০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকূঃ ৪০
০১
الم
আলিফ-লাম-মীম
০২
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এটা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আল্লাহ ভীরুদের (পরহেজগারদের) জন্যে এ গ্রন্থ হিদায়াত বা মুক্তিপথের দিশারী।
০৩
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
যারা অ-দৃষ্ট বিষয়গুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করে, এবং নামায প্রতিষ্ঠিত করে ও আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে থাকে।
০৪
وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
এবং যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তদ্বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।
০৫
أُولَـٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
এরাই তাদের প্রভুর পক্ষ হতে প্রাপ্ত হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং এরাই সফলকাম।
০৬
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদেরকে তুমি সতর্ক কর বা না কর, উভয়টা তাদের জন্যে সমান, তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
০৭
خَتَمَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ তাদের অন্তরসমূহের উপর ও তাদের কর্ণসমূহের উপর মোহরাংকিত করে দিয়েছেন এবং তাদের চক্ষুসমূহের উপর আবরণ পড়ে আছে এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।
০৮
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
আর মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর উপর এবং বিচার দিবসের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা মোটেই ঈমানদার নয়।
০৯
يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
তারা আল্লাহ ও মু’মিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে, প্রকৃত অর্থে তারা নিজেদের ব্যতীত আর কারও সঙ্গে প্রতারণা করে না, অথচ তারা এ সম্বন্ধে বোধি রাখে না।
১০
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
তাদের অন্তরে ব্যাধি (রোগ) রয়েছে, উপরন্তু আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে যেহেতু তারা মিথ্যা বলতো।
১১
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না তখন তারা বলে আমরা তো শুধু সংশোধনকারী।
১২
أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـٰكِن لَّا يَشْعُرُونَ
সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।
১৩
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَـٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন; তখন তারা বলেঃ নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনবো? সাবধান! নিশ্চয় তারাই নির্বোধ কিন্তু তারা তারা অবগত নয়।
১৪
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
এবং যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয় তখন তারা বলেঃ আমরা ঈমান এনেছি এবং যখন তারা নিজেদের দলপতি ও দুষ্ট নেতাদের সাথে নির্জনে মিলিত হয়, তখন বলেঃ আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা তো শুধু ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে থাকি।
১৫
اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
আল্লাহ তাদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরার জন্য ঢিল দেন।
১৬
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
এঁরা তারাই, যারা সুপথের পরিবর্তে বিপথকে ক্রয় করেছে, সুতরাং তাদের বানিজ্য লাভজনক হয়নি এবং তারা সঠিক-সরল পথে পরিচালিত হয়নি।
১৭
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ
এদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায় যে অগ্নি প্রজ্বলিত করলো, অতঃপর অগ্নি যখন তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত স্থান আলোকিত করলো, তখন আল্লাহ তাদের আলো ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে ছেড়ে দিলেন, সুতরাং তারা কিছুই দেখতে পায় না।
১৮
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
তারা বধির, মূক ও অন্ধ অতএব তারা (সঠিক পথের দিকে) প্রত্যাবর্তন হবে না।
১৯
أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ ۚ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ
অথবা আকাশ হতে পানি বর্ষণের ন্যায় যাতে অন্ধকার, গর্জন ও বিদ্যুৎ রয়েছে, তারা বজ্রধ্বনি বশতঃ মৃত্যু ভয়ে তাদের কর্ণসমূহে স্ব-স্ব অঙ্গুলি গুঁজে দেয় এবং আল্লাহ অবিশ্বাসীদের পরিবেষ্টনকারী।
২০
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
যেন বিদ্যুৎ তাদের দৃষ্টি হরণ করে ফেলবে, যখন তিনি তাদের জন্যে একটু আলো (বিদ্যুত) প্রজ্বলিত করেন তখন, তাতে তারা চলতে থাকে এবং যখন তাদের উপর অন্ধকারাচ্ছন্ন করেন তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে এবং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন নিশ্চয় তাদের শ্রবন শক্তি ও তাদের দর্শন শক্তি হরণ করতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর শক্তিমান।
২১
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ধর্মভীরু (পরহেজগার) হও।
২২
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
যিনি তোমাদের জন্যে জমিনকে শয্যা ও আকাশকে ছাদ স্বরূপ করেছেন এবং যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য উপজীবিকাস্বরূপ ফলপুঞ্জ উৎপাদন করেন, অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না।
২৩
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তৎ সদৃশ একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
২৪
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনো করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন মানুষ ও প্রস্তরপুঞ্জ যা অবিশ্বাসীদের জন্যে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
২৫
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَـٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে, তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্যে এমন বেহেস্ত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে; যখন তা হতে তাদেরকে উপজীবিকার জন্যে ফলপুঞ্জ প্রদান করা হবে তখন তারা বলবে- আমাদের এটা তো পূর্বেই প্রদত্ত হয়েছিল এবং তাদেরকে এর দ্বারা ওর সদৃশ প্রদান করা হবে এবং তাদের জন্যে তন্মধ্যে পবিত্র সহধর্মিণীগণ থাকবে এবং সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
২৬
إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي أَن يَضْرِبَ مَثَلًا مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَا ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَيَقُولُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَـٰذَا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا ۚ وَمَا يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ
নিশ্চয় আলাহ মশা অথবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্রতার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করতে লজ্জাবোধ করেন না, সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তারা তো বিশ্বাস করবে যে, এ উপমা তাদের প্রভুর পক্ষ হতে খুবই স্থানোপযোগী হয়েছেঃ আর যারা কাফির হয়েছে, সর্বাবস্থায় তারা এটাই বলবে এসব নগণ্য বস্তুর উপমা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্যই বা কি? তিনি এর দ্বারা অনেককে বিপথগামী করে থাকেন এবং এর দ্বারা অনেককে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, আর এর দ্বারা তিনি শুধু ফাসিকদেরকেই (পাপীষ্ট, অনাচারী) বিপথগামী করে থাকেন।
২৭
الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং ঐসব সম্বন্ধ ছিন্ন করে যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা ভূপৃষ্ঠে বিবাদ সৃষ্টি করে, তারাই পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ।
২৮
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ۖ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছো? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে সঞ্জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে নির্জীব করবেন, পরে আবার জীবন্ত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে প্রতিগমন করতে হবে।
২৯
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যা কিছু আছে- সমস্তই সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন, অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
৩০
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
এবং যখন তোমার রব ফেরেস্তাগণকে বললেনঃ নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো, তারা বললোঃ আপনি কি জমীনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে, তারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আর আমরাই তো আপনার প্রশংসা গুণগান করছি এবং আপনারই পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। তিনি বললেনঃ নিশ্চয় আমি যা পরিজ্ঞাত আছি তা তোমরা অবগত নও।
৩১
وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَـٰؤُلَاءِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
এবং তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন, অনন্তর তৎসমুদয় ফেরেস্তাদের সামনে উপস্থাপিত করলেন; তৎপর বললেনঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে আমাকে এসব বস্তুর নাম সমূহ জানাও।
৩২
قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
তারা বলেছিল- আপনি পরম পবিত্র; আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তদ্ব্যতীত আমাদের কোনই জ্ঞান নেই; নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
৩৩
قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ ۖ فَلَمَّا أَنبَأَهُم بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
তিনি ব্লেছিলেন হে আদম, তুমি তাদের ঐসকলের নামসমূহ জানিয়ে দাও; অতঃপর যখন সে তাদেরকে ঐগুলোর নামসমূহ জানিয়ে দিল, তখন তিনি বলেছিলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের অদৃশ্য বিষয় অবগত আছি এবং তোমরা যা প্রকাশ কর ও যা গোপন কর আমি তাও পরিজ্ঞাত আছি।
৩৪
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
এবং যখন আমি ফেরেস্তাগণকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিশ ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল; সে অগ্রাহ্য করলো এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
৩৫
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ
এবং আমি বললাম হে আদম! তুমি ও তোমার সধর্মিণী জান্নাতে অবস্থান কর এবং তা হতে যা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে ভক্ষণ কর; কিন্তু ঐ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না- অন্যথা তোমার অত্যাচারীগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৩৬
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ
অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে সেখান থেকে পদস্ফলিত করলো, তৎপরে যারা যেখানে ছিল তথা হতে তাদেরকে বহির্গত করলো; এবং আমি বললাম- তোমরা নীচে নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু; এবং পৃথিবীতেই তোমাদের জন্যে এক নির্দিষ্টকালের অবস্থিতি ও ভোগ-সম্পদ রয়েছে।
৩৭
فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অনন্তর আদম স্বীয় প্রতিপালক হতে কতিপয় বাক্য শিক্ষা করলেন, আল্লাহ তখন তাঁর তওবা কবুল করে তাঁকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।
৩৮
قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
আমি বললামঃ তোমরা সবাই এখান (জান্নাত) হতে নিচে নেমে তোমাদের নিকট যে হেদায়েত উপস্থিত হবে পরে যে আমার সেই হেদায়েতের অনুসরণ করবে বস্তুতঃ তাদের কোনই ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।
৩৯
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আর যারা অবিশ্বাস করবে ও আমার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা সদা অবস্থান করবে।
৪০
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ
হে ইসরাঈল বংশধর, আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ কর এবং আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করবো এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
৪১
وَآمِنُوا بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
এবং আমি যা অবতীর্ণ করেছি তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তোমাদের সাথে যা আছে তা তারই সত্যতা প্রমাণকারী এবং এতে তোমরাই প্রথম অবিশ্বাসী হয়ো না এবং আমার আয়াতসমূহের পরিবর্তে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না এবং তোমরা বরং আমাকেই ভয় কর।
৪২
وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং সে সত্য গোপন করো না যেহেতু তোমরা তা অবগত আছ।
৪৩
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
আর তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর ও যাকাত প্রদান কর এবং রুকু’কারীদের সাথে রুকু কর।
৪৪
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
তবে কি তোমরা লোকদেরকে সৎকার্যে আদেশ করছো এবং তোমাদের নিজেদের ভুলে যাচ্ছ- অথচ তোমরা গ্রন্থ পাঠ কর; তবে কি তোমরা হৃদয়ঙ্গম করছো না?
