প্রথম অধ্যায়

বিষাদ-যোগ

শ্লোক – ১

ধৃতরাষ্ট্র কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ।

মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয় ।। ১ ।।

ধৃতরাষ্ট্রঃ উবাচ – মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র বললেন; ধর্মক্ষেত্রে – ধর্মক্ষেত্রে; কুরুক্ষেত্রে – কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে; সমবেতাঃ – সমবেত হয়ে; যুযুৎসবঃ – যুদ্ধকামী; মামকাঃ – আমার দল (পুত্রেরা); পান্ডবাঃ – পান্ডুর পুত্রেরা; চ – এবং; এব – অবশ্যই; কিম – কি; অকুর্বত – করেছিল; সঞ্জয় –  হে সঞ্জয়।

গীতার গান

ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে হইয়া একত্র।

যুদ্ধকামী মমপুত্র পান্ডব সর্বত্র।।

কি করিল তারপর কহত সঞ্জয়।

ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসয়ে সন্দিগ্ধ হৃদয়।।

অনুবাদঃ ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন – হে সঞ্জয়! ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল?

তাৎপর্যঃ ভগবদগীতা হচ্ছে বহুজন-পঠিত ভগবৎ- তত্ত্ববিজ্ঞান, যার মর্ম গীতা-মাহাত্ম্যে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভগবদগীতা পাঠ করতে হয় ভগবৎ- তত্ত্বদর্শী কৃষ্ণভক্তের তত্ত্বাবধানে। ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে গীতার বিশ্লেষণ করা কখনই উচিত নয়। গীতার যথাযথ অর্থ উপলব্ধি করার দৃষ্টান্ত ভগবদগীতাই আমাদের সামনে তুলে ধরেছে অর্জুনের মাধ্যমে, যিনি স্বয়ং ভগবানের কাছ থেকে সরাসরিভাবে এই গীতার জ্ঞান লাভ করেছিলেন। অর্জুন ঠিক যেভাবে গীতার মর্ম উপলব্ধি করেছিলেন, ঠিক সেই দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোবৃত্তি নিয়ে সকলেরই গীতা পাঠ করা উচিত। তা হলেই গীতার মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব। সৌভাগ্যবশত যদি কেউ গুরুপরম্পরা-সূত্রে ভগবদগীতার মনগড়া ব্যাখ্যা ব্যতীত যথাযথ অর্থ উপলব্ধি করতে পারেন, তবে তিনি সমস্ত বৈদিক জ্ঞান এবং পৃথিবীর সব রকমের শাস্ত্রজ্ঞান আয়ত্ত করতে সক্ষম হন। ভগবদগীতার পড়ার সময় আমরা দেখি, অন্য সমস্ত শাস্ত্রে যা কিছু আছে, তা সবই ভগবদগীতায় আছে, উপরন্তু ভগবদগীতায় এমন অনেক তত্ত্ব আছে যা আর কোথাও নেই। এটিই হচ্ছে গীতার মাহাত্ম্য এবং এই জন্যই গীতাকে সর্বশ্রেষ্ঠ শাস্ত্র বলে অভিহিত করা হয়। গীতা হচ্ছে পরম তত্ত্বদর্শন, কারণ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে এই জ্ঞান দান করে গেছেন।

মহাভারতে বর্ণিত ধৃতরাষ্ট্র ও সঞ্জয়ের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ভগবদগীতার মহৎ তত্ত্বদর্শনের মূল উপাদান। এখানে আমরা জানতে পারি যে, এই মহৎ তত্ত্বদর্শন প্রকাশিত হয়েছিল কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে, যা সুপ্রাচীন বৈদিক সভ্যতার সময় থেকেই পবিত্র তীর্থস্থানরূপে খ্যাত। ভগবান যখন মানুষের উদ্ধারের জন্য এই পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন, তখন এই পবিত্র তীর্থস্থানে তিনি নিজে পরম তত্ত্ব সমন্বিত এই গীতা দান করেন।

