দ্বিতীয় খণ্ড
ভাগ: ৬ – যাথার্থ্য প্রতিপাদন
পরিচ্ছেদ – ৩
প্রেমকে নারীর জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছে তার পরম বৃত্তিরূপে, এবং যখন সে এটা চালিত করে একটি পুরুষের দিকে, তখন সে পুরুষটির মধ্যে খোঁজে বিধাতাকে; তবে পরিস্থিতির কারণে সে যদি বঞ্চিত হয় মানবিক প্রেম থেকে, যদি সে হয় ব্যর্থ বা খুঁতখুঁতে, তাহলে সে বিধাতাকে আরাধনা করতে পারে বিধাতার স্বরূপেই। একথা সত্য, অনেক পুরুষও ছিলো, যারা এ-শিখায় জ্বলেছে, তবে তারা বিরল এবং তাদের ঐকান্তিকতা অতিশয় পরিশীলিত মননশীল ঘঁচের; আর সেখানে যে-নারীরা নিজেদের উৎসর্গ করে ঐশী বিবাহের সুখের কাছে, তারা বিপুলসংখ্যক এবং তাদের অভিজ্ঞতা বিশেষভাবেই আবেগী প্রকৃতির। নারী নতজানু হয়ে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত; সাধারণত সে আশা করে তার পরিত্রাণ নেমে আসবে স্বর্গ থেকে, সেখানে পুরুষ অধিষ্ঠিত সিংহাসনে। তারাও মেঘ দিয়ে পরিবেষ্টিত; তাদের শারীরিক উপস্থিতির যবনিকার অন্তরাল থেকে প্রকাশ পায় তাদের রাজকীয় অবয়ব। প্রিয়তমটি কম-বেশি সব সময়ই থাকে অনুপস্থিত; সে দুর্বোধ্য সংকেতের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তার পুজোরীর সাথে: নারী তার প্রিয়তমের হৃদয়কে জানে শুধু বিশ্বাসে; নারীর কাছে তাকে যতো বেশি শ্রেষ্ঠ মনে হয়, তার আচরণকে ততো বেশি মনে হয় দুর্ভেদ্য। আমরা দেখেছি কামবাতিকগ্রস্ততায় এ-বিশ্বাস প্রতিরোধ করে সব স্ববিরোধকে। তার পাশে উপস্থিতি বোধের জন্যে নারীর স্পর্শের দরকার পড়ে না, দেখারও দরকার পড়ে না। সে হোক চিকিৎসক, পুরোহিত, বা হোক বিধাতা, নারী অনুভব করবে একই ধরনের প্রশ্নাতীত নিশ্চয়তা, পরিচারিকা হিশেবে সে তার হৃদয়ে গ্রহণ করবে সে-প্রেম, যা উর্ধ্বলোক থেকে বন্যার মতো বয়ে আসবে। পরস্পরমিশ্রিত হয়ে যায় মানবিক প্রেম ও স্বর্গীয় প্রেম, এ-কারণে নয় যে পরেরটি আগেরটির এক শোধিত রূপ, বরং এজন্যে যে প্রথমটি হচ্ছে এক পরমের দিকে, ধ্রুবর দিকে যাত্রা। উভয় ক্ষেত্রেই এটা প্রণয়িনী নারীর অনিশ্চিত অস্তিত্ব থেকে পরিত্রাণ লাভের ব্যাপার, এটা ঘটে সমগ্রের সাথে তার মিলনের মাধ্যমে, যা মূর্ত হয়ে আছে এক পরম পুরুষের মধ্যে।
এ-দ্ব্যর্থতা দর্শনীয় অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাধিগ্রস্ত বা স্বাভাবিকে–যাতে প্রেমিকের ওপর আরোপ করা হয় দেবত্ব, বা বিধাতাকে দেয়া হয়মানবিক বৈশিষ্ট্য।
