সূচিঃ
১। কবিতা-৫: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৮৬ সালে ?
২। কবিতা—–৬: হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমাবর্ষণ।
৩। কবিতা—–৩৫: ২২ ডিসেম্বরের একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
৪। কবিতা—৪০: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ।
৫। কবিতা-৫১: লন্ডনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ।
কবিতা—৫ (সেঃ−২)
Qu’en dans poisson, fer & lettres enfermee,
Hors sorura qui puis fera la guerre
Aura par mer se classe bien pramee,
Apparoissant pres de Latine terre
অর্থাৎঃ
অস্ত্রশস্ত্র আর দলিলপত্র রয়েছে একটা মাছের পেটে,
আবির্ভাব হবে এক মানুষের, যে শুরু করবে যুদ্ধঃ
তার সেনাদল সাগর পেরিয়ে এগিয়ে যাবে অনেকটা,
এগিয়ে যাবে ইতালির উপকুল অবধি ।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৮৬ সালে ?
এরিকার ব্যাখ্যা অনুযায়ী মাছ বলতে আসলে নস্ট্রাডামুস আধুনিক সাবমেবিন-এর কথা বলতে চেয়েছেন। অস্ত্রশস্ত্র আর দলিলপত্র তো সাবমেরিনের পেটে থাকেই। আর এই যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা লেখা হয়েছে, এটা সম্ভবত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তারিখটাও এরিকা উল্লেখ করেছেন। ১৯৮৬ সাল। কেমন করে ? এরিকার মতে, প্রথম লাইনটার একটা দ্বিতীয় মানেও হতে পারে। সেই দ্বিতীয় মানেটা জ্যোতিষ-নির্ভর। দ্বিতীয়ভাবে ব্যাখ্যা করলে প্রথম লাইনটার ব্যাখ্যা দাঁড়ায়– When Mars and Mercury are in conjunction in Pisces. ” ‘conjunc- tion টা আবার ঘটবে ১৯৮৬ সালে। (এখানে মনে রাখতে হবে, এরিকা তাঁর ব্যাখ্যার বইটা লিখেছিলেন ১৯৮৬’-র আগে।) সুতরাং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে ১৯৮৬ সালে। আর এই যুদ্ধে ব্যবহার করা হবে সাবমেবিন।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
আমার কিন্তু কবিতাটা পড়ে একবারও মনে হয়নি যে ‘মাছ’ বলে নস্ট্রাডামুস আসলে ডুবোজাহাজ বোঝাতে চেয়েছিলেন। কবিতাতে স্পষ্টতই মাছের কথাই বলা আছে। কবিতাতে আরও অনেক কিছুই বলা আছে। কিন্তু এরিকা কবিতার সব লাইনের আলোচনা না করেই কেমন করে দুম করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন যে এখানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা আছে, -বুঝলাম না ।
১৯৮৬ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু লাগেনি ।
কবিতা—–৬ (সে:−২)
Aupres des portes & dedans deux cites.