এই শ্লোকে ধর্মক্ষেত্র শব্দটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন তথা পান্ডবদের পক্ষে ছিলেন। দুর্যোধন আদি কৌরবদের পিতা ধৃতরাষ্ট্র তাঁর পুত্রদের বিজয় সম্ভাবনা সম্বন্ধে অত্যন্ত সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। দ্বিধাগ্রহস্ত-চিত্তে তাই তিনি সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমার পুত্র ও পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল?” তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর পুত্র ও পান্ডুপুত্রেরা কুরুক্ষেত্রের বিস্তীর্ণ ভূমিতে যুদ্ধ করবার জন্য সমবেত হয়েছিলেন। কিন্তু তবুও তাঁর অনুসন্ধানটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি চাননি যে, পান্ডব ও কৌরবের মধ্যে কোন আপস-মীমাংসা হোক, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন যুদ্ধে তাঁর পুত্রদের ভাগ্য  সুনিশ্চিত হোক। তার কারণ হচ্ছে কুরুক্ষেত্রের পুণ্য তীর্থে এই যুদ্ধের আয়োজন হয়েছিল। বেদে বলা হয়েছে, কুরুক্ষেত্রে হচ্ছে অতি পবিত্র স্থান, যা দেবতারাও পূজা করে থাকেন। তাই, ধৃতরাষ্ট্র এই যুদ্ধের ফলাফলের উপর এই পবিত্র স্থানের প্রভাব সম্বন্ধে শঙ্কাকুল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি খুব ভালভাবে জানতেন যে, অর্জুন এবং পান্ডুর অন্যান্য পুত্রদের উপর এই পবিত্র স্থানের মঙ্গলময় প্রভাব সঞ্চারিত হবে, কারণ তাঁরা সকলেই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। সঞ্জয় ছিলেন ব্যাসদেবের শিষ্য, তাই ব্যাসদেবের আশীর্বাদে তিনি দিব্যচক্ষু প্রাপ্ত হন, যার ফলে তিনি ঘরে বসেও কুরুক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন।

পান্ডবেরা এবং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা ছিলেন একই বংশজাত, কিন্তু ধৃতরাষ্ট্রের মনোভাব এখানে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি কেবল তাঁর পুত্রদেরই কৌরব বলে গণ্য করে পান্ডুর পুত্রদের বংশগত উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। এভাবে ভ্রাতুষ্পুত্র বা পান্ডুর পুত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের  মাধ্যমেই ধৃতরাষ্ট্রের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি হৃদয়ঙ্গম করা যায়। ধানক্ষেতে যেমন আগাছাগুলি তুলে ফেলে দেওয়া হয়, তেমনই ভগবদগীতার সূচনা থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে ধর্মের প্রবর্তক ভগবান স্বয়ং উপস্থিত থেকে ধৃতরাষ্ট্রের পাপিষ্ঠ পুত্রদের সমূলে উৎপাটিত করে ধার্মিক যুধিষ্ঠিরের নেতৃত্বে ধর্মপরায়ণ মহাত্মদের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবার আয়োজন করেছেন। বৈদিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও সমগ্র গীতার তত্ত্বদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মক্ষেত্রে ও কুরুক্ষেত্রে – এই শব্দ দুটি ব্যবহারের তাৎপর্য বুঝতে পারা যায়।

শ্লোক – ২

সঞ্জয় উবাচ

দৃষ্টা তু পান্ডবানীকং ব্যূঢ়ং দুর্যোধনস্তদা।

আশ্চার্যমুপসঙ্গম্য রাজা বচনমব্রবীৎ ।। ২ ।।

সঞ্জয়ঃ উবাচ – সঞ্জয় বললেন; দৃষ্টা –   দর্শন করে; তু – কিন্তু, পান্ডবানীকম – পান্ডবদের সৈন্য; ব্যূঢ়ম – সামরিক ব্যূহ; দুর্যোধনঃ – রাজা দুর্যোধন; তদা – সেই সময়; আশ্চার্যম – দ্রোণাচার্য; উপসঙ্গম্য – কাছে গিয়ে; রাজা – রাজা; বচনম – বাক্য; অব্রবীৎ –  বলেছিলেন।