৪৫
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
এবং তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে প্রার্থনা কর এবং অবশ্যই তা কঠিন; কিন্তু বিনীতগণের পক্ষে নয়।
৪৬
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে সম্মিলিত হবে এবং তারা তাঁরই দিকে প্রতিগমন করবে।
৪৭
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি তা স্মরণ কর এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সমগ্র পৃথিবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
৪৮
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
এবং তোমরা সে দিবসকে ভয় কর, যেদিন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি হতে কিছুমাত্র উপকৃত হবে না এবং কোন ব্যক্তি হতে কোন সুপারিশও গৃহীত হবে না, কোন ব্যক্তি হতে কোন বিনিময়ও গ্রহণ করা হবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না।
৪৯
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
এবং যখন আমি তোমাদেরকে ফির’আউনের সম্প্রদায় হতে বিমুক্ত করেছিলাম- তারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতো, তোমাদের পুত্রগণকে হত্যা করতো ও তোমাদের কন্যাগণকে জীবিত রাখতো এবং এতে তোমাদের প্রতিপালক হতে তোমাদের জন্যে মহাপরীক্ষা ছিল।
৫০
وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
এবং যখন আমি তোমাদের জন্য সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, তৎপর তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফির’আউনের স্বজনবৃন্দকে নিমজ্জিত করেছিলাম এমতাবস্থায় তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে।

০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকূঃ ৪০
৫১
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَىٰ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ
এবং যখন আমি মূসার সঙ্গে চল্লিশ রজনীর অঙ্গীকার করেছিলাম, অনন্তর তারপরে তোমরা গো-বৎসকে (মা’বূদ হিসেবে) গ্রহণ করেছিলে এবং তোমরা অত্যাচারী ছিলে।
৫২
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
তা স্বত্বেও আমি তোমাদেরকে মার্জনা করেছিলাম- যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
৫৩
وَإِذْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَالْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আর যখন আমি মূসাকে গ্রন্থ ও ফুরকান (প্রভেদকারী) দিয়েছিলাম, যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও।
৫৪
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُم بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُوا إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
আর যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় তোমরা গো-বৎসকে (ইবাদতের জন্যে) গ্রহণ করে তোমাদের নিজিদের প্রতি অত্যাচার করেছো; অতএব তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তোমরা পরস্পরকে হত্যা কর তোমাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর; অনন্তর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা দান করেছিলেন, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।
৫৫
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
এবং যখন তোমরা বলেছিলেঃ হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে দর্শন না করা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করবো না- তখন বিদ্যুৎ (বজ্র) তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল ও তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।
৫৬
ثُمَّ بَعَثْنَاكُم مِّن بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
তৎপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে সঞ্জীবিত করেছিলাম, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
৫৭
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ۖ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
এবং আমি তোমাদের উপর মেঘমালার ছায়া দান করেছিলাম এবং তোমাদের প্রতি ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ অবতীর্ণ করেছিলাম; আমি তোমাদের যে উপজীবিকা দান করেছি সে পবিত্র জিনিস হতে ভক্ষণ কর; এবং তারা আমার কোন অনিষ্ট করেনি, এবং তারা নিজেদের অনিষ্ট করেছিল।
৫৮
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هَـٰذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُولُوا حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ ۚ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ
এবং যখন আমি বললামঃ তোমরা এ নগরে প্রবেশ কর, অতঃপর তা হতে ইচ্ছামত ভক্ষণ কর এবং নতশিরে দ্বারে প্রবেশ কর ও তোমরা বলঃ আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তাহলে আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবো এবং অচিরেই সৎকর্মশীলগণকে অধিকতর দান করবো।
৫৯
فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا رِجْزًا مِّنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
অনন্তর যারা অত্যাচার করেছিল- তাদেরকে যা বলা হয়েছিল, তৎপরিবর্তে তারা সে কথার পরিবর্তন করলো, পরে অত্যাচারীরা যে দুষ্কর্ম করেছিল, তজ্জন্যে আমি তাদের উপর আকাশ হতে শাস্তি অবতীর্ণ করেছিলাম।
৬০
وَإِذِ اسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا وَاشْرَبُوا مِن رِّزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
এবং যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করেছিলেন তখন আমি বলেছিলাম তুমি স্বীয় লাঠির দ্বারা প্রস্তরে আঘাত কর; অনন্তর তা হতে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হলো; প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ঘাট জেনে নিল; তোমরা আল্লাহর উপজীবিকা হতে ভক্ষণ কর ও পান কর এবং পৃথিবীতে শান্তি ভঙ্গকারী রূপে বিচরণ করো না।
৬১
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ مِن بَقْلِهَا وَقِثَّائِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ
এবং যখন তোমরা বলেছিলেঃ হে মূসা, আমরা একইরূপ খাদ্যে ধৈর্যধারণ করতে পারি না, অতএব তুমি আমাদের জন্য প্রভুর নিকট প্রার্থনা কর- যেন তিনি আমাদের জন্মভূমিতে যা উৎপন্ন হয়, তা হতে শাক-সব্জি, কাঁকুড়, গম, মসুর এবং পেঁয়াজ উৎপাদন করেন; সে বলেছিলঃ যা উৎকৃষ্ট তোমরা কি তার সঙ্গে যা নিকৃষ্ট তা বিনিময় করতে চাও? কোন নগরে উপনীত হও প্রার্থিত দ্রব্যগুলো অবশ্যই প্রাপ্ত হবে এবং তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র উপনীত হল এবং তারা আল্লাহর ক্রোধে পতিত হল এ’হেতু যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করতো ও অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করতো; এবং একারণেও যে, তারা অবাধ্যাচরণ করেছিল ও সীমা অতিক্রম করেছিল।
৬২
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَىٰ وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয় মুসলমান, ইয়াহুদী, খৃষ্টান এবং সাবেঈন সম্প্রদায় (এদের মধ্যে) যারা আল্লাহর প্রতি কেয়ামতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং ভালো কাজ করে, তাদের জন্যে তাদের প্রভুর নিকট পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোন প্রকার ভয় এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
৬৩
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
এবং যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম, এবং তোমাদের উপর তূর পর্বত সমুচ্চ করেছিলাম যে, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি (কিতাব) তা দৃঢ়রূপে ধারণ কর এবং এতে যা আছে তা স্মরণ কর- যাতে তোমরা নিষ্কৃতি পেতে পার।
৬৪
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ
এরপর পুনরায় তোমরা ফিরে গেলে, অতএব যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর করুণা না থাকতো, তবে অবশ্য তোমরা বিনাশ প্রাপ্ত হতে।
৬৫
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ
এবং অবশ্যই তোমরা অবগত আছো যে, তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের সীমা লঙ্ঘন করেছিল, আমি তাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।
৬৬
فَجَعَلْنَاهَا نَكَالًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
অনন্তর আমি এটা তাদের সমসাময়িক ও তাদের পরবর্তীদের জন্য শিক্ষা এবং আল্লাহ ভিরূগণের জন্যে উপদেশ স্বরূপ করেছিলাম।
৬৭
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
এবং যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ, তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা একটি গরু ‘যবহ’ কর, তারা বলেছিলঃ তুমি কি আমাদেরকে উপহাস করছো? তিনি বলেছিলেন, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন আমি মূর্খদের অন্তর্গত না হই।
৬৮
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذَٰلِكَ ۖ فَافْعَلُوا مَا تُؤْمَرُونَ
তারা বলেছিলঃ তুমি আমাদের জন্যে তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি আমাদেরকে যেন সেটা কি কি গুণ বিশিষ্ট হওয়া দরকার তা বলে দেন, তিনি বলেছিলেনঃ তিনি (আল্লাহ) বলেছেন যে, নিশ্চয় সে গরু বয়োবৃদ্ধও নয় এবং শাবকও নয়- এ দুয়ের মধ্যবর্তী, অতএব তোমরা যেরূপ আদিষ্ট হয়েছো তা করে ফেল।
৬৯
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُهَا ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِينَ
তারা বলেছিলঃ তুমি আমাদের জন্যে তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি ওর বর্ণ কিরূপ তা আমাদেরকে বলে দেন; তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ বলেছেন যে, নিশ্চয় গরুর বর্ণ গাঢ় পীত, ওটা দর্শনগণকে আনন্দ দান করে। (দৃষ্টি নন্দন)
৭০
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ إِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَا وَإِنَّا إِن شَاءَ اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ
তারা বলেছিলঃ তুমি আমাদের জন্যে তোমার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা কর যে, তিনি যেন ওটা কিরূপ তা আমাদের জন্যে বর্ণনা করেন, কেননা আমাদের নিকট সকল গরুই একই ধরণের এবং আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা সুপথগামী হবো।
৭১
قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُولٌ تُثِيرُ الْأَرْضَ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيهَا ۚ قَالُوا الْآنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ ۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُوا يَفْعَلُونَ
তিনি বললেনঃ নিশ্চয় তিনি বলেছেন যে, অবশ্যই সে গরু, সুস্থকায়, নিষ্কলঙ্ক, ওটা কর্ম বা ভূ-কর্ষণের কাজে লাগানো হয়নি এবং ক্ষেতে পানি সেচনেও নিযুক্ত হয়নি, তারা বলেছিল- এক্ষণে তুমি সত্য প্রকাশ করেছ, অতঃপর তারা ওটা যবাহ করলো যা তাদের করবার ইচ্ছা ছিল না।
৭২
وَإِذْ قَتَلْتُمْ نَفْسًا فَادَّارَأْتُمْ فِيهَا ۖ وَاللَّهُ مُخْرِجٌ مَّا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ
এবং যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করার পর তদ্বিষয়ে বিরোধ করেছিলে এবং তোমরা যা গোপন করেছিলে আল্লাহ তার প্রকাশকারী
৭৩
فَقُلْنَا اضْرِبُوهُ بِبَعْضِهَا ۚ كَذَٰلِكَ يُحْيِي اللَّهُ الْمَوْتَىٰ وَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
তৎপর আমি বলেছিলামঃ ওর (গাভীর) কিছু অংশ দ্বারা তাকে (মৃতকে) আঘাত কর; এইরূপে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং স্বীয় নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন- যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।
৭৪
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً ۚ وَإِنَّ مِنَ الْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ الْأَنْهَارُ ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ الْمَاءُ ۚ وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
অনন্তর এরপর তোমাদের হৃদয় প্রস্তরের ন্যায় কঠিন বরং তদপেক্ষা কঠিনতর হল এবং নিশ্চয় প্রস্তর হতেও প্রস্রবণ নির্গত হয় এবং নিশ্চয় সেগুলোর মধ্যে কোন কোনটি বিদীর্ণ হয়, তৎপরে তা হতে পানি নির্গত হয় এবং নিশ্চয় ঐগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর ভয়ে পতিত হয়, এবং তোমরা যা করছো তৎপ্রতি আল্লাহ অমনোযোগী নন।
৭৫
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
তোমরা কি আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে এমন কতক লোক গত হয়েছে যারা আল্লাহর কালাম শুনতো, অতঃপর তাকে বুঝার পর তাকে বিকৃত করতো, অথচ তারা জানতো।
৭৬
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَا بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ قَالُوا أَتُحَدِّثُونَهُم بِمَا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَاجُّوكُم بِهِ عِندَ رَبِّكُمْ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
আর যখন তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত তখন বলে- আমরা ঈমান এনেছি, আর যখন তাদের কেউ কারো (ইয়াহূদীদের) নিকট একাকী হয়, তাখন তারা বলেঃ তোমরা কি মুসলমানদেরকে এমন কথা বলে দাও যা আল্লাহ তোমাদের নিকট প্রকাশ করেছেন? পরিণামে তারা তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে তর্কে পরাজিত করবে। তোমরা কি বুঝ না?
৭৭
أَوَلَا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ
তারা কি জানেনা যে, তারা যা গুপ্ত রাখে এবং যা প্রকাশ করে আল্লাহ সবই জানেন?
৭৮
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ
এবং তাদের মধ্যে অনেক অশিক্ষিত লোক আছে, যারা প্রবৃত্তি ব্যতীত কোন গ্রন্থ অবগত নয় এবং তারা শুধু কল্পনাসমূহ রচনা করে থাকে।
৭৯
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
তাদের জন্যে আফসোস! যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে এবং পার্থিব তুচ্ছ স্বার্থের জন্য বলে যেঃ এটা আল্লাহর নিকট হতে সমাগত- তাদের হস্ত যা লিপিবদ্ধ করেছে তজ্জন্যে তাদের প্রতি আক্ষেপ এবং তারা যা উপার্জন করছে তজ্জন্যে তাদের প্রতি আক্ষেপ।
৮০
وَقَالُوا لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَةً ۚ قُلْ أَتَّخَذْتُمْ عِندَ اللَّهِ عَهْدًا فَلَن يُخْلِفَ اللَّهُ عَهْدَهُ ۖ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
এবং তারা বলেঃ নির্ধারিত দিবসসমূহ ব্যতীত (জাহান্নামের) অগ্নি আমাদেরকে স্পর্শ করবে না, তুমি বলঃ তোমরা কি আল্লাহর নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছো, ফলে আল্লাহ কখনোই স্বীয় অঙ্গীকারের অন্যথা করবেন না? অথবা আল্লাহ স্মবন্ধে যা জানো না তোমরা তাই বলছো?
৮১
بَلَىٰ مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ فَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ অর্জন করেছে এবং স্বীয় পাপের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েছে, বস্তুতঃ তারাই জাহান্নমের অধিবাসী, তথায় তারা সদা অবস্থান করবে।
৮২
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী, তন্মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
৮৩
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ
আর যখন আমি বানী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা ব্যতীত আর কারো ইবাদত করবে না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে ও আত্মীয়দের, অনাথদের ও মিসকিনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তৎপর তোমাদের মধ্য হতে অল্পসংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়েছিলে, যেহেতু তোমরা অগ্রাহ্যকারী ছিলে।
৮৪
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لَا تَسْفِكُونَ دِمَاءَكُمْ وَلَا تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ
এবং আমি যখন তোমাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম যে পরস্পর রক্তপাত করবে না এবং স্বীয় বাসস্থান হতে আপন ব্যক্তিদেরকে বহিষ্কৃত করবে না; তৎপরে তোমরা স্বীকৃতি দিয়েছিলে এবং তোমরাই ওর সাক্ষী ছিলে।
৮৫ ثُمَّ أَنتُمْ هَـٰؤُلَاءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًا مِّنكُم مِّن دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِم بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَارَىٰ تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ ۚ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
অনন্তর তোমরাই সেই লোক যারা (পরস্পর) তোমাদের নফস সমূহকে হত্যা করছো এবং তোমরা তোমাদের মধ্য হতে এক দলকে তাদের গৃহ হতে বহিষ্কৃত করে দিচ্ছ, তাদের প্রতি শত্রুতাবশতঃ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে সাহায্য করছো এবং তারা বন্দী হয়ে তোমাদের নিকট আসলে তোমরা তাদেরকে বিনিময় প্রদান কর; অথচ তাদেরকে বহিষ্কৃত করা তোমাদের জন্য অবৈধ; তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর ও কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তোমরা যা করছো আল্লাহ তদ্বিষয়ে অমনোযোগী নন।
৮৬
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۖ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করেছে; অতএব তাদের দন্ড লঘু হবে না ও তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।
৮৭
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِن بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ ۖ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَىٰ أَنفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ
এবং অবশ্যই আমি মূসাকে গ্রন্থ প্রদান করেছি ও তারপরে ক্রমান্বয়ে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি; এবং আমি মরিয়ম পুত্র ঈসাকে নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছিলাম এবং পবিত্র যোগে তাঁকে শক্তি সম্পন্ন করেছিলাম; কিন্তু পরে যখন তোমাদের নিকট কোন রাসূল- তোমাদের প্রবৃত্তি যা ইচ্ছা করতো না, তা নিয়ে উপস্থিত হল তখন তোমরা অহংকার করলে; অবশেষে একদলকে মিথ্যাবাদী বললে এবং একদলকে হত্যা করলে।
৮৮
وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ ۚ بَل لَّعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلًا مَّا يُؤْمِنُونَ
এবং তারা বলে যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং তাদের অবিশ্বাসের জন্য আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন – যেহেতু তারা অতি অল্পই বিশ্বাস করে।
৮৯
وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُم مَّا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ ۚ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ
এবং যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যতা সমর্থক গ্রন্থ উপস্থিত হল এবং পূর্ব হতেই তারা কাফিরদের নিকট তা বর্ণনা করতো, অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত কিতাব আসলো, তখন তারা তাঁকে অস্বীকার করে বসলো, সুতরাং এরূপ কাফিরদের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক।
৯০
بِئْسَمَا اشْتَرَوْا بِهِ أَنفُسَهُمْ أَن يَكْفُرُوا بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ بَغْيًا أَن يُنَزِّلَ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ فَبَاءُوا بِغَضَبٍ عَلَىٰ غَضَبٍ ۚ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُّهِينٌ
তারা নিজ জীবনের জন্য যা ক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যেহেতু আল্লাহ তাঁর দাসগণের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহ অবতারণ করেন- শুধু এ কারণে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তারা বিদ্রোহবশতঃ তা অবিশ্বাস করছে, অতঃপর তারা কোপের পর কোপে পতিত হয়েছে, এবং কাফিরদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
৯১
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ ۗ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنبِيَاءَ اللَّهِ مِن قَبْلُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এবং যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা বিশ্বাস কর, তখন তারা বলে- যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস করি এবং তাছাড়া যা রয়েছে তা অবিশ্বাস করে, অথচ এটা সত্য, তাদের সাথে যা আছে এটা তারই সত্যায়িতকারী; তুমি বলঃ যদি তোমরা বিশ্বাসীই ছিলে, তবে ইতিপূর্বে কেন আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছিলে?
