অভিজিৎ রায় (১৯৭১-২০১৫) যুক্তিবাদী লেখ, ব্লগার এবং মুক্তমনা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা। বিজ্ঞানের তথ্য, উপাত্তের সুসংবদ্ধ বিশ্লেষণের আলোকে তাঁর লেখা প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫), দ্বিতীয় বই ফরিদ আহমেদের সাথে লেখা ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ (২০০৭) তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানমনস্ক পাঠকের প্রিয় লেখকে। সুসাহিত্যিক, অনুসন্ধিৎসু, সমাজ-সচেতন, সত্যসন্ধানে আপোষহীন এবং প্রকাশে নির্ভীক অভিজিৎ রায়ের স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞান, মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের আলোকে সমাজ প্রতিষ্ঠার। ২০০১ সালে তাই সমমনা বন্ধুদের নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন মুক্তমনা ওয়েবসাইট (www.mukto-mona.com) যা আজও বাংলাভাষী বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, নিধার্মিকদের সর্ববৃহৎ অনলাইন সংগঠন।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের গণহত্যা থেকে বাঁচতে গৃহহীন অভিজিৎ রায়ের মা শেফালী রায় পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর বাবা অধ্যাপক অজয় রায় যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। ১২ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে আসামে জন্ম নেন অভিজিৎ রায়। বাবার কর্মসূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শৈশব, কৈশোর কাটানো অভিজিৎ রায় যন্ত্রকৌশলে স্নাতক সম্পন্ন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট থেকে। পরে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। অন্ধবিশ্বাস নির্ভর সমাজ ব্যবস্থার অনাচারের ভিত্তিমূলে আঘাত করে মানবতার কথা তিনি বাংলাভাষী পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন অন্ধবিশ্বাসের বদলে মুক্তমনা হবার, সাহস যুগিয়েছেন দ্বিমত হতে, আস্থা রাখতে বিজ্ঞান ও যুক্তিতে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘সমকামিতাঃ একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ বইটির মাধ্যমে দিয়ে তিনি শুধু বাংলাদেশের সমাজচ্যুত করে রাখা সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাই নয়, একই সাথে তথাকথিত মানুষকে বিজ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন সমকামিতা অপরাধ নয়, বরঞ্চ প্রাণী জগতে স্বাভাবিক চিত্র, সমকামীদের প্রতি ঘৃণা অন্ধ ধর্মান্ধতার ফলাফল। ২০১১ সালে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইয়ে দ্বিধাহীনভাবে উল্লেখ করেছেন নাস্তিকতা তাঁর মতো বহু বাংলাদেশীর কাছে সবচেয়ে যৌক্তিক অবস্থান, আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোকে। ২০১৪ জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইয়ে তিনি ধর্মকে তুলনা করেছেন ভাইরাসের সাথে কারণ ধর্ম মানুষকে অযৌক্তিক ঈশ্বর ও অমানবিক প্রথায় বিশ্বাস স্থাপন থেকে শুরু করে আত্মঘাতী পর্যন্ত করে তুলতে পারে। মানব মননের ক্রমাগত উন্নতিতে বিশ্বাসী অভিজিৎ রায় উৎসাহী ছিলেন নানা বিষয়ে। ২০১৫ সালে অবসর থেকে প্রকাশিত ‘ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোঃ এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে’ বইয়ে তুলে ধরেছিলেন সুসাহিত্যিক এবং মানবতাবাদী দুঃসাহসী নারী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, চিত্রকলায় এমনকি শেষ বয়সে নারী ভাবনার উন্নয়নের ভূমিকা নিয়ে। একই বছর শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয় গণিতবিদ অধ্যাপক মিজান রহমানের সাথে লেখা ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইটিতে অভিজিৎ তুলে ধরেছিলেন মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত।
বিজ্ঞানের নানান বিষয়, দর্শন, সাহিত্য, সমাজ-চিন্তা, ধর্ম-নিধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিজিৎ রায়ের লেখা ব্লগ, প্রবন্ধ, বই কৌতূহলী-অনুসন্ধিৎসু-জিজ্ঞাসু মানুষকে যোগান দিয়েছেন বস্তুবাদী চিন্তার রসদ। ঠিক একইভাবে তাঁর লেখা পশ্চাৎপদ, অন্ধকারাচ্ছন্ন ধর্মব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক, অসৎ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মূলে আঘাত করেছে। যুক্তিবাদী লেখককে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ ইসলামী জঙ্গিরা ২০১৫ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারী অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী বন্যা আহমেদকে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে আক্রমণ করে। কুপিয়ে অভিজিৎ রায়ের মগজ বের করে ফেলা হয়, কেটে ফেলা হয় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর হাতের আঙ্গুল।
ইসলামী সন্ত্রাস কেড়ে নিয়েছে ব্যক্তি অভিজিৎ রায়কে। এমন পরিণতির সম্ভাব্যতা অভিজিৎ জানতেন কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন ‘পান্ডুলিপি পোড়ে না’। আজ তাই অভিজিৎ রায় না থাকলেও তাঁর লেখা, কর্ম বিশ্বের মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক থেকে শুরু করে মুক্তমনা সব মানুষের প্রেরণা।
♦ দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ শূণ্যের ভীতি
♦ তৃতীয় অধ্যায়ঃ পশ্চিমে নয়, পুবের দিকে
♦ চতুর্থ অধ্যায়ঃ শূন্য এল ইউরোপে
♦ পঞ্চম অধ্যায়ঃ প্রকৃতির শূন্যবিদ্বেষ ?
♦ ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ বিজ্ঞানে শূন্যের আভাস
♦ সপ্তম অধ্যায়ঃ আইনস্টাইনের বিশ্ব
♦ অষ্টম অধ্যায়ঃ শূন্যতার শক্তি
♦ নবম অধ্যায়ঃ মহাবিস্ফোরণের কথা
♦ দশম অধ্যায়ঃ বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল?
♦ একাদশ অধ্যায়ঃ কোয়ান্টাম শূন্যতা ও মহাবিশ্বের উৎপত্তি
♦ দ্বাদশ অধ্যায়ঃ হিগস কণার খোঁজে
♦ ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি
♦ চতুর্দশ অধ্যায়ঃ অনন্ত মহাবিশ্বের সন্ধান শূন্য ও অসীমের মেলবন্ধন
♦ পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ অন্তিম প্রশ্নের মুখোমুখি: কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?
“শূন্য থেকে মহাবিশ্ব” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