আমরা এখানে বিবেচনা করছি একটি ব্যাধিগ্রস্তকে। তবে অনেক ভক্তের মধ্যেই আমরা দেখতে পাই এমন তালগোল পাকিয়ে তোলা হয়েছে পুরুষ ও বিধাতার মধ্যে যে তার জট খোলা অসম্ভব। বিশেষ করে স্বীকারোক্তিগ্রহণকারীটি অধিকার করে থাকে পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝামাঝি একটি দ্ব্যর্থবোধক স্থান। যখন অনুতাপকারিণী খুলে ধরে তার আত্মা, তখন স্বীকারোক্তিগ্রহণকারীটি মানবিক কানেই তা শোনে, তবে তার স্থিরদৃষ্টি নারীটিকে ঢেকে দেয় এক অতিপ্রাকৃত আলোতে; সে বিধাতার পুরুষ, সে মানুষের অবয়বে উপস্থিত বিধাতা। মাদাম গুয়ো ফাদার ল্য কঁবের সাথে তাঁর সাক্ষাৎকারের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে : ‘মনে হলো যেনো আত্মার গভীর আভ্যন্তর পথ বেয়ে তার থেকে আমার দিকে আসছে ঐশ্বরিক করুণার শক্তি এবং আমার থেকে তার দিকে ফিরে যাচ্ছে এমনভাবে যেনো সে বোধ করছে একই প্রভাব’। ওই সন্ন্যাসীর মধ্যস্থতার কাজ ছিলো মাদাম শুয়োর দীর্ঘকালব্যাপী আত্মার বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করা এবং তাঁর আত্মাকে নবঐকান্তিকতায় প্রজ্জ্বলিত করা। তিনি ওই সন্ন্যাসীর সঙ্গে থেকেছেন তার অতীন্দ্রিয়তার মহাপর্ব ভরে। এবং তিনি ঘোষণা করেছেন : ‘এটা শুধু একটা সম্পূর্ণ ঐক্যই ছিলো না; আমি তাকে বিধাতার থেকে পৃথক করতে পারি নি’। একথা বলা হবে অতিসরলীকরণ যে তিনি আসলে প্রেমে পড়েছিলেন একটি পুরুষের এবং ভান করেছিলেন বিধাতাকে ভালোবাসার; তিনি পুরুষটিকে ভালোবাসতেন, কেননা শুয়োর চোখে পুরুষটি ছিলো পুরুষটির থেকে ভিন্ন কেউ। ফার্দিয়েরের রোগিণীর মতোই শুয়ে যা অস্পষ্টভাবে লাভ করতে চেয়েছিলেন, তা হচ্ছে মূল্যবোেধর পরম উৎসধারা। এটাই প্রকৃতপক্ষে যে-কোনো অতীন্দ্রিয়বাদীর লক্ষ্য। নিঃসঙ্গ আকাশের দিকে তার উড়ালের শুরুতে কখনো কখনো পুরুষ মধ্যস্থতাকারী তার উপকারে আসে, তবে পুরুষটি অপরিহার্য নয়। ডান থেকে বাস্তবতাকে, যাদু থেকে কর্মকে, কাল্পনিক থেকে বস্তুনিষ্ঠতাকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করতে না পেরে নারী অনুপস্থিতকে নিজের শরীরে বাস্তবায়িত করার জন্যে থাকে বিশেষভাবে উনুখ। অতীন্দ্রিয়তাবাদ ও কামবাতিকগ্রস্ততাকে কখনো কখনো অভিন্ন করে দেখা হয়, তবে এ-দেখাটা অনেক কম সন্দেহজনক ব্যাপার। কামবাতিকগ্রস্ত নারী বোধ করে সে মূল্যবান হয়ে ওঠে একটি সার্বভৌম সত্তাকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে; পুরুষটি উদ্যোগ গ্রহণ করে কামসম্পর্কে, পুরুষটি যতোটা ভালোবাসা পায় সে ভালোবাসে তার থেকে বেশি; সে তার আবেগ প্রকাশ করে দৃষ্টিগ্রাহ্য তবে গোপন সংকেতের মাধ্যমে। এসবই দেখা যায়অতীন্দ্রিয়বাদীদের মধ্যে।