৯২
وَلَقَدْ جَاءَكُم مُّوسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ
এবং নিশ্চয় মূসা উজ্জ্বল নিদর্শনাবলীসহ তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন, অনন্তর তোমরা তার পরে গোবৎস গ্রহণ করেছিলে, যেহেতু তোমরা অতযাচারী ছিলে।
৯৩
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاسْمَعُوا ۖ قَالُوا سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَأُشْرِبُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْعِجْلَ بِكُفْرِهِمْ ۚ قُلْ بِئْسَمَا يَأْمُرُكُم بِهِ إِيمَانُكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এবং যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমাদের উপর তূর পর্বত সমুচ্চ করেছিলাম। আমি যা প্রদান করলাম তা দৃঢ়রূপে ধারণ কর এবং শ্রবন কর তারা বলেছিলঃ আমরা শুনলাম ও অমান্য করলাম; এবং তাদের অবিশ্বাসের নিমিত্তে তাদের অন্তর সমূহে গো-বৎস প্রীতি বদ্ধমূল হয়েছিল; তুমি বলঃ যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমাদের বিশ্বাস যা কিছু আদেশ করছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
৯৪
قُلْ إِن كَانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الْآخِرَةُ عِندَ اللَّهِ خَالِصَةً مِّن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
তুমি বলঃ যদি অপর ব্যক্তিগণ অপেক্ষা তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট বিশেষ পারলৌকিক বাসস্থান থাকে, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
৯৫
وَلَن يَتَمَنَّوْهُ أَبَدًا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
এবং তাদের হস্তসমূহ পূর্বে যা প্রেরণ করেছে তজ্জন্যে তারা কখনোই তা (মৃত্যু) কামনা করবে না; এবং আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত আছেন।
৯৬
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَىٰ حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ۚ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَن يُعَمَّرَ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
এবং নিশ্চয় তুমি তাদেরকে অন্যান্য লোক এবং অংশীবাদীদের অপেক্ষাও অধিকতর আয়ু আকাঙ্ক্ষী পাবে; তাদের মধ্যে প্রত্যেকে কামনা করে সে যেন হাজার বছর আয়ু প্রাপ্ত হয় এবং দীর্ঘায়ুও তাকে শাস্তি হতে মুক্ত করতে পারবে না এবং তারা যা করছে আল্লাহ তার মহা পরিদর্শক।
৯৭
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَىٰ قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
তুমি বল- যে ব্যক্তি জীব্রাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে তিনিই তো সে আল্লাহর হুকুমে এ কুর’আনকে তোমার অন্তকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন, যে অবস্থায় তা স্বীয় পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে, পথ দেখাচ্ছে মু’মিনদের ও সুসংবাদ দিচ্ছে।
৯৮
مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ
যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণের, জিবরাঈলের এবং মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চয় আল্লাহ এরূপ কাফিরদের শত্রু।
৯৯
وَلَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۖ وَمَا يَكْفُرُ بِهَا إِلَّا الْفَاسِقُونَ
এবং নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ করেছি এবং দুষ্কার্যকারী ব্যতীত কেউই তা অবিশ্বাস করবে না।
১০০
أَوَكُلَّمَا عَاهَدُوا عَهْدًا نَّبَذَهُ فَرِيقٌ مِّنْهُم ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
কি আশ্চর্য যখন তারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ হল তখনই তাদের একদল তা ভঙ্গ করলো! বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।

০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকূঃ ৪০
১০১
وَلَمَّا جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِّمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ كِتَابَ اللَّهِ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ كَأَنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
এবং যখন আল্লাহর নিকট হতে তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়িতকারী রাসূল তাদের কাছে আগমন করলো, তখন যাদেরকে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের একদল আল্লাহর গ্রন্থকে নিজেদের পশ্চাদ্ভাগে নিক্ষেপ করলো, যেন তারা কিছুই জানে না।
১০২
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُم بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
এবং সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করতো, তারা তারই অনুসরণ করছে এবং সুলাইমান কুফুরী করেননি কিন্তু শয়তানরাই কুফুরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারুত-মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিতো, এবং তারা উভয়ে কাউকেও ওটা শিক্ষা দিতো না, যে পর্যন্ত তারা না বলতো যে, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ, অতএব তুমি কুফরী করো না, অনন্তর যাদের স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সঙ্ঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো এবং তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তদ্দারা কারো অনিষ্ট সাধন করতে পারতো না এবং তারা ওটাই শিক্ষা করছে যাতে তাদের ক্ষতি হয় এবং তাদের কোন উপকার সাধিত হয় না এবং নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্যে পরকালে কোনই অংশ নেই এবং তদ্বিনিময়ে তারা যে আত্ম-বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো!
১০৩
وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ خَيْرٌ ۖ لَّوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
এবং যদি তারা সত্য সত্যই বিশ্বাস করতো ও ধর্মভীরূ হতো তবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণ লাভ করতো, যদি তারা এটাই বুঝতো।
১০৪
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقُولُوا رَاعِنَا وَقُولُوا انظُرْنَا وَاسْمَعُوا ۗ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রায়েনা’ বলো না বরং ‘উনযুরনা’ বলো এবং শুনে নাও; আর কাফিরদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাময় শাস্তি।
১০৫
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
তোমাদের উপর তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক এটা মুশরিকরা এবং কাফিররা মোটেই পছন্দ করে না, আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাঁর করুণার জন্যে নির্দিষ্ট করে নেন, এবং আল্লাহ মহা করুণাময়।
১০৬
مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা আয়াতটিকে বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদাপেক্ষা উত্তম বা তদনুরূপ আনয়ন করি; তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সব বিষয়ের উপরেই ক্ষমতাবান?
১০৭
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
তুমি কি জানো না যে, আকাশ ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই, এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধুও নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই?
১০৮
أَمْ تُرِيدُونَ أَن تَسْأَلُوا رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ
তোমরা কি চাও যে, তোমাদের রাসূলের নিকট আবেদন করবে যেমন ইতিপূর্বে মূসার নিকট (হঠকারিতাবশতঃ এইরুপ বহু নিরর্থক) আবেদন করা হয়েছিল? আর যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে নিশ্চয় সে সঠিক পথ হতে দূরে সরে পড়ে।
১০৯
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ۖ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
কিতাবীদের অনেকে তাদের প্রতি সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তারা তাদের অন্তর্নিহিত বিদ্বেষবশতঃ তোমাদেরকে বিশ্বাস স্থাপনের পরে অবিশ্বাসী করতে ইচ্ছা করে; কিন্তু যে পর্যন্ত আল্লাহ স্বয়ং আদেশ আনয়ন না করেন, সে পর্যন্ত তোমরা ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা করতে থাকো; নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়োপরি ক্ষমতাবান।
১১০
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠিত ও যাকাত প্রদান কর; এবং তোমরা স্ব স্ব জীবনের জন্যে যে সৎকর্ম অগ্রে প্রেরণ করেছো; তা আল্লাহর নিকট প্রাপ্ত হবে; তোমরা যা করছো নিশ্চয় আল্লাহ তার পরিদর্শক।
১১১
وَقَالُوا لَن يَدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ ۗ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
এবং তারা বলেঃ যারা ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে না, এটাই তাদের বাসনা; তুমি বলঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।
১১২
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
অবশ্য যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে এবং সৎকর্মশীল হয়েছে, ফলতঃ তার জন্য তার প্রতিপালকের নিকট প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের জন্য কোন আশংকা নেই ও তারা সন্তপ্ত হবে না।
১১৩
وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَىٰ عَلَىٰ شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَىٰ لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
আর ইয়াহুদীগণ বলে যেঃ খ্রিস্টানেরা কোন (ধর্মীয়) বিষয়ের উপর নেই এবং খ্রিস্টানেরা বলে যে, ইয়াহূদীরাও কোন (ধর্মীয়) বিষয়ের উপর নেই; অথচ তারা গ্রন্থ পাঠ করে। এরূপ যারা জানে না, তারাও ওদের কথার অনুরূপ কথা বলে থাকে; অতএব যে বিষয়ে তারা মতভেদ করেছিলো, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের মধ্যে তদ্বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন।
১১৪
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
এবং যে কেউ আল্লাহর মসজিদ সমূহের মধ্যে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে নিষেধ করেছে এবং তা ধ্বংস করতে প্রয়াস চালিয়েছে- তার অপেক্ষা কে অধিক অত্যাচারী? এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে শঙ্কিত অবস্থায়ই তন্মধ্যে প্রবেশ করা উচিত; তাদের জন্যে ইহলোকের দুর্গতি এবং পরলোকে কঠোর শাস্তি রয়েছে।
১১৫
وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
আল্লাহর জন্যে পূর্ব ও পশ্চিম; অতএব তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সে দিকেই আল্লাহর মুখ; কেননা আল্লাহ (সর্বদিক) পরিবেষ্টনকারী পূর্ণ জ্ঞানবান।
১১৬
وَقَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ بَل لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ
এবং তারা বলেঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন! তিনি তা থেকে পরম পবিত্র; বরং যা কিছু গগনে ও ভূমণ্ডলে রয়েছে তা তাঁরই জন্যে; সবই তাঁর আজ্ঞাধীন।
১১৭
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ
তিনি গগন ও ভূবনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী এবং যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্যে শুধু ‘হও’ বলেন, আর তাতেই তা হয়ে যায়।
১১৮
وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا اللَّهُ أَوْ تَأْتِينَا آيَةٌ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ ۘ تَشَابَهَتْ قُلُوبُهُمْ ۗ قَدْ بَيَّنَّا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
এবং মূর্খেরা বলেঃ আল্লাহ আমাদের সাথে কেন কথা বলেন না- অথবা কেন আমাদের জন্যে কোন নিদর্শন উপস্থিত হয় না? এদের পূর্বে যারা ছিল তারাও এদের অনুরূপ কথা বলতো; তাদের সবারই অন্তর পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ; নিশ্চয় আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী বর্ণনা করি।
১১৯
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۖ وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ
নিশ্চয় আমি তোমাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শকরূপে (সতর্ককারীরূপে) প্রেরণ করেছি এবং তুমি দোযখবাসীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে না।
১২০
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
এবং ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ তুমি তাদের কর্ম অনুসরণ না করা পর্যন্ত তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না; তুমি বল- আল্লাহর প্রদর্শিত পথই সুপথ; এবং তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে তৎপর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ হতে তোমার জন্যে কোনই অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।
১২১
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَـٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
আমি তাদেরকে যে ধর্মগ্রন্থ দান করেছি তা যারা সত্যভাবে বুঝবার মত পাঠ করে তারাই এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে; এবং যে কেউ এটা অবিশ্বাস করে ফলতঃ তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
১২২
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ
হে বানী ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছি এবং নিশ্চয় আমি পৃথিবীর উপর তোমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি- তোমরা তা স্মরণ কর।
১২৩
وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ
আর তোমরা ঐ দিবসের ভয় কর, যেদিন কোন ব্যক্তি কোন ব্যক্তি হতে কিছু মাত্র উপকৃত হবে না এবং কারো নিকট হতে বিনিময় গৃহীত হবে না, কারো শাফা’আত (সুপারিশ) ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।
১২৪
وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
এবং যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন; তিনি (আল্লাহ) বলেছিলেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবমণ্ডলীর নেতা করবো; তিনি (ইব্রাহীম আঃ) বলেছিলেনঃ আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেনঃ আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।
১২৫
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ۖ وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
এবং আমি কা’বাগৃহকে মানব জাতির জন্য মিলন কেন্দ্র এবং সুরক্ষিত স্থান করেছি এবং তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলের নিকট অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী ও ই’তিফাককারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্যে পবিত্র রেখো।
১২৬
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـٰذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ قَلِيلًا ثُمَّ أَضْطَرُّهُ إِلَىٰ عَذَابِ النَّارِ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! এ স্থানকে আপনি নিরাপত্তাময় শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে উপজীবিকার জন্য ফল-শস্য প্রদান করুন, তিনি বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকে আমি অল্প দিন শান্তি দান করবো, তৎপরে তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করবো, এটি নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থান!
