(২)

আমি এক সময় মার্ক্সবাদ করেছি, সাম্যবাদী ইশতেহার পড়েছি, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ছাড়া আর কিছু বুঝি নি, সব কিছু ব্যাখ্যা করেছি মার্ক্স-এঙ্গেলসের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী ভাষায়, হেগেলকেও টেনে এনেছি; বলেছি, কম্যুনিষ্ট ইশতেহার হচ্ছে শ্ৰেষ্ঠ বই, শ্ৰেষ্ঠ ঘোষণা, নেতাদের সঙ্গে শ্লোগান দিয়েছি পথে পথে, কিছু পাই নি; আমাদের নেতারা রাশিয়ার ভোদকা আর চীনের বিড়ি পেতো, আমি তাও পাই নি; আলহজ এরশাদের সময় আমার নেতারা যখন তার পা চাটতে শুরু করে, মন্ত্রী প্ৰধান মন্ত্রী হতে শুরু করে, আমার ঘেন্না লাগে; তখন আমি সর্বহারা দলে যোগ দিই, এখানে সেখানে দু-একটি খুন করি, ডাকাতি করি—করতে ভালোই লাগে, দু-একটি মেয়েকে ধর্ষণ করি, আমি ঠিক ধর্ষণের মতো করি নি, তাদের আমি রাজি করাই, প্রথমে ছেড়েই দিই, তারপর থেকে তাদের সঙ্গে আমার কয়েকবার দৈহিক সম্পর্ক হয়, আমি ঠিক মতো পেরে উঠি নি, তারা সবাই বলে, ‘তুমি পারো না’, তখন আমি পারতাম না, এখন পারি, আমি ধীরেসুস্থে পারতে শিখেছি, তারপর আমি যোগ দিই ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টিতে। আমি মুক্তির পথ খুঁজে পাই, জীবন পাই।

জামাঈ জিহাদে ইছলাম আমাকে উদ্দীপ্ত করে, আমি প্ৰচণ্ড উত্তেজনা বোধ করি, ওই উত্তেজনা দেহের বিশেষাঙ্গের উত্তেজনার থেকে অনেক বেশি তীব্ৰ, অনেক বেশি প্রচণ্ড, আমি দেখতে পাই আমি বেঁচে উঠছি, আমি বেহেশতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠি। মওলানা মওদুদি, ইমাম গাজালি, আয়াতুল্লা খোমেনির বই, আর কোরান-হাদিছ, নেয়ামুল কোরআন, মুকছোদুল মামেনিন, বেহেস্তের জেওর পড়ে আমি বুঝতে পারি। এতোকাল আমি ভুল পথে ছিলাম, দোজগের রাস্তায় ছিলাম, এখন আমি ঠিক পথে এসেছি; এখানে সব সময়ই খোয়াব, সব সময়ই উত্তেজনা; পৃথিবীতে মুছলমান আর ইছলাম ছাড়া আর কিছু থাকবে না, এ-বিশ্বাস আমাকে মাতাল ক’রে তোলে–নাউজুবিল্লা, ‘মাতাল’ শব্দটি ঠিক হয় নি, আল্লা আমাকে মাফ করবেন; এ-সময়ই আমি একটি চমৎকার জীবন পাই। যখন মার্ক্সবাদী ছিলাম, যখন সৰ্বাহারা ছিলাম, তখন আমার কোনো জীবন ছিলো না; জামাঈ জিহাদে ইছলামে যোগ দেয়ার পর আমি প্ৰায় সবই পাই, বেহেশত তো পাবোই। যোগ দেয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আমি জামাঈ জিহাদে ইছলাম-এর ‘মদিনাতুন্নবি’ অঞ্চলের নেতা হয়ে উঠি, আমার খুব চেষ্টা করতে হয় না; আমার প্ৰধান নেতারা বুঝতে পারেন যে-তিরিশটি মাদ্ৰাছার তালেব এলেম নিয়ে এআঞ্চলিক সংঘটি গঠিত, ওই সব হাফেজিয়া ফোরাকানিয়া কওমি কামিল দাখিল সাধারণ মাদ্ৰাছার তালেবানদের মাথায় ঘিলু নেই, যেমন তাদের মাথাও নেই, তাদের মগজ অন্য জায়গায়; তাই যোগ দেয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আমি নেতা হয়ে উঠি, যা আমি কখনো হই নি।

নেতা হওয়ার মতো সুখ ও স্বাদ ও কাম আর নেই।

শুধু ক্ষমতা নয়, ক্ষমতার মধ্যে যা শ্রেষ্ঠ— টাকা, তা আমার হাতে অঢেল আসতে থাকে–টাকা যে পানির স্রোতের মতো নানা খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়, তা আগে আমি জানতাম না, এখানে এসে দেখি নানা খাল দিয়ে ঢেউ তুলে টাকা আসছে আমার দিকে। ক্ষমতা ও টাকা মানুষকে মহাপুরুষে পরিণত করে, অমরতা দেয়। মার্ক্সবাদে আমার পকেটে একটা আধুলিও আসতো না, সর্বহারা ডাকাতির সময় আসতো দু-তিন হাজার টাকা, কিন্তু তখন সব সময় বিপদের ভয়ে থাকতে হতো, এখন কোনো ভয় নেই; এখানে নেতা হওয়ার পর আমার হাতে আসতে থাকে লাখ লাখ টাকা। টাকা যে কতো সুন্দর, রূপসী, শাশ্বতী, তা আমি বুঝতে পারি নেতা হওয়ার পর থেকে; অস্ত্ৰ কেনার পর, ইছলামের সিপাহিদের টাকা দেয়ার পর, আমার বাক্সে পড়ে থাকতে শুরু করে লাখ টাকা। আল্লা আর পাক স্তান ছাড়া এতো টাকা আমাকে কে দিতে পারতো?

টাকা পেয়ে আমি একবার নফল নামাজ পড়ি, প্রতিদিনই পড়তে হয়; পড়ে আমি সুখ পাই। দিলে শান্তি পাই। আর আসতে থাকে ব্ল্যাক লেভেল, সিভাস রিগাল, ব্যালেন্টাইন–এগুলোর নামও আগে আমি শুনি নি; সাম্যবাদের কালে মেথরূপট্টিতে যেতাম ব্যাটারি ভেজানো ধেনো খেতে, ওগুলো খাওয়ারও পয়সা ছিলো না; না থেকে ভালোই হয়েছে, বেশি খেলে এতোদিন থাকতাম না, লিভার সিরোসিসে চলে যেতাম। এখন ব্ল্যাক লেবেল, সিভাস রিগাল, ব্যালেন্টাইন ছাড়া অন্য সব আমার কাছে ভিখিরির লাল মূত্ৰ মনে হয়।

আমরা দুটি অসামান্য কর্মকাণ্ড গ্ৰহণ করেছি, যা দেশকে বদলে দেবে।

আজকে আমাদের আন্দোলন ‘ভৈরব’ উপজেলার নাম বদলের; আগামীকাল আন্দোলন ‘শ্যামসিদ্ধি’ গ্রামের নাম বদলের; আমরা দুনিয়াকে খোলনলচেসহ বদলে দেবো। ভৈরব আর শ্যামসিদ্ধি দুটি নামই আমার ছেলেবেলা থেকে প্রিয়, কিন্তু তাতে কি, ভৈরব আর শ্যামসিদ্ধি দুটিই পৌত্তলিক নাম, মালাউন নাম, এই নাম আমি আর মানতে পারি না, এটা শিরক; আর শ্যামসিদ্ধির ওই মঠটি, যেটিকে দূর থেকে একবার না দেখলে ছেলেবেলায় আমার ঘুম হতো না, ওটিকে আমার মনে হয় ইছলামের ওপর পাক স্তানের ওপর আমার দিলের ওপর একটা শরকির আঘাতের মতো, লাৎ মানৎ উজ্জা যেনো এখন কাবাঘর ছেড়ে এসে বাস করছে মঠটিতে–মঠটি ভেঙে একটি মসজিদ তৈরি করতে হবে; ওখানে আমি একটি আল আকসা বা বায়তুল মোকাররাম দেখতে চাই।

ওই মঠটির দিকে তাকালি আমার এক সময়ের প্রিয় পরম শ্রেদ্ধেয় মহান অদ্বিতীয় সানগ্লাস জেনারেল নেতাকে মনে পড়েন। তিনি আমার হৃদয়ে সব সময় আছেন, সব সময় থাকবেন। আমি তাঁর দলে যোগ দিই নি, দিতে পারি নি, দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার সাম্যবাদী নেতাদের পায়ের চাপে বারবার পিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম; তিনি পল্টন ময়দানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, জ্বালাময়ী বক্তৃতায় আমরা কঁপিছিলাম, তিনি হঠাৎ বক্তৃতা বন্ধ করে ডান হাতের তর্জন আমাদের বায়তুল মোকাররামের দিকে স্থির করে রাখেন।

তিনি স্তব্ধ হয়ে থাকেন কয়েক মিনিট, আমরাও স্তব্ধ হয়ে যাই, তাঁর আঙুলের দিকে তাকিয়ে থাকি, নিশ্চয়ই ওই আঙুলি কোনো গভীর বাণী প্ৰকাশ করছে।

তিনি স্তব্ধ হয়ে থাকেন কয়েক মিনিট, আমাদের মনে হয় তিনি হাজার হাজার বছর ধরে স্তব্ধ হয়ে আছেন, তার বদলে কথা বলছে তার জ্যোতির্ময় তর্জানি। আমি তাঁর তর্জনির ভাষায় কাঁপতে থাকি। সব কিছুরই ভাষা আছে; কিন্তু তর্জন যে এতো অর্থ প্ৰকাশ করতে পারে, যে-অর্থ আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হচ্ছিলো না, ওই বিরাট নীরব নিঃশব্দ অর্থের মুখোমুখি আমরা নিজেদের অসহায় বোধ করছিলাম—মহাঅর্থের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।

এক সময় তিনি বলে ওঠেন, ‘চ্ছি-ল-না।’

আমরা বিস্মিত শিহরিত উত্তেজিত হয়ে ভাবতে থাকি কী ছিলো না?