গীতার গান

সঞ্জয় কহিল রাজা শুন মন দিয়া।

পান্ডবের সৈন্যসজ্জা সাজান দেখিয়া।।

রাজা দুর্যোধন শীঘ্র দ্রোণাচার্য পাশে।

যাইয়া বৃত্তান্ত সব কহিল সকাশে।।

অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন – হে রাজন। পান্ডবদের সৈন্যসজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়ে বললেন –

তাৎপর্যঃ ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন জন্মান্ধ। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি পারমার্থিক তত্ত্বদর্শন থেকেও বঞ্চিত ছিলেন। তিনি ভালভাবেই জানতেন যে, ধর্মের ব্যাপারে তাঁর পুত্রেরাও ছিল অন্ধ, এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তাঁর পাপিষ্ঠ পুত্রেরা পাণ্ডবদের সঙ্গে কোন রকম আপস-মীমাংসা করতে সক্ষম হবে না, কারণ পান্ডবেরা সকলেই জন্ম থেকে অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তবুও তিনি ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের প্রভাব সম্বন্ধে সন্দিগ্ধ ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্বন্ধে ধৃতরাষ্ট্রের এই প্রশ্ন করার প্রকৃত উদ্দেশ্য সঞ্জয় বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি নৈরাশ্যগ্রস্ত রাজাকে সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, এই পবিত্র ধর্মক্ষেত্রের প্রভাবের ফলে তাঁর সন্তানেরা পাণ্ডবদের সঙ্গে কোন রকম আপস-মীমাংসা করতে সক্ষম হবে না। সঞ্জয় তখনই ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন যে, তাঁর পুত্র দুর্যোধন পাণ্ডবদের মহৎ সৈন্যসজ্জা দর্শন করে, তাঁর বিবরণ দিয়ে তৎক্ষণাৎ সেনাপতি দ্রোণাচার্যের কাছে উপস্থিত হলেন। দুর্যোধনকে যদিও রাজা বলা হয়েছে, তবুও সেই সঙ্কটময় অবস্থায় তাঁকে তাঁর সেনাপতির কাছে উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, চতুর রাজনীতিবিদ হবার সমস্ত গুণগুলি দুর্যোধনের মধ্যে বর্তমান ছিল। কিন্তু পাণ্ডবদের মহতী সৈন্যসজ্জা দেখে দুর্যোধনের মনে যে মহাভয়ের সঞ্চার হয়েছিল, তা তিনি তাঁর চতুরতার আবরণে ঢেকে রাখতে পারেননি।

 

শ্লোক – ৩

পশ্যৈতাং পান্ডুপুত্রাণামাচার্য মহতীং চমূম।

ব্যূঢ়াং দ্রুপদপুত্রেণ তব শিষ্যেণ ধীমতা ।। ৩ ।।

পশ্য – দেখুন, এতাম – এই; পান্ডুপুত্রাণাম – পান্ডুর পুত্রদের; আচার্য – হে আচার্য; মহতীম – মহান; চমূম – সৈন্যবল; ব্যূঢ়াম – ব্যূহ; দ্রুপদপুত্রেণ – দ্রুপদের পুত্র কর্তৃক; তব – আপনার; শিষ্যেণ –  শিষ্যের দ্বারা; ধীমতা – অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

গীতার গান

আচার্য চাহিয়া দেহ মহতী সেনানী।

পান্ডুপুত্র রহিয়াছে ব্যূহ নানাস্থানী।।

তব শিষ্য বুদ্ধিমান দ্রুপদের পুত্র।

সাজাইল এই সব করি একসূত্র।।

অনুবাদঃ হে আচার্য! পান্ডবদের মহান সৈন্যবল দর্শন করুন, যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যূহের আকারে রচনা করেছেন।