আজকাল সবাই একমত যে কামবাতিকগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে প্লাতোয়ীরূপে বা যৌনরূপে। এটা ঠিক, বিধাতার প্রতি অতীন্দ্রিয়বাদীর আবেগানুভূতিতে শরীর পালন করতে পারে ছোটো বা বড়ো ভূমিকা। নারীর ভাবোচ্ছ্বাস বিকশিত হয় পার্থিব প্রেমিকার ভাবোচ্ছাসের ছাঁচ ভিত্তি করেই। খ্রিস্ট তার বাহুবন্ধনে ধরে আছেন সেইন্ট ফ্রান্সিসকে, যখন এমন একটি মূর্তির ধ্যান করছিলেন ফোলিগনোর অ্যাঞ্জেলা, তখন খ্রিস্ট অ্যাঞ্জেলাকে বলেন : ‘এভাবেই তোমাকে আমি আলিঙ্গনে বাঁধবো, এবং এর থেকেও অনেক বেশি, যা মচক্ষে দেখা যাবে না… আমি কখনো তোমাকে ত্যাগ। করবো না যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো’। মাদাম গুয়ো লিখেছেন : ‘প্রেম আমাকেমুহূর্তের জন্যেও বিশ্রাম দেয় না। আমি তাকে বলি : “হে আমার প্রিয়তম, যথেষ্ট হয়েছে, আমাকে মুক্তি দাও।”… আমি চাই সে-প্রেম, যা অনির্বচনীয় শিহরণ পাঠায় আত্মার ভেতর দিয়ে, সে-প্রেম যা আমাকে মূৰ্ছিত করে … হে বিধাতা, আমি যা অনুভব করছি, তুমি যদি তা অনুভব করতে দিতে চরম কামপরায়ণ নারীদের, তাহলে অবিলম্বে তারা তাদের মিথ্যে সুখ ছেড়ে দিতে এ-প্রকৃত সুখ উপভোগের জন্যে’।
ধার্মিকভাবে কখনো কখনো মনে করা হয় যে ভাষার দীনতাই অতীন্দ্রিয়বাদীকে বাধ্য করে এ-কামপরায়ণ শব্দভাণ্ডার থেকে ধার করতে; কিন্তু তার অধিকারে আছে মাত্র একটি শরীরও; তাই সে পার্থিব প্রেম থেকে শুধু শব্দ ধার করে না, ধার করে শারীরিক প্রবণতাও; কোনো পুরুষের কাছে নিজেকে দান করার সময় সে যে-আচরণ করে, বিধাতাকে দেয়ার জন্যেও তার আছে একই আচরণ। তবে এটা কিছুতেই তার আবেগানুভূতির মূল্য হ্রাস করে না। ফোলিগনোর অ্যাঞ্জেলা যখন তার হৃদয়ের অবস্থা অনুসারে একবার হয়ে ওঠেন ‘মলিন ও কৃশ’, আবার ‘সুডৌল ও রক্তিমাভ’, যখন তিনি এমন তপ্ত অশ্রুপাত করতে থাকেন যে তার ওপর ঠাণ্ডা জল ঢালতে হয়, যেমন আমাদের বলেছেন তার এক জীবনীকার, যখন তিনি অবলুষ্ঠিত হতেন ভূমিতে, তাঁর এ-প্রপঞ্চগুলোকে আদৌ বিশুদ্ধভাবে ‘আধ্যাত্মিক’ বলে গণ্য করতে পারি না; তবে এগুলোকে যদি শুধু তার অতিরিক্ত ‘আবেগপরায়ণতা’র সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে যাই, তাহলে আমাদের সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে আফিমচারার ‘নিদ্রাকর গুণ’-এর কাছে দেহ কখনোই বিষয়ীর অভিজ্ঞতার কারণ নয়, কেননা কর্তা নিজেই থাকে তার কর্ম বৈশিষ্ট্যে : কর্তা তার অস্তিত্বের ঐক্যের মধ্যে যাপন করে তার প্রবণতা।
অতীন্দ্রিয়বাদীদের শত্রু ও মিত্র উভয় পক্ষই মনে করে সেইন্ট তেরেসার পরমমাল্লাসমত্ততাগুলোকে কামধমী বলে গণ্য করা হলে তাঁকে নামিয়ে দেয়া হয় মূৰ্ছারোগগ্রস্তের স্তরে। তবে মূৰ্ছারোগগ্রস্তকে যা অধঃপতিত করে, তা এ নয় যে তার শরীর সক্রিয়ভাবে প্রকাশ করে তার আবিষ্টগুলো, বরং এ-ব্যাপার যে সে আবিষ্ট, তার স্বাধীনতা সম্মােহিত ও অকার্যকর। ভারতীয় কোনো