আমরা কী ক’রে জানবো?

তিনি বলেন, ‘চ্ছি-ল-না, আল্লাহু আকবর ছিল না; বায়তুল মোকাররামের উপরে আপনারা যে ‘আল্লাহ আকবর’ দেখতেছেন, তা ছি-ল-না; আল্লাহু আকবর ওয়াজ নট দেয়ার।‘

আমাদের বুক থেকে একটি পাহাড় নেমে যায়, আমরা নিশ্বাস নিই।

আমরা বোধ করি তিনি কতো মহান, কতো অসাধারণ, তিনি কতো বড়ো দ্রষ্টা; আমাদের সবচেয়ে বড়ো জিনিশই ছিলো না আমাদের সবচেয়ে বড়ো জিনিশের ওপর, আমরা বুঝতে পারি নি, বুঝেছিলেন আমাদের মহান নেতা, সানগ্লাসের ভেতর দিয়েও তিনি তা দেখেছিলেন। তাঁর সানগ্নাস ছিলো দূরদৃষ্টির সানগ্লাস, পৃথিবীতে ওই সানগ্লাস একটিই ছিলো।

সত্যিই তো, এতো দিন আমরা খেয়াল করি নি, বায়তুল মোকাররামের ওপর আল্লাহ আকবর ছিলো না; মহান নেতার তা চোখে পড়েছে, তিনি সেখানে আল্লাহ আকবর বসিয়েছেন, যা রাতে জ্বলজ্বল ক’রে জ্বলে রাহমানির রাহিমের গৌরব ঘোষণা করছে; মহান নেতা ইছলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন; তার থেকে বেশি। প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমাদের। মহান আল্লাতালা এখন নিশ্চয়ই তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে রেখেছেন। তিনি হয়তো সেখানেও সানগ্লাস পরে তাকিয়ে আছেন। তার প্রতিষ্ঠিত আল্লাহু আকবরের দিকে, আর আমাদের দিকে, আমরা যারা পাক স্তান প্রতিষ্ঠা করবো, পাক সার জমিন গাইবো।

ওই ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে আছে; আমি শ্যামসিদ্ধির মঠটি ভেঙে ফেলবো, বা সেটিকে মসজিদ বানিয়ে বড়ো বড়ো অক্ষরে লিখবো ‘আল্লাহ আকবর’, যা মহান রাহমানির রাহিমও দেখতে পাবেন। তিনি অবশ্য সবই দেখেন, একটি পোকাও তাঁর চোখের বাইরে নয়।

তবে মালাউনদের দু-একদিন সময় দিতে পারি, একটু দয়া করতে পারি।

যদিও আন্দোলন আমাদের আজই করতে হবে, আন্দোলন কাজ করতে আমরা পারি না, দয়া ক’রে ওদের একটু সুযোগ দিতে পারি। কী সুযোগ দেবো? গতকাল রাতে আমার জিহাদিদের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি, তখন ভিডিওতে এক্সএক্সএক্স চলছিলো, ডেঞ্জারাস জিনিশ, লাস্ট ফর ডগ্‌জ্‌, তারপর ইন্ডিয়ান জিফনিশ–এখন আমরা আর ফ্যাটফ্যাটে শাদা বেহায়া বেলেহাজ মেয়েগুলোর চোষাচুষি, পাছা মারামারি, ডাবল ট্রিপল স্ক্রু মারা দেখে এক্সাইটেড হই না, অনেক দেখেছি, সবই একই রকম, রাবিশ, পানসে, আমাদের পছন্দ মালাউন গুড্‌স্‌, সাউথ ইন্ডিয়ান আর মুম্বাইর–ইন্ডিয়ান এক্সএক্সএক্স দেখে আমরা সঙ্গে সঙ্গে খাড়া হই, শাদা মাইয়াগুলো দেখলে হই না, ওইগুলোর দেহে কোনো স্বাদ নেই, ওগুলো ব্লাডার ও পাম্পারের অটোমেটিক মেশিন; ওগুলো দেখতে দেখতে আমাদের মনে পড়ছিলে দুৰ্গা, বকুলমালা, কণকলতা, সরস্বতী, রমা, সীতা, উৰ্মিলা, মাধুরী, শুভঙ্করী, কৃষ্ণকলি, আর কী কী যেনো ওদের নাম, সেই ডবকা মেয়েগুলোকে, যদি ওদের এবং আরো কয়েকটিকে পাই, একা আমি পেলে তো হবে না, তালেবান মোঃ হাফিজুদ্দিন, জিহাদি মোঃ কেরামত আলি, জিহাদি মোঃ মোস্তফা, জিহাদি মোঃ আকবর আলিকেও ভাগ দিতে হবে, তাহলে মালাউনদের কয়েকটি দিন দিতে পারি, কয়েকটি দিন।

জিহাদিদের একটি মহান গুণ হচ্ছে তারা মালাউন মেয়ে পছন্দ করে।

আমিও করি, ওদের একটু খেলাতে পারলে ওরা উর্বশীদের মতো নাচে; আমার জিহাদিরা অবশ্য নাচটাচ পছন্দ করে না, ওরা ঢুকতে বেরোতে পারলেই শুকরিয়া আদায় করে। এতে প্ৰধান প্রতিভা তালেবান মোঃ হাফিজুদ্দিন, ও হয়তো ফেরেশতাদের কাছে থেকে বিশেষ কোনো হালুয়া লাভ করে; তবে মোঃ কেরামত আলি, মোঃ মোস্তফা, মোঃ আকবর আলিও কম যায় না, এটা আমি পছন্দই করি, জিহাদে কোনো কম যাওয়া-যাওয়ি নেই, তাতে জোশ কমে যায়। ওরা যখন একেকটি মালাউন মেয়ের ওপর চড়ে, তখন ওরা মনে করে ওরা একেকটি নাছারা নগর ধ্বংস করছে, যার নির্দেশ রয়েছে। আমি আশ্চর্য হই, ওরা রুহুল্লা খোমেনির কিছুই পড়ে নি, কিন্তু চিন্তা ও কর্মে তাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

মালাউন মেয়েগুলোর গন্ধ আমার ভালো লাগে, ব্ৰাহ্মণ হোক আর চাঁড়াল হোক আর কৈবর্ত, যাই হোক, ওগুলোর গন্ধ ভালো, একটা তীব্ৰ প্ৰচণ্ড দমবন্ধ করা মহাপার্থিব গন্ধ ছুটে আসে। ওদের স্তন থেকে, বগলের পশম থেকে, উরু থেকে, ওদের কুঁচকির ঘামেও অদ্ভুত সুগন্ধ; হয়তো গাদা তুলসি রক্তজবা পদ্ম, বকুল শেফালি গন্ধরাজ ফুলের সঙ্গে ওদের একটা সম্পর্ক আছে বলে, আর ওরা ক্ৰীড়া করেও ভালো, মনে হয় ওদের প্রত্যেকেরই কামসূত্র মুখস্থ; এমনকি কৈবর্ত মেয়েগুলোর গন্ধও আমাকে পাগল করে, আমি কৈ আর গজার মাছের গন্ধ পাই, মনে হয় পুকুরে ডুব দিয়ে কাদার ভেতর থেকে মাছ ধরছি।

ওই সময়টায় সবাই আমাদের অসামান্য কর্মকাণ্ড সবাই দেখেছে, কিন্তু কেউ একটু টু শব্দ করার সাহস পায় নি; তখন অবশ্য আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।

আমাকে ছুটে চলতে হয়েছে আমার মদিনাদুন্নবি থেকে, রিয়াদ, কান্দাহার, বাগদাদ, তিকরিত, বসরা প্রভৃতি অঞ্চলে–এই অঞ্চলগুলো আমাদের সাংকেতিক নাম, সব মহান কাজেই প্ৰথম সাংকেতিক নাম লাগে, সিম্বল লাগে। তখন একটা অসামান্য মজার সময় এসেছিলো, তখনই আমরা আমাদের শক্তিটাকে পাথরের মতো করে তুলি, যে পাথর আমাদের দিল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাবে না। নির্বাচনটিাৰ্বাচনে, ইলেকশনটিলেকশনে, আমরা বিশ্বাস করি না, ওটা আমাদের পাক ধর্মে নেই, তবু আমরা অংশ নিয়েছি মেইন পার্টির সঙ্গে; মেইন পার্টির কর্মী আর আমাদের ওপর দুটি নির্দেশ ছিলো, ভোটের দিন মালাউনদের বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হবে না; আর জানতামই যে আমরা জিতবো–আমাদের নেতারা ওপরের দিকে সব কাজ চমৎকারভাবে ক’রে রেখেছিলেন, তত্ত্বাবধায়কদের তারা তত্ত্বাবধান করছিলেন; আমরা জানতাম জিতবোই; জেতার পর আমাদের কাজ ছিলো একদিন চুপ করে থাকা, তার পরের দিন থেকে মালাউন আর তাদের দালালদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া। ঝাঁপিয়ে পড়া শব্দটি ঠিক হলো না, আমাদের কাজ ছিলো শান্তির ঠাণ্ডা আগুন জ্বালানো, যা জ্বলে না, দহন করে।

আমার ভাগে পড়েছিলো মালাউনরা; আমিই বেছে নিয়েছিলাম।

আমি আমার জিহাদিদের আর মেইন পাটির জোয়ান খিলজিদের নিয়ে প্রথম ১৮টি মালাউনপল্লী চিহ্নিত করি–সীতারামপুর, হরিরামপুর, মদনগঞ্জ, মদনপুর, ব্ৰাহ্মণভিটা, কালীগঞ্জ, আর কী কী যেনো নাম–ওই নামগুলোকেও বদলে দিতে হবে; এবং বেশ আগে থেকেই কাজ শুরু করি। আমরা ভালো ক’রেই জানি ওরা কাফের, ওরা কাফেরদের বাক্সে ভোট দেবে; ওদের ভোট দেয়া চিরকালের জন্যে বন্ধ করে দিতে হবে। ওরা ভোট দেবে কেনো; ওরা দেবে জিজিয়া কর, ওরা আমাদের জিম্মি, আমরা ওদের রক্ষা করবো, তার জন্যে। ওরা কর দেবে।

