যুক্তি সতেরঃ কিছু নামী-দামী জ্যোতিষীরা বর্তমানে জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে একটি যুক্তির অবতারণা করতে শুরু করছেন। তাঁরা কিছু জ্যোতিষ-সম্মেলনেও এই যুক্তিটির অবতারণা করেছেন। ‘জ্যোতিষবিজ্ঞান-কথা’ গ্রন্থেও যুক্তিটি জোরালভাবে রাখা হয়েছে। যুক্তিটি হলো এই—“আইনশাস্ত্রকে আমরা বিজ্ঞান না বললেও এই শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা সর্বদেশেই স্বীকৃত।” -.”জ্যোতিষীরাও তাঁদের শাস্ত্র সম্বন্ধে একই মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, যদি বিচার ব্যবস্থা স্বীকৃতিলাভের যোগ্য হয়ে থাকে তবে তাঁদের জ্যোতিষশাস্ত্র স্বীকৃতি পাবে না কেন ?”

বিরুদ্ধ যুক্তিঃ জ্যোতিষীরা এই যুক্তির অবতারণা করে কি তবে শেষ পর্যন্ত এ-কথাই স্বীকার করছেন না যে- আইনশাস্ত্র যেমন বিজ্ঞান নয়, জ্যোতিষশাস্ত্রও তেমনই বিজ্ঞান নয় ৷ জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞান বলে প্রমাণ করার চেষ্টাকে মুলতুবি রেখে, জ্যোতিষশাস্ত্র অ-বিজ্ঞান বলে স্বীকার করে নেওয়ার পরই দাবি করা হয়েছে আইন বিজ্ঞান না হয়েও যদি স্বীকৃতি লাভ করে থাকে, তবে জ্যোতিষশাস্ত্রকে স্বীকার করা হবে না কেন ?

“বিজ্ঞান নয় এমন অনেক কিছুই মানুষের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বীকৃতি পেয়েছে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নাটক। স্বীকৃতি পেয়েছে বুকার পোলভন্টের অসাধারণ প্রতিভা, মারাদোনার ফুটবল খেলার নৈপুণ্য, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যপ্রতিভা, মহম্মদ আলির বক্সিং প্রতিভা। এ-সবই বিজ্ঞান না হয়েও যদি স্বীকৃতি পেতে পারে, তবে জ্যোতিষশাস্ত্রের ক্ষেত্রে কেন বিজ্ঞান না হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না?” এ-এক বিচিত্র অভিযোগ। সব কিছুর স্বীকৃতিলাভের পেছনে কিছু নিয়ম-কানুন ও কিছু যুক্তি থাকে। একজন মানুষ গুণ্ডা বা মস্তান হিসেবে স্বীকৃতি পায় গুণ্ডামী বা মস্তানী করে। একজন সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকার হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করে। একজন রাজনীতিক স্বীকৃতি পায় রাজনীতি করার মধ্য দিয়েই। একজন সাহিত্যিক হিসেবে স্বীকৃতির অধিকারী তখনই যখন সে সাহিত্য সৃষ্টি করে। একজন মানুষ ভবিষ্যবক্তা হিসেবে তখনই স্বীকৃতি পেতে পারে, যখন সে ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। ভবিষ্যৎবক্তা বা জ্যোতিষীদের স্বীকৃতির ওপরই নির্ভর করে রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্র। জোতিষীদের ক্ষমতা প্রমাণিত হলে তাঁরা যে শাস্ত্রের সাহায্যে গণনা করছেন, সেই শাস্ত্রও অবশ্যই স্বীকৃতিলাভ করবে। নতুবা জোতিষশাস্ত্র শুধুমাত্র পরধন-লুণ্ঠনকারী প্রতারকদের শাস্ত্র হিসেবেই স্বীকৃত হবে।

error: Content is protected !!