Seront deux flcaux & oncques n’apperceu un tel
Faim, dedans peste, de fer hors gens boutes,
Crer secours au grand Dien immortel
মানেঃ
সমুদ্রের কাছে এবং দুটি শহরে পড়বে দেবতাদের শাস্তি
ভয়াবহ সে শাস্তিঃ
তলোয়ারের খোঁচায় জর্জরিত হবে ক্ষুধার্ত প্লেগ আক্রান্ত লোকগুলো
তারা সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করবে অমর দেবতার কাছে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ হিরোসিমা ও নাগাসাকির ওপর আনবিক বোমা বর্ষণ ৷
চিটহ্যামের মতে এই কবিতায় জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকির ওপর আমেরিকা যে বোমাবর্ষণ করবে, সে কথারই ইংগিত দেওয়া রয়েছে। হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দু’টি সমুদ্রের কাছে। “দেবতাদের শাস্তি” বলতে আণবিক বোমা বিস্ফারণের কথাই বলা হয়েছে। “তলোয়ারের খোঁচায়” বলতে বোঝাতে চেয়েছিলেন বোমার আঘাতকেই। বোমাবর্ষণের আণবিক তেজষ্ক্রিয়ার ফলে শহর দুটির আশে-পাশের মানুষদের চেহারা হয়েছিল প্লেগ-রোগীর মত, তাইতেই কবিতায় ‘প্লেগ আক্রান্ত” শব্দটিকে রূপক আকারে ব্যবহার করা হয়েছে। অমর দেবতার কাছে প্রার্থনা—সে ও সত্যি। দেবতারা অমর এবং তেজষ্ক্রিয়ার ফলে রোগগ্রস্ত মানুষগুলো দেবতার কাছে প্রার্থনা জানাবে, এটাও স্বাভাবিক ।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
আমি এর আগে বাববার বলেছি-ব্যাখ্যাকাররা যা-তা ব্যাখ্যা করে একটা ঘটনার সঙ্গে কবিতাগুলোকে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করেন; এই কবিতাটার ব্যাখ্যা তারই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ৷ ব্যাখ্যাকার কিভাবে কবিতার অর্থকে বদলেছেন লক্ষ্য করুন। প্রথম লাইনে স্পষ্টতই আছে— “সমুদ্রেব কাছে, এবং দুটো শহরে …।” এই এবং শব্দটার প্রয়োগ এখানে গুরুত্বপূর্ণ । কেননা এর মানে দাঁড়াচ্ছে, দেবতার শাস্তি পড়বে দুটো শহরে, এবং সমুদ্রের কাছে। কিন্তু ব্যাখ্যাকার ব্যাখ্যা করেছেন—আণবিক বোমা পড়বে সমুদ্রের কাছে দুটো শহরে । দুটো বাক্যের অর্থগত তফাত আছে।
‘দেবতার শাস্তি’ মানে আণবিক বোমা বিস্ফোরণই কেন ? কেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয় কেন ? জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় কেন নয় ? বোমাবর্ষণের চেয়ে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে অনেক বেশি ‘দেবতার শাস্তি’ বলে আপাত মনে হয় না কী ?
তলোয়ারের খোঁচা হিসেবে বোমার আঘাতকে মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়। তলোয়ারের খোঁচার সঙ্গে ববং মিশাইলের খোঁচাকে মেলালে এরিকা ভালো করতেন। অথবা তলোয়ারের খোঁচা বলতে ‘লেখকের ধোরাল লেখনি’ বা ‘ডাক্তারের হাতের ইঞ্জেকসন’কে মেলালে বোমার আঘাতের চেয়ে মিল খেত ভাল। এই কবিতাকেই কুয়েত নিয়ে ইরাকের যুদ্ধ এবং বাগদাদ ও কুয়েত শহরে নেমে আসা শাস্তি, মিশাইলের অনবরত খোঁচা, খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে পেটের রোগ ছড়ান, অসহায় মানুষগুলোর দেবতার কাছে প্রার্থনা—এই সবের সঙ্গে মেলালে হিরোসিমা, নাগাসাকির চেয়েও ভাল মিলছে না কী? উৎসাহী পাঠক-পাঠিকারা একটু চেষ্টা করলেই আমার চেয়েও আরো ভালো মেলাবার মত অনেক ঘটনা পেয়ে যাবেন। তাহলে এরিকাদেবী, কিভাবে বুঝলেন, নস্ট্রাডামুস এই কবিতাতে সুনির্দিষ্টভাবে হিরোসিমা, নাগাসাকিকেই বোঝাতে চেয়েছিলেন ?