১২৭
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
যখন ইব্রাহীম ও ইসমাইল কা’বার ভিত্তি উত্তোলন করছিলেন, (তখন বলেনঃ) হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পক্ষ হতে এটা গ্রহণ করুন, নিশ্চয় আপনি মহা শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
১২৮
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
হে আমাদের প্রভু! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য হতেও আপনার অনুগত একদল লোক সৃষ্টি করুন, আর আমাদেরকে ইবাদতের আহকাম বলে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন, নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।
১২৯
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
হে আমাদের প্রভু! সে দলে তাদেরই মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দান করবেন ও তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।
১৩০
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ
এবং যে নিজেকে নির্বোধ করে তুলেছে সে ব্যতীত কে ইব্রাহীমের ধর্ম হতে বিমুখ হবে? এবং নিশ্চয়ই আমি তাকে এই পৃথিবীতে মনোনীত করেছিলাম, নিশ্চয় সে পরকালে সৎকর্মশীলগণের অন্তর্ভুক্ত।
১৩১
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ ۖ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
যখন তাঁর প্রভু তাঁকে বলেনঃ তুমি আনুগত্য স্বীকার কর; সে বলেছিলঃ আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।
১৩২
وَوَصَّىٰ بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
আর ইব্রাহীম ও ইয়াকুব স্বীয় সন্তানগণকে সদুপদেশ প্রদান করেছিল হে আমার বংশধরঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্যে এই (জীবন ব্যবস্থা) দ্বীন মনোনীত করেছেন, অতএব তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
১৩৩
أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَـٰهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
যখন ইয়াকুবের মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন কি তোমরা উপস্থিত ছিলে? তখন তিনি নিজ পুত্রগণকে বলেছিলেন- আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদত করবে? তারা বলেছিলেন- আমরা তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা’বূদ- সে অদ্বিতীয় মা’বূদের ইবাদত করবো, এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকবো।
১৩৪
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
ওটা একটা দল ছিল, যা অতীত হয়ে গেছে; তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের জন্যে এবং তোমরা যা অর্জন করেছো তা তোমাদের জন্যে এবং তারা যা করে গেছে তজ্জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না।
১৩৫
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
এবং তারা বলে যেঃ তোমরা ইয়াহূদী অথবা খৃষ্টান হও তবেই সুপথ প্রাপ্ত হবে, তুমি বলঃ বরং আমরা ইব্রাহীমের সুদৃঢ় ধর্মের অনুসরণ করি এবং তিনি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
১৩৬
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
তোমরা বলঃ আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর যা হযরত ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের বংশধরের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং মূসা ও ঈসা কে যা প্রদান করা হয়েছিল এবং অন্যান্য নবীগণ তাদের প্রভু হতে যা প্রদত্ত হয়েছিলেন, তদ সমুদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করছি, তাদের মধ্যে কাউকেও আমরা বিভেদ করি না, এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী।
১৩৭
فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অনন্তর তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রুপ বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে নিশ্চয় তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে; এবং যদি তারা ফিরে যায় তবে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। অতএব এখন তাদের ব্যাপারে আপনার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই মহাশ্রবনকারী, মহাজ্ঞানী।
১৩৮
صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ
আল্লাহর রং গ্রহণ করো, আল্লাহর রং-এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? এবং আমরা তাঁরই ইবাদতকারী।
১৩৯
قُلْ أَتُحَاجُّونَنَا فِي اللَّهِ وَهُوَ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ وَلَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُخْلِصُونَ
তুমি বলঃ তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে আমাদের সঙ্গে বিরোধ করছো? অথচ তিনিই আমাদের প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক, এবং আমাদের জন্যে আমাদের কার্যসমূহ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কার্যসমূহ এবং আমরা তাঁরই জন্যে নিবেদিত।
১৪০
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ قُلْ أَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ مِنَ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
তোমরা কি বলছো যে, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁদের বংশধর ইয়াহূদী কিংবা খৃস্টান ছিলেন? তুমি বলঃ তোমরাই সঠিক জ্ঞানী না আল্লাহ? আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য যে ব্যক্তি গোপন করছে সে অপেক্ষা কে বেশি অত্যাচারী? এবং তোমরা যা করছো তা হতে আল্লাহ অমনোযোগী নন।
১৪১
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ ۖ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ ۖ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
তারা একটি জামা’আত ছিল যা বিগত হয়েছে; তারা যা অর্জন করেছে তা তাঁদের জন্যে এবং তোমরা যা অর্জন করেছো তা তোমাদের জন্যে এবং তারা যা করে গেছে তদ্বিষয়ে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না।
১৪২
سَيَقُولُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا ۚ قُل لِّلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
মানবমণ্ডলীর ভিতর থেকে কিছু নির্বোধ লোক অচিরেই বলবে যে, কিসে তাদেরকে সেই কেবলা হতে ফিরিয়ে দিলো, যার দিকে তারা ছিল? তুমি বলে দাওঃ পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহর জন্যে, তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথ-প্রদর্শন করেন।
১৪৩
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ۗ وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী ন্যায়পরায়ণ উম্মত করেছি যেন তোমরা মানবগণের জন্যে সাক্ষী হও এবং রাসূল ও তোমাদের জন্যে সাক্ষী হয়, এবং তুমি যে কেবলার দিকে ছিলে, তা আমি এজন্যে নির্ধারণ করেছিলাম যে, কে রাসূলের অনুসরণ করে আর কে তা হতে স্বীয় পদদ্বয়ের গোড়ালী প্রদর্শন করিয়ে ফিরে যায় আমি তা জেনে নেবো এবং আল্লাহ যাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করেছেন তারা ছাড়া অপরের জন্য এটা অবশ্যই কঠোরতর; এবং আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমাদের ঈমান (নামায) বিনষ্ট করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানবগণের প্রতি স্নেহশীল করুণাময়।
১৪৪
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
নিশ্চয় আমি আকাশের দিকে তোমার মুখমুন্ডল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলাহ মুখীই করবো যা তুমি কামনা করছো; অতএব তুমি মসজিদে হারামের দিকে (কা’বার দিকে) তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও এবং তোমরা যেখানে আছো তোমাদের মুখ সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর; এবং নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তারা অবশ্যই অবগত আছে যে, নিশ্চয় এটা তাঁদের প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য এবং তারা যা করছে তদ্বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন।
১৪৫
وَلَئِنْ أَتَيْتَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ بِكُلِّ آيَةٍ مَّا تَبِعُوا قِبْلَتَكَ ۚ وَمَا أَنتَ بِتَابِعٍ قِبْلَتَهُمْ ۚ وَمَا بَعْضُهُم بِتَابِعٍ قِبْلَةَ بَعْضٍ ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ إِنَّكَ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِينَ
এবং যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে তাঁদের নিকট যদি তুমি সমুদয় নিদর্শন আনয়ন কর, তবুও তারা তোমার কিবলাহকে গ্রহণ করবে না; এবং তুমিও তাঁদের কিবলাহ গ্রহণ করতে পার না, আর না তারা পরস্পর একজন অন্যজনের কিবলার অনুসারী এবং তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে এর প্রেও যদি তুমি তাঁদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর, তবে নিশ্চয় তুমি অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
১৪৬
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّ فَرِيقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
যাদেরকে আমি কিতাব প্রদান করেছি, তারা রাসূলুল্লাহ-কে এরূপ ভাবে চিনে, যেমন চিনে, তারা আপন পুত্রদেরকে এবং নিশ্চয় তাদের একদল জ্ঞাতসারে সত্যকে গোপন করছে।
১৪৭
الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
এক বাস্তব সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ্য হতে; সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
১৪৮
وَلِكُلٍّ وِجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيهَا ۖ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ ۚ أَيْنَ مَا تَكُونُوا يَأْتِ بِكُمُ اللَّهُ جَمِيعًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
প্রত্যেকের জন্যে এক একটি লক্ষ্যস্থল রয়েছে, ঐদিকেই সে মুখমণ্ডল প্রত্যাবর্তিত করে, অতএব তোমরা কল্যাণের দিকে ধাবিত হও; তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সকলকেই একত্রিত করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।
১৪৯
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
এবং তুমি যেখান হতেই বের হবে, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে প্রত্যাবর্তিত কর এবং নিশ্চয় এটাই তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সত্য, এবং তোমরা যা করছো তদ্বিষয়ে আল্লাহ অমনোযোগী নন।
১৫০
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِي عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আর তুমি যেখান হতেই বের হও না কেন, তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরাও যে যেখানে আছ তোমাদের মুখমণ্ডল সেদিকেই প্রত্যাবর্তিত কর যেন তাঁদের অন্তর্গত অত্যাচারীগণ ব্যতীত অন্য কেউ তোমাদের সাথে বিতর্ক করতে না পারে, অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর যেন আমি তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করি এবং যেন তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হও।

০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকূঃ ৪০
১৫১
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যিনি তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করেন ও তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন।
১৫২
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো এবং তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও ও অবিশ্বাসী হয়ো না।
১৫৩
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সাথে আছেন।
১৫৪
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَـٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করো না।
১৫৫
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন ও প্রাণ এবং ফল শস্যের অভাবের কোন একটি দ্বারা পরীক্ষা করবো এবং ঐসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন।
১৫৬
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
যাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তারা বলেঃ নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয় আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
১৫৭
أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
এঁদের উপর তাঁদের প্রভুর পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী।
১৫৮
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
নিশ্চয় ‘সাফা’ ও মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত, অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের ‘হজ্জ’ অথবা ‘উমরা’ করে তাঁর জন্য এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দোষণীয় নয়, এবং কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী, সর্বজ্ঞাত।
১৫৯
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَـٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ
আমি যেসব উজ্জল নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, আমি ঐগুলোকে সর্বসাধারণের নিকট প্রকাশ করার পরও যারা ঐসব বিষয়কে গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং অভিসম্পাতকারীগণও তাদেরকে অভিসম্পাত করে থাকে।
১৬০
إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَـٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
কিন্তু যারা তওবা করে সংশোধন করে নেয় এবং সত্য প্রকাশ করে, বস্তুতঃ আমি তাঁদের প্রতি ক্ষমা দানকারী এবং আমি তওবা কবুলকারী, করুণাময়।
১৬১
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, নিশ্চয় তাঁদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাগণের ও মানবকুলের সবারই অভিসম্পাত।
১৬২
خَالِدِينَ فِيهَا ۖ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ
সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে, তাঁদের শাস্তি প্রশমিত হবে না এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া যাবে না।
১৬৩
وَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَـٰنُ الرَّحِيمُ
এবং তোমাদের মা’বূদ একমাত্র আল্লাহ; সেই সর্বপ্রদাতা করুণাময় ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বূদ নেই।
১৬৪
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে, দিন ও রাতের পরিবর্তনে, জাহাজসমূহের চলাচলে- যা মানুষের লাভজনক ও সম্ভার নিয়ে সমুদ্রে চলাচল করে, আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতে, প্রত্যেক জীবজন্তুর বিস্তার করেন তাতে, বায়ুরাশির গতি পরিবর্তনে এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থ নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় সত্য জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
১৬৫
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللَّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
এবং মানবমণ্ডলীর মধ্যে এরূপ কিছু লোক আছে- যারা আল্লাহর মোকাবেলায় অপরকে সমকক্ষ স্থীর করে, আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় তারা তাদেরকে ভালোবেসে থাকে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে- আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা দৃঢ়তর এবং যারা অত্যাচার করেছে তারা যদি শাস্তি অবলোকন করতো, তবে বুঝতো যে, সমুদয় শক্তি আল্লাহর জন্যে এবং নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
১৬৬
إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ
যখন অনুসরনীয় নেতারা অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে ও তাদের সমস্ত স্মবন্ধ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
১৬৭
وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا ۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ ۖ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ
অনিসরণকারীরা বলবেঃ যদি আমরা ফিরে যেতে পারতাম তবে তারা যেরূপ আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আমরাও তদ্রুপ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতাম; এভাবে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মসমূহ তৎপ্রতি দুঃখজনকভাবে প্রদর্শন করাবেন এবং তারা জাহান্নাম হতে উদ্ধার পাবে না।
১৬৮
يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُوا مِمَّا فِي الْأَرْضِ حَلَالًا طَيِّبًا وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
১৬৯
إِنَّمَا يَأْمُرُكُم بِالسُّوءِ وَالْفَحْشَاءِ وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
সে তো কেবল তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কার্যের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা জান না এমন সব বিষয় বলার নির্দেশ দেয়।
১৭০
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ
এবং যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অনুসরণ কর; তখন তারা বলে- বরং আমরা তারই অনুসরণ করবো যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষগণকে পেয়েছি; যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোনই জ্ঞান ছিল না এবং তারা সুপথগামী ছিল না তবুও?
