বিগত একশো বছরে আমরা Biological determinist (এঁরা মনে করেন মানব প্রতিভা বিকাশে জিনই সব) Cultural determinist (এঁদের মতে পরিবেশই মানব প্রতিভা বিকাশে সব) এবং Interactionist (এঁদের মতে জিন ও পরিবেশ দুইই মানব প্রতিভা বিকাশে ক্রিয়াশীল)। এঁদের নানা বক্তব্য ও ব্যাখ্যা শুনেছি। সে-সব নিয়ে সামান্য আলোচনায় ঢোকার প্রয়োজন অনুভব করছি।
ইদানিং মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ব্যাপক গবেষণা চলছে মানুষের বুদ্ধির ওপর বংশগতি বা জিনের প্রভাব ও পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে।
আধুনিক বংশগতি বিদ্যা ও জিন বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে আপনাদের মূল বিষয় জানার উৎসাহে ঠান্ডা জল ঢেলে দিতে চাই না। জিন আলোচনা তাই স্বল্প বাক্যে সীমাবদ্ধ রাখবো।
মানুষের জন্মের শুরু ডিম্বকোষ শুক্রাণুদ্বারা নিষিক্ত হওয়ার মুহূর্ত থেকে। নিষিক্ত কোষ দু-ভাগ হয়ে গিয়ে হয়ে যায় দু-টি কোষ। দুটি কোষ বিভক্ত হয়ে হয় চারটি কোষে। এমনিভাবে চার থেকে আট, আট থেকে ষোল- প্রয়োজন না মেটা পর্যন্ত বিভাজন করিয়া চলতেই থাকে।
বেশিরভাগ কোষের দুটি অংশ। মাঝখানে থাকে ‘নিউক্লিয়াস’ ও তার চারপাশে ঘিরে থাকে জেলির মত জলীয় পদার্থ ‘সাইটোপ্লাজম’। নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে ‘ক্রোমোজোম’। এই ক্রোমোজোম আবার জোড়া বেঁধে অবস্থান করে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিটি নিউক্লিয়াসে ২৩ জোড়া অর্থাৎ ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোম আবার এক বিশেষ ধরনের ‘ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড’-এর (Deoxyribonucleic acid) অণুর সমষ্টি- সংক্ষেপে ডি এন এ। দু-গাছা দড়ি পাকালে যেমন দেখতে হবে, অণুগুলো তেমনি ভাবেই পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকে। ডি এন এ থেকে আর এন এ বা (Ribonucleic acid) তৈরি হয়। আর এন এ থেকে তৈরি হয় প্রোটিন (Protein)।
২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের প্রতিটি জোড়ার ক্ষেত্রে একটি আসে পুরুষের শুক্রাণু থেকে, অন্যটি নারীর ডিম্বাণু কোষ থেকে। ক্রোমোজোমের এই জিন এককভাবে বা অন্য জিনের সঙ্গে মিলে দেহের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। চুলের রং, চোখের তারার রং, দেহের রং ও গঠন, রক্তের শ্রেণী (O, A, A, AB) ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশেষ বিশেষ জিনের ভূমিকা রয়েছে।
জিন বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা মনে করেন নারী-পুরুষের মিলনের ফলে ক্রোমোজোমের সংযুক্তি ৮০ লক্ষ রকমের যে কোনও একটি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই দেখা যায়, একই পিতা-মাতার সন্তানদের মধ্যে বহু ধরনের অমিল থাকতেই পারে। লম্বা-বেঁটে, মোটা-রোগা, বাদামী চোখ, নীল চোখ, শান্ত-ছটফটে ইত্যাদি।
মা-বাবার চোখের মণি কালো, কিন্তু সন্তানের চোখের মণি কটা, মা বাবা স্বল্প দৈর্ঘ্যের মানুষ সন্তান বেজায় লম্বা, মা বাবা ফর্সা সন্তান কালো অথবা এর বিপরীত দৃষ্টান্তও প্রচুর চোখে পড়বে একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি মেললে। বাবা সন্তানের প্রকৃত জনক হলেও এমনটা ঘটা সম্ভব। কিছু মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, পিতা সন্তানের প্রকৃত জনক হলেও এমন ঘটা সম্ভব একাধিক বা বহু প্রজন্ম পরে জিনের সুপ্তি ভাঙ্গার জন্য। যেখানে বাবাই প্রকৃত সন্তানের জনক সেখানে অনুসন্ধান চালালে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাওয়া যাবে সন্তানটির মা অথবা বাবার পূর্বপুরুষদের কারো না কারো চোখের মণি ছিল কটা, কেউ না কেউ ছিলেন লম্বা, গায়ের রং ছিল কালো ইত্যাদি। আমার এক নিকট আত্মীয়ের দু-হাতের কড়ে আঙ্গুল থেকে বেরিয়ে এসেছিল বাড়তি দুটো আঙ্গুল। আত্মীয়ার নামটি প্রকাশ করায় অসুবিধে থাকায় আমরা এখানে বোঝার সুবিধের জন্য ধরে নিলাম, নামটি তার মাধুরী। মাধুরীর মা এবং বাবার নাম মনে করুন মিতা ও আদিত্য। মিতা ও আদিত্যের কোন হাতেই বাড়তি আঙ্গুল নেই। মাধুরীর এই বাড়তি আঙ্গুলের মধ্যে আদিত্য রহস্য খুঁজে পেয়েছিলেন। মিতার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। নিজেকে মাধুরীর জনক হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। স্রেফ দুটি বাড়তি আঙ্গুল ওদের শান্তির পরিবারে নিয়ে এসেছিল অশান্তির আগুন।