তাৎপর্যঃ চতুর কুটনীতিবিদ দুর্যোধন মহৎ ব্রাক্ষ্মণ সেনাপতি দ্রোণাচার্যকে তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলি দেখিয়ে দিয়ে তাঁকে সতর্ক করে দিতে চেয়েছিলেন। পঞ্চপান্ডবের পত্নী দ্রৌপদীর পিতা দ্রুপদরাজের কিছু রাজনৈতিক মনোমালিন্য ছিল। এই মনোমালিন্যের ফলে দ্রুপদ এক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, এবং সেই যজ্ঞের ফলে তিনি বর লাভ করেন যে, তিনি এক পুত্র লাভ করবেন, যে দ্রোণাচার্যকে হত্যা করতে সক্ষম হবে। দ্রোণাচার্য এই বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে  অবগত ছিলেন, কিন্তু দ্রুপদ তাঁর সেই পুত্র ধৃষ্টদুম্নকে যখন অস্ত্র শিক্ষার জন্য তাঁর কাছে প্রেরণ করেন, তখন উদার হৃদয় সত্যনিষ্ঠ ব্রাক্ষ্মণ দ্রোণাচার্য তাঁকে সব রকমের অস্ত্র শিক্ষা এবং সমস্ত সামরিক কলা-কৌশলের গুপ্ত তথ্য শিখিয়ে দিতে কোন দ্বিধা করেননি। এখন, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে  ধৃষ্টদ্যুম্ন পাণ্ডবদের পক্ষে যোগদান করেন এবং পাণ্ডবদের সৈন্যসজ্জা তিনিই পরিচালনা করেন, যেই শিক্ষা তিনি দ্রোণাচার্যের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। দ্রোণাচার্যের এই ত্রুটির কথা দুর্যোধন তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, যাতে তিনি পূর্ণ সতর্কতা ও অনমনীয় দৃঢ়তার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। দুর্যোধন মহৎ ব্রাক্ষ্মণ এটিও মনে করিয়ে দিলেন যে, পান্ডবদের, বিশেষ করে অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তিনি যেন কোন রকম কোমলতা প্রদর্শন না করেন, কারণ তাঁরাও সকলে তাঁর প্রিয় শিষ্য, বিশেষত অর্জুন ছিলেন সবচেয়ে প্রিয় ও মেধাবী শিষ্য। দুর্যোধন সতর্ক করে দিতে চেয়েছিলেন যে, এই ধরণের কোমলতা প্রকাশ পেলে যুদ্ধে অবধারিতভাবে পরাজয় হবে।

শ্লোক ৪ – ৬

অত্র শূরা মহেষাসা ভীমার্জুনসমা যুধি।

যুযুধানো বিরাটশ্চ দ্রুপদশ্চ মহারথঃ ।। ৪ ।।

ধৃষ্টকেতুশ্চেকিতানঃ কাশিরাজশ্চ বীর্যবান।

পুরুজিৎ কুন্তিভোজশ্চ শৈব্যশ্চ নরপুঙ্গব ।। ৫ ।।

যুধামন্যুশ্চ বিক্রান্ত উত্তমৌজাশ্চ বীর্যবান।

সৌভদ্রো দ্রৌপদেয়াশ্চ সর্ব এব মহারথাঃ ।। ৬ ।।

অত্র – এখানে; শূরাঃ – বীরগণ; মহেষাসাঃ – বলবান ধনুর্ধরগণ; ভীমার্জুন – ভীম ও অর্জুন; সমাঃ – সমকক্ষ; যুধি – যুদ্ধে; যুযুধানঃ – যুযুধান; বিরাটঃ – বিরাট; চ – ও; দ্রুপদঃ – দ্রুপদ; চ – ও; মহারথঃ – মহারথী; ধৃষ্টকেতুঃ – ধৃষ্টকেতু; চেকিতানঃ – চেকিতান; কাশিরাজঃ – কাশিরাজ; চ – ও; বীর্যবান – অত্যন্ত বলবান; পুরুজিৎ – পুরুজিৎ; কুন্তিভোজঃ – কুন্তিভোজ; চ – এবং; শৈব্যঃ – শৈব্য; চ – ও; নরপুঙ্গবঃ – মানব-সমাজে শ্রেষ্ঠ; যুধামন্যুঃ – যুধামন্যু; চ – এবং; বিক্রান্তঃ – বলবান; উত্তমৌজাঃ – উত্তমৌজা; চ – এবং; বীর্যবান – অত্যন্ত শক্তিশালী; সৌভদ্রঃ – সুভদ্রার পুত্র; দ্রৌপদেয়াঃ – দ্রৌপদীর পুত্রেরা; চ – এবং; সর্বে – সকলে; এব – অবশ্যই; মহারথাঃ – মহারথীগণ।