আমি এ-ব্যাপারে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে আদর্শ মনে করি।

আমরা তাদের পাড়ায় পাড়ায় যাই, আমাদের দেখেই তারা কেঁপে ওঠে। সালাম দিয়ে আমরা তাদের বাড়ি উঠি, তারা নমস্কার’, ‘আদাব’ বলে ব’লে মুখে ফেনা তুলে ফেলে, সবচেয়ে উৎকৃষ্টভাবে বলে, ‘আচ্ছালামুয়ালাইকুম’।

আমিও এখনো তাদের মতো শব্দটি বলতে পারি না। আমাদের কোথায় বসাবে তা ঠিক করতে পারে না, চেয়ার টুল বেঞ্চ নিয়ে টানাটানি করতে থাকে, যদিও বসার দরকার আমাদের ছিলো না। একদিন আমরা বসবো, চড়বো, চেয়ার বেঞ্চের ওপর নয়, আরো কোমল সুখকর জিনিশের ওপর।

আমি বলি, ‘মহাশয়েরা, আপনারা কেমন আছেন, তা দেখতে এলাম; ভালো আছে সবাই?’

একেকজন ভয়ে ভয়ে বলে, ‘সেইটা আমাগো ভাইগ্য, আপনেরা আমাগো বাড়িতে আসবেন, কোনদিন চিন্তাও করতে পারি নাই, আপনাগো পায়ের ধুলায় আমগো বাড়ি পবিত্র হইল।‘

আমাদের অনেকের জামার ভেতর থেকে নানা রকমের শান্তিপ্রদ জিনিস উঁকি দিচ্ছিলো–দু-একটা পিস্তল, দু-একটা কাটা রাইফেল, দু-চারটি ক্ষুর, কয়েকটি এম-১৬, আর বেশি না।

আমি বলি, ‘আপনাদের ভোটার তালিকা দিতে এলাম, যাতে ভোট দিতে আপনাদের কষ্ট না হয়।’

একেকজন বলে, ‘আপনেরা কষ্ট কইর‍্যা আসছেন, কি দিয়া যে আপনাগো আপ্যায়ন করি। একটু চা দেই।’

দু-চারটি মালাউন বউ মেয়ে দেখার ইচ্ছে আমাদের সবারই ছিলো। আগে থেকে দেখে রাখলে পরে কাজ দেবে।

আমি বলি, ‘তালিকায় ২৫ নম্বরে আছেন শ্ৰীমতি পদ্মাবতী দেবী, তার সঙ্গে কি একটু কথা বলতে পারি?’

পদ্মাবতী দেবী আমাদের সামনে আসেন, আমরা দেখি বেশ ভালো!

আমি বলি, ‘আপনার পিতার নাম কৃষ্ণচন্দ্ৰ দাস?’

পদ্মাবতী দেবী। খুবই লজ্জা পান, তার লজ্জা পাওয়াটা দেখার মতো, কিন্তু তখনও ভালো করে দেখার সময় আসে নি।

তিনি সলজ্জভাবে বলেন, ‘অইটা ভুল অইছে, অইটা আমার স্বামীর নাম।’

আমি জানি পিতার জায়গায় স্বামী, আর স্বামীর জায়গায় পিতার নাম বসানো আমাদের নির্বাচন কমিশনের একটি বড়ো কৃতিত্ব। তারা আজো পিতা আর স্বামীর পার্থক্য বোঝে না; তবে দল বোঝে, দালালি বোঝে, ক্ষমতা বোঝে, আর কারা ক্ষমতায় আসবে, তাও বোঝে।

আমি বলি, ‘এই জন্যে আমরা ক্ষমা চাই, মাফ ক’রে দেবেন। আপনারা ভোট দেবেন কোন দলকে?’

পদ্মাবতী দেবী চালাক মাল, বলেন, ‘আপনাগো দলরেই দিমু।’

আমি বলি, ‘তাহলে তো আপনার ভোট পেয়েই গেলাম, কষ্ট করে আর আপনার ভোট দিতে যাওয়ার দরকার নেই।’

পদ্মাবতী দেবী বলেন, ‘হুজুর, অনেক কষ্ট থিকা বাচাই দিলেন, লাইনে দাড়াইতে দাড়াইতে মাজা বেদনা অইয়া যায়; তার উপর আমার এইখন আট মাস চলতেছে, হাডতেই পারি না।’

আমার এক জিহাদি হতাশ হয়, পদ্মাবতীকে তার পছন্দ হয়েছিলো, কিন্তু মাগিটা আট মাস বাঁধিয়ে বসেছে, আট মাসের পেটের ওপর চড়তে পারবে কি না বুঝতে পারে না; আরেক জিহাদি খুশি হয়, আট মাসের পেটের ওপর চড়তে কেমন লাগে, তা সে দেখতে চায়। দেখার সময় আসতে আসতে পদ্মাবতীর সাড়ে আট মাস হয়ে যাবে। এটা এক সুন্দর জিনিশ: কেউ খালি পেট পছন্দ করে, কেউ ভরা পেট পছন্দ করে; আল্লার দুনিয়ায় বৈচিত্র্যের শেষ নেই।

মালাউনদের পাড়ায় আগে আমি বেশি যাই নি। ইস্কুলে পড়ার সময় স্যারের বাড়িতে যেতাম প্ৰাইভেট পড়তে, স্যারকে দেখার আগে তার মেয়ে ছবিকে দেখতাম, স্যারের আগে ছবিই আসতো ছবির মতো হয়ে, একটা সুগন্ধ পেতাম, গাঁদা আর বলকুলের মেশানো গন্ধ, যা কোনো মুছলমান মেয়েকে দেখলে পেতাম না; নানাবাড়ি যাওয়ার সময় দেখতাম পুকুরপাড়ে স্নান করার আগে গোয়ালবাড়ির শাদা শাদা মেয়ে ও মেয়েলোকগুলো শাড়ি হাঁটু পর্যন্ত তুলে চড়াচড় ক’রে প্রস্রাব করছে; আমি অদ্ভুত একটা গন্ধ পেতাম। কিন্তু মালাউনদের বাড়িতে বেশি যাই নি, এবারই আমার সৌভাগ্য হলো মালাউনগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের।

আমরা পাড়ায় পাড়ায় যাই, যেতে আমাদের ভালো লাগে।

আসার আগে বলি, ‘দেখেন ভোটের দিন গোলমাল হতে পারে, খুনটুনও হয়ে যেতে পারে; আপনারা ভোট দিতে যাবেন কি যাবেন না, ওই দিন বাড়ি থেকেই বের হবেন কি হবেন না, তা একটু ভেবে দেখবেন; জানেনই তো এবার আমরা পাশ করবো, আপনাগো দালালরা পারবে না।’

তারা বলে, ‘সেই কতা আমরা জানি, তাগো আর ভোট দিমু না, ভোত দিতেই যামু না, ভোট দিলে আপনাগোই দিমু, আমরা তাগো ভোট দিমু। ক্যান, আমরা কি তাগো বান্দা গোলাম?’

তবে মালাউনদের বিশ্বাস করা যায় না, ওরা চিরকাল বেঈমান; আমরা শুধু ওদের কথার ওপর চলতে পারি না।

ভালো ক’রেই বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি, তারাও বুঝতে পেরেছে।

শুধু এভাবে বোঝালে ও বুঝলেই চলবে না; বোঝানোর জন্যে দু-একটি উদাহরণও ওদের চোখের সামনে থাকা ভালো; মানুষ কখনো কথায় বোঝে না, উদাহরণে সহজে বোঝে, এমনভাবে বোঝে যে আর ভোলে না। আমরা আগেই ঠিক ক’রে রেখেছি গোপালচন্দ্রের বাড়িটা, হারামজাদাটা পয়সা করেছে, সালাম দেয় না দেয়ার মতো, মালপানিও দেয় না, আবার দালালদের পার্টি করে।

ওর বাড়িটা ঠিক ক’রে রেখেছি, বেশি কিছু নয়, সন্ধ্যার পর আমাদের কয়েক জিহাদি ও মেইন পার্টির কয়েক খিলজি যাবে, এদিকে ওদিকে কয়েক গ্যালন পেট্রোল ছড়াবে, আর কয়েকটি ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে ছুঁড়ে দিয়ে আসবে। তাতে কাজ হবে, কাজ হয়ও; ওই সন্ধ্যায় গোপালচন্দ্রের বাড়িটা একটু দাউদাউ ক’রে ওঠে, তখন আমরা কয়েকজন অসি সাহেবের সঙ্গে একটু ব্ল্যাক লেবেল একটু সিভাস রিগ্যাল টেস্ট করছিলাম।

 

অসি বাঞ্চতটা পঞ্চাশ হাজার চেয়েছিলো, আমি দশ হাজার দিয়েছিলাম; এখন ওই বহিনফাকার বাঞ্চতটা আমার পেছনে ঘোরে, ওর চাকুরিটা আর নেই; আমি পঞ্চাশ লাখ চেয়েছি, ও বিশ লাখ দিতে চায়। হারামজাদার চাকুরিটা ফিরিয়ে দেবো, যদি পঞ্চাশ লাখ দেয়; মাদারচোতটা দেবে, বাঞ্চতটা কয়েক বছরে কয়েক কোটি জমিয়েছে; উত্তরায় বাড়ি করেছে। দু-নম্বর বউয়ের নামে।

