রতি চারজন পারকিনসনস্ রোগীর মধ্যে একজন অলজাইমারস্ রোগে আক্রান্ত হন। সর্বকালের সেরা বক্সার ক্যাসিয়াস ক্লে অর্থাৎ মহম্মদ আলি প্রথমে পারকিনসনস্ পরবর্তী কালে অলজাইমারস্ রোগে আক্রান্ত হন।
আমেরিকায় এক সমীক্ষা চালান হয় বছর দশেক আগে। তাতে বলা হয়েছে ষাট পেরনো মানুষদের শতকরা পাঁচ জনই অলজাইমারস্ রোগে আক্রান্ত হন ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয়দের গড় আয়ু হয়েছে ৬৫ বছর। ভারতে সাধারণভাবে চাকরিজীবী মানুষ ৬০ বছরে ‘কর্মজীবন’ থেকে অবসর নেন এবং অনেক সময়ই চাকরি থেকে অবসর নেওয়া মানেই হয়ে দাঁড়ায় কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ।
অফিসে কাজের মধ্যে, সহকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে
আড্ডায় মগজ খেলাবার সে সুযোগ ছিল, অবসর গ্রহণ
অনেক সময় সেই মাথা খাটাবার সুযোগটুকুও কেড়ে
নেয়। চিন্তার অলসতার সুযোগে গুটি গুটি পায়ে
অলজাইমারস্ রোগটি ঢুকে পড়ে মস্তিষ্কে ৷
অনুমান করতে অসুবিধে হয় না, ষাট পেরনো মানুষদের মধ্যে শতকরা হারে আমেরিকার চেয়ে ভারতে অলজাইমারস্ রোগীর সংখ্যা বেশি। ভারতীয় বৃদ্ধদের অলজাইমারস্ হলে পরিবারের লোক ধরে নেন—বুড়ো বয়সে এমনটা হয়ই। ফলে স্নায়ুবিশেষজ্ঞ দেখাবার কথা মনেই স্থান দেন না।
আমেরিকা-ইউরোপের মতো স্বাস্থ্য সচেতন হতে আমরা আদৌ শিখিনি। অলজাইমারস্ রোগে এ’দেশে কতজন তাঁদের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন? সংখ্যাটা কত? তা নিয়ে কোনও পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। কারণ এ বিষয়ে কোনও সমীক্ষা চালাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি ভারত সরকার। সমস্যাটির গুরুত্ব বোঝার মতো মগজের অভাব মন্ত্রীদের মধ্যে প্রবল ।
জরাকে জয় করতে, অলজাইমারস্ রোগ থেকে দুনিয়াকে মুক্ত
করতে ইউরোপ ও আমেরিকা জুড়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
গবেষণা চলছে মস্তিষ্ক বিজ্ঞান ও জিন্ নিয়ে। জমা হচ্ছে
নিত্য-নতুন তথ্য। আর ঠিক তখন ভারতে যোগ ও
মেডিটেশনের নামে বিজ্ঞান-বিরোধী চিন্তাভাবনা
ছড়িয়ে আখের গুছিয়ে চলছে কিছু
প্রতারক বা মানসিক রোগী।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