নস্ট্রাডামুস যে এ-যুগের জ্যোতিষীদের মতই ‘ধরি মাছ,
না ছুঁই পানী’ নীতিকেই গ্রহণ করেছিলেন তার প্রমাণ
সেঞ্চুরির কবিতাগুলোই। প্রতিটি কবিতাই এমন হেঁয়ালী
করে লিখে গেছেন, যার সঙ্গে চেষ্টা-চরিত্তির করলে অনেক
ঘটনাকেই মিলেয়ে দেওয়া যাবে।
নস্ট্রাডামুস তাঁর অভিজ্ঞতায় দেখেছিলেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়,
দেখেছিলেন যুদ্ধ, দেখেছিলেন এ-সবের ধ্বংস করার
ক্ষমতা। বুঝেছিলেন, এমন ঘটনা আবারও ঘটবে বহুবারই
ঘটবে, আর সেই সম্ভাবনার কথা ভেবেই নস্ট্রাডামুস
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-এমনটা ঘটবে। ব্যাখ্যাকাররা
নস্ট্রাডামুসকে আরো বড় করে তুলতে কোনো একটি করে
ঘটনার সঙ্গে কবিতাগুলোকে জুড়ে দিয়েছেন। এখানে যেমন
জোড়া হয়েছে হিরোসিমা-নাগাসাকির নাম।
কবিতা-৩৫ (সেঃ২)
Dans deux logis de nuic le feu prendra,
Plusieurs dedans estouffes & rosus
Pres de deux fleuves pour seul il aviendra
Sol, l’Arq & Caper tous seront amortis.
মানেঃ
আগুন লাগাবে দুটো বাড়িতে রাত্রে,
ভেতরে বহু লোক পুড়ে, বা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা পড়বেঃ
এ ঘটনা ঘটবে দুটো নদীর কাছে, নিঃসন্দেহেঃ
যখন সূর্য দাঁড়াবে মকর-ক্রান্তির ঠিক উপরে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ ২২ ডিসেম্বরের একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা
ব্যাখ্যাকারের মতে এই ঘটনা ঘটেছে, বা ঘটবে বাইশে ডিসেম্বর, যে কোন বছর । কেননা বাইশে ডিসেম্বর সূর্যের অবস্থান থাকে ঠিক মকর-ক্রান্তি (TROPIC OF CAPRICON)-এর উপরে। তবে ঘটনাটা ঠিক কোথায় ঘটেছে, বা ঘটবে, তা অবশ্য বলতে পারেন নি শ্রীমতী চিটহ্যাম । তিনি স্বীকার করেছেন যে, এমন অনেক শহর আছে, যা দুটো নদীর কাছে অবস্থিত । সেই সব শহরে ডিসেম্বর মাসে দুটো বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা অশ্চর্যজনক কিছু ব্যাপার নয়।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
এরিকা নিজেই যখন সব স্বীকার করেছেন, তখন আমার আর বলার জন্য কিছু থাকে না। কবিতাটাতে আশ্চর্য হবার মতো কোনো ব্যাপার নেই। বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন, কেননা এমন ঘটনা আকছারই ঘটে ।
কবিতা-৪০ (সেঃ−২)
Un peu apres non point longue intervalle
Par mer & terre sera faict grand tumulte:
Beaucoup plus grande sera pugne navalle,
Feux, animaux, qui plus feront d’insulte.