ওর দুই নম্বর বউট না কি টিকবে না, সে এখন একটা ঋণখেলাপির সঙ্গে ঘুমোতে ব্যাংকক যায়, উত্তরায় ঘুমিয়ে সে সুখ পায় না।

কাজ হয়েছিলো; একদিনের জন্যে আমরা মেইন পার্টির মহীয়সী লিডারেসের কথায় শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাক–যাই বলি না কেনো–হয়েছিলাম। আমরা দলে দলে শান্তির কবুতর, পায়রা, ঘুঘু, চিল, শকুন, বাজ, কাকরা অস্থিরভাবে আকাশে উড়ছিলাম।

একরাত, একদিন; ওটা আমাদের জন্যে সামান্য সময় ছিলো না, ছিলো হাজার বছরের সমান, এতো দীর্ঘ সময় ধরে শান্তিতে থাকা আর শাস্তিতে রাখা কতোটা কঠিন, ওই সময় আমরা ছাড়া আর কেউ বোঝে নি। শান্তি বড়োই ভারি ব্যাপার, যখন আমাদের ভেতরে বিজয়ের পবিত্র অগ্নিশিখা দাউদাউ করছিলো, তখন শান্তি দোজগের শান্তির মতো লাগছিলো।

পত্রিকাগুলো পরদিন আমাদের প্রশংসায় মেতে উঠেছিলো।

মেইন পাটির সঙ্গে আমরা ল্যান্ডস্লাইড করলেও নিজেদের শান্ত রেখেছি, অর্থাৎ মেইন পার্টির খিলজিরা শান্ত ঠাণ্ডা রয়েছে; এমনকি বিজয়োৎসবও করি নি, গণতন্ত্র একেই বলে। আমাদের মতো মহৎ আর কে? আমরা একরাতে একদিন মহত্ত্ব অর্জন করি, কৃতিত্বের বড়ো ভাগটাই মেইন পার্টির খিলজিরা নেয়, আমাদের হিশেবের মধ্যেই আনে না; কিন্তু আমরা যে মেইন পার্টির আসল ফোর্স, তারা তা বোঝে নি। তবে খিলজিরা ও আমরা বুঝতে পারি কতো দীর্ঘ হতে পারে একটি রাত ও একটি দিন, তা একশো বছরের সমান; তবে আমাদের সামনে তখন সহস্র ও একরাত, তার থেকেও বেশি।

প্ৰশংসাধন্য হওয়ার পর আমাদের আর কেউ নিন্দা করতে পারে নি; নিন্দা করার সাহস পায় নি। আমরা তখন শান্তিশৃঙ্খলার ফেরেশতা, আমাদের আগুনের ডানা থেকে ঝলকে ঝলকে শান্তি ঝ’রে পড়ছিলো।

কিন্তু বিজয়ের পর একরাত ও একদিন নিক্রিয় থাকা, শান্তিতে থাকা, শান্তিতে রাখা, আমাদের জন্যে হৃদয়বিদারক ছিলো। শাদি হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ছহবত করতে পারছিলাম না, যদিও সব কিছু ছিলো টানটান। টানটান জিনিশ নিয়ে একরাত একদিন কাটানোর কষ্ট আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

তার পর দিন থেকে মেইন পার্টির নিষ্ঠাপরায়ণ, প্রচণ্ড, তীব্ৰ, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণাৰ্ত, দয়ালু, জনসেবক, মেধাবী, রাজপথের যোদ্ধা, কুয়ৎশীল নেতাকমীদের সঙ্গে আমরা জিহাদির দেশ জুড়ে শান্তির ঝড় বইয়ে দিয়েছিলাম।

ওটার নাম দিয়েছিলাম। আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’, সোভানাল্লা।

দেশ এমন শান্তির ঠাণ্ডা অগ্নি আগে কখনো দেখে নি, সোভানাল্লা।

আমরা, জিহাদিরা ও মেইন পার্টির ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বখতিয়ার খিলজিরা, মিলেমিশে কাজ করেছি, তখন দেশ আমাদের পায়ের নিচে, আমাদের আগুনের নিচে, আমাদের পিস্তলের নিচে, এবং সবচেয়ে যেটি শক্তিমান ও উদ্ধত পিস্তল–দেশ তখন আমাদের দীর্ঘ দৃঢ় উদ্যত শিশ্নের ছায়ার নিচে, সোনার বাঙলাকে আমার তখন আসল সোনার বাঙলা ক’রে তোলার জন্যে উত্তেজিত। আমাদের শিশ্ন বারবার দৃঢ় হচ্ছিলো, হুর ও উর্বশীদের জন্যে ব্যাকুল হচ্ছিলো; কিন্তু আমরা গণতন্ত্র মেনে নিয়েছিলাম–এক রাত ও একদিন।

জিহাদি ও খিলজি, এবং জিহাদি ও খিলজিতে ভাগ হয়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ি, সন্ধ্যার একটু পরেই।

আমি মালাউন পছন্দ করি, মহান আল্লাতালাই আমাকে এই অপূর্ব রুচিটি দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লা; ওদের গন্ধ আমার পছন্দ, ওদের ঠোঁট আমার পছন্দ; আমি বেছে নিই মালাউন পাড়াগুলো, এবং আমাকে দেয়া হয় মালাউন পাড়াগুলো, তবে সবগুলো নয়। আমার প্ৰিয় দোস্ত, বিখ্যাত খিলজি, মেইন পার্টির ছৈয়দ ছব্দর আলি বন্টু,–তার পছন্দ দুটিই, একই সঙ্গে মালাউন আর আগের মেইন পার্টির দালালদের পাড়াগুলো; সে মনে করে সব কিছু তার তলোয়ার ও শিশ্নের নিচে। এটাকে সে বাস্তবায়িত করেছে, ক’রে চলছে, তবে তার কপালে যে কী আছে, তা রাহমানির রাহিমই জানেন।

আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ দিয়ে মালাউন ও মালাউনদের দালালদের শান্ত শীতল নীরব নিথর করতে বেরিয়ে পড়ি।

আমাদের জিহাদিদের আগুন লাগাতে হয় না, আমরা ঘরে ঘরে ঢুকি, ওরা কাঁপতে থাকে; আমরা বেশি কিছু চাই না–একবারের জন্যে খুনটুন করার দরকার ছিলো না, দরকার ছিলো চিরকালের জন্যে খুন করা।

আমার দুই নম্বর, জিহাদি মোঃ হাফিজুদ্দিন, তালেবান হওয়ার জন্যে যে একবার আফগানিস্থানে গিয়েছিলো, সে বলেছিলো, ‘হুজুর, গোটা পঞ্চাশেক মালাউন ফালাই দিতে হইব।‘

আমি বলেছিলাম, ‘গোটা পঞ্চাশেক ফেলে কী হবে?’

জিহাদি মোঃ মুস্তাকিম জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘তাইলে হুজুর, কয়ড়া ফালামু?’

আমি বলেছিলাম, ‘দুটি বা দশটি নয়, সবগুলোকেই ফেলে দিতে হবে।’

ওরা ভয় পেয়ে আর্তনাদ করে উঠেছিলো, ‘হুজুর, সবগুলিরে। ফালামু?’

ওরা যে আর্তনাদ করতে পারে, এটা আমাকে বিস্মিত করেছিলো; ওদের মুখ দেখে আমার কখনো মনে হয় নি। ওরা এমন শব্দ করতে পারে। ওদের অশ্রুনালিতে কোনো অশ্রু আছে বলেও আমার মনে হয় নি।

আমি বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, সবগুলোকে।’

ওরা বলেছিলো, ‘এক রাইতে সবগুলিরে। ফালাইতে পারুম?’

আমি বলেছিলাম, ‘এক রাত কেনো, আমাদের সহস্র রাত হয়েছে।’

ওরা এবার শান্ত হয়, বলে, ‘তাইলে ফালাইতে কষ্ট অইব না।’

আমি বলেছিলাম, কীভাবে ফেলবে?

ওরা বলছিলো, ‘হুজুর, খালি চাক্কু মারুম শিনার বাঁও দিকে, আর হলকুম দুই ভাগ কইর‍্যা ফালামু।’

আমি বলেছিলাম, ‘চাক্কু মেরে ফেলতে হবে না, তাতে ঘরবাড়ি নোংরা হবে, লাশের গন্ধ বেরোবে, একবারে খুনের থেকে ওদের চিরকালের জন্যে খুন করতে হবে, যাতে ওরা দেশে না থাকে, আর থাকলেও যেনো না থাকে।’

ওরা ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘সেইডা কেমনে করুম, হুজুর?’

আমি বলেছিলাম, ‘হাত দিয়ে দ্যাখো তোমাদের দুই রানের মাঝখানে কী আছে? কী ঝুলছে।‘

তারা হাত দিয়ে দৃঢ় দণ্ড অনুভব করে শরম পায়; সেটি ঝুলছিলো না, দাঁড়িয়ে ছিলো কুতুবমিনারের মতো।

আমি জিজ্ঞেস করি, ‘কী আছে ওখানে?’

