জমির সাহেব অফিস থেকে ফেরামাত্রই তাঁর বড় মেয়ে মিতু বলল, বাবা আজ তোমার একটা চিঠি এসেছে। বলেই সে মুখের হাসি গোপন করার জন্যে অন্যদিকে তাকাল।
মিতুর বয়স একুশ। এই বয়সের মেয়েদের মুখে অকারণে হাসি আসে। হাসি তামাশা জমির সাহেবের একেবারেই পছন্দ নয়, বিশেষ করে মা-বাবাকে নিয়ে হাসাহাসি। আজকাল অনেক পরিবারেই তিনি এই ব্যাপার দেখেন। মেয়ে বাবার সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছে খিলখিল করে হাসছে। এসব কী? তিনি একবার তার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই বন্ধুর মেয়ে বাবাকে নিয়ে খুব হাসি তামাশা করতে লাগল। এক পর্যায়ে বলে ফেলল, বাবা দিন-দিন তোমার চেহারা সুন্দর হচ্ছে। রাস্তায় বের হলে নিশ্চয়ই মেয়েরা তোমার দিকে তাকায়। জমির সাহেব স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তাঁর নিজের মেয়ে হলে চড় দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিতেন। অন্যের মেয়ে বলে কিছু বলা গেল না। তবে ঐ বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া তিনি ছেড়ে দিলেন।
মিতু চিঠিটি বাবার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল, বেয়ারিং চিঠি বাবা। দুটাকা দিয়ে চিঠি রাখতে হয়েছে। বলে আবার ফিক করে হেসে ফেলল।
জমির সাহেব কঠিন গলায় বললেন, হাসছিস কেন? বেয়ারিং চিঠি এসেছে এর মধ্যে হাসির কী হলো? এরকম ফাজলামি শিখছিস কোথায়?
মিতু মুখ কালো করে চলে গেল। বাবাকে সে সঙ্গত কারণেই অসম্ভব ভয় পায়। জমির সাহেব লক্ষ করলেন খামের মুখ খোলা। এরা চিঠি পড়েছে। এই বেআদবিও সহ্য করা মুশকিল। একজনের চিঠি অন্যজন পড়বে কেন? খামে তাঁর নাম লেখা দেখার পরেও এরা কোন সাহসে চিঠি খোলে? রাগে জমির সাহেবের গা কাপতে লাগল। এই অবস্থায় তিনি চিঠি পড়লেন। একবার, দুবার, তিনবার। তার মাথা ঘুরতে লাগল। সুস্মিতা নামের এক মেয়ের চিঠি। তাঁর কাছে লেখা। সম্বোধন হচ্ছে প্রিয়তমেষু। এর মানে কী? সুস্মিতা কে? সুস্মিতা নামের কাউকেই তিনি চেনেন বলে মনে করতে পারলেন না। কলেজে পড়ার সময় কমলা নামের এক মেয়ের প্রতি খুব দুর্বলতা অনুভব করেছিলেন। মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাবার পর দুর্বলতা কেটে যায়। এ ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে তিনি চেনেন না। জমির সাহেব কপালের ঘাম মুছে চতুর্থবারের মতো চিঠিটি পড়লেন।
প্রিয়তমেষু,
তুমি কেমন আছ? তোমার কথা খুব মনে হয়। তোমার শরীর এত খারাপ হয়েছে কেন? শরীরের আরো যত্ন নেবে। আমি দেখেছি তুমি বাসে যাওয়া-আসা কর। তোমাকে অনুরোধ করছি সপ্তাহখানেক বাসে উঠবে না। কাল তোমাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। দুঃস্বপ্নটা হচ্ছে তুমি বাসে উঠতে গিয়ে পিছলে পড়ে পা ভেঙে ফেলেছ। স্বপ্নকে গুরুত্ব দেয়ার কোনো মানে হয় না। তবু অনুরোধ করছি এক সপ্তাহ বাসে উঠবে না।
বিনীতা
তোমার সুস্মিতা।
জমির সাহেব পঞ্চমবারের মতো চিঠি পড়তে শুরু করলেন। মোটা নিবের কলমে গোটাগোটা অক্ষরের চিঠি। চিঠিতে তারিখ বা ঠিকানা নেই। হলুদ রঙের কাগজ। কাগজ থেকে হালকা ন্যাপথালিনের গন্ধ আসছে।
বাবা তোমার চা।
মিতু চায়ের কাপ এনে বাবার সামনে রাখল। তার মুখ থমথম করছে। বাবার ধমকের কথা সে এখনও ভুলতে পারেনি। জমির সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তির সঙ্গে বললেন, কে লিখল কিছুই বুঝতে পারছি না। সুস্মিতা নামের কাউকে চিনি না।
মিতু বলল, চিনি হয়েছে কি না দ্যাখো।
জমির সাহেব চায়ের চিনির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখালেন না। শুকনো গলায় বললেন, তোর মা এই চিঠি পড়েছে?