অর্থাৎঃ
শীঘ্রই, বেশিদিন পরে নয়
জলে-স্থলে জেগে উঠবে এক ভয়ানক কম্পনঃ
এমন নৌ-যুদ্ধ হবে, যা আগে দেখা যায়নি,
আগুন, পোকামাকড়রা নানারকম ঝামেলা পাকাবে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
এরিকা মনে করেন, হয়তো এই কবিতাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা আছে। “শীঘ্রই, বেশিদিন পরে নয়”–মানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বেশিদিন পরে নয়। বাস্তবিকই জলে-স্থলে, যুদ্ধ হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জব্বর নৌ-যুদ্ধও হয়েছিল বটে। “আগুন, পোকামাকড়রা ঝামেলা পাকাবে”-বলতে হয়তো নস্ট্রাডামুস বলতে চেয়েছিলেন—বোমাবর্ষণ, এবং সাবমেরিন জাহাজ নানারকম ঝামেলা পাকাবে । আগুন মানে বোমা, আর পোকামাকড় মানে সাবমেরিন।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
নস্ট্রাডামুস হয়তো সত্যিই কোনো যুদ্ধের বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কবিতার কোনো জায়গাতে লেখা দেখলাম না, এই যুদ্ধটার নাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জানিনা, ব্যাখ্যাকার কী দেখে সিদ্ধান্তে এলেন যে, এই কবিতাতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে যেরকম নৌ-যুদ্ধ হয়েছিল, তার থেকেও ভয়াবহ নৌ-যুদ্ধ ইতিহাসে হয়েছে। তাহলে তৃতীয় লাইনটা মিথ্যা প্রমাণিত হল ।
চতুর্থ লাইনের আগুন, আর পোকামাকড়কে যথাক্রমে বোমা আর সাবমেরিন বলাটা ব্যাখ্যাকারের গতানুগতিক বজ্জাতি। এর আগেও ব্যাখ্যাকার সাধারণ শব্দকে অর্থ বদলে বর্তমান যুগের শব্দ বলে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন ।
নস্ট্রাডামুস যদি কোথাও লেখেন—“বজ্রপাত ঘটবে, ধূর্ত
ব্যাখ্যাকাররা হয়ত বোঝাবেন যে এখানে ‘লেসার-গান’এর
কথা ভবিষ্যদ্বাণী করা রয়েছে। এরকম চমকদার ব্যাখ্যায়
প্রতারিত হবেন না। যুক্তি দিয়ে বিচার করে, যাচাই করে,
তবেই কোনো সিদ্ধান্তে আসুন ।
পাঠকরা যুক্তি দিয়ে বিচার করে বলুন তো, এই কবিতাতে সত্যিই ২য় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা আছে বলে আপনারা মনে করেন ?
কবিতা—৫১ (সেঃ−২)
(এই কবিতাটা নস্ট্রাডামুসের প্রচারকদের এক মস্ত হাতিয়ার। এই কবিতাটা তারা সুযোগ পেলেই উদাহরণ হিসেবে পেশ করে। এই কবিতাটার ব্যাখ্যা প্রবীর ঘোষের কাছে এসেছে । দেখা যাক কেন এই কবিতাটা এত বিখ্যাত…..)
Le sang de juste a londres sera faulte,
Brusles par fouldres de vingt trois les six :
La dame antique cherra de place haute,
Des mesme secte plusieurs seront occis.
‘আনন্দমেলা’ ১৪ নভেম্বর ‘৯১, সংখ্যায় অভীক মজুমদার এই কবিতার অনুবাদ করেছেনঃ
লন্ডনে ঘটবে এক প্রবল অশুভ,
পুড়বে আগুনে সব তিনগুন কুড়ি যোগ ছয়েঃ
সুপ্রাচীন স্থাপত্য পড়বে বিদীর্ণ হয়ে উঁচু থেকে,
মরবে অনেক লোক, পালারে অনেকে তার ভয়ে।
ব্যাখ্যাকারদের ব্যাখ্যাঃ লন্ডনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
অভীক মজুমদার এই কবিতার ব্যাখ্যা করেছেন (এরিকার বই পড়ে, সম্ভবত) লন্ডনের ১৬৬৬ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বলে। তিনি বলেছেন— ” সত্যিই লন্ডনে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়েছিল ১৬৬৬ খ্রীস্টাব্দে (৬৬ মানে, তিনগুণ কুড়ি যোগ ছয়)। অন্যান্য সুপ্রাচীন গির্জার সঙ্গে ভেঙে পড়েছিল সুবিশাল সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল। মানুষজন কাঠের বাড়ি ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়েছিল ঊর্ধ্বশ্বাসে, মারা গিয়েছিল বহু মানুষ।”