ওরা বলে, ‘হুজুর, আমাগো লিঙ্গ।’

আমি বলি, ‘ওটি লিঙ্গ নয়, পিস্তল, এম-১৬। ওইটা খোদার দেয়া পিস্তল, এম-১৬। ওইটা চালাতে হবে – মালাউন মেয়েগুলোর পেটে মমিন মুছলমান ঢুকিয়ে দিতে হবে, জিহাদের এইটাই নিয়ম। আর মালাউনদের ঘরভরা সোনাদানা, কলসিভরা টাকা, ওইগুলো নিয়ে আসতে হবে।’

ওরা আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলো, ‘আল্লাহু আকবর, নারায়ে তকবির।’

আমি জানতাম ওদের পিস্তল ও এম-১৬ দৃঢ় ও সদাসক্রিয়, কিন্তু জিহাদিদের পিস্তল ও এম-১৬ যে এতো দৃঢ়, ও সদাপ্রস্তুত, এবং পৌনপুনিক কুয়ৎসম্পন্ন – অটোমেটিক, একটা আমার জানা ছিলো না। মালাউনপল্লীতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মালাউনরা বুঝতে পারে আমরা ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ ছড়াতে এসেছি। তারা একবারও চিৎকার করে না, অতো ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ছাড়া আর কিছু সম্ভব ছিলো না; কেউ হাতে একটি সরকি বা দাও নিয়েও আসে না, তারা জমে গিয়ে বাঁচতে চায়; তারা আমাদের ঠাণ্ডা শান্তির আগুনে নিঃশব্দে পুড়ে যেতে থাকে। আমাদের হাতে অবশ্য লোহার পিস্তল, চাইনিজ রাইফেল ছিলো, এম-১৬ ছিলো; ওগুলো হাতে না থাকলে চামড়ার পিস্তল কেউ ব্যবহার করতে দেয় না।

আমার জিহাদিরা ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়, ওদের মাথায় একটু ঘিলু কম, ওরা যতোটা কাজ করে, তারচেয়ে বেশি গোলমাল করে, যদিও গোলমালেও বেশ কাজ হয়; আমি ওদের নিরস্ত করি। আমি ‘শান্তির ঠাণ্ডা আগুন’ পছন্দ করি; দাউদাউ করার দরকার না হ’লে দাউদাউ করে শক্তি খরচ করতে চাই না।

বাহুর শক্তি খরচের কিছু নাই, কিছু অতিশয় মূল্যবান ধাতু খরচ করতে হবে। ধাতু ক্ষয় করবো মালাউনদের জন্যে এটা আমাদের দয়া, এক বিন্দু ধাতু প্রচুর সুখাদ্যের ফল, বহু পুষ্টিতে এক বিন্দু ধাতু উৎপন্ন হয়, তা বড়োই পবিত্র, বড়োই সৃষ্টিশীল। সে-মহান জিনিশ আমরা ওদের দান করবো, এটা আমাদের মেহেরবানি, এর জন্যে ওদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু ইহুদি ও মালাউনরা কবে কৃতজ্ঞ থেকেছে, শুকরিয়া জানিয়েছে?

সীতারামপুর গ্রামটিকে আমরা প্ৰথম বেছে নিই।

এই নামটা কেনো যেনো আমার পছন্দ হয়, হয়তো ওই সীতা মেয়েটির জন্যে, মেয়েটিকে আমার প্রথম থেকেই পছন্দ। ওকে আমার খুব সেক্সি মনে হয়েছিলো, যখন ওর জন্মের গল্পটি প্রথম পড়েছিলাম। সে খুবই সেক্সি, একটি বইতে পড়েছিলাম, সে আসলে যোনির সিম্বল, আর রাম হচ্ছে শিশ্নের সিম্বল; তাই যোনি ও শিশ্নের গ্রামটিকেই আমি প্রথম বেছে নিই। প্রতিটি পাড়াকে আমরা ঘিরে ফেলি, যাতে কেউ পুকুরেও লাফ দিয়ে না পড়তে পারে, জঙ্গলে গিয়ে লুকোতে না পারে, পায়খানায় গিয়ে বসে থাকতে না পারে, এমনকি গলায় দড়িও দিতে না পারে। জিহাদিরা অতন্দ্র প্রহরী।

প্রতিটি পাড়ায় গেলেই প্রথম জরাজীর্ণ বুড়োর বেরিয়ে আসে।

আমরা জানতাম তারাই আসবে, আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবতীরা বুকের কাপড় খুলে পাছা দুলিয়ে নাচতে নাচতে স্বাগতম জানানোর জন্যে আসবে না। তবে তাদের আসতে হবে, এটা তারাও জানে, তাদের পিতারাও জানে, ভাইয়েরা জানে, আর ভাঙাচোরা পতিদেবতারাও জানে। এটাও জানে দেবতার ওপরও দেবতা আছে; একদল দেবতার পরে আরেকদল দেবতা আসে, আকাশে আসে মাটিতেও আসে। তারা কি জানে না। আমরা নতুন দেবতা হয়ে দেখা দিয়েছি? আমাদের পুজো করা তাদের কর্তব্য? নতুন দেবতারা সব সময়ই একটু ক্রুদ্ধ হয়, আমরাও বেশ ক্রুদ্ধ; তবে আমাদের মেইন পার্টির খিলজিদের মতো অতো ক্রুদ্ধ নই, আমি হ’তে দিই না, আমরা এখনো মেইন পার্টি হই নি। ওরা পাঁচ বছর রক্ত খেতে পারে নি, এখন তাদের তাড়াতাড়ি গলাভরে রক্ত খাওয়া দরকার; আমরাও খাবো, এবং খাচ্ছি, তবে মেইন পার্টির খিলজিদের একটু বেশি খেতে দেবো, যাতে তারা অল্প সময়েই রক্তপায়ী আর নারীখোর বলে খ্যাতি অর্জন করে। তাদের খ্যাতিতে এখন দুনিয়া আহ্লাদিত ও উদ্বিগ্ন।

আমি কৌশল পছন্দ করি, কৌশল হচ্ছে আমার কাছে মালাউন যুবতীদের মতো, তাদের গন্ধের মতো, তাদের ঠোঁটের মতো।

অবশ্য আমি কৌশল শিখি আমাদের পাক ধর্মের ইতিহাস পড়ে; ওই সব কৌশলে আমি মুগ্ধ হই, হোলি টেরারে ওগুলো অতুলনীয়। কৌশল ছাড়া সফল হওয়া যায় না; সন্ধি করতে হয়, সময় বুঝে সন্ধি ভেঙে ফেলতে হয়; সময় বুঝে করুণাময় হ’তে হয়, সময় বুঝে হ’তে হয় বাঘ, একটু রক্ত খেতে হয়।

আমি বলি, ‘আপনারা কেমন আছেন?’

তারা বলে, ‘আল্লার দয়ায় ভালো আছি, হুজুর।’

আমি বলি, ‘আল্লার রহমতে আপনারা ভালো থাকেন, তাই আমরা চাই, আল্লাতালাও তাই চান। আপনাদের ভালো রাখার জন্যেই আমরা এসেছি।’

তারা বলে, ‘হুজুর, আপনের দয়া।’

আমি বলি, ‘আপনারা কি রকম আগুন পছন্দ করেন? ঠাণ্ডা না গরম?’

খুব ভয় পায় ওরা, এতো ভয় পায় যে ওদের মুখে ভয়ের চিহ্ন দেখাতেও ভয় পায়; কারো মুখে ভয় দেখলে আমি পুলক বোধ করি।

তারা বলে, ‘হুজুর, আপনের কতা বুজতে পারতেছি না, একটু বুজাই বলেন। ঠাণ্ডা আগুন আবার কেমুন?’

আমি বলি, ‘ঠাণ্ডা আগুন শীতল, নিঃশব্দ, কেউ বুঝবে না যে পুড়ে গেছে, পুড়ে যাওয়ার পরও আগের মতোই সুন্দর দেখাবে।’

তারা কথা বলে না, ঠাণ্ডা আগুনে পুড়তে থাকে।

আমি বলি, ‘আমার জিহাদিরা এসেছে একটু বিজয় উৎসব করার জন্যে, বিজয়ের পর উৎসব করার নিয়ম আছে, আপনারা জানেন, তাদের একটু উৎসব করতে দিন।‘

তারা বলে, ‘হা, জয়ের পর ত উৎসব করতেই অয়। তাইলে আমরা বাইদ্যকরগো লইয়া আহি।‘

আমি বলি, বাদ্যকর লাগবে না, জিহাদিরা একটু উৎসব করবে, একটু দোল যাত্রা আর ঝুলন পূর্ণিমা করবে, বাধাটাধা দিয়েন না, তাহলে পাঁচ দশটা লাশ পড়বে, আর আপনাদের মেয়েদের জিহাদিরা ধর্ষণ করেছে, এটা জানাজানি হ’লে আপনারা মুখ দেখাতে পারবেন না।’

তারা বলে, ‘হুজুর, আমাগো মাফ করেন, আমাগো ট্যাকপিয়সা যা আছে লইয়া যান, খালি আমাগো মাইয়াগুলিরে। মাফ করেন।’

আমি বলি, ‘জিহাদিরা ধর্ষণ করবে না, জেনা করা হারাম, তারা বিছমিল্লা বলে একটু ছহবত করবে, তাতে গুনাহ হবে না।’

তারা কাঁদতেও ভুলে যায়, পায়ে পড়তেও ভুলে যায়। তারা তাদের টাকা পয়সা সোনারুপো এনে জড়ো করে আমাদের সামনে, জিহাদিরাও খুঁজে বের করে নানা বিস্ময়কর স্থান থেকে। মালাউনগুলো জিনিশপত্ৰ লুকোতেও দক্ষ, তাই আমরা হই দক্ষতার; হয়তো ওরা মেয়েদের নরম ফাঁকে ফাঁকে আর নিজেদের পাছায়ও জিনিশপত্র লুকিয়ে রেখেছে। তাই প্রতিটি গর্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

আমি তাজ্জব হই জিহাদিদের পিস্তলের শক্তি দেখে।

তারা একের পর এক পিস্তল চালাতে থাকে।

বাপমায়ের সামনেই, কেউ কেউ মেয়ের পর মাকে, মায়ের পর মেয়েকে পরখ করে; আমরা কোনো তাণ্ডব করি না, আমার জিহাদিরা পাড়ায় পাড়ায় ঠাণ্ডাক্স আগুনের মতো জ্বলতে থাকে, ঠাণ্ডা আগুনের মতো আর কোনো আগুন নেই, ওই আগুন ছাই করে, কিন্তু পোড়ে না, তার শিখা দেখা যায় না। পাড়ায় কোনো তাণ্ডবের শব্দ ওঠে না, বরং একটু বেশি নিঃশব্দ হয়। ঠাণ্ডা আগুনে তারা জ’মে যায়, তাই নিঃশব্দ হওয়াই ছিলো স্বাভাবিক।