১৭১
وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً ۚ صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
আর যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায়। যেমন কেউ আহ্বান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শুনে না; তারা বধির, মূক, অন্ধ, কাজেই তারা বুঝতে পারে না।
১৭২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই উপাসনা করে থাকো।
১৭৩
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
তিনি শুধু তোমাদের জন্য মৃত জীব, রক্ত (প্রবাহিত রক্ত), শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ব্যতীত অপরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত তা হারাম করেছেন; কিন্তু যে ব্যক্তি নিরূপায়; (হারামের প্রতি) ইচ্ছুক নয় এবং তা ভক্ষণের ক্ষেত্রে) সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তার জন্যে পাপ নেই এবং নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
১৭৪
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَـٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
নিশ্চয় আল্লাহ যা গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছেন তা যারা গোপন করে ও তৎপরিবর্তে নগণ্য মূল্য গ্রহণ করে, নিশ্চয় তারা স্ব-স্ব উদরে অগ্নি ছাড়া অন্য কিছু ভক্ষণ করে না এবং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
১৭৫
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ ۚ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ
তারাই সুপথের বিনিময়ে কুপথ এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করেছে, অতঃপর জাহান্নাম (এর আযাব) কিরূপে সহ্য করবে?
১৭৬
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِي الْكِتَابِ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ
এ জন্যেই আল্লাহ সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন এবং যারা গ্রন্থ সম্বন্ধে বিরোধ করে, বাস্তবিকই তারাই বিরুদ্ধাচরণে সুদূরগামী।
১৭৭
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
তোমরা তোমাদের মুখমুন্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত কর তাতে পুণ্য নেই; বরং পুণ্য তাঁর, যে ব্যক্তি আল্লাহ, পরকাল, ফেরেস্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁরই ভালোবাসা অর্জনের জন্য আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীনগণ, দরিদ্রগণ, পথিকগণ ও ভিক্ষুকদেরকে এবং দাসত্ব মোচনের জন্যে ধন-সম্পদ দান করে, আর নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে ও যাকাত প্রদান করে এবং অঙ্গীকার করলে যারা সেই অঙ্গীকার পূর্ণকারী হয় এবং যারা অভাবে ও ক্লেশে এবং যুদ্ধকালে ধৈর্যশীল তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই আল্লাহ ভীরূ।
১৭৮
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى ۖ الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنثَىٰ بِالْأُنثَىٰ ۚ فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ۗ ذَٰلِكَ تَخْفِيفٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ ۗ فَمَنِ اعْتَدَىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! নিহতগণের সম্বন্ধে তোমাদের জন্যে প্রতিশোধ গ্রহণ বিধিবদ্ধ হল; স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস, এবং নারীর পরিবর্তে নারী; কিন্তু যদি কেউ তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাগাদা করে এবং সদ্ভাবে তা পরিশোধ করে; এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে লঘু বিধান ও করুণা; অতঃপর যে কেউ সীমালঙ্ঘন করবে তার জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
১৭৯
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে জ্ঞানবান লোকেরা! কিসাস (প্রতিশোধ) গ্রহণে তোমাদের জন্যে জীবন আছে- যেন তোমরা আল্লাহ ভীরূ হও।
১৮০
كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِن تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ
যখন তোমাদের কারো মৃত্যু নিকটবর্তী বলে মনে হয়, তখন সে যদি ধন-সম্পত্তি ছেড়ে যায় তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্যে বৈধভাবে অসিয়ত করা তোমাদের জন্যে বিধিবদ্ধ হল, আল্লাহ ভিরূদের জন্য এটা অবশ্যকরণীয়।
১৮১
فَمَن بَدَّلَهُ بَعْدَ مَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অতঃপর যে ব্যক্তি শুনার পর তা পরিবর্তন করে, তবে এর পাপ তাদেরই হবে, যারা একে পরিবর্তন করবে; নিশ্চয় আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
১৮২
فَمَنْ خَافَ مِن مُّوصٍ جَنَفًا أَوْ إِثْمًا فَأَصْلَحَ بَيْنَهُمْ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অনন্তর যদি কেউ অসিয়তকারীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব বা পাপের আশংকা করে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার পাপ নেই; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।
১৮৩
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও রোযাকে অপরিহার্য কর্তব্যরূপে নির্ধারিত করা হল যেন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো।
১৮৪
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
এটা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ অসুস্থ কিংবা মুসাফির হয়, তার জন্যে অপর কোন দিবস হতে গণনা করবে; আর যারা অক্ষম তারা তৎপরিবর্তে একজন দরিদ্রকে খাদ্য দান করবে; তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করে তার জন্যে কল্যাণ এবং তোমরা যদি বুঝে থাকো তবে রোজা রাখাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।
১৮৫
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
রমযান মাস, যার মধ্যে বিশ্বমানবের জন্য পথ প্রদর্শক এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন ও (হক ও বাতিলের) প্রভেদকারী কুর’আন অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে এবং যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির তার জন্যে অপর কোন দিন হতে গণনা করবে; তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না এবং তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
১৮৬
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন তাদেরকে বলে দাওঃ নিশ্চয় আমি সন্নিকটবর্তী; কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে আহ্বান করে তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে, তা হলেই তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।
১৮৭
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
রোযার রজনীতে আপন স্ত্রীদের সহিত সহবাস করা তোমাদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদের জন্যে আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্যে আবরণ, তোমরা যে আত্মপ্রতারণা করেছিলে, আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন, এ জন্যে তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের (অব্যাহতি দিয়েছেন); অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও) তাদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর এবং সকালে কালো সুতা হতে সাদা সুতা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ কর’ তোমরা মসজিদে ই’তেকাফ করবার সময় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলন কর না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না; এভাবে আল্লাহ মানবমণ্ডলীর জন্যে তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যেন তারা আল্লাহ ভীরূ হয়।
১৮৮
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
এবং তোমরা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ধনসম্পত্তি অন্যায়রূপে গ্রাস কর না এবং তা বিচারকের নিকট এ জন্যে উপস্থাপিত করো না, যাতে তোমরা জ্ঞাতসারে লোকের ধনের অংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করতে পারো।
১৮৯
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ ۗ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَن تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
তারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বলঃ এগুলো হচ্ছে জনসমাজের ও হজ্জের জন্য সময় নিরূপক; আর (ঐ হজ্জের চাঁদে) তোমরা যে পশ্চাৎদিক দিয়ে গৃহে সমাগত হয়, এটা পুণ্য কর্ম নয়, পুণ্য কর্ম হল যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ ভীরূ হয় এবং তোমরা গৃহসমূহের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, তোমরা অবশ্যই সুফলপ্রাপ্ত হবে।
১৯০
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
এবং যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তোমরাও তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর এবং সীমা অতিক্রম করো না; নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।
১৯১
وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأَخْرِجُوهُم مِّنْ حَيْثُ أَخْرَجُوكُمْ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ وَلَا تُقَاتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ ۖ فَإِن قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ ۗ كَذَٰلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ
তাদেরকে যেখানেই পাও, হত্যা কর এবং তারা তোমাদেরকে যেখান হতে বহিষ্কৃত করেছে, তোমরাও তাদেরকে সেখান হতে বহিষ্কৃত কর এবং হত্যা অপেক্ষা ফেতনা-ফাসাদ (কুফর ও শিরক) গুরুতর অপরাধ এবং তোমরা তাদের সাথে মসজিদুল হারামের নিকট যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত না তারা তোমাদের সাথে তন্মধ্যে যুদ্ধ করে; কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তবে তোমরাও তাদেরকে হত্যা কর; অবিশ্বাসীদের জন্যে এটাই প্রতিফল।
১৯২
فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
১৯৩
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ ۖ فَإِنِ انتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ
ফেতনা-ফাসাদ দূরীভুত হয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর; অতঃপর যদি তারা নিবৃত্ত হয়, তবে অত্যাচারীদের উপর ব্যতীত বাড়াবাড়ি নেই।
১৯৪
الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ ۚ فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
নিষিদ্ধ মাসের পরিবর্তে নিষিদ্ধ মাস এবং নিষিদ্ধ মাসেও বদলার ব্যবস্থা বের হবে ঐ অবস্থায় যদি কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করে, তবে সে তোমাদের প্রতি যেরূপ অত্যাচার করবে, তোমরাও তার প্রতি সেরূপ অত্যাচার কর এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
১৯৫
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
এবং তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বীয় হাত ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করো না এবং হিত সাধন করতে থাকো, নিশ্চয় আল্লাহ হিতসাধন-কারীদেরকে ভালোবাসেন।
১৯৬
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ۚ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۖ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ ۚ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۚ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ ۗ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ۗ ذَٰلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরাহ সম্পূর্ণ কর; কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও তবে যা সহজপ্রাপ্য তাই কুরবানী কর এবং কুরবানীর জন্তুগুলো স্বস্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত তোমাদের মস্তক মুন্ডন করা না; কিন্তু কেউ যদি তোমাদের মধ্যে রোগাক্রান্ত হয় বা তার মস্তক যন্ত্রনাগ্রস্থ হয়, তবে সে রোযা, কিংবা সাদকা অথবা কুরবানী দ্বারা ওর বিনিময় করবে, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ অবস্থায় থাকো, তখন যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে উমরারও ফলভোগ কামনা করে তবে যা সহজ প্রাপ্য তাই কুরাবনী করবে; কিন্তু কেউ যদি তা না পায় তবে হজ্জের সময় তিন দিন এবং যখন তোমরা প্রত্যাবর্তিত হও তখন সাত দিন এই পূর্ণ দশ দিন রোযা রাখবে; এটা তারই জন্যে যার পরিজন মসজিদুল হারামে উপস্থিত না থাকে এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
১৯৭
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ ۚ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَىٰ ۚ وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ
হজ্জের মাসগুলো নির্ধারিত; অতএব কেউ যদি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজ্জের সঙ্কল্প করে, তবে সে হজ্জের মধ্যে সহবাস, দুষ্কার্য ও কলহ করতে পারবে না এবং তোমরা যে কোন সৎকর্ম কর না কেন, আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন; আর তোমরা (নিজেদের) পাথেয় সঞ্চয় করে নাও; বস্তুতঃ নিশ্চিত উৎকৃষ্টতম পাথেয় হচ্ছে আল্লাহভীতি এবং হে জ্ঞানবানগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।
১৯৮
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُوا فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ ۚ فَإِذَا أَفَضْتُم مِّنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِندَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ ۖ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِن كُنتُم مِّن قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ
তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোন অপরাধ নেই; অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশয়ারে হারাম) স্মৃতি-স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রুপ তাঁকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে।
১৯৯
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অতঃপর যেখান হতে লোক প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা কর; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
২০০
فَإِذَا قَضَيْتُم مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا ۗ فَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
অনন্তর যখন তোমরা তোমাদের (হজ্জের) অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে ফেলো তখন যেরূপ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে স্মরণ করতে, তদ্রুপ আল্লাহকে স্মরণ কর বরং তদপেক্ষা দৃঢ়তর ভাবে স্মরণ কর; কিন্তু মানবমণ্ডলীর মধ্যে কেউ কেউ এরূপ আছে যারা বলে থাকেঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে ইহকালেই দান করুন তাদের জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।

০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকূঃ ৪০
২০১
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে থাকেঃ হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দান করুন ও পরকালে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন।
২০২
أُولَـٰئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّمَّا كَسَبُوا ۚ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ
তারা যা অর্জন করেছে, তাদের জন্যে তারই অংশ রয়েছে এবং নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০৩
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ لِمَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
এবং নির্ধারিত দিবসসমূহে আল্লাহকে স্মরণ কর; অতঃপর কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে তবে তার জন্যে জন্যে পাপ নেই, পক্ষান্তরে কেউ যদি বিলম্ব করে তবে তার জন্যেও পাপ নেই এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, অবশ্যই আমাদের সকলকে তাঁরই নিকট সমবেত করা হবে।
২০৪
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ
এবং মানবমণ্ডলীর মধ্যে এমনো আছে- পার্থিব জীবন সংক্রান্ত যার কথা তোমাকে চমৎকৃত করে তুলে, আর সে নিজের অন্তরস্থ (সততা) সম্বন্ধে আল্লাহকে সাক্ষী করে থাকে; কিন্তু বস্তুতঃ সে হচ্ছে ভীষণ ঝগড়াটে ব্যক্তি।
২০৫
وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ
যখন সে প্রত্যাবর্তিত হয় তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তারের এবং শস্য ক্ষেত্র ও জীবজন্তু বিনাশের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি ভালোবাসেন না।
২০৬
وَإِذَا قِيلَ لَهُ اتَّقِ اللَّهَ أَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ بِالْإِثْمِ ۚ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ۚ وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ
যখন তাকে বলা হয় তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তখন প্রতিপত্তির অহমিকা তাকে অধিকতর অনাচারে লিপ্ত করে দেয়, অতএব জাহান্নামই তার জন্যে যথেষ্ট এবং নিশ্চয় ওটা নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!