এরিকার ব্যাখ্যাটাও মোটামুটি একই রকম। একটু তফাত আছে। কী তফাত, সেটা যুক্তিবাদী বিশ্লেষণে বলছি।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
অভীক মজুমদার কবিতাটার যে অনুবাদ করেছেন, তাতে মূল কবিতাকে বিকৃত করা হয়েছে। অবিকৃত অনুবাদ করলে কবিতাটা দাঁড়ায়ঃ
লন্ডনে ঘটবে এক অশুভ ঘটনা,
আগুনে পুড়বে তিনগুন কুড়ি, যোগ হয়ঃ
বয়স্ক মহিলার পতন হবে তাঁর উচ্চাসন থেকে,
তাঁরই বংশের আরও অনেকে পড়বে মারা।
এরিকা চিটহ্যাম প্রথম দু-লাইন ব্যাখ্যা করেছেন একদম অভীক মজুমদারের মতোই । তৃতীয় লাইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এরিকা বলেছেন ‘বয়স্ক মহিলা’ মানে এখানে সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল। আগুনে ক্যাথিড্রালের পতন হয়েছিল।
‘তাঁরই বংশের আরও অনেকে পড়বে মারা’-এই লাইনের মানে এরিকার মতে এই যে, আগুনে সেন্ট পলস্ গির্জার মতো আরও কিছু ছোট ছোট গির্জা শেষ হয়ে যাবে। পাঠকরা ভেবে দেখুন তো, তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনে নস্ট্রাডামুস সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল, আর অন্যান্য গির্জা ভেঙে যাবার কথা বলেছেন বলে মনে হয় ? নিশ্চয়ই নয়। নস্ট্রাডামুস হয়তো বলতে চেয়েছিলেন—লন্ডনে একটা অগ্নিকাণ্ড ঘটবে। সেই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ইংলন্ডের রাণী তাঁর স্থান হারাবেন। রাণীর বংশের অনেকে আগুনে মারা পড়বে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি। তাই চতুর ব্যাখ্যাকাররা বয়ষ্কা মহিলা বলতে সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রালের নাম উল্লেখ করে বসলেন। অভীকবাবু আর এক ডিগ্রি উপর দিয়ে চলেন। তৃতীয় আর চতুর্থ লাইন মূল কবিতাতে যথেষ্ট জোরদার নয় বলে তিনি ওইদুটো লাইনের বয়ানই বদলে দিলেন অনুবাদের সময়ে ! চমৎকার । এই না করলে কিশোর-পাঠকদের মাথা খাবেন কেমন করে ? তাদের আবার অন্ধকার-যুগে নিয়ে যাবেন কেমন করে ?
“তিনগুণ কুড়ি যোগ হয়”। মানে ছেষট্টি। সন্দেহ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় লাইনে কোথা বলা হয়েছে যে, আগুন লাগবে ১৬৬৬ সালে ? দ্বিতীয় লাইনের দ্বারা হয়তো নস্ট্রাডামুস বলতে চেয়েছিলেন ৬৬টা বাড়ি পুড়বে, অথবা ৬৬টা মানুষ পুড়বে,… অন্তত কবিতা পড়লে, সেরকমই মনে হচ্ছে। কবিতার দ্বিতীয় লাইন পড়লে কখনোই মনে হচ্ছে না নস্ট্রাডামুস বলতে চেয়েছিলেন—১৬৬৬ সালে লন্ডন আগুনে পুড়বে। ৬৬ মানে ১৬৬৬-ই হবে কেন ? কেন ১৪৬৬ বা ১৫৬৬ নয় ? কেনই বা ১৭৬৬, ১৮৬৬ হবে না ? এমন কি কবিতাতে কোথাও লেখা নেই আগুন লাগবে ৬৬তে। বরং বলা হয়েছে আগুনে পুড়বে ৬৬। নস্ট্রাডামুস সম্ভবত ভরসা রেখেছিলেন ভবিষ্যতের জ্যোতিষীরা এই কবিতাকে শেষ পর্যন্ত ঠিকই মিশিয়ে দেবেন, ৬৬টা গাউন পুড়েছে, বা ৬৬টি জুতো পুড়েছিল বলে মিলিয়ে দেওয়া এমন কোনও কঠিন কাজ হবে না; শুধু ৬৬ নিয়ে তো কথা।
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