একটু অসুবিধা হয়ে যায় আমার দশ জিহাদিকে নিয়ে।

কিন্তু তারা জিহাদি, পাক বিজয়োৎসব করতে এসেছে, আমি বাধা দিই না; আমার ইতিহাসের নানা অধ্যায় মনে পড়ে, একে আমি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ব’লেই গণ্য করি; এবং এক্সএক্সএক্স দেখতে দেখতে ইতিহাসকে রিওয়াইন্ড ও রিপ্লে করতে আমার বেশ লাগে। আমার দশ জিহাদি ইতিহাস রিপ্লে করতে চায়, আমি বাধা দিয়ে ওদের বিজয়ের আনন্দ মাটি করতে পারি না।

ওদের দশজনেরই পছন্দ হয় দশ বছরের একটি বালিকাকে, ঠিক ছোটো এক সুচিত্রা সেনকে; ওরা একসঙ্গে তার ওপরে বাঁপিয়ে পড়তে চায়। ওরা অবশ্য সুচিত্রা সেনকে দেখে নি, দেখেছে মাধুরী দিকষিতকে, তাই একটু বেশি উত্তেজিত হয়; আমি দেখি এক বালিকা সুচিত্রাকে, বালিকাটি তরুণী সুচিত্রা সেন হ’লে ‘অগ্নিপরীক্ষা’র শেষ দৃশ্যের উত্তমের মতো আমিই জড়িয়ে ধরতাম। সুচিত্রা সেনকে বাল্যকাল থেকেই আমি পছন্দ করি, তবে তার ওপর চড়ার স্বপ্ন আমি কখনো দেখি নি, শুধু বুকে লেণ্টে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষার গ্ৰীবায় একটু ঠোঁট রাখার স্বপ্ন দেখেছি।

মেয়েটির বাবা আর মা আমার পায়ে এসে পড়ে; বলে, ‘হুজুর, দশজন জিহাদি মাইয়াডার উপুর একলগে ঝাপাই পরছে।’

আমি বলি, কীভাবে ওরা করলে আপনারা খুশি হন?’

মেয়েটির মা বলে, ‘হুজুর, আমার মাইয়াডার মাত্র দশ বছর, আর অহনও রক্ত দেহা দেয় নাই, ও নাবালিকা, হুজুর।’

আমি বলি,’ রক্তের দরকার নেই, রক্ত আমরা অনেক দেখেছি।‘

মেয়েটির মা পায়ে পড়ে বলে, ‘মাইয়াডা মইর‍্যা যাইব, হুজুর।’

আমি বলি, ‘তাহলে জিহাদিরা কীভাবে উৎসব করবো?’

মেয়েটির মা বলে, ‘হুজুর, আমার মাইয়াডা কচি, আপনেরা একজন একজন কইর‍্যা যান, একলগে যাইয়েন না, হুজুর।‘

আমি জিহাদিদের লাইন করে দাঁড় করাই, বলি, জিহাদিরা, তোমরা একজন একজন করে যাও, বেশি সময় নিও না।’

লাইনের প্রথম জিহাদি মোঃ আল জমিরুদিনের বাড়িতে দুটি বিবি আছে, সে এক প্ৰচণ্ড শক্ত পুরুষ, তার পুরুষাঙ্গ হয়তো পিস্তলের থেকেও প্ৰচণ্ড। সে নিজেই মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটি দণ্ডায়মান পুরুষাঙ্গ। তার ভাগ্য ভালো, লাইনে সে প্ৰথম, সেই প্রথম ঢোকে। ঢোকার কিছুক্ষণ পর মেয়েটির একটি চিৎকার শুনতে পাই, মনে হয় মেয়েটির ভেতরে হয়তো একটি কামান ঢুকেছে।

সে অভিজ্ঞ পুরুষ, তার বের হতে একটু সময় লাগে।

হয়তো সে সুযোগ বুঝে দুটি চান্স নেয়, কিন্তু আমি কী করতে পারি? তিনটি চান্স নিলেও আমার করার কিছু ছিলো না; জিহাদকে আমি বাধা দিতে পারি না।

তারপর একের পর এক জিহাদিরা ঢুকতে ও বেরোতে থাকে, বুঝতে পারি আগে থেকেই তারা টানটান ছিলো, ক্ষরণে সময় লাগে নি। মেয়েটির আর কোনো চিৎকার শুনি নি। মেয়েটি খুবই লক্ষ্মী।

শুধু আমার পায়ের নিচে বসে কাদছিলো মেয়েটির মা আর বাবা।

একরাতে হয় না, রাতের পর রাত আমরা ঠাণ্ডা আগুনে শীতল করতে থাকি মালাউন পাড়াগুলো।

আমার জিহাদিদের ছহবতের শক্তি আমাকে মুগ্ধ করে, অজস্র হুর কেনো দরকার। আমি রাতের পর রাত বুঝতে পারি। আমার মেইন পাটির নেতা বিখ্যাত খিলজি ছৈয়দ ছব্দর আলি বন্টু ঠাণ্ডা আগুনকে গরম আগুনে পরিণত করে, কিন্তু আমি অকাজে গরম হতে চাই না। যা চাই, তা পেলে গরম হওয়ার কী দরকার? আমার জিহাদিরা মালাউন পাড়ায়ই হুর লাভ করে, গফুরুর রাহিম এতো হুর যে জিহাদিদের জন্যে পাঠিয়েছিলেন, তা আমি ভাবতে পারি নি। মালাউনপাড়াগুলো নানা রকম হুরের পল্লী, ওগুলো হুরস্বর্গ। যারা আল্লার কাজ করে, আল্লা তাদের তৌফিক দান করেন; কিন্তু এতো তৌফিক দেবেন, ভাবি নি।

জিহাদিরা ছহবতের পর ছহবত করতে থাকে, কিন্তু একটু টু শব্দও করে না মালাউন হুরগুলো; ওরা জানে জিহাদির সঙ্গে তারা পারবে না। মাঝখান থেকে তাদের ক্ষতি হবে, মুখ দেখাতে পারবে না। এই হুরিগুলো কি সবাই পিল খেয়ে আমার জন্যে প্রস্তুত ছিলো?

টাকা পয়সা সোনারুপায় আমাদের বস্তা ভ’রে ওঠে। এটাই আসল দরকার। আমি অবাক হই হুণ্ডি করে টাকা পাঠানোর পরও ওদের ঘরে এতো টাকা? ঠিক ইহুদিদের মতো, আর কিছু ছিলো না, টাকা ছিলো।

জিহাদি মোঃ হাফিজুদ্দিন এক অপূর্ব প্রস্তাব নিয়ে আসে আমার কাছে।

সে বলে, ‘হুজুর, মালাউন ছহবতে ত গুনাহ্ নাই।’

আমি বলি, ‘না।‘

সে বলে, ‘হুজুর, আমার দিলে একটা খায়েশ আইছে।’

আমি বলি, ‘কী খায়েশ, মোঃ ফাফিজুদ্দিন?’

সে বলে, ‘আমার খায়েশ চাইর বিবির লগে একসঙ্গে ছহবত করুম।’

সে একটি ঘরে মা, দুই মেয়ে, ও এক নববধুকে পেয়েছে; তাদের ঘরে আটকে রেখে এসেছে আমার দোয়া নেয়ার জন্যে। বিজয়ের ওই অপূর্ব সময়ে বাধা দেয়া অমানবিকতা হতো, আমি বাধা দিই না।

আমি বলি, ‘তোমার খায়েশ তুমি পূর্ণ করো, খায়েশ পূর্ণ না হ’লে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তোমার এখন সুস্থ থাকা দরকার।’

তার বডিগার্ডরা তাকে পাহারা দেয়, সে একের পর এক মা, দুই মেয়ে, ও নববধুর সঙ্গে ছহবত করে–খায়েশ পূর্ণ করে, ঘণ্টা দুয়েক সময় নেয়, চারজনের জন্যে ১২০ মিনিট বেশি সময় নয়, হয়তো পরম সুখ পেয়ে সে রিপ্লে করে, যেমন এক্সএক্সএক্সের সময় করে; যখন সে বেরিয়ে আসে দেখি সে নওজোয়ান হয়ে গেছে; তবে ওই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় দেখি বাপটি ও মরদ ছেলেটি গলায় দড়ি দিয়ে আমগাছের ডালে ঝুলছে।

কেউ যদি আমগাছের ডালে ঝুলে সুখ পেতে চায়, তাহলে তার সুখে আমি বাধা দিতে পারি না; সকল প্ৰাণীর সুখে আমি বিশ্বাস করি।

পরে মা, দুই মেয়ে, ও নববধুটি আমগাছের ডালে বুলেছিলো শুনেছিলাম; তা ঝুলুক, শ্রাবণের ঝোলনে ঝোলার অভ্যাস ওদের আছে; শ্যামের সঙ্গে ঝুলে যদি ওরা পুলকিত হয়, আমি কী করতে পারি?