হ্যাঁ।
বলেছে কিছু?
না।
বুঝলি মিতু, সুস্মিতা নামের কাউকেই চিনি না। আর ধর যদি চিনতামও তাহলে কি এইরকম একটা চিঠি কেউ লিখতে পারে? ছি ছি, লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।
মিতু ইতস্তত করে বলল, আমার কী মনে হয় জান বাবা? আমার মনে হয়, এই বাড়িতে জমির সাহেব বলে কেউ ছিলেন। চিঠিটা তাঁকেই লেখা।
জমির সাহেবের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এই সহজ সমাধান তাঁর মাথায় কেন আসেনি বুঝতে পারলেন না। মিতু মেয়েটার মাথা তো বেশ ভালো। সায়েন্সে দেয়া উচিত ছিল। গাধার মতো তিনি মেয়েটাকে আর্টস পড়িয়েছেন।
তিনি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, খুব ভালো চা হয়েছে মা, খুব ভালো। তোমার মা কোথায়?
নানুর বাড়ি গেছে।
মা নানুর বাড়ি গেছে এই বাক্যটি জমির সাহেবের খুব অপছন্দের বাক্য। শাহানার র বাড়ি মীরপুর ছনম্বরে। ঐ বাড়িতে গেলেই শাহানা রাতটা থেকে যায়। আজও থেকে যাবে। তবে আজ জমির সাহেব অন্যদিনের মতো খারাপ বোধ করলেন না। শাহানা থাকলে নিশ্চয়ই চিঠিটা নিয়ে গম্ভীর গলায় কথা বলত। শাহানার কথা শুনতেই ইদানীং তাঁর অসহ্য লাগে। রাগী-রাগী কথা তো আরো অসহ্য লাগবে।
মিতু!
জী বাবা?
তোর মা বোধ হয় থেকে যাবে ও-বাড়িতে।
হ্যাঁ।
তোর মা কিছু বলেনি চিঠি পড়ে?
না।
তোর কি মনে হয় রাগ করেছে?
রাগ করেছিল আমি বুঝিয়ে বলেছি।
মেয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় জমির সাহেবের মন ভরে গেল। মেয়েটাকে সায়েন্স পড়ানো উচিত ছিল। সায়েন্স না পড়িয়ে ভুল হয়েছে। আর্টস পড়বে গাধা টাইপের মেয়েরা। তাঁর মেয়ে গাধা টাইপ নয়। বুদ্ধি আছে। বাপের প্রতি ফিলিংস আছে।
পরদিন যথারীতি জমির সাহেব অফিসে রওনা হলেন। একবার মনে হলো বাসে না গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে নেবেন। পরমুহূর্তেই এই চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেললেন। ফালতু একটা চিঠি নিয়ে কিছু ভাবার কোনো মানে হয়? এইসব জিনিস প্রশ্রয় দেয়াই উচিত না। ঝিকাতলার মোড়ে অন্যসব অফিসযাত্রীর মতো তিনি একটা টিফিনবক্স এবং ছাতা-হাতে বাসের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলেন এবং যথারীতি প্রচণ্ড ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠে পড়লেন। বাস ছেড়ে দিল। সেই মুহূর্তে কিছু-একটা হলো তাঁর। মনে হলো ছিটকে বাস থেকে পড়ে যাচ্ছেন। তিনি একসঙ্গে অনেক লোকের চিৎকার শুনলেন থামো, থামো, থামো— এই রুককে, রুককে–
জমির সাহেব রাস্তায় ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারালেন। জ্ঞান হলো হাসপাতালে। তার বাম পা হাটুর নিচে ভেঙেছে। এক জায়গায় না–দুজায়গায়। মিতু এবং শাহানা মাথার কাছে বসে আছে। দুজনই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ডাক্তার সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, কাঁদছেন কেন? বললাম তো তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি। দিন পনেরোর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাসায় যাবে। দুটা ফ্রাকচার হয়েছে তবে সিরিয়াস কিছু না।
