তোমার দুই চির-অপ্রতিষ্ঠিত পুত্র কবি ও কৃষক (নিষাদেরাই
প্রতিষ্ঠিত চিরকাল) তোমার রূপের কথা
রটায় দিনরাত। একজন ধানখেতে তোমার দেহের
স্তব করে যেই গান গেয়ে ওঠে অন্যজন অমনি পুথির ধূসর
পাতা ভরে তোলে সমিল পয়ারে।
একজনকে তুমি এক বিঘে ধান দিলে সে তোমার দশ বিঘে
ভ’রে তোলে গানে। অন্যজনকে যখন তুমি
একটি পংক্তি দাও সে তখন দশশ্লোক স্তব রচে তোমার রূপের।
এ ছাড়া তোমার স্তব কোনো কালে বেশি কেউ
করে নি কখনো, বরং কুৎসাই রটিয়েছে শতকে শতকে।
এখন তো তুমি অপরিহার্য নও তোমার অধিকাংশ পুত্রের জন্যেই।
অনেকের চোখেই এখন মরুভূমি তোমার চেয়েও বেশি
সবুজ ও রূপসী, আর শীতপ্রধান অঞ্চলের উষ্ণতা রক্তেমাংসে
উপভোগে উৎসাহী সবাই, তাই তোমাকে ‘বিদায়’ না ব’লেই তারা
ছেড়ে যাচ্ছে তোমার উঠোন। আর চিরকালই
ঝোপঝাড়ে পাটখেতে ওৎ পেতে আছে অজস্র ধর্ষণকারী।
কতোবার যে দশকে দশকে ধর্ষিতা হয়েছো তুমি, তোমার আর্ত চিৎকার
মিশে গেছে মাঠে ঘাটে তুমি তার হিশেবও রাখো নি।
তুমি সেই কৃষক-কন্যা, যে ধর্ষিতা হলে প্রতিবাদে কোনো দিন
সরব হয় না গ্রাম। আমিও যে খুব ভক্তি করি ভালোবাসি
তোমাকে, তা নয়; ভাগ্যগুণে অন্য গোলার্ধে আমিও বিস্তর রূপসী
দেখেছি। তাদের ওষ্ঠ গ্রীবা বাহু এখনো রক্তে
তোলে ঢেউ, অর্থাৎ তোমার রূপে আমার দু-চোখ অন্ধ হয় নি কখনো।
অপরিহার্য ভাবি না তোমাকে, তবু যেই রক্তে চাপ পড়ে
টের পাই পাঁজরের তলে নষ্ট হৃৎপিণ্ডের মতো বাঙলাদেশ
সেঁটে আছো অবিচ্ছেদ্যভাবে।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x