ফকির যে-নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে তার শরীরের ওপর, তা তাকে তার দেহের দাস করে তোলে না; দৈহিক অনুকৃতি কোনো প্রকৃতিস্থ, সুস্থ চৈতন্যের প্রাণাবেগের উপাদান হতে পারে। সেইন্ট তেরেসার রচনাবলি কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না, এবং এগুলো যাথার্থ প্রতিপাদন করে বার্নিনির মূর্তিটির, যাতে আমরা দেখতে পাই সন্তটি মূতি হচ্ছেন। পরম ইন্দ্রিয়সুখকরতার আতিশয্যে। তাঁর আবেগকে যদি সরলভাবে ‘কামের পরিশোধন’ হিশেবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাহলেও তাতে কম ভুল হয় না; প্রথমে থাকে কোনো অব্যক্ত কামনা, যা পরে রূপ ধারণ করে ঐশী প্রেমের। প্রেমপরায়ণা নিজে প্রথমে এমন কোনো বহীন বাসনার শিকার থাকে না, যা পরে নিবদ্ধ হয় একটি বিশেষ পুরুষের প্রতি প্রেমিকের উপস্থিতিই তার ভেতরে জাগিয়ে তোলে বাসনা, যা সরাসরি ধাবিত হয় প্রেমিকের দিকে। একইভাবে, সেইন্ট তেরেসা একটিমাত্র প্রক্রিয়ায় মিলিত হতে চান বিধাতার সাথে এবং ওই মিলন যাপন করেন তার শরীরের মধ্যে; তিনি তার স্নায়ু ও হরমোনরাশির দাসী নন : প্রশংসা করতেই হয় তার বিশ্বাসের তীব্রতাকে, যা বিদ্ধ করে তার দেহের অন্তরঙ্গতম অঞ্চলগুলোকে।
ঐশী প্রেমে নারী খোঁজে তা-ই, প্রেমপরায়ণা যা খোঁজে একটি পুরুষের মধ্যে : তার আত্মরতির উন্নয়ন; তার ওপর মনোযোগ দিয়ে, কামনার সাথে নিবদ্ধ হয়ে আছে সার্বভৌম স্থিরদৃষ্টিটি, এটা এক অলৌকিক দৈববর। তাঁর প্রথম জীবন ভরে, কিশোরী ও তরুণী রূপে, মাদাম গুয়ো প্রেম ও অনুরাগ লাভের বাসনায় সব সময়ই পেয়েছেন নিদারুণ যন্ত্রণা। একজন আধুনিক প্রোটেস্ট্যান্ট অতীন্দ্রিয়বাদী মাদমোয়াজেল ভি লিখেছেন : ‘আমার প্রতি কেউই বিশেষ আগ্রহ পোষণ করে না বা আমার ভেতরে কী ঘটে চলছে, তার প্রতি সহানুভূতিপরায়ণ নয়, এর থেকে আর কিছুই আমাকে বেশি। অসুখী করে না’। সৎ-বভ মাদাম ক্রুদেনের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন যে তিনি কল্পনা করতেন বিধাতা তাঁকে নিয়ে নিরন্তর ব্যাপৃত, এমন হতো যে প্রেমিকের সাথে তীব্র সংকটের মুহূর্তগুলোতে তিনি যন্ত্রণায়আর্তনাদ করে উঠতেন : ‘বিধাতা আমার, আমি কী যে সুখী! আমার সুখের আতিশয্যের জন্যে তোমার কাছে ক্ষমা চাই’। আমরা বুঝতে পারি এটা কতোটা নেশাকর হয়ে ওঠে আত্মরতিবতীর জন্যে, যখন সারা আকাশ হয়ে ওঠে তার দর্পণ; তার দেবত্বপ্রাপ্ত প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে বিধাতার নিজের মতোই অনন্ত, এবং এটা কখনো বিবর্ণ হবে না।