গীতার গান

এইস্থানে বর্তমান বহু যোদ্ধাগণ।

ভীমার্জুনসম তারা ধনুর্ধারী হন।।

যুযুধান বিরাট দ্রুপদ মহারথী সব।

ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশীর পুঙ্গব।।

পুরুজিৎ কুন্তিভোজ শৈব্যরাজাগণ।

যুধামন্যু বিক্রান্ত নহে সাধারণ।।

বীর্যবান যে এই সৌভদ্র দ্রৌপদেয়।

সকলেই মহারথী কেহ নহে হেয়।।

অনুবাদঃ সেই সমস্ত সেনাদের মধ্যে অনেকের ভীম ও অর্জুনের মতো বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান, বিরাট ও দ্রুপদের মতো মহাযোদ্ধা রয়েছেন। সেখানে ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, কাশিরাজ, পুরুজিৎ, কুন্তিভোজ ও শৈব্যের মতো অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন। সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু, প্রবল পরাক্রমশালী উত্তমৌজা,। সুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগণ। এর সব যোদ্ধারা সকলেই এক-একজন মহারথী।

তাৎপর্যঃ যদিও দ্রোণাচার্যের অসীম শৌর্য, বীর্য ও সামরিক কলা-কৌশলের কাছে ধৃষ্টদ্যুম্ন ছিলেন এক অতি নগণ্য প্রতিবন্ধক এবং তাঁর ভয়ে ভীত হবার কোন কারণই ছিল না দ্রোণাচার্যের পক্ষে, কিন্তু ধৃষ্টদ্যুম্ন ছাড়াও পান্ডবপক্ষে অন্য অনেক রথী-মহারথী ছিলেন, যারা সত্যি সত্যিই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দুর্যোধনের পক্ষে সেই যুদ্ধজয়ের পথে তারা ছিলেন এক-একটি দুরতিক্রম্য প্রতিবন্ধকের মতো, কারণ তাঁরা সকলেই ছিলেন ভীম ও অর্জুনের মতো ভয়ংকর। তাঁদের বীরত্বের কথা দুর্যোধন ভালভাবেই জানতেন, তাই তিনি অন্যান্য রথী-মহারথীদেরও ভীম ও অর্জুনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

শ্লোক – ৭

অস্মাকন্তু বিশিষ্টা যে তান্নিবোধ দ্বিজোত্তম।

নায়কা মম সৈন্যস্য সংজ্ঞার্থং তান ব্রবীমি তে ।। ৭ ।।

অস্মাকম – আমাদের; তু – কিন্তু; বিশিষ্টাঃ – বিশেষভাবে শক্তিমান; যে – যারা; তান – তাঁদের; নির্বোধ – জেনে রাখুন; দ্বিজোত্তম – দ্বিজশ্রেষ্ঠ; নায়কাঃ- সেনানায়ক; মম- আমার; সৈন্যস্য- সৈন্যদের; সংজ্ঞার্থম- অবগতির জন্য; তান- তাঁদের; ব্রবীমি- আমি বলছি; তে- আপনাকে।

গীতার গান

আমাদের মধ্যে যারা বিশিষ্ট মহান।

দ্বিজোত্তম শুন তাহা করিয়া মনন।।

সেনাপতি যে যে সব মম সৈন্যপাশে।

সংজ্ঞার্থে তোমারে কহি অশেষ বিশেষে।।

অনুবাদঃ হে দ্বিজোত্তম! আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তি পরিচালনার জন্য রয়েছেন, আপনার অবগতির জন্য আমি তাঁদের সম্বন্ধে বলছি।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x