যুক্তি একঃ জ্যোতিষশাস্ত্র পৃথিবীব সব ধর্মের কাছেই আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। কোন ধর্মই এই শাস্ত্রকে কুসংস্কার মনে করে পরিত্যাগ করেনি।

বিপক্ষে যুক্তিঃ ধর্মকে জ্যোতিষীরা কি চোখে, কিভাবে দেখেন জানি না। আমাদের চোখে একজন বিজ্ঞামনস্ক যুক্তিবাদী মানুষ চরমতর ধার্মিক। তলোয়ারের ধর্ম যেমন তীক্ষ্ণতা, আগুনের ধর্ম যেমন দহন, তেমনই মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্বের চরমতর বিকাশ। সেই হিসেবে আমরাই ধার্মিক, কারণ আমরা শোষিত মানুষদের মনুষ্যত্ববোধকে বিকশিত করতে চাইছি, চেতনায় বপন করতে চাইছি বাস্তব সত্যকে তাদের বঞ্চনার প্রতিটি কারণ সমাজ-ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবব্ধ। সমাজের শোষকের দল চায় না, শোষিতরা জানুক তাদের প্রতিটি বঞ্চনার কারণ লুকিয়ে রযেছে এই সমাজ-ব্যবস্থার মধ্যেই। স্বর্গের দেবতা, আকাশের নক্ষত্র, পূর্বজন্মের কর্মফল ইত্যাদিকে বঞ্চনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে, বিশ্বাস উৎপাদন করতে পারলে শাস্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে শোষক-শোষিতের সম্পর্ককে বজায় রাখা যায়। এই সম্পর্ককে কায়েম রাখার ফলশ্রুতিতেই শোষকশ্রেণীর স্বার্থে মানুষের স্বাভাবিক যুক্তিকে গুলিয়ে দিতে গড়ে উঠেছে ভাববাদী দর্শন অর্থাৎ অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারা, বিশ্বাসবাদ, গুরুবাদ, ঈশ্বরবাদ ও ধর্মের নানা আচার অনুষ্ঠান। স্বভাবতই তথাকথিত ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ, ভাববাদী দর্শন, বিশ্বাসবাদ, ইত্যাদি যুক্তিবাদের প্রবলতম শত্রু।

ভাববাদীদের কাছে প্রত্যক্ষ ও প্রত্যক্ষ-অনুগামী জ্ঞানের গুরুত্ব অতিসামান্য অথবা অবাস্তব। তাঁরা বিশ্বাস করেন শাস্ত্র-বাক্যকে, ধর্মগুরুদের অন্ধ-বিশ্বাসকে — যার উপর দাঁড়িয়ে আছে তথাকথিত ধর্ম ও ধর্মের নানা আচার অনুষ্ঠান ।

যুক্তির কাছে অন্ধ-বিশ্বাস বা ব্যক্তি-বিশ্বাসের কোনও দাম নেই। যুক্তি সিদ্ধান্তে পৌঁছায় পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের পথ ধরে। যুক্তিবাদীদের কাছে তথাকথিত ধর্মই যখন অন্ধ-বিশ্বাস হিসেবে বাতিল তালিকাভুক্ত, তখন ধর্মবিশ্বাস কোন শাস্ত্রকে গ্রহণ করল কোন শাস্ত্ৰকে গ্রহণ করল না, তাতে যুক্তিবাদীদের কি এলো গেলো ?

ধর্মের হাত ধরাধরি করে ঈশ্বর-বিশ্বাস অলৌকিক-বিশ্বাস — অনেক কিছুই তো এসে পড়ে, কিন্তু এ-সবই তো একান্তভাবে বিশ্বাসের গণ্ডিতেই সীমাবব্ধ রয়ে গেছে, প্রমাণিত সত্য হয়ে দাঁড়ায়নি ।

পৃথিবীর সব ধর্মের কাছে জ্যোতিষশাস্ত্রের গ্রহণযোগ্যতাই বিজ্ঞানের সত্যের অদৌ কোনও প্রমাণ নয়, বরং একটি অন্ধ-বিশ্বাসনির্ভর সংস্কারেরই প্রমাণ।

error: Content is protected !!