কলমিলতা শাড়ি মেয়ের, কলমি-রাঙ্গা মুখ,
ঠোঁট দুখানি সিঁদুর-ভাঙ্গা রাঙ্গা যে টুকটুক
গলায় তাহার পুঁতির মালা; কানে ফুলের দুল,-
এ গাঁয়ের ও চাষীয় মেয়ে হয় না যেন ভুল।
গয়না তাহার নাইকো গায়ের রূপ করে টলমল,
রঙ-রাঙ্গা অঙ্গ যেন গয়না ঝলমল।
রূপ-মুখরা রূপার খাড়ু পা দুখানি ধরে,
ঝুমুর-ঝুমুর চাষী মেয়ের রূপেরই গান করে।
হেলায় তনু, এলায় চিকুর, দোলায় সরু কাঁখ,
পেখম-পরা ময়ূর লাজে নীপ-বনে নির্বাক।
বাহুতে তার তাবিজ বাঁধা গেঁয়ো পীরের দান,
ঝুমকো ঢেঁড়ির প্রেম-আলাপন শুনছে নিতুই কান
বারে বারে ঘোমটা খসে লাজ-মেশা নিলাজ,
পুতুলটারে বউ সাজাতে নিজেরও বউ সাজ।
এক পুতুলে আদর করে আরেক পুতুল লয়ে,
কোনটি পুতুল, কোনটি যে নয় যায় যে রে ভুল হয়ে।
নামটি মেয়ের জানি নাকো নাম জানি তার শাড়ির,
কলমিলতা শাড়ির চেয়ে মিঠেবা নাম তারির।
ওর সাথে মোর একটু যদি থাকত পরিচয়,
শিখে নিতেম কেমন করে ‘বৌ-কথা কও’ কয়।
শিখে নিতেম কেমন করে পাকা পূই-এর ফলে,
হেনা ফেলে লাল টুকটাক করে চরণ ডলে।
শিখে নিতেম কোথায় মাঠে পাটবনেরই মূল,
বউ-টুবানীর ফুলগুলি সব নাড়ছে নোলক-দুল।
আমার তো আর নেইকো পুতুল শাপলা-কুসুম ধরে,
সাজিয়ে তাহার ঈষৎ হাসি নিতুম ছড়ায় ভরে।