ছেলেবেলায় আমি যেখানে খেলতাম
তিরিশ বছর গিয়ে দেখি সেখানে একটি মসজিদ উঠেছে।
আমি জানতে চাই ছেলেরা এখন খেলে কোথায়?
তারা বলে ছেলেরা এখন খেলে না, মসজিদে পাঁচবেলা নামাজ পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় বুড়িগঙ্গার ধারে বেড়াতে গিয়ে
যেখানে একঘণ্টা পরস্পরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম আমি আর মরিয়ম,
গিয়ে দেখি সৌদি সাহায্যে সেখানে একটা লাল ইটের মসজিদ উঠেছে।
কোথাও নিষ্পলক দৃষ্টি নেই চারদিকে জোব্বা আর আলখাল্লা।
পঁচিশ বছর আগে বোম্বাই সমুদ্রপারে এক সেমিনারে গিয়ে
যেখানে আমরা সারারাত নেচেছিলাম আর পান করেছিলাম আর নেচেছিলাম,
১৯৯৫-এ গিয়ে গিয়ে দেখি সেখানে এক মস্ত মন্দির উঠেছে।
দিকে দিকে নগ্ন সন্ন্যাসী, রাম আর সীতা, সংখ্যাহীন হনুমান;
নাচ আর পান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ফার্থ অফ ফোর্থের তীরের বনভূমিতে যেখানে সুজ্যান আমাকে
জড়িয়ে ধ’রে বাড়িয়ে দিয়েছিলো লাল ঠোঁট,
সেখানে গিয়ে দেখি মাথা তুলেছে এক গগনভেদি গির্জা।
বনভূমি ঢেকে আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত ঝুলছে এক ক্রুদ্ধ ক্রুশকাঠ।
আমি জিজ্ঞেস করি কেনো দিকে দিকে দিকে এতো প্রার্থণালয়।
কেনো খেলার মাঠ নেই গ্রামে?
কেনো নদীর ধারে নিষ্পলক পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকার স্থান নেই?
কেনো জায়গা নেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধ’রে চুম্বনের?
কেনো জায়গা নেই নাচ আর পানের?
তারা বলে পৃথিবী ভ’রে গেছে পাপে, আসমান থেকে জমিন ছেয়ে গেছে গুনাহ্য়
তাই আমাদের একমাত্র কাজ এখন শুধুই প্রার্থনা।
চারদিকে তাকিয়ে আমি অজস্র শক্তিশালী মুখমণ্ডল দেখতে পাই,
তখন আর একথা অস্বীকার করতে পারি না।
“কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু” কবিতা সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