ওঁদের অশান্তির কথা আমার কানেও এসেছিল। মিতা বাবাকে হারিয়ে ছিলেন শৈশবে। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে জানতে পারি, মিতার বাবার দু’কড়ে আঙ্গুল থেকেই বেরিয়েছিল বাড়তি দুটি আঙ্গুল। একটা পুরোন ছবিও উদ্ধার করা গিয়েছিল, যাতে মিতার মা ছিলেন চেয়ারে বসে, বাবা দাঁড়িয়ে। বাঁ হাতের দৃশ্যমান কড়ে আঙ্গুল নজর করলেই চোখে পড়ে বাড়তি আঙ্গুল। এটুকু বললে বোধহয় খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না আদিত্যকে বুঝিয়েছিলাম, জিনের সুপ্তি ভাঙ্গার তত্ত্বে বিশ্বাসী মনোবিজ্ঞানীদের মতামত। ওদের পরিবারে ফিরে এসেছিল শান্তি।
এই তত্ত্ব ঠিক হলে এমনটা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়- যে পূর্বপুরুষের প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, অনুকূল পরিবেশের অভাবে বিকশিত হয়নি, সেই প্রতিভাই আজ বিকশিত হয়েছে উত্তর-পুরুষের মধ্যে।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ২য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ কিছু কথাঃ যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে
একঃ ভূতের ভর
♦ ভূতের ভরঃ বিভিন্ন ধরন ও ব্যাখ্যা
♦ গুরুর আত্মার খপ্পরে জনৈকা শিক্ষিকা
♦ প্রেমিকের আত্মা ও এক অধ্যাপিকা
ভূতে পাওয়া যখন ম্যানিয়াস ডিপ্রেসিভ
♦ সবার সামনে ভূত শাড়ি করে ফালা
♦ গ্রামে ফিরলেই ফিরে আসে ভূতটা
♦ একটি আত্মার অভিশাপ ও ক্যারেটে মাস্টার
দুইঃ পত্র পত্রিকার খবরে ভূত
♦ ট্যাক্সিতে ভূতের একটি সত্যি কাহিনী ও এক সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
♦ এক সত্যি ভূতের কাহিনী ও এক বিজ্ঞানী
♦ বেলঘরিয়ার গ্রীন পার্কে ভূতুরে বাড়িতে ঘড়ি ভেসে বেড়ায় শূন্যে
♦ দমদমের কাচ-ভাঙ্গা হল্লাবাজ-ভূত
তিনঃ যে ভূতুরে চ্যালেঞ্জের মুখে বিপদে পড়েছিলাম
চারঃ ভূতুরে চিকিৎসা
♦ ফিলিপিনো ফেইথ হিলার ও ভূতুরে অস্ত্রোপচার
♦ ফেইথ হিলার ও জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)
♦ পরকাল থেকে আসা বিদেহী ডাক্তার
♦ বিদেহী ডাক্তার দ্বারা আরোগ্য লাভ
♦ ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতার ভূতুরে চিকিৎসা
পাঁচঃ ভূতুরে তান্ত্রিক
♦ গৌতম ভারতী ও তাঁর ভূতুরে ফটোসম্মোহন
♦ ভূতুরে সম্মোহনে মনের মত বিয়েঃ কাজী সিদ্দীকির চ্যালেঞ্জ
ছয়ঃ ডাইনি ও আদিবাসী সমাজ
বাঁকুড়া জেলা হ্যান্ডবুক, ১৯৫১ থেকে
♦ ডাইনি, জানগুরু প্রথার বিরুদ্ধে কি করা উচিৎ
♦ ডাইনি হত্যা বন্ধে যে সব পরিকল্পনা এখুনি সরকারের গ্রহণ করা উচিৎ
♦ জানগুরুদের অলৌকিক ক্ষমতার রহস্য সন্ধানে
সাতঃ আদিবাসী সমাজের তুক-তাক, ঝাড়- ফুঁক
♦ ‘বিষ-পাথর’ ও ‘হাত চালান’এ বিষ নামান
আটঃ ঈশ্বরের ভর
♦ ঈশ্বরের ভর কখনো মানসিক রোগ, কখনো অভিনয়
♦ কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’ইয়ের মেলায় ভর
♦ হাড়োয়ার উমা সতীমার মন্দিরে গণ-ভর
♦ আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
♦ একই অঙ্গে সোম-শুক্কুর ‘বাবা’ ও মা’য়ের ভর
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমী’র মধ্যে সরস্বতীর অধিষ্ঠান (?) ও প্রডিজি প্রসঙ্গঃ
♦ প্রডিজি কি? ও কিছু বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা
♦ বংশগতি বা জিন প্রসঙ্গে কিছু কথা
♦ বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথা
♦ দুর্বল স্মৃতি বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে
♦ মানবগুণ বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব জীবনে সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমীর রহস্য সন্ধানে
♦ বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মহম্মদ আলি শূন্যে ভাসেন আল্লা-বিশ্বাসে!