ছহবত আমারও দরকার, কিন্তু জিহাদিদের মতো, মোঃ হাফিজুদিনের মতো, যাকে তাকে ঘরের মেজেতে চিৎ ক’রে ফেলে দাপাদাপি করে টানাটানি ক’রে ছহবত আমাকে মানায় না।

আমার তেমন রুচিও নেই; আর আমি যদি জিহাদিদের মতো যাকে তাকে ছহবত করি, তাহলে তারা আমাকে মানবে না; আমি নেতা, নেতার মতোই আমার ছহবত করতে হবে। এতে কোনো গুনাহ নেই; আমি জামাঈ জিহাদে যোগ দেয়ার পর অনেক কিতাব পড়েছি, যুদ্ধের পর গনিমতের মাল কীভাবে ভোগ করতে হয়, তা আমি জানি।

এখন সেই মহান যুগও নেই যে মিসর বা সীতারামপুর থেকে কেউ আমাকে একটি দুটি রূপসী দাসী পাঠাবে; তাই আমার রীতিতেই আমি কাজ করি।

গোটাদশোক উৰ্বশী আমার পছন্দ হয়। শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাহেবের একটি কবিতা পড়ার পর নিহ মাতা নহ কন্যাদের জন্যে আমার স্বপ্ন জেগে উঠেছিলো; চিত্ত আত্মহারা হয়েছিলো, রক্তধারা কেঁপেছিলো, আমি তো পুরুষ।

আমি ওদের দিকে জিহাদিদের হাত বাড়াতে দিই না; এবং তাদের পিতাদের আমি একটি বিশেষ বরকত দিই। উর্বশীদের পিতা হওয়ার জন্যে বিশেষ বরকত তাদের প্রাপ্য, কৃতিত্বের জন্যে সকলেরই বরকত প্ৰাপ্য।

একেকটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি; ঠোঁট দেখি, মোটা ঠোঁট আমার পছন্দ; জিভ দেখি, মোটা ধারালো চ্যাপ্টটা খসখসে জিভা আমার পছন্দ; স্তন দেখি, মাঝারি স্তন আমার পছন্দ, পানিভরা ব্লাডারের মতো স্তন আমি সহ্য করতে পারি না; উরু দেখি, সরু মাংসল উরু, আমার পছন্দ।

আমার মনে হয় আমি মহারাজ মধ্যযুগের ক্রীতদাসীদের হাঠে গেছি, বেছে বেছে ক্রীতদাসী কিনছিং আমার অবশ্য পয়সা লাগবে না। আমি তাদের দয়াই করি: আমার মেইন পার্টির খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু বা আমার দুই নম্বর জিহাদি তা করে না, তাতে একটু গোলমাল হয়। কিন্তু গোলমাল আমাদের জন্যে গানের মতো, আমরা যে-গোলমালই করি না কেনো, সেটা গিয়ে পড়ে। আমাদের আগের মেইন পার্টির ঘাড়ের ওপর।

আমার মেইন পার্টির খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু ও তার দলের অসামান্য কৃতিত্বের উপাখ্যান এখানে আমি বলতে চাই না, সেটা খুবই দীর্ঘ ও মহৎ। জিহাদি না হয়েও যে সে ও তারা এতোটা জিহাদ করতে পারে, তাতে আমি বিস্মিত হই। সে পছন্দ করে প্রথমে গুলি করতে, তারপর আগুন লাগাতে, তারপর লুঠ করতে, তারপর ছহবত করতে; এবং তার আদর্শ অন্যান্য খিলজিরাও মেনে চলে। আগের মেইন পাটি বা মালাউনদের দালালদের শিকার করতে সে পছন্দ করে; শিকারে তারা আমাদেরও ছাড়িয়ে যায়। খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু ও অন্যান্য খিলজির কাহিনী এখন পুবেপশ্চিমে অনেকেরই জানা। তবে আমাদের লিডাররা মনে করেন, টেলিভিশনে, মঞ্চে, গলা ফাটিয়ে বলেন, ওগুলো অপপ্রচার, প্রপাগ্যান্ডা, আসলে ওগুলো আগের মেইন পার্টির শেখদেরই কাজ। আমাদের লিডাররা সত্যের সেবক।

হোসেনপুরে আগে দুর্ধর্ষ শেখ ছিলো আগের মেইন পার্টির কুদরত মোল্লা।

সে চেয়ারম্যান ছিলো, এবং সব ছিলো; আসি তার পা ধরে সালাম করতো, ইউএনও তাকে ‘স্যার’ বলতো, সে থুতু খেতে বললে ইউএনও আর অসি থুতু চাটার জন্যে কামড়াকামড়ি করতো। কিন্তু এখন কোথায় সেই কুদরত মোল্লা? কেউ চিরকাল থাকে না, এটাই ইতিহাসের কৃতঘ্নতা।

খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু প্ৰথম তার বাড়িতে আগুন লাগায়, তার গুণ্ডা ছেলে দুটির লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়, বউটাকে পুড়ে মারে, কুদরত মোল্লাকে অবশ্য পাওয়া যায় নি, কিন্তু পাওয়া যায় তার একটি কিশোরী ও একটি যুবতী মেয়েকে; তাদের সে একা ছহবত করে নি, একশো জন মিলে ছহবত করে, পরে তাদের বিলে ফেলে দেয়। একটুকু দয়া সে করেছে, বিলে ফেলে দিয়েছে; ছহবতের পর পুড়িয়েও ফেলতে পারতো।

খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টু মেইন পার্টির, ব্যাটা একটু গাধাও, কোনো ট্যাক্ট জানে না; একদিন বুঝতে পারবে ট্যাক্ট ছাড়া কাজ করলে কী ফল পেতে হয়। আমি ট্যাক্ট শিখেছি ইতিহাস থেকে, ও শেখে নি।

আমার কষ্ট হয় খিলজি ছৈয়দ মোঃ ছব্দর আলি বন্টুর জন্যে; ও হয়তো একদিন অন্য কোনো খিলজির হাতেই শেষ হয়ে যাবে; ও অন্য খিলজিদের কিছু দেয় না, ও জানে না। শুধু যোনিতে পেট ভরে না, টাকাও লাগে। টাকাগুলো সবই ছব্দর আলি ঘরে তুলছিলো, আর তার খিলজিরা ধাতু খরচ করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলো; টাকা ছাড়া যে ধাতু উৎপন্ন হয় না, এটা সে বুঝতে পারে নি; সে ধর্মের কোনো বই পড়ে নি:–শুনেছি। এর মাঝেই তার একটি চোখ ওপড়ানো হয়ে গেছে, খিলজিরাই উপড়িয়েছে, যদিও নাম দেয়া হচ্ছে শেখদের।

আমার পছন্দের উর্বশীরা কুমারী।

আসলে তারা সেই কাজ করেছে কি না জানি না, মালাউনগুলো কি না করে পারে? এটাই তো ওদের প্ৰিয় খেলা। তবে বিয়ে হয় নি, আর সতীচ্ছদের ও বিছানায় রক্তপাতের প্রতিও আমার মোহ নেই; আমি তো সতীচ্ছদ ভাতে মেখে খাবো না, আর অনেক রক্ত আমি দেখেছি, একটুখানি পর্দা ছেড়া রক্ত দেখার জন্যে আমার কোনো সাধ নেই। দেহখানি, স্তনগুচ্ছ, আর মুখখানি সুন্দর হ’লেই হয়, আমি যোনি নিয়ে সতীচ্ছদ নিয়ে মাথা ঘামাই না; আমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলার অজস্র কর্মকাণ্ড রয়েছে।

তাদের পিতারা মাথা নিচু ক’রে থাকে, এটা অভিনব কিছু নয়। নিচু মাথাই আমি পছন্দ করি, এতে আমি আমার মহিমা পরিমাপ করতে পারি। নিজের সামনে অন্যের নিচু মাথা দেখলে আমার মাথাটি আকাশে ঠেকে।

পিতাদের বলি, ‘আপনাদের জানমাল আমার হেফাজতে, আপনাদের একটুও ক্ষতি কেউ করতে পারবে না, আপনাদের টাকা পয়সাও নেবো না।’

তারা এসে পায়ে পড়ে, বলে, ‘হুজুর।’

আমি একেকজনের জন্যে একেকটি দিন ঠিক ক’রে দিই।

কমলাকলি, মৃণাল, মাধুরীলতা, দ্ৰৌপদী, সুবৰ্ণলেখা, রাজলক্ষ্মী, মায়ারাণী, চম্পাবতী, মঞ্জরাণী ধরনের নাম তাদের; তাদের দেখার সময়ই আমি সুগন্ধ পাই, তারা জিনিশ খুবই ভালো, সোভানাল্লা। মঞ্জরাণীটা আবার এমএ পাশ, শুনেছি চাকুরির নামে শহরে খানকিগিরি করে, চাকুরিও করে, এতে আমি দোষ দেখি না একটু বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা সবারই থাকা দরকার; একটা এমএ পাশ জিনিশ চাখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের, ওইটিকেই আমি প্ৰথম অপয়েন্টমেন্ট দিই। কিন্তু দেখি পাশ হ’লেই জিনিশ ভালো হয় না।

পিতাদের বলি, ফজরের আগেই একেকজনকে আমার গোলাপ-ই-সাহারায়, পৌঁছে দিতে হবে, কেউ জানবে না। সম্ভবত আরব্যরজনীর অমর কাহিনী আমার মাথায় তখন কাজ করছিলো, তবে ফজরে গর্দান নেয়ার বা রাতে শাহেরজাদির গল্প শোনার কোনা ইচ্ছে আমার ছিলো না; কাজ না করে রাতভর যে গল্প শোনে সে অবশ্যই সন্ট্রপিড, আর এটা গল্প শোনার যুগ নয়, আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময় বাদশারা গল্প শুনতো, এখন গল্প সৃষ্টি করে, ভিডিওতে তা অক্ষয় ক’রে রাখে; আমি অবশ্য পর্নোভিনেতা হতে চাই না।

উর্বশীদের পিতা হওয়ার জন্যে তারা আমার কাছে থেকে বিশেষ সুবিধা পায়, দু-একটি গ্রাম তাদের আমি দান করতে পারি না, তবে তাদের টাকা পয়সা নিই না, বাড়িঘর জমি দখল করি না; এটা তাদের প্রাপ্য; এজন্যে তাদের আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা।