২০৭
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ
পক্ষান্তরে কোন কোন লোক এরূপ আছে, যে আল্লাহর পরিতুষ্টি সাধনের জন্যে স্বীয় আত্মা বিক্রয় করে এবং আল্লাহ হচ্ছেন সমস্ত বান্দার প্রতি স্নেহপরায়ণ।
২০৮
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে মু’মিনগণ! তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, ন নিশ্চয় সে তোমাদের জন্যে প্রকাশ্য শত্রু।
২০৯
فَإِن زَلَلْتُم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
অনন্তর স্পষ্ট দলীল প্রমাণাদি তোমাদের নিকট সমাগত হওয়ার পরেও যদি তোমরা পদস্ফলিত হয়ে যাও, তবে জেনে রেখো যে, আল্লাহ হচ্ছেন মহা পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
২১০
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ وَالْمَلَائِكَةُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ
তারা শুরু এ অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ তা’আলা সাদা মেঘমালার ছায়া তলে তাদের নিকট সমাগত হবেন আর ফেরেস্তারাও (আসবেন) এবং সমস্ত কার্যের নিষ্পত্তি করা হবে এবং আল্লাহরই নিকট সমস্ত কার্য প্রত্যাবর্তিত থাকে।
২১১
سَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَمْ آتَيْنَاهُم مِّنْ آيَةٍ بَيِّنَةٍ ۗ وَمَن يُبَدِّلْ نِعْمَةَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
ইসরাঈল বংশীয়গণকে জিজ্ঞেস কর যে, আমি কত স্পষ্ট প্রমাণই তা তাদেরকে প্রদান করেছি। এবং যে কেউ তার নিকট আল্লাহর অনুগ্রহ সম্পদ আসার পর তা পরিবর্তন করে ফেলে তবে জেনে রেখো নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা।
২১২
زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا ۘ وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হয়েছে এবং তারা বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে উপহাস করে থাকে এবং যারা আল্লাহ ভীরূ তাদেরকে উত্থান দিবসে সমুন্নত করা হবে এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত জীবিকা দান করে থাকেন।
২১৩
كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
মানবজাতি একই সম্প্রদায়-ভুক্ত ছিল; অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদ বাহক ও ভয় প্রদর্শকরূপে নবীগণকে প্রেরণ করলেন এবং তিনি তাদের সাথে সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করলেন যেন (ঐ কিতাব) তাদের মতভেদের বিষয়গুলো সম্বন্ধে মীমাংসা করে দেয়, অথচ যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছিল, স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের নিকট সমাগত হওয়ার পর, পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষবশতঃ তারা সে কিতাবকে নিয়ে মতভেদ ঘটিয়ে বসলো, অতঃপর আল্লাহ তদীয় ইচ্ছাক্রমে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে তদ্বিষয়ে সত্যের দিকে পথ প্রদর্শন করলেন এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করে থাকেন।
২১৪
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করেই ফেলবে? অথচ তোমাদের অবস্থা এখনো তাদের মত হয়নি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল; এমনকি রাসূল ও তৎসহ বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলেন কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? সতর্ক হও, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।
২১৫
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ ۖ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে যে, তারা কিরূপে ব্যয় করবে? তুমি বলঃ তোমরা ধন-সম্পত্তি হতে যা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতার, আত্মীয়-স্বজনের, পিতৃহীনদের, দরিদ্রদের ও পথিকবৃন্দের জন্যে করো এবং তোমরা যেসব সৎকর্ম কর নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্যকরূপে অবগত।
২১৬
كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
জিহাদকে তোমাদের জন্যে অপরিহার্য কর্তব্যরূপে অবধারিত করা হয়েছে এবং এটা তোমাদের অপ্রীতিকর; বস্তুতঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করছ যা তোমাদের পক্ষে বাস্তবিকই মঙ্গলজনক, পক্ষান্তরে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছ যা তোমাদের জন্য বাস্তবিকই অনিষ্টকর এবং আল্লাহই অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও।
২১৭
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ ۖ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ ۖ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللَّهِ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
তারা তোমাকে নিষিদ্ধ মাস, তার মধ্যে যুদ্ধ করা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলঃ এর মধ্যে যুদ্ধ করা অতীব অন্যায়, আর আল্লাহর পথ ও পবিত্র মসজিদ হতে প্রতিরোধ করা এবং তাঁকে অবিশ্বাস করা ও তার মধ্যে হতে তার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কৃত করা আল্লাহর নিকট গুরুতর অপরাধ এবং হত্যা অপেক্ষা ফেতনা- ফাসাদ (শিরক ও কুফর) গুরুতর এবং যদি তারা সক্ষম হয়, তবে তারা তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম হতে ফিরাতে না পারা পর্যন্ত সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে; আর তোমাদের মধ্যকার কেউ যদি স্বধর্ম হতে ফিরে যায় এবং ঐ কাফের অবস্থাতেই তার মৃত্যু ঘটে, তাহলে তার ইহকাল পরকালের সমস্ত কর্মই নিষ্ফল হয়ে যায়, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী এবং তারই মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
২১৮
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَـٰئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করেছে ও আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে, তারাই আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশা করবে এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
২১৯
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ
মাদকদ্রব্য ও জুয়া খেলা সম্বন্ধে তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বলঃ এ দু’টোর মধ্যে গুরুতর পাপ রয়েছে এবং কোন কোন লোকের (কিছু) উপকার আছে, কিন্তু ও দু’টোর লাভ অপেক্ষা পাপই গুরুতর; তারা তোমাকে (আরো) জিজ্ঞেস করছে, তারা কি (পরিমাণ) ব্যয় করবে? তুমি বলঃ যা তোমাদের উদ্বৃত্ত; এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা চিন্তা করে দেখ।
২২০
فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۗ وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَىٰ ۖ قُلْ إِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌ ۖ وَإِن تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَعْنَتَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
পার্থিব ও পরলৌকিক বিষয়ে আর তারা তোমাকে ইয়াতিমদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে; তুমি বলঃ তাদের হিতসাধন করাই উত্তম; এবং যদি তোমরা তাদেরকে সম্মিলিত করে নাও তবে তারা তোমাদের ভ্রাতা, আর কে অনিষ্টকারী, কে হিতাকাঙ্ক্ষী আল্লাহ তা অবগত আছেন এবং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে তিনি তোমাদেরকে বিপদে ফেলতেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাময়।
২২১
وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
এবং অংশীবাদিনীগণ বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না এবং নিশ্চয় বিশ্বাসিনী দাসী অংশীবাদিনী (স্বাধীনা) মহিলা অপেক্ষা উত্তম যদিও সে তোমাদেরকে মোহিত করে ফেলে এবং অংশীবাদীগণ বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে (মুসলমান নারীদের) বিবাহ প্রদান কর না এবং নিশ্চ্য অংশীবাদী তোমাদের মনঃপুত হলেও বিশ্বাসী দাস তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর; এরাই জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহর স্বীয় ইচ্ছায় জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন ও মানবমণ্ডলীর জন্যে স্বীয় নিদর্শনাবলী বিবৃত করেন, যেন তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
২২২
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
এবং তারা তোমাকে (স্ত্রী লোকদের) ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলঃ ওটা হচ্ছে কষ্টদায়ক অবস্থা। অতএব ঋতুকালে স্ত্রীলোকদের থেকে (সঙ্গম না করে) বিরত থাক এবং উত্তমরূপে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটে যেও না; (সহবাস করোনা) অনন্তর যখন তারা পবিত্র হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশ মতে তোমরা তাদের নিকট গমন কর, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীগণকে ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীগণকেও ভালোবেসে থাকেন।
২২৩
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ ۖ وَقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্র স্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা কর গমন কর এবং স্বীয় জীবনের জন্য পাথেয় পূর্বেই প্রেরণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, তোমাদের সবাইকে তার মুখোমুখি হতে হবে এবং বিশ্বাসীগণকে সুসংবাদ প্রদান কর।
২২৪
وَلَا تَجْعَلُوا اللَّهَ عُرْضَةً لِّأَيْمَانِكُمْ أَن تَبَرُّوا وَتَتَّقُوا وَتُصْلِحُوا بَيْنَ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
তোমরা নিজেদের শপথের জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু বানিওনা, সৎকাজ, আত্মসংযম এবং মানুষের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়া থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে; বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
২২৫
لَّا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ
আল্লাহ তা’আলা আমাদের নিরর্থক শপথসমূহের (অর্থহীন শপথের) জন্যে তোমাদেরকে ধরবেন না; কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ঐসব শপথ সম্বন্ধে ধরবেন যেগুলো তোমাদের মনের সংকল্প অনুসারে সাধিত হয়েছে এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, ধৈর্যশীল।
২২৬
لِّلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِن نِّسَائِهِمْ تَرَبُّصُ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ ۖ فَإِن فَاءُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
যারা স্বীয় স্ত্রীগণ হতে পৃথক থাকবার শপথ করে তারা চারমাস প্রতীক্ষা করবে; অতঃপর যদি তারা প্রত্যাবর্তিত হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
২২৭
وَإِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ فَإِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
পক্ষান্তরে যদি তারা তালাক দিতেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে থাকে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
২২৮
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا ۚ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
এবং তালাক প্রাপ্তাগণ তিন ঋতু পর্যন্ত আত্মসম্বরণ করে থাকবে; এবং যদি তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তবে আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের পক্ষে বৈধ হবে না; এবং এর মধ্যে যদি তারা সন্ধি কামনা করে তবে তাদের স্বামীই তাদেরকে প্রতিগ্রহণ করতে সমধিক স্বত্ববান; আর নারীদের উপর তাদের যেরূপ স্বত্ব আছে, নারীদেরও তদনুরূপ ন্যায়সঙ্গত স্বত্ব আছে এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে; আল্লাহ হচ্ছেন মহা পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।
২২৯
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ ۖ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ۗ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
তালাক দুইবার; অতঃপর (স্ত্রীকে) হয় বিহিতভাবে রাখতে হবে। অথবা সৎভাবে পরিত্যাগ করতে হবে এবং যদি উভয়ে আশংকা করে যে, তারা আল্লাহর সীমা স্থীর রাখতে পারবে না। তবে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছো তা হতে কিছু প্রতিগ্রহণ করা তোমাদের জন্যে বৈধ নয়; অনন্তর তোমরা যদি আশংকা কর যে, তারা আল্লাহর সীমা ঠিক রাখতে পারবে না, সে অবস্থায় স্ত্রী নিজের মুক্তি লাভের জন্য কিছু বিনিময় দিলে তাতে উভয়ের কোন দোষ নেই; এগুলোই হচ্ছে আল্লাহর সীমাসমূহ অতএব তা অতিক্রম কর না এবং যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে, বস্তুতঃ তারাই অত্যাচারী।
২৩০
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
অনন্তর যদি সে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে তবে সে স্ত্রী যতক্ষন পর্যন্ত তাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিয়ে করে না নিবে সে তার জন্যে বৈধ হবে না, তৎপর সে তাঁকে তালাক প্রদান করলে যদি উভয়ে মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমাসমূহ স্থীর রাখতে পারবে, তখন যদি তারা পরস্পর প্রত্যাবর্তিত হয় তবে উভয়ের পক্ষে কোনই দোষ নেই এবং এগুলোই আল্লাহর সীমাসমূহ, তিনি বিজ্ঞা সম্প্রদায়ের জন্য এগুলো ব্যক্ত করে থাকেন।
২৩১
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ ۚ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوا ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ۚ وَلَا تَتَّخِذُوا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
এবং তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও আর তারা তাদের নির্ধারিত স্ময়ে পৌঁছে যায়, তখন তাদেরকে ভালোভাবে রাখতে পার অথবা ভালোবভাবে পরিত্যাগ করতে পার এবং তাদেরকে যন্ত্রনা দেয়ার জন্য আবদ্ধ করে রেখো না, তাহলে সীমালঙ্ঘন করবে; আর যে ব্যক্তি এরূপ করে সে নিশ্চয়ই নিজের প্রতি অবিচার করে থাকে এবং আল্লাহর বিধি-বিধানকে বিদ্রুপাচ্ছলে গ্রহণ করো না আর তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ এবং তোমাদেরকে উপদেশ দানের জন্যে গ্রন্থ ও হিকমত (সুন্নাত) হতে যা অবতীর্ণ করেছেন তা স্মরণ কর, আর আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
২৩২