ডাক্তারের কথামতো পনেরো দিনের মাথাতেই জমির সাহেব বাড়ি ফিরলেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে নয়। বাঁ পা অচল হয়ে গেল। এদেশে নাকি কিছু করা সম্ভব না, বিদেশে যদি কিছু হয়। চাকরি শেষ হবার আগেই জমির সাহেব রিটায়ার করলেন। তিনি এবং তার পরিবারের কেউ ঐ হলুদ চিঠির কথা একবারও তুলল না। যেন ঐ চিঠি একটা অভিশপ্ত চিঠি। তার কথা তোলা উচিত না। চিঠিটা জমির সাহেবের শোবার ঘরের টেবিলের তিন নম্বর ড্রয়ারে পড়ে রইল। মাঝে মাঝে জমির সাহেব চিঠিটা বের করে পড়েন এবং তাঁর অচল পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেই রাতে তাঁর একফোঁটা ঘুম হয় না। কেমন ভয়-ভয় লাগতে থাকে।
নতুন বছরের গোড়াতে ঝিকাতলার বাসা উঠিয়ে উত্তর শাহজাহানপুরে সস্তায় একটা ফ্ল্যাটে তারা চলে গেলেন। রোজগার কমেছে, এখন টাকাপয়সা সাবধানে খরচ করতে হবে। নতুন ফ্ল্যাটে দুটা মাত্র শোবার ঘর। একটিতে জমির সাহেব শাহানাকে নিয়ে থাকেন, অন্যটিতে মিতু আর তার ছোট বোন ইরা থাকে। জমির সাহেবের বড় ছেলে থাকে বসার ঘরে। একটা খাট ঘরে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। এই বাড়িতে মাস তিনেক কাটানোর পর আরেকটি বেয়ারিং চিঠি এল। আগের মতো গোটাগোটা হরফে লেখা। মোটা কলমের নিব দিয়ে মেয়েলি অক্ষরে সুস্মিতা লিখেছে—
প্রিয়তমেষু,
তুমি কেমন আছ? এত দুশ্চিন্তা করছ কেন? তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে দেখলে আমার ভালো লাগে না। সংসারে দুঃখ কষ্ট সমস্যা থাকেই। এতে বিচলিত হলে চলে? মনে সাহস রাখো। আচ্ছা একটা কথা, তোমার বড় ছেলেটাকে কিছুদিন ঢাকা শহরের বাইরে রাখতে পার না? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোনো ঝামেলায় পড়ে যাবে। তোমাদের গ্রামের বাড়িতে ওকে কিছুদিনের জন্যে পাঠিয়ে দাও না। ও যেতে চাইবে না। বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করাও।
বিনীতা
তোমার সুস্মিতা
এবার আর সুস্মিতার চিঠি নিয়ে কেউ হাসাহাসি করল না। চিঠি পড়ার সময় শাহানার হাত থরথর করে কাঁপতে লাগল। জমির সাহেব অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে গেলেন। বড় ছেলে সুমনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না। কারণ তার বি.এ. ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। দুটা পেপার হয়ে গেছে। তবু শাহানা বললেন, থাক, পরীক্ষা দিতে হবে না। ওকে পাঠিয়ে দাও।
জমির সাহেব বললেন, দরকার আছে বলে তো মনে হয় না। চিঠি পাওয়ার পরেও তো পনেরো দিন হয়ে গেল।
হোক পনেরো দিন, পাঠিয়ে দাও। আমার ভালো লাগছে না।
আচ্ছা বলে দ্যাখো। যদি যেতে রাজি হয় তাহলে যাক।
সুমন যেতে রাজি হলো। শুধু যে রাজি হলো তা-ই না, তৎক্ষণাৎ যেতে রাজি। টাকা দিলে আজ রাতের ট্রেনেই রওনা হয়ে যায় এমন অবস্থা। ঠিক হলো সে সোমবার সকালের ট্রেনে যাবে। জমির সাহেবও সঙ্গে যাবেন। পৈতৃক বাড়ি ঠিকঠাক করবেন, জমিজমার খোঁজখবর করবেন। সম্ভব হলে কিছু জমি বিক্রি করে আসবেন। টাকা-পয়সার খুব টানাটানি যাচ্ছে।
তাদের যাবার কথা সোমবার। তার আগের দিন অর্থাৎ রোববার ভোররাতে পুলিশ এসে জমির সাহেবের বাড়ি ঘেরাও করে সুমনকে ধরে নিয়ে গেল। হতভম্ব জমির সাহেবকে পুলিশ সাবইন্সপেক্টর আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন–আপনার ছেলের বিরুদ্ধে মার্ডার চার্জ আছে। সাত দিন আগে চারজনে মিলে খুনটা করেছে। কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার। আপনার ছেলে এই চারজনের একজন। আপনি বুঝিয়ে-সুজিয়ে ছেলেকে রাজসাক্ষী হতে রাজি করান। এতে আপনারও লাভ, আমাদেরও লাভ। না হলে কিন্তু ফাঁসিটাসি হয়ে যাবে। পলিটিক্যাল প্রেশারও আছে।