তবে ইহুদি ও মালাউনরা কবে কৃতজ্ঞ থেকেছে, ওরা মোনাফেক।

ওই মালাউন উর্বশীগুলো আমাকে অপছন্দ করে নি।

আমি তাদের সুখ দিয়েছি, জিহাদিদের মতো আমি পুরোপুরি বর্বর বেদুয়িন হয়ে উঠতে পারি নি, তারাও আমাকে সুখ দিয়েছে; তাদের ঘরবাড়িগুলো আমি বঁচিয়েছি। ঘরবাড়ি বড়ো, না দেহের একটু ছোট্ট জায়গা বড়ো? আমি অবশ্য একটু ছোটো জমিতে, এককাঠা জমিতে, চাষ করতে পছন্দ করি না। আমি চাষ করি। সারা দেহজমি ভ’রে, এটা তারা পছন্দ করে, সোভানাল্লা। ছেলেবেলায় দেখেছি বাবা যখন জমি চাষ করাতো, একবারেই পুরো জমি চাষ করাতো; আমারও সেটা ভালো লাগতো, একপাশ চাষ ক’রে বাকিটা ফেলে রাখা বাবা সহ্য করতে পারতো না, আমিও পারতাম না।

আমার একটি প্রিয় অভ্যাস হচ্ছে ছহবতের পর তাদের কিছু উপহার দেয়া।

আমার মধ্যে একটি আরব্যরজনীর হারুনর রশিদ বাস করে।

যদি এখন সোনার দিনার আশরাফির চল থাকতো, তাহলে আমি ছহবতের পর তাদের অমৃতনির্ঝর সোনার খনিতে কয়েকটি দিনার আশরফি ঢুকিয়ে দিতাম উপহার হিশেবে, যাতে আমাকে তারা চিরকাল মনে রাখে; স্তনে দুটি স্বর্ণমুদ্রা গেঁথে দিতাম, যাতে ওখানে আমি চিরকাল থাকি। এখন যা চলে, তা ঢোকানো যায় না; তাই আমি তাদের কয়েক হাজার করে দিই, তারা খুশি হয়।

ওরা অনেকেই এক সঙ্গে কয়েক হাজার দেখে নি।

আমি কিছু সোনার হার, আংটি, লকেটও কিনে রেখেছি; যারা আমাকে বেশি সুখ দেয়, বেহশতের স্বাদ দেয়ম তাদের খনিতে আমি ধীরেধীরে দামি সোনার হার, আংটি, লকেট ঢুকিয়ে দিই, ফ্র্যাংক হ্যারিস নামে এক অতিশয় মহাপুরুষের অকপট আত্মজীবনী পড়ে আমি এটি শিখেছিলাম, তাদের টেনে বের করতে বলি; তারা টেনে বের ক’রে সুখে তা গলায় আঙুলে পরে।

তাই আমি ঠিক ধর্ষণ, বলাৎকার, বা জেনা করি না, পেয়ার করি, প্ৰেম করি; যেমন দিল্লির বাদশারা, বাগদাতের সুলতানরা, তুরস্কের সুলতানরা করতো; হয়তো তাদের থেকে একটু বেশি রাজকীয়ভাবেই করি, যদিও আমার রাজত্ব ও দিনার নেই, কিন্তু আমি প্ৰেমকলা শিখেছি। বাৎস্যায়নের থেকেও ভালো। আমার সঙ্গে যারাই ঘুমিয়েছে, আমার সাম্যবাদ সর্বাহারার যুগের পর, তারা সবাই তা স্বীকার করেছে, আবার আসতে চেয়েছে।

বিজয়ের পর আমাদেরও উৎসব আছে, প্ৰাপ্য আছে।

আমাদের প্রাপ্য উর্বশী, রম্ভা, আর উর্বশী-রুম্ভার থেকেও যা সুন্দরী ও সেক্সি ও সেক্সাইটিং, মেরেলিন ও সুচিত্রার সংমিশ্রণ, সেই অজর অমর টাকা, যাতে খোজাও দিনরাত রতিতে মত্ত থাকতে পারে, খোজারও সর্বাঙ্গে অজস্র দৃঢ় শিশ্ন বিকশিত হয়, সেই চিরকামবেদনময়ী, অনন্তযৌবনা, কামদেবী, যার আছে অজস্র পীনোন্নত স্তন ও মধুময় যোনি, ও প্রশস্ত নিতম্ব–টাকা, সোনারুপো, যা ৭০ বিলিয়ন ছওয়াবের থেকেও আকর্ষণীয়; একদিন পাবো বাড়িঘর, যাতে আমরা পবিত্ৰ গাৰ্হস্থ্য জীবন যাপন করবো, ধর্মকর্ম করবো, মক্কা-মনোয়ারায় যাবো। টাকার মতো শাহেরজাদি আর হয় না; সে সহস্র একরােত নয়, লক্ষ লক্ষ দিনরাত ভরে চাঞ্চল্যকর গল্প বলে; তার গল্প চলে ঢাকা থেকে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, মুম্বাই, সোনারগাঁও, শেরাটনে।

ঠাণ্ডা আগুন এখনো আমরা থামিয়ে দিই নি, ঠাণ্ডা আগুনের থেকে গরম আগুন আর নেই; এর মাঝে ওরা অনেকেই ওদের আপনি দেশে চলে গেছে, কিন্তু ঠাণ্ডা আগুনে পোড়া দাগ কোনো দিন। সারবে না।

আমার মদিনাতুন্নবি এলাকার অনেককেই খবর দেয়া হয়েছে।

কাশিনাথপুরের শ্ৰীধর দাস এসেছিলো পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে। এক সময় এই টাকা পেলে আমি পাগল হয়ে যেতাম, মজনু হয়ে যেতাম, এখন এগুলোকে মনে হয় ভিক্ষুকের ভাঙা থালের ওপর পড়ে থাকা কয়েকটি কানা পয়সা। তার ওপর থুতু ছিটোতে ইচ্ছে করে, ছিটাই।

শ্রীধর বলেছিলো, ‘এই ট্যাকাডা নেন, হুজুর, আমার মায়াডারে নষ্ট কইরেন না, আমার মাইয়াডা ফুলের মতন।’

এটা বেশ অদ্ভুত, মালাউনরা সবাই তাদের মেয়েদের ফুলের সঙ্গে তুলনা করে। ব্যাটারা ধর্ম ও বিজ্ঞান কিছুই জানে না; ফুল যে গাছের যোনি ও শিশ্ন, এটা ওরা জানে না; আমি জানি; তাই ফুলই তো আমি পছন্দ করি। আমি ওকে এসব বোঝাতে যাই নি, কোনো দরকার নেই; আমার যা দরকার, তা পেলেই আমি তৃপ্ত:–কয়েকটি সুন্দর সুগন্ধি রঙিন তীব্ৰ পুষ্প।

আমি বলেছিলাম, ‘দ্যাখ, ফুলই তা আমি পছন্দ করি, ফুলের সুগন্ধ নেয়ার কথা আমাদের ধর্মে আছে, তোমাদের মালাউন কবিই তা অনুবাদ করেছে–যদি জোটে দুইটি পয়সা ফুল কিনো হে অনুরাগী।’

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘আমার মাইয়াডারে আপনে নষ্ট কইরেন না, হুজুর, ট্যাকাডা নেন, আমারে বাঁচান।‘

আমি বলেছি, ‘একরােত থাকলে সে নষ্ট হবে না, ফুল আমি নষ্ট করি না, ফুলের সুগন্ধ নিই, আর মালাউন ফুল আমার পছন্দ, তোমাকে কথা দিচ্ছি। কেউ জানবে না, তোমার মেয়েটা নষ্ট হবে না, পরে হয়তো সেই আমার কাছে বারবার আসতে চাইবে, নইলে সবাই জানবে, তোমার মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে।‘

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘তাইলে আর পঞ্চাশ হাজার দেই হুজুর, মাইয়াডারে ক্ষেমা কইর‍্যা দ্যান, অরে ইন্ডিয়া পাডাই দিমুনে।’

আমি বলেছি, ‘তিন লাখ, আর এক রাত লাগবে শ্ৰীধর, তোমার মেয়েকে আমি ধর্ম শিখাবো, বিছমিল্লা ব’লে ছহবত করবো, কোনো ক্ষতি হবে না, চাইলে তোমার মেয়েটাকে মুছলমানও বানিয়ে দিতে পারি; কালই লাগবে, নইলে মেয়েটাকে তুমি বিলে পাবে, তখন আমি একলা করবো না। আর তুমি কি মনে করো ইন্ডিয়ায় আমার থেকে ভালো পুষ্পানুরাগী আছে?’

শ্ৰীধর বলেছিলো, ‘হুজুর, আপনের পায়ে পড়ি।’

কিন্তু শ্ৰীধর ও তার মেয়ে দুৰ্গা আত্মহত্যা করে আমার বেশ ক্ষতি করে, আর থানার অসি আর দারোগাগুলোর উপকার করে যায়।

ওই বাঞ্চতের পুত্রের আর তার পাছাভারি চিকন কোমরের মেয়েটির বিষ ওয়ার কি দরকার ছিলো; বিষ কি আমার খৎনাকরা হুজুরের থেকে উত্তম? মালাউনদের বিশ্বাস করা অসম্ভব, আর করবো না। দুর্গার ওপর অসিটারও চোখ পড়েছিলো, কয়েকবার শ্ৰীধরের বাড়িতেও গেছে; কিন্তু তার গোটা পাঁচেক চাকরানি আছে, আর সপ্তাহে সপ্তাহে নতুন নতুন চাকরানি আসে, সে কচি মেয়েদের থেকে কচি টাকার ওপর চড়তেই বেশি পছন্দ করে; তার কোনো ক্ষতি হয় নি, লাখ দুয়েক সে আদায় ক’রে নিয়েছে, ক্ষতি হয়েছে আমার।

তাই অসিটিকে একটু দেখিয়ে দিতে হয়েছে, জামাঈ জিহাদে ইছলামের হুজুরকে ছেড়ে সে কীভাবে দু-লাখ হজম করে? এখন সে আমার পিছে পিছে ঘুরছে, চাকুরটিও নেই; পঞ্চাশ লাখ ছাড়া ওর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x