অধিকাংশ নারী অতীন্দ্রিয়বাদী বিধাতার কাছে নিজেদের অক্রিয়ভাবে সমর্পণ করে তৃপ্ত হয় না; তারা তাদের দেহ বিনাশ করে সক্রিয়ভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চায় নিজেদের। সন্দেহ নেই, সন্ন্যাসী ও পুরোহিতেরা চর্চা করেছে কৃচ্ছব্রতের, তবে যেউন্মত্ত ক্রোধে নারী অবজ্ঞা করে তার দেহকে, তা ধারণ করে বিশেষ ও উৎকট রূপ। তার দেহের প্রতি নারীর মনোভাবের দ্ব্যর্থতার কথা আমরা উল্লেখ করেছি : অবমাননা ও দুঃখভোগের মাধ্যমে সে একে রূপান্তরিত করে একটি শ্রদ্ধা ও গৌরবের বস্তুতে। সম্ভোগের বস্তুরূপে প্রেমিকের কাছে এটি দান করে সে হয়ে ওঠে একটি মন্দির, একটি প্রতিমা; প্রসবের যন্ত্রণায় ছিন্নভিন্ন হয়ে সে সৃষ্টি করে বীরদের। অতীন্দ্রিয়বাদী তার দেহকে পীড়ন করে এর ওপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে; এটিকে শোচনীয় করে তুলে সে এটিকে উন্নীত করে পরিত্রাণের হাতিয়ারের স্তরে। কোনোকোনো সন্ত যে-আতিশয্য করেছেন, তা ব্যাখ্যা করতে হবে এভাবেই। ফোলিগনোর সেইন্ট অ্যাঞ্জেলা আমাদের বলেছেন যে-জলে তিনি কিছুক্ষণ আগে ধুয়েছেন কুষ্ঠরোগীর হাতপা, সে-জল তিনি পান করেছেন আনন্দে :
এ-পানীয় আমাদের এখন সুমিষ্টতায় প্লাবিত করে যে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ওই আনন্দ অনুসরণ করে আমাদের। এতো সুখে আগে কখনো আমি পান করি নি। আমার গলায় আটকে গিয়েছিলো কুষ্ঠরোগীর ঘায়ের এক টুকরো আঁশটে চামড়া। ওটি থেকে মুক্তি পাওয়ার বদলে আমি চেষ্টা করি ওটি গিলে ফেলতে এবং আমি সমর্থ হই। আমার মনে হয় যেনো আমি এই মাত্র অংশ নিয়েছি খ্রিস্টের শেষ ভোজ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে। আমাকে প্লাবিত করে যে-উল্লাস, তা আমি কখনো প্রকাশ করতে সমর্থ হবো না।
পরমোল্লাসমত্ততা, স্বপ্নবিভাব, বিধাতার সাথে আলাপ–এ-আন্তর অভিজ্ঞতাই কিছু নারীর জন্যে যথেষ্ট। অন্যরা চাপ বোধ করে তাদের কাজের মাধ্যমে এটা বিশ্বকে জানানোর। কর্ম ও ধ্যানের সম্পর্ক ধারণ করে দুটি ভিন্ন রূপ। সেইন্ট ক্যাথেরিন, সেইন্ট তেরেসা, জোয়ান অফ আর্কের মতো কর্মযোগী নারীরা আছেন, যারা ভালোভাবেই জানেন তাদের মনে আছে কী লক্ষ্য এবং তারা তা অর্জনের চমৎকার উপায়ও উদ্ভাবন করেন।
“দ্বিতীয় লিঙ্গ- সিমোন দ্য বোভোয়ার” প্রবন্ধ বা উপন্যাস সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
প্রথম খন্ডঃ তথ্য ও কিংবদন্তি
ভাগ – ১: নিয়তি
♦ ঐতিহাসিক বস্তুবাদের দৃষ্টিকোণ
ভাগ – ২ : ইতিহাস
♦ পিতৃতান্ত্রিক কাল ও ধ্রুপদী মহাযুগ
♦ মধ্যযুগব্যাপী থেকে আঠারো শতকের ফ্রান্স পর্যন্ত
♦ ফরাশি বিপ্লব থেকেঃ চাকুরি ও ভোট
ভাগ – ৩ : কিংবদন্তি
দ্বিতীয় খন্ডঃ আজ নারীর জীবন
ভাগ – ৪ : গঠনের বছরগুলো
ভাগ – ৫ : পরিস্থিতি
ভাগ – ৬ : যথার্থ প্রতিপাদন
ভাগ – ৭ : মুক্তির অভিমুখে