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۗ ذَٰلِكُمْ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَأَطْهَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
এবং যখন তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে তালাক দাও, তৎপর তারা তাদের নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যায়, তখন তারা উভয়েই যদি পরস্পরের প্রতি বিহিতভাবে সম্মত হয়ে থাকে, সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজ স্বামীদেরকে বিয়ে করতে গেলে তোমরা তাদেরকে বাধা প্রদান করো না; তোমাদেরে মধ্যে যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এর দ্বারা তাদেরকেই উপদেশ দেয়া হচ্ছে; তোমাদের জন্যে এটা শুদ্ধতম ও পবিত্রতম (ব্যবস্থা) এবং আল্লাহই পরিজ্ঞাত আছেন আর তোমরা কিছুই জানো না।
২৩৩
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ ۖ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ ۚ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ ۚ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَٰلِكَ ۗ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا ۗ وَإِنْ أَرَدتُّمْ أَن تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّا آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
এবং যে কেউ স্তন্যপানের কাল পূর্ণ করতে ইচ্ছা করে, তার জন্যে জননীগণ পূর্ণ দু’বছর স্বীয় সন্তানদেরকে স্তন্য দান করবে, আর সন্তানের জনকগণ বিহিতভাবে প্রসূতিদের খোরাক ও তাদের পোষাক দিতে বাধ্য; কাউকেও তার সাধ্যের অতীত কার্যভার দেয়া হয় না, নিজ সন্তানের কারণে জনীকে এবং সন্তানের কারণে জনককে ক্ষতিগ্রস্থ করা চলবে না এবং উত্তরাধিকারীগণের প্রতিও একই ধরণের বিধান; কিন্তু যদি তারা পরস্পর পরামর্শ ও সম্মতি অনুসারে স্তন্য ত্যাগ করাতে ইচ্ছে করে, তবে উভয়ের কোন দোষ নেই; আর তোমরা যদি নিজ সন্তানদেরকে স্তন্য পানের জন্যে সমর্পণ করতঃ বিহিতভাবে কিছু প্রদান কর তাহলেও তোমাদের কোন দোষ নেই এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
২৩৪
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
এবং তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তারা (বিধবাগণ) চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষা করবে; অতঃপর যখন তারা সবীর নির্ধারিত সময়ে উপনীত হয় তখন তারা নিজেদের সম্বন্ধে বিহিতভাবে যা করবে, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই এবং তোমরা যা করছ তদ্বিষয়ে আল্লাহ সম্যক খবর রাখেন।
২৩৫
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَـٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
এবং তোমরা স্ত্রীলোকদের প্রস্তাব সম্বন্ধে পরোক্ষভাবে যা ব্যক্ত কর অথবা নিজেদের মনে গোপনে যা পোষণ করে থাকো তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই; আল্লাহ অবগত আছেন যে, তোমরা তাদের বিষয় আলোচনা করবে; কিন্তু গুপ্তভাবে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দান করো না; বরং বিহিতভাবে তাদের সাথে কথা বল এবং নির্ধারিত সময় পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সংকল্প করো না এবং এতাও জেনে রেখো যে, তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত। অতএব তোমরা তাঁকে ভয় কর এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহিষ্ণু।
২৩৬
لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ
যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ না করেই অথবা তাদের প্রাপ্য নির্ধারণ করার আগেই তালাক প্রদান কর তবে তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই এবং তোমরা তাদেরকে কিছু সংস্থান করে দেবে, অবস্থাপন্ন লোক নিজের অবস্থানুসারে এবং অভাবগ্রস্থ লোক তার অবস্থানাসুরে বিহিত সংস্থান (করে দেবে), সৎকর্মশীল লোকদের উপর এই কর্তব্য।
২৩৭
وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۚ وَلَا تَنسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
আর তোমরা যদি তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই তালাক প্রদান কর এবং তাদের মোহর নির্ধারণ করে থাকো, তবে যা নির্ধারিত করেছিলে তার অর্ধেক; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে কিংবা যার হাতে বিবাহ বন্ধন সে ক্ষমা করে অথবা তোমরা ক্ষমা কর তবে এটা আল্লাহ ভীতির অতি নিকটবর্তী এবং পরস্পরের উপকারকে যেন ভুলে যেও না; তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
২৩৮
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
তোমরা নামাযসমূহ ও মধ্যবর্তী নামাযের (আসর) ব্যাপারে যত্নবান হও এবং বিনীতভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও।
২৩৯
فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا ۖ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
তবে তোমরা যদি (শত্রুর ভয়ের) আশংকা কর, সে অবস্থায় পদব্রজে বা যানবাহনাদির উপর (নামায আদায় করে নেবে) পরে যখন নিরাপদ হও তখন তোমাদের অবিদিত বিষয়গুলো সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদেরকে যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন সেরূপে আল্লাহকে স্মরণ কর।
২৪০
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِّأَزْوَاجِهِم مَّتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ۚ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِي مَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ مِن مَّعْرُوفٍ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
এবং তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুমুখে পতিত হয় ও পত্নীগণকে বহিষ্কৃত না করে এক বছর পর্যন্ত তাদেরকে ভরণ-পোষণ প্রদান করার জন্যে অসিয়ত করে যায়; কিন্তু যদি তারা (স্বেচ্ছায়) বের হয়ে যায়, তবে নিজেদের সম্বন্ধে বিহিতভাবে তারা যে ব্যবস্থা করে তজ্জন্যে তোমাদের কোন দোষ নেই; এবং আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাময়।
২৪১
وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ
আর তালাকপ্রাপ্তাদের জন্যে বিহিতভাবে ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা আল্লাহ ভীরূদের কর্তব্য।
২৪২
كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
এভাবে আল্লাহ স্বীয় নিদর্শনাবলী বর্ণনা করেন, যেন তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।
২৪৩
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, মৃত্যু বিভীষিকাকে এড়াবার জন্য যারা নিজেদের গৃহ হতে বহির্গত হয়েছিল? অথচ তারা ছিল বহু সহস্র; তখন আল্লাহ তাদেরকে বললেনঃ তোমরা মর; পুনরায় তিনি তাদেরকে জীবন দান করলেন; নিশ্চয় মানবগণের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
২৪৪
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর এবং জেনে রেখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
২৪৫
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
কে সে, যে আল্লাহকে উত্তমরূপে ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই (মানুষের আর্থিক অবস্থাকে) সংকুচিত বা স্বচ্ছল করে থাকেন এবং তাঁরই দিকে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২৪৬
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِن كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا ۖ قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِن دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا ۖ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
তুমি কি মুসার পরে ইসমাঈল বংশীয় প্রধানগণের প্রতি লক্ষ্য করনি? নিজেদের এক নবীকে যখন তারা বলেছিলঃ আমাদের জন্যে একজন বাদশাহ নিযুক্ত করে দাও (যেন) আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি! তিনি বলেছিলেনঃ এটা কি সম্ভবপর যে, যখন তোমাদের উপর যুদ্ধ বিধিবদ্ধ হয়ে যাবে তখন তোমরা যুদ্ধ করবে না? তারা বলেছিলঃ আমরা যুদ্ধ করবো না এটা কিরূপে (সম্ভব)? অথছ নিজেদের হতে ও সন্তান-সন্ততি হতে আমরা বহিষ্কৃত হয়েছি। অনন্তর যখন তাদের উপর যুদ্ধ বিধিবদ্ধ হল তখন তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সবাই পশ্চাৎপদ হয়ে পড়লো এবং অত্যাচারীদের সম্পর্কে আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত আছেন।
২৪৭
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ ۖ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
এবং তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেন নিশ্চয় আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্যে বাদশাহরূপে নির্বাচিত করেছেন; তারা বললঃ আমাদের উপর তালূতের রাজত্ব কিরূপে (সঙ্গত) হতে পারে? রাজত্বে তার অপেক্ষা আমাদেরই স্বত্ব অধিক, পক্ষান্তরে যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতাও তার নেই; তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাকেই মনোনীত করেছেন এবং জ্ঞান ও দৈহিক শক্তিতে তিন তাকে প্রচুর পরিমাণে বর্ধিত করে দিয়েছেন, আল্লাহ তাঁর রাজত্ব যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন এবং আল্লাহ হচ্ছেন প্রশস্তকারী, সর্বজ্ঞাতা।
২৪৮
وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَن يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ آلُ مُوسَىٰ وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
এবং তাদের নবী তাদের বলেছিলেন তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সিন্দুক সমাগত হবে, যাতে থাকবে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে শান্তি এবং মূসা ও হারূনের অনুচরদের পরিত্যক্ত আসবাবপত্র, ফেরেস্তাগণ ওটা বহন করে আনবে; তোমরা যদি বিশ্বাস স্থাপনকারী হও তবে ওর মধ্যে নিশ্চয় তোমাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
২৪৯
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ ۚ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۚ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ ۚ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو اللَّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
অনন্তর যখন তালূত সৈন্যদলসহ বহির্গত হয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন নিশ্চয় আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন, অত:পর ওটা হতে যে পান করবে সে কিন্তু আমার দলভুক্ত থাকবে না এবং যে স্বীয় হাত দ্বারা আঁজলাপূর্ণ করে নেবে, তদ্ব্যতীত যে তা আস্বাদন করবে না সে নিশ্চয়ই আমার; কিন্তু তাদের মধ্যে অল্প লোক ব্যতীত আর সবাই সেই নদীর পানি পান করলো, অতঃপর যখন সে ও তার সঙ্গী বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ নদী অতিক্রম করে গেল তখন তারা বললঃ জালূতের ও তার সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করার শক্তি আজ আমাদের নেই; পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করতো যে তাদেরকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে, তারা বললঃ আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাজিত করেছে, বস্তুতঃ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন আল্লাহ!
২৫০
وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
এবং যখন তারা জালূত ও সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হল, বলতে লাগলোঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের পূর্ণ সহিষ্ণুতা দান করুন, আর আমাদের কদমকে অটল রাখুন এবং কাফির জাতির উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন।

০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকু ৪০
২৫১
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
তখন তারা আল্লাহর হুকুমে জালূতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করে ফেললেন এবং আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন, আর যদি আল্লাহ এক দলকে অপর দলের দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে নিশ্চয় পৃথিবী অশান্তি পূর্ণ হতো; কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি অনুগ্রহকারী।
২৫২
تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
এগুলো আল্লাহর নিদর্শন- তোমার নিকট এগুলো সত্যরূপে পাঠ করছি এবং নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্গত।
২৫৩
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ ۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ ۚ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَـٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
এই সকল রাসূল, আমি যাদের কারো উপর কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি, তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কাউকে পদমর্যাদায় সমুন্নত করেছেন, আর মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রকাশ্যে নিদর্শনাবলী দান করেছি এবং তাকে পবিত্রাত্মাযোগে (জিবরাঈল দ্বারা) সাহায্য করেছি, তার আল্লাহ ইচ্ছা করলে, নবীগণের পরবর্তী লোকেরা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণপুঞ্জ সমাগত হওয়ার পর পরস্পরের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধ করেছিল ফলে তাদের কতক হল মু’মিন আর কতক হল কাফির। বস্তুতঃ আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই সম্পন্ন করে থাকেন।
২৫৪
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ ۗ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ
হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি, তা হতে সেদিন সমাগত হওয়ার পূর্বেই ব্যয় কর যাতে ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই, আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী।
২৫৫
اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত অন্য কো সত্য উপাস্য নেই, তিনি চিরজীবন্ত ও সবার রক্ষণাবেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সব তাঁরই; এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসী নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত, মহীয়ান!