সুমন রাজসাক্ষী হতে রাজি হলো না। দীর্ঘদিন মামলা চলল। রায় বেরুতে লাগল দুবছর। তিনজনের সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, একজনের ফাঁসি। সেই একজন সুমন। অন্য তিনজন ছেলেটাকে ধরে রেখেছিল। খুন করেছে সুমন। ধারালো ক্ষুর দিয়ে রগ কেটে দিয়েছে।
পাঁচ বছর কেটে গেছে। পরবর্তী বেয়ারিং চিঠিটা এল পাঁচ বছর কাটার পর। এই পাঁচ বছরে জমির সাহেবের সংসারে বড়রকমের ওলটপালট হয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মিতুর বিয়ে হয়েছে কৃষিখামারের এক ম্যানেজারের সঙ্গে। সে স্বামীর সঙ্গে গোপালপুর থাকে। ছোট মেয়ে ইরার বিয়ে হয়েছে ওষুধ কোম্পানির এক কেমিস্টের সঙ্গে। তারা ঢাকা শহরেই থাকে। প্রায়ই বাবা-মাকে দেখতে আসে। বড় মেয়ের কোনো ছেলেপুলে হয়নি। ছোট মেয়ের একটা ছেলে হয়েছে। ছেলের নাম ফরহাদ। এই ছেলেটি জমির সাহেবের খুব ভক্ত। তাঁর কাছে এলেই কোলে উঠে বসে থাকে, কিছুতেই কোল থেকে নামানো যায় না।
পাঁচ বছর পর একদিন পিওন এসে বলল, স্যার আপনার একটা বেয়ারিং চিঠি আছে, রাখবেন? জমির সাহেব শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
সেদিন ইরারা বেড়াতে এসেছে। জমির সাহেবের কোলে ফরহাদ। তিনি ফরহাদকে মাটিতে নামিয়ে চিঠি হাতে নিলেন। হাতের লেখা চিনতে তার অসুবিধা হলো না। সেই হাতের লেখা। সেই ন্যাপথালিনের গন্ধ!
পিওন বলল, চার টাকা লাগবে।
জমির সাহেব একবার ভাবলেন বলবেন, চিঠি রাখব না। তিনি তা বলতে পারলেন না।
যন্ত্রের মতো পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করলেন। চিঠি পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলেন, কাউকে কিছু বললেন না। তাঁর বমি-বমি ভাব হলো। মাথা ঘুরতে লাগল।
রাতে তিনি কিছু খেলেন না। ইরাদের আসা উপলক্ষে ভালোমন্দ রান্না হয়েছিল, তিনি কিছুই মুখে দিলেন না। ইরা বলল, বাবা তোমার কী হয়েছে?
তিনি ক্ষীণস্বরে বললেন, কিছু হয়নি। শরীরটা ভালো না।
রোজই তুমি বল শরীর ভালো না, অথচ একজন ভালো ডাক্তার দেখাও না। একজন ভালো ডাক্তার দেখাও বাবা।
দেখাব।
আর মাকেও একজন ভালো ডাক্তার দেখাও।
আচ্ছা।
আচ্ছা না বাবা। দেখাও।
মেয়ে-জামাই রাত নটার দিকে চলে গেল। ফরহাদ গেল না। সে নানার সঙ্গে থাকবে।
সারারাত জমির সাহেবের ঘুম হলো না। পরদিন হুহু করে গায়ে জ্বর এসে গেল। জুরের মূল কারণ কাউকে বলতে পারলেন না। বেলা যতই বাড়তে লাগল জুর ততই বাড়তে লাগল। দুপুরের পর ঘাম হতে লাগল। ইরা হতভম্ব হয়ে বলল, বাবা চলো তোমাকে ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করি। আমার কিছু ভালো লাগছে না। তুমি এরকম ঘামছ কেন? হার্টের কোনো সমস্যা না তো?
জমির সাহেব ক্ষীণস্বরে বললেন, চিঠি পেয়েছি।
চিঠি পেয়েছি মানে? কার চিঠি?
বেয়ারিং চিঠি।
ইরা দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বলল, কী লেখা এবারের চিঠিতে?
চিঠি পড়িনি।
পড়ে দ্যাখো। না পড়েই এরকম করছ কেন? হয়তো এবার কোনো ভালো খবর আছে।
জমির সাহেব কাঁপা গলায় বললেন, ভয় লাগছে রে ইরা!
ইরা চিঠি খুলে অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে গেল। অন্যদের সেই চিঠি দেখাল। যারা দেখল প্রত্যেকেই গম্ভীর হলো, কারণ চিঠিতে কিছু লেখা নেই। সাদা একটা পাতা, শেষে নাম সই করা বিনীত, তোমার সুস্মিতা। এই সাদা একটা পাতা, শেষে নাম সই করা—বিনীত, তোমার সুস্মিতা। এই সাদা না-লেখা অংশে কী বলতে চাচ্ছে সুস্মিতা? কে সে? কেনইবা সে চিঠি লেখে? আবার আজ কেনইবা লিখল না?
“ছায়াসঙ্গী” গল্প সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