যাকোব বৈথেলে

১. ঈশ্বর যাকোবকে বললেন, “বৈথেল শহরে যাও। সেখানে বাস কর আর উপাসনার জন্য একটা বেদী তৈরী কর। স্মরণ কর এলকে। তুমি যখন তোমার ভাই এষৌর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলে তখন সেখানে এই ঈশ্বরই তোমায় দর্শন দিয়েছিলেন।”

২. তাই যাকোব তার পরিবার ও তার সমস্ত দাসকে বলল, “তোমাদের কাছে কাঠ ও ধাতুর য়ে সমস্ত পুতুল ঠাকুর রয়েছে তার সমস্তই ধ্বংস কর। নিজেদের পবিত্র কর এবং পরিষ্কার কাপড় পর।

৩. আমরা এই জায়গা ছেড়ে বৈথেলে যাব। সেখানেই আমি আমার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে একটি বেদী তৈরী করব, এই ঈশ্বরই সঙ্কটের সময় আমায় সাহায্য করেছিলেন। আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই এই ঈশ্বর আমার সঙ্গে গিয়েছেন।”

৪. সেইজন্য লোকরা বিদেশের সমস্ত ঠাকুরগুলোকে যাকোবের কাছে এনে দিল। তারা যাকোবকে তাদের কানের দুলগুলি এনে দিল। যাকোব এসব কিছু শিখিম শহরের কাছে একটা এলা গাছের তলায় পুঁতে রাখল।

৫. যাকোব আর তার পুত্ররা সেই জায়গা পরিত্যাগ করল। সেই স্থানের লোকরা তাদের তাড়া করে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা ভীষণ ভয় পেয়ে যাকোবকে আর অনুসরণ করল না।

৬. এরপর যাকোব আর তার লোকরা লুসে গেল। লুসের বর্তমান নাম বৈথেল। এটি কনান দেশে অবস্থিত।

৭. যাকোব সেই জায়গায় একটি বেদী তৈরী করে তার নাম রাখল “এল্ বৈথেল।” যাকোব এই নাম বেছে নিল কারণ ভাইয়ের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সময় এইখানে ঈশ্বর তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

৮. রিবিকার ভাই দবোরার সেইখানেই মৃত্যু হল। তারা তাকে বৈথেলে একটা অলোন গাছের নীচে কবর দিল এবং সেই জায়গার নাম রাখল অলোন্ বাখুৎ।

 

যাকোবের নতুন নাম

৯. পদ্দন্-অরাম থেকে যাকোব যখন ফিরে এল ঈশ্বর তাঁকে আবার দর্শন দিলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন।

১০. ঈশ্বর যাকোবকে বললেন, “তোমার নাম যাকোব কিন্তু আমি তোমার অন্য নাম রাখব। এখন থেকে তোমাকে যাকোব বলে ডাকা হবে না, তোমার নাম হবে ইস্রায়েল।” তাই ঈশ্বর তার নাম রাখলেন ইস্রায়েল।

১১. ঈশ্বর তাকে বললেন, “আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এবং আমি তোমায় এই আশীর্বাদ করছি। তোমার অনেক সন্তান-সন্ততি হোক, এক মহাজাতি হয়ে বেড়ে ওঠো। তোমার থেকেই অন্য অনেক জাতি এবং রাজারা উৎপন্ন হবে।

১২. আমি অব্রাহাম ও ইসহাককে যে দেশ দিয়েছিলাম সেই দেশই এখন তোমায় দিচ্ছি। তোমার পরে তোমার বংশধরদের আমি সেই দেশ দিচ্ছি।”

১৩. এরপর ঈশ্বর সেই জায়গা থেকে চলে গেলেন।

১৪-১৫. এই স্থানে যাকোব একটি স্মরণস্তম্ভ স্থাপন করল। সেই পাথরের উপরে দ্রাক্ষারস ও তেল ঢেলে যাকোব সেটা পবিত্র করল। এটা ছিল এক বিশেষ জায়গা কারণ এখানেই ঈশ্বর যাকোবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং যাকোব এই জায়গার নাম রাখল বৈথেল।

 

রাহেল প্রসবের পর মারা গেলেন

১৬. যাকোব এবং তার দল বৈথেল ত্যাগ করল। তারা ইফ্রাতে পৌঁছাবার আগেই রাহেলের প্রসবের সময় এল।

১৭. কিন্তু এইবার প্রসবকালে রাহেলের ভীষণ কষ্ট হল, প্রসব বেদনা তীব্র হয়ে উঠল। রাহেলের ধাত্রী এই দেখে বললেন, “ভয় পেও না রাহেল! তুমি আরেকটি পুত্রের জন্ম দিতে চলেছ।”

১৮. রাহেল পুত্রটি প্রসব করার সময়ই মারা গেল। মারা যাবার আগে রাহেল পুত্রটির নাম রাখল বিনোনী। কিন্তু যাকোব তার নাম রাখল বিন্যামীন।

১৯. রাহেলকে ইফ্রাথ যাবার পথেই কবর দেওয়া হল। (ইফ্রাথই বৈৎলেহম।)

২০. রাহেলকে সম্মান জানাতে যাকোব তার কবরে একটি স্তম্ভ স্থাপন করল। সেই বিশেষ স্তম্ভটি আজও সেখানে রয়েছে।

২১. এরপর ইস্রায়েল আবার তার যাত্রা পথে চললেন। তিনি মিগ্দল-এদর দক্ষিণে তাঁর তাঁবু খাটালেন।

২২. ইস্রায়েল এই স্থানে অল্পকাল রইলেন। এই স্থানেই রূবেণ তার পিতার দাসী বিল্হার কাছে গেল এবং তার সাথে শয়ন করল। ইস্রায়েল এই খবর জানতে পেরে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন।যাকোবের ১২টি পুত্র ছিল।

 

ইস্রায়েল পরিবার

২৩. যাকোব এবং লেয়ার পুত্ররা হল: যাকোবের প্রথম জাত পুত্র রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন।

২৪. যাকোব এবং রাহেলের পুত্ররা হল যোষেফ ও বিন্যামীন।

২৫. বিল্হা ছিলেন রাহেলের দাসী। যাকোব ও বিল্হার পুত্ররা হল দান এবং নপ্তালি।

২৬. সিল্পা ছিলেন লেয়ার দাসী। যাকোব এবং সিল্পার পুত্ররা হল গাদ ও আশের।পদ্দন্-অরামে যাকোবের এই কটি পুত্রের জন্ম হয়।

২৭. যাকোব কিরিয়থ অর্ব্বয় স্থিত মম্রি নামক স্থানে তার পিতা ইসহাকের কাছে গেলেন। এই জায়গায়ই অব্রাহাম ও ইসহাক বাস করতেন।

২৮. ইসহাক ১৮০ বৎসর বেঁচে ছিলেন।

২৯. এরপর ইসহাক বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হয়ে মারা গেলেন। তার দুই পুত্র এষৌ ও যাকোব তার পিতাকে যে স্থানে কবর দেওয়া হয়েছিল সেইখানেই তাকে কবর দিলেন।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x