২৫৬
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
ধর্ম (দ্বীন গ্রহণে) সম্বন্ধে বল প্রয়োগ নেই; নিশ্চয় ভ্রান্তি হতে সুপথ প্রকাশিত হয়েছে; অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য মা’বূদকে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধরলো যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয় এবং আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।
২৫৭
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আল্লাহই হচ্ছেন মু’মিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যান; আর যারা অবিশ্বাস করেছে শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষক, সে তাদেরকে আলোক হতে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী ও এর মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থানকারী।
২৫৮
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ ۖ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
তুমি কি তার প্রতি লক্ষ্য করনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করেছিল, যেহেতু আল্লাহ তাঁকে রাজত্ব প্রদান করেছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন আমার প্রভু তিনি যিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন; সে বলেছিলঃ আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু দান করি; ইব্রাহীম বলেছিলেন নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্বদিক হতে আনয়ন করেন; কিন্তু তুমি ওকে পশ্চিম দিক হতে আনয়ন কর; এতে সেই অবিশ্বাসী হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল এবং আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
২৫৯
أَوْ كَالَّذِي مَرَّ عَلَىٰ قَرْيَةٍ وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحْيِي هَـٰذِهِ اللَّهُ بَعْدَ مَوْتِهَا ۖ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهُ ۖ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ ۖ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۖ قَالَ بَل لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانظُرْ إِلَىٰ طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ ۖ وَانظُرْ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجْعَلَكَ آيَةً لِّلنَّاسِ ۖ وَانظُرْ إِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًا ۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অথবা ঐ ব্যক্তির অনুরূপ যে এমন কোন জনপদ অতিক্রম করছিল যা মুখ থুবরে নিজ ভিত্তির ওপর পড়েছিল। তিনি বললেন এই নগরের মৃত্যুর পর আল্লাহ আবার তাকে জীবন দান করবেন কিরূপে? অনন্তর আল্লাহ তাকে একশো বছরের জন্যে মৃত্যু দান করলেন, তৎপর তাঁকে পুনর্জীবিত করলেন, তিনি বললেনঃ এ অবস্থায় তুমি কতক্ষণ অতিবাহিত করেছো? তিনি বললেনঃ একদিন অথবা একদিনের কিয়দাংশ অতিবাহিত করেছি; তিনি বললেনঃ বরং তুমি একশত বর্ষ অতিবাহিত করেছো; অতএব তোমার খাদ্য পানীয়ের প্রতি লক্ষ্য কর, ওটা বিকৃত হয়নি এবং তোমার গাধার প্রতি দৃষ্টিপাত কর এবং যেহেতু আমি তোমাকে মানুষের জন্যে নিদর্শন করতে চাই – আরও দর্শন কর হাড়গুলির পানে, ওকে কিরূপে আমি সংযুক্ত করি; তৎপর ওকে মাংসাবৃত করি। অনন্তর যখন ওটা তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমি জানি যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৬০
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا ۚ وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
এবং যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন হে আমার প্রভু! আপনি কিরূপে মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে প্রদর্শন করুন; তিনি বললেনঃ তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন হ্যাঁ; কিন্তু তাতে আমার অন্তর পরিতৃপ্ত হবে; তিনি বললেনঃ তা হলে চারটা পাখি গ্রহণ কর, তারপর সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও, অনন্তর প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক খন্ড রেখে দাও; তারপর ওদেরকে আহ্বান কর, ওরা তোমার নিকট দৌড়ে আসবে; এবং জেনে রেখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাময়।
২৬১
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হল সাতটি বীজ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হল) একশত শস্য দানা এবং আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা করেন আরো বর্ধিত করে দেন, বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন মহাদাতা, মহাজ্ঞানী।
২৬২
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তৎপর যা ব্যয় করে তার জন্য কৃপা প্রকাশও করে না, কষ্ট দানও করে না, তাদের জন্যে তাদের প্রভুর নিকট পুরস্কার রয়েছে, বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুর্ভাবনাগ্রস্থও হবে না।
২৬৩
قَوْلٌ مَّعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّن صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى ۗ وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ
যে দানের পরে কষ্ট দেয়া হয়, সে দান অপেক্ষা উত্তম ভালো কথা বলা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা এবং আল্লাহ মহা সম্পদশালী, সম্মানী।
২৬৪
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে মু’মিনগণ! কৃপা প্রকাশ ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানগুলো ব্যর্থ করে ফেলো না, সে ব্যক্তির ন্যায় যে নিজের ধন ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্যে অথচ আল্লাহ ও পরকালে সে বিশ্বাস করে না; ফলতঃ তার উপমা যেমন এক বৃহৎ মসৃণ পাথর খন্ড, যার উপর কতকটা মাটি (জমে) আছে, এ অবস্থায় বর্ষিত হল তাতে প্রবল বর্ষা, যা তাকে পরিষ্কার করে দিল; তারা যা অর্জন করেছে তন্মধ্য হতে কোন বিষয়েই তারা সুফল পাবে না এবং আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে পথ-প্রদর্শন করেন না।
২৬৫
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
এবং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধন ও স্বীয় জীবনের প্রতিষ্ঠার জন্যে ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা- যেমন উর্বর ভূভাগে অবস্থিত একটি উদ্যান, তাতে প্রবল বৃষ্টিধারা পতিত হয়, ফলে সেই উদ্যান দ্বিগুণ খাদ্যশস্য দান করে; কিন্তু যদি তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত না হয় তবে অল্প বৃষ্টিধারাই যথেষ্ট এবং তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
২৬৬
أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَن تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ
তোমাদের কেউ কি এমনটা পছন্দ করবে? যে তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাক, যার তলদেশ দিয়ে নদী-নালা প্রবাহিত, তথায় সর্বপ্রকার ফলের সংস্থান তার রয়েছে, আর সে বার্ধক্যে উপনীত হল, এদিকে তার কতকগুলো দুর্বল (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তান-সন্ততি আছে- এ অবস্থায় সেই বাগানে অগ্নিসহ এক ঘূর্ণিবায়ু আসলো আর তা পুড়ে ভস্মিভুত হয়ে গেল। এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্যে নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা চিন্তা কর।
২৬৭
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
হে মু’মিনগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছো এবং আমি যা তোমাদের জন্যে ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি, সেই পবিত্র বিষয় হতে খরচ কর এবং তা হতে এরূপ কলুষিত বস্তু ব্যয় করতে মনস্থ কর না যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না; এবং তোমরা জেনে রাখো যে, আল্লাহ মহা সম্পদশালী, প্রশংসিত।
২৬৮
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভীতি প্রদর্শন করে এবং তোমাদেরকে অশ্লীল বিষয়ের আদেশ করে আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিকট হতে ক্ষমা ও দয়ার অঙ্গীকার করেন আর আল্লাহ হচ্ছেন অসীম করুণাময়, সর্বজ্ঞ।
২৬৯
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত ও প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় ফলতঃ নিশ্চয়ই সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে বস্তুতঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ব্যতীত কেউই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।
২৭০
وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
এবং যে কোন বস্তু তোমরা ব্যয় কর না কেন, অথবা যে কোন প্রতিজ্ঞা (নযর) তোমরা গ্রহণ কর না কেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই তা অবগত হন; আর অত্যাচারীগণের কোনই সাহায্যকারী নেই।
২৭১
إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
যদি তোমরা প্রকাশ্যভাবে দান কর তবে তা উৎকৃষ্ট এবং যদি তোমরা তা গোপন কর ও দরিদ্রদেরকে প্রদান কর তবে তাও তোমাদের জন্যে উত্তম এবং (এ দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। বস্তুতঃ তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
২৭২
لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
তাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের দায়িত্ব তোমার উপর নেই; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তোমরা ধন-সম্পদ হতে যা ব্যয় কর বস্তুতঃ তা তোমাদের নিজেদের জন্যে; আর একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভের চেষ্টায় ব্যতীত (অন্য কোন উদ্দেশ্যে) অর্থ ব্যয় করো না এবং তোমরা উত্তম সম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তার পুরস্কার পুরোপুরি তোমরা পেয়ে যাবে। আর তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।
২৭৩
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُم بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে অবরুদ্ধ রয়েছে বলে ভূ-পৃষ্ঠে গমনাগমনে অপারগ সেই সব দরিদ্রের জন্যে ব্যয় কর; (ভিক্ষা হতে) নিবৃত্ত থাকার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অবস্থাপন্ন বলে মনে করে, তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণের দ্বারা চিনতে পার, তারা লোকের নিকট ব্যাকুলভাবে যাঞ্ছা (ভিক্ষা করে না) করে না এবং তোমরা শুদ্ধ সম্পদ হতে যা ব্যয় কর বস্তুতঃ সে সমস্ত বিষয় আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত।
২৭৪
الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে, তাদের প্রভুর নিকট তাদের পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।
২৭৫
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
যারা সুদ ভক্ষণ করে, তারা শয়তানের স্পর্শে মোহাবিষ্ট ব্যক্তির দন্ডায়মান হওয়ার অনুরূপ ব্যতীত দন্ডায়মান হবে না; এর কারণ এই যে, তারা বলেঃ ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের অনুরূপ। অথচ আল্লাহ তা’আলা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন; অতঃপর যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ হতে উপদেশ সমাগত হয়, ফলে সে নিবৃত্ত হয়, সুতরাং যা অতীত হয়েছে; তার কৃতকার্য আল্লাহর প্রতি নির্ভর; এবং যারা পুনঃগ্রহণ করবে, তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
২৭৬
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
সুদকে আল্লাহ ক্ষয় করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি অকৃতজ্ঞ পাপাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
২৭৭
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে, নামাযকে প্রতিষ্ঠিত রাখে ও যাকাত প্রদান করে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে এবং তাদের জন্যে আশঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।
২৭৮
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং যদি তোমরা মু’মিন হও, তবে সুদের মধ্যে যা বকেয়া রয়েছে তা বর্জ কর।
২৭৯
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ
কিন্তু যদি তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যদি তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর তবে তোমাদের জন্যে তোমাদের মূলধন রয়েছে এবং তোমরা অত্যাচার করবে না ও তোমরাও অত্যাচারীত হবে না।
২৮০
وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ ۚ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর যদি সে অভাবগ্রস্থ হয় তবে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে সময় দেয়া উচিত। আর যদি তোমরা বুঝে থাক তবে তোমাদের জন্যে দান করাই উত্তম।
২৮১
وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
আর তোমরা সেই দিনের ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর পানে প্রত্যাবর্তিত হবে, তখন যে যা অর্জন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা অত্যাচারিত হবে না।
২৮২
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ ۚ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ ۚ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ ۚ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا ۚ فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ ۚ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ ۖ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ ۚ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا ۚ وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا ۖ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا ۗ وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ ۚ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ ۚ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ, যখন তোমরা কোন নির্দিষ্টকালের জন্যে ঋণ আদান-প্রদান করবে, তখন তা লিখে নাও; মার কোন একজন লেখক যেন ন্যায্যভাবে তোমাদের মধ্যে (ঐ আদান-প্রদানের দলিল) লিখে দেয়, আর কোন লেখক যেন (দলিল) লিখে দিতে অস্বীকার না করে, আল্লাহ তাকে যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন, তার লিখে দেয়া উচিত এবং যে ব্যক্তির উপর দায়িত্ব সেও লিখিয়ে নেবে এবং তার উচিত যে, স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করা ও এর মধ্যে কিছুমাত্র ব্যতিক্রম না করা; অনন্তর যার উপর দায়িত্ব সে যদি নির্বোধ বা অযোগ্য অথবা লিখিয়ে নিতে অসমর্থ হয় তবে তার অভিভাবকেরা ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখিয়ে নেবে এবং তোমাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ সাক্ষীকে সাক্ষী করবে; কিন্তু যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তবে সাক্ষীগণের মধ্যে তোমরা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী মনোনীত করবে, যদি নারীদ্বয়ের একজন ভুলে যায় তবে উভয়ের একজন অপর জনকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং যখন আহ্বান করা হয় তখন সাক্ষীগণের অস্বীকার না করা উচিত এবং ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় লিখে নিতে তোমরা অবহেলা করো না, এটা আল্লাহর নিকট অতি সঙ্গত এবং সাক্ষ্যের জন্যে এটাই দৃঢ়তা ও সন্দেহে পতিত না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু যদি তোমরা কারবারে পরস্পরে হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা লিপিবদ্ধ না করলে তোমাদের পক্ষে দোষ নেই এবং পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করার সময় সাক্ষী রাখবে, এবং লেখককে ও সাক্ষীকে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না করা হয়ার যদি কর তবে তা নিশ্চয় তোমাদের পক্ষে অনাচার এবং আল্লাহকে ভয় কর ও আল্লাহই তোমাদেরকে শিক্ষা প্রদান করেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী।
২৮৩
وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ ۗ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
এবং যদি তোমরা সফরে থাক এবং লেখক না পাও, তবে হস্তান্তরকৃত বন্ধক রাখা বিধেয়। অনন্তর কেউ যদি কাউকে বিশ্বাস করে তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়েছে তার পক্ষে গচ্ছিত দ্রব্য প্রত্যর্পণ করা উচিত এবং স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করা ও সাক্ষ্যে গোপন না করা উচিত এবং যে কেউ তা গোপন করবে, নিশ্চয় তার মন পাপাচারী; বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞাতা।
২৮৪
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর এবং তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে, তা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহর তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন, অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
২৮৫
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
রাসূল তাঁর প্রতিপালক হতে তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করেন এবং মু’মিনগণও (বিশ্বাস করেন); তাঁরা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেস্তাগণের উপর, তাঁর গ্রন্থসমূহের উপর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করিনা, তারা বলে, আমরা শ্রবন করলাম ও স্বীকার করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই দিকে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন।
২৮৬
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না; কারণ সে যা উপার্জন করেছে তা তারই জন্যে এবং সে যা (অন্যায়) করেছে তা তারই উপর বর্তায়। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা না জেনে ভুল করি তজ্জন্যে আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেরূপ ভার অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেন না; হে আমাদের প্রভু, যা আমাদের শক্তির অতীত ঐরূপ ভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেন না এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে দয়া করুন; আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরূদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x