০২০. সূরাঃ ত্বা-হা
আয়াত | অবতীর্ণঃ মক্কা আয়াত সংখ্যাঃ ১৩৫ রুকূঃ ০৮ |
---|---|
১০১ | خَالِدِينَ فِيهِ ۖ وَسَاءَ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلًا তাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এই বোঝা তাদের জন্যে কত মন্দ। |
১০২ | يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ ۚ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا যে দিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে সেই দিন আমি অপরাধীদেরকে নীল চক্ষু (দৃষ্টিহীন) অবস্থায় সমবেত করবো। |
১০৩ | يَتَخَافَتُونَ بَيْنَهُمْ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا عَشْرًا তারা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবেঃ তোমরা মাত্র দশ দিন (পৃথিবীতে) অবস্থান করেছিলে। |
১০৪ | نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ إِذْ يَقُولُ أَمْثَلُهُمْ طَرِيقَةً إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا يَوْمًا তারা কি বলবে তা আমি ভাল করে জানি, তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল, সে বলবেঃ তোমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলে। |
১০৫ | وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলঃ আমার প্রতিপালক ওগুলিকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। |
১০৬ | فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا অতঃপর তিনি ওকে (ভূমিকে) পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে। |
১০৭ | لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। |
১০৮ | يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ ۖ وَخَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَـٰنِ فَلَا تَسْمَعُ إِلَّا هَمْسًا সেই দিন তারা আহ্বানকারীর অনুসরণ করবে, এই ব্যাপারে এদিক-ওদিক করতে পারবে না; দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তব্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনবে না। |
১০৯ | يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সেই দিন কোন কাজে আসবে না। |
১১০ | يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত; কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না। |
১১১ | وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ ۖ وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত আল্লাহর সামনে সকলেই হবে নতমুখ এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে যুলুমের ভার বহন করবে। |
১১২ | وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا এবং যে সৎকর্ম করে মু’মিন হয়ে তার আশঙ্কা নেই অবিচারের এবং ক্ষতিরও। |
১১৩ | وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا এরূপেই আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা এটা হয় তাদের জন্যে উপদেশ। |
১১৪ | فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۗ وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَىٰ إِلَيْكَ وَحْيُهُ ۖ وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا আল্লাহ অতি মহান, প্রকৃত অধিপতি; তোমার প্রতি আল্লাহর অহী সম্পূর্ণ হবার পূর্বে তুমি তাড়াতাড়ি করো না এবং বলঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন! |
১১৫ | وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَىٰ آدَمَ مِن قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا আমি তো ইতিপূর্বে আদমের (আঃ) নিকট হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম; কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল আমি তাঁকে সঙ্কল্পে দৃঢ় পাইনি। |
১১৬ | وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমের (আঃ) প্রতি সিজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করলো; সে অমান্য করলো। |
১১৭ | فَقُلْنَا يَا آدَمُ إِنَّ هَـٰذَا عَدُوٌّ لَّكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقَىٰ অতঃপর আমি বললামঃ হে আদ্ম (আঃ)! এ অবশ্যই তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু; সুতরাং সে এন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, যার ফলে তুমি বিপদে পতিত হবে। |
১১৮ | إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ তোমার জন্যে টাই রইলো যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না ও নগ্নও হবে না। |
১১৯ | وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ এবং তুমি সেথায় পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র ক্লিষ্টও হবে না। |
১২০ | فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَىٰ অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিলো; সে বললঃ হে আদ্ম (আঃ)! আমি কি তোমাকে বলে দিবো অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা? |
১২১ | فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۚ وَعَصَىٰ آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَىٰ অতঃপর তারা তা হতে ভক্ষণ করে ফেলল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং তাঁরা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত্ত করতে লাগল, আদম (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হল। |
১২২ | ثُمَّ اجْتَبَاهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدَىٰ এরপর তাঁর প্রতিপালক তাঁকে মনোনীত করলেন, তাঁর প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হলেন এবং তাঁকে পথ প্রদর্শন করলেন। |
১২৩ | قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَىٰ তিনি বললেন তোমরা উভ্যে একই সঙ্গে জান্নাত হতে নেমে যাও; তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু; পরে আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ কষ্ট পাবে না। |
১২৪ | وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ যে আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন-যাপন হবে সঙ্কুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবো অন্ধ অবস্থায়। |
১২৫ | قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। |
১২৬ | قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا ۖ وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنسَىٰ তিনি বলবেনঃ এই রূপই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল; কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। |
১২৭ | وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي مَنْ أَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِن بِآيَاتِ رَبِّهِ ۚ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَدُّ وَأَبْقَىٰ এবং এভাবেই আমি প্রতিফল দেই তাকে যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে না; পরকালের শাস্তি তো অবশ্যই কঠিনতর ও অধিক স্থায়ী। |
১২৮ | أَفَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّأُولِي النُّهَىٰ এটাও কি তাদেরকে সৎপথ দেখালো না যে, আমি তাদের পূর্বে ধ্বংস করেছি কত মানবগোষ্ঠী যাদের বাসভূমিতে তারা বিচরণ করে থাকে? অবশ্যই এতে বিবেক সম্পন্নদের জন্যে আছে নিদর্শন। |
১২৯ | وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَكَانَ لِزَامًا وَأَجَلٌ مُّسَمًّى তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত ও একটা নির্ধারিত সময় না থাকলে এদের উপর শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়তো। |
১৩০ | فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ সুতরাং তারা যা বলে সে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং সূর্যোদয় পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা পবিত্রতা ওমহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, আর দিবসের প্রান্তসমূহেও যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। |
১৩১ | وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত করো না ওর প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, তদ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্যে; তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। |
১৩২ | وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ۖ لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكَ ۗ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ আর তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও ও তাতে নিজে অবিচলিত থাকো, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না, আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যে। |
১৩৩ | وَقَالُوا لَوْلَا يَأْتِينَا بِآيَةٍ مِّن رَّبِّهِ ۚ أَوَلَمْ تَأْتِهِم بَيِّنَةُ مَا فِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ তারা বলেঃ তিনি তাঁর প্রতিপালকের নিকট হতে আমাদের নিকট কোন নিদর্শন আনয়ন করেন নাই কেন? তাদের নিকট কি আসে নি সুষ্পষ্ট প্রমাণ যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে মজুদ রয়েছে। |
১৩৪ | وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُم بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَىٰ যদি আমি তাদেরকে ইতিপূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম তবে তারা বলতোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে, আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবার পূর্বে আপনার আয়াতসমূহ মেনে চলতাম। |
১৩৫ | قُلْ كُلٌّ مُّتَرَبِّصٌ فَتَرَبَّصُوا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ أَصْحَابُ الصِّرَاطِ السَّوِيِّ وَمَنِ اهْتَدَىٰ বলঃ প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর, অতঃপর তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কারা সঠিক পথের অনুসারী আর কারাই বা হেদায়াতপ্রাপ্ত। |