শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
হ্যাঁ, সেই কথাতেই আবার ফিরে আসি। আমাদের মতো উদ্যার মতো কোন একজনের বড় বেশি প্রয়োজন, যিনি অলৌকিকবাদের লৌকিক কৌশলগুলো সাধারন মানুষদের বুঝিয়ে দিয়ে কুসংস্কার ও অলৌকিকত্বের মায়াজাল থেকে জনগণকে মুক্ত করবেন। কারণ- অলৌকিক বাবাজী-মাতাজীদের ভির এবং জ্যোতিষীদের রমরমা আমাদের দেশে বড় বেশি। বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো লেগেই রয়েছে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি। ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলো শক্তিবৃদ্ধি করে চলেছে। ডাক দিচ্ছে প্রকাশ্যে আন্দোলন। জয়েন্দ্র সরস্বতীর দাবির মধ্যে রয়েছে ভারতের নাম করতে হবে ‘হিন্দুস্থান’, গরুকে করতে হবে ‘জাতীয় পশু’। আমরা দেখলাম জয়ন্দ্র সরস্বতী আন্দোলনের সূত্রে দিল্লিতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থেকেও রাজীব গান্ধী সপরিবারে তাঁর আশীর্বাদ নিতে হাজির হলেন। সে সময়ে রাজীবের হাতে তখন বিজ্ঞান দপ্তরও।
আমরা দেখলাম পশ্চিম বঙ্গের রাজ্যপাল নুরুল হাসানের নাম উপ্রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস দলের মনোনয়নের প্রশ্নে বাতিল হল। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি তথা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বিরোধী নেতাদের জানালেন, নুরুল হাসানের নাম বাতিল করা হল, কারণ নুরুল হাসান নাস্তিক।
১৯৮৭-র ৪ সেপ্টেম্বর। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে,
রাজস্থানের দেওরালায় ধর্মীয়-উন্মাদ কিছু মানুষ মধ্যযুগীয় বর্বরতায় অষ্টাদশী রূপ কানওয়ারকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে সতী করল। আমরা দেখলাম ধর্মীয়-উন্মাদনার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নেতারা পিছু হটলেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেম কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এন.সি. চতুর্বেদী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, সতীদাহ ব্যক্তিগত ধর্মীয় ব্যাপার।
আমরা দেখলাম সতীর সমর্থনে জয়পুরের জনসভায়, রাজস্থানের রাজ্য জনতা দলের সভাপতি, রাজ্য লোকদল (বহুগুণা গোষ্ঠী) সভাপতির সরব উপস্থিতি।
আমরা দেখেছি হরিয়ানার নির্বাচনের কংগ্রেস বিরোধী প্রচারে এন.টি. রামারাও নারায়ণ সেজে চৈতন্য রথম চেপে হিন্দু ভোটারদের সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে। আমরা দেখেছি ‘শরিয়ত’ নামের আদিম বর্বর আইনের সমর্থনে দীর্ঘ মিছিল। ‘অকাল তখত’ থেকে পুরোহিতদের জারি হওয়া ফতোয়া। আমরা দেখেছি রামশিলা ও বাবরি মসজিদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আমরা দেখলাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পুলিশের ভূমিকা হয় নীরব দর্শকের, নতুবা দাঙ্গাবাজদের উৎসাহদাতার। দেখেছি গুজরাটে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের মানুষদের লুঠ, ধর্ষণ ও হত্যা হতে। তাই সংখ্যালঘুরা আর পুলিশকে নাগরিকদের রক্ষাকারী হিসেবে ভাবতে পারছেন না। অস্বীকার করার উপায় নেই, শাসকশ্রেণীর স্বার্থে পুলিশের ওপর ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রভাব বেড়েই চলেছে।
পুলিশ লাইনে মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার বানাতে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। আর আজ স্বাধীনতার প্রায় ষাট বছর পরে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের পুলিশ লাইনে হনুমান মন্দির, কালীমন্দির অতি স্বাভাবিক ঘটনা। পুলিশ ধর্মনিরপেক্ষতার পাছায় লাথি কষাচ্ছে হিজড়ে প্রশাসন ও সরকার নীরব দর্শক।
একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর কয়েকটি তদন্ত কমিশন পুলিশ লাইনে সমস্ত মন্দির ভেঙ্গে ফেলার সুপারিশ করলেও, কোন রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার তা কার্যকর করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। অর্থাৎ পুলিশদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা গড়ে তুলতে, ধর্মান্ধতা গড়ে তুলতে সরকার ইন্ধনই জুগিয়েছে। সংবিধানগতভাবে ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। কোনো রাষ্ট্রনায়ক, সাংসদ, বিধায়ক বা সরকারি আমলা প্রকাশ্যে ধর্ম আচরণ করলে তা হবে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান অবমাননা। কোনো সরকারী বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান হবে উপাসনা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক বর্জিত। আজ ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে যে সব রাজনৈতিক দল জোট বা ঘোট পাকাচ্ছে, তারা কেউ কি আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ? বাম জামানায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি থানায় গজিয়ে উঠেছে মন্দির কোর্ট চত্বরে মন্দির, মসজিদ, সরকারি স্কুলে হিন্দু দেব-দেবীর পুজো। এর পরও বামফ্রন্ট কি করে নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে দাবী করে? আমাদের মতো আকন্ঠ দুর্নীতি ডোবা দেশের এ’সব সম্ভব?
আমাদের দেশের মন্ত্রীরা নির্বাচনের আগে জয়ের আশায় মন্দিরে, মসজিদে, গির্জায়, গুরুদ্বারে পুজো দেন। অবতারদের আশীর্বাদ ভিক্ষা করেন। রাজনীতিবিদ থেকে বড়-মেজ-সেজ আমলারা পর্যন্ত প্রত্যেকেই প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের আগে দ্বারস্থ হন গুরুদেব বা জ্যোতিষীদের। যে কোনও রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ঈশ্বরের পুজো করে।
ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে, শুধুমাত্র ভোট-কুড়োবার স্বার্থে কাজে লাগাবার দেউলিয়াপনায় প্রগতিশীল বামপন্থীদেরও শরীক হতে দেখেছি আমরা। কেরলের বিধানসভা নির্বাচনের সময় খৃষ্টান ধর্মযাজকদের স্বাক্ষরিত বিবৃতি সংবাদপত্রে প্রচার করে খৃষ্টান ভোট প্রার্থনা, বিবেকানন্দের বাণীকে নির্বাচনের প্রচারে লাগানো, এ-সবই আমরা দেখেছি।
অন্ধ সংস্কারের ধারক-বাহক হিসেবে পশ্চিমবাংলার বামফ্রন্ট সরকারের মার্কসবাদী অনেক মন্ত্রীই পিছিয়ে নেই। এখন মন্ত্রীরা বড় বড় সব পুজোর ‘পেট্রন’।
যুক্তিহীন আচার পালনকেই আমরা বলি কুসংস্কার, যা এসেছে সাধারণভাবে যুক্তিহীন অন্ধ বিশ্বাস থেকে। এ-কথা ভুললে চলবে না, যুক্তিহীন অন্ধ বিশ্বাস শাসক শ্রেণীর স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে এবং পুষ্ট করা হচ্ছে। দেশে পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু করতে হবে মানুষের চিন্তায়, চেতনায় যুক্তিবাদের বীজ ছড়িয়ে।
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