লোহার গেটে কোন প্রতিরোধ নেই, ঠেলতেই খুলে গেল। অর্ক দেখল সমস্ত দরজা, জানলা বন্ধ, কোন মানুষের অস্তিত্ব নেই। একফালি জমিতে প্রচুর ফুলের গাছ, বেশীর ভাগই গাঁদা কিন্তু তাতেই মৌমাছিরা শব্দ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংকুচিত পায়ে সে বাগানটা পেরিয়ে বারান্দায় উঠে এল। ওদিকে আর একটা পুরোনো বাড়ি কিন্তু তার চেহারা খুবই সঙ্গীন।

অর্ক পেছন ফিরে তাকাল। রিকশাঅলারা রিকশা ঘুরিয়ে নিচ্ছে। বাড়ির দরজা অবধি ওগুলো। আসতে পারে না রাস্তাটার জন্যে। অনিমেষ এবার এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে, ওর পেছনে মাধবীলতা। অর্ক ঘুরে দরজার কড়া নাড়ল। শব্দটা মিলিয়ে গেল কিন্তু কোন সাড়া এল না। দ্বিতীয়বার একটু জোরেই আওয়াজ করল সে। কিন্তু সেটাতেও অবস্থার কোন তারতম্য হল না।

অর্কর মনে হল এই বাড়িতে কোন মানুষ নেই। ততক্ষণে অনিমেষরা গেটের সামনে এসে। দাঁড়িয়েছে। জিনিসপত্র বারান্দাতেই রেখে অর্ক এগিয়ে এল তাদের কাছে, কেউ সাড়া দিচ্ছে না।– অনিমেষ তখন বাড়িটার দিকে নিষ্পলক তাকিয়েছিল। প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠল, ঊ! ও, বোধহয় এদিকে কেউ নেই। তুই এক কাজ কর। ওই যে ছোট বাড়িটা দেখছিস ওর গা ঘেঁষে একটা ছোট্ট পথ আছে। ওখানে গিয়ে ডাক।

মাধবীলতা চাপা গলায় বলল, প্রত্যেককে প্রণাম করবি।

অর্ক হাসল। তারপর এগিয়ে গেল ছোট বাড়িটার দিকে। এদিকটায় বোধহয় কেউ আসা যাওয়া করে না। আগাছায় পথ ঢেকে গেছে। বাড়িটার এদিকে তারের নিচু বেড়া তারপর নানান গাছের ভিড়। অর্ক খানিকটা যাওয়ার পর সরু পথটার শেষে একটা টিনের দরজা দেখতে পেল। সেটাতে আওয়াজ করতে গিয়ে মনে হল ঠেললেই খুলে যাবে। হয়তো ভেতর থেকে শেকল ঠিক মতন দেওয়া ছিল না তাই অর্ক সহজেই উঠোনটায় চলে এল। এক চিলতে বারান্দা তারপর অনেকটা খোলা জমি। সেই জমিতে ইতস্তত কিছু গাছ আর টাঙানো তারে কাপড় শুকোছে। অর্ক একটু দাঁড়াল। ওপাশে বড় বাড়িটার লম্বা বারান্দা দেখা যাচ্ছে কিন্তু কাউকেই চোখে পড়ল না। কাপড় যখন শুকোচ্ছে তখন নিশ্চয়ই মানুষ আছে। সে একটু গলা তুলে জিজ্ঞাসা করল, কেউ আছেন!

সঙ্গে সঙ্গে খনখনে গলায় তীব্র চিৎকার ভেসে এল, কে? বাড়ির মধ্যে কে? কথা নেই বার্তা নেই হট করে চলে এসেছে। কে ওখানে?

গলার স্বরে অর্ক সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আমি কড়া নেড়েছিলাম।

কড়া নেড়েছিলাম! কি মিথ্যে কথা রে বাবা। কড়া নাড়ল আর আমরা কেউ শুনতে পেলাম না! কানের মাথা খেয়েছি নাকি সবাই। তা কি চাই? কথা বলতে বলতে তিনি ছোট ঘরের অন্ধকার ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন বাইরে। বারান্দায় আসতেই অর্ক দেখল ছোট্ট রোগা শরীর, গায়ে একটা ধুতি জড়ানো, সমস্ত মুখে বার্ধক্যের ভাঁজ, সাদা কালোয় মেশানো এক গুছি চুল এবং দাঁতহীন চুপসানো গালের এক বুড়ি পিট পিট করে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর তার পরেই যে ঘটনাটা ঘটল তার জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিল না অর্ক। হঠাৎ বৃদ্ধা চিৎকার করে উঠলেন। ওইটুকুনি। শরীর থেকে অদ্ভুত একটা আওয়াজ বের হল যা কোনদিন কোন মানুষের গলায় শোনেনি অর্ক। তারপর প্রায় দৌড়ে চলে এলেন বৃদ্ধা, এসে দুহাতে অর্ককে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন, অ্যাদ্দিন কোথায় ছিলি? এত পাষাণ কেন তুই? ও অনিবাবা, আমাকে একদম ভুলে গেলি? আমি যে তোর কথা রোজ ভাবি আর কেঁদে মরি। তুই কী, তুই কী? কান্নার সঙ্গে জড়ানো শব্দগুলো উচ্চারণ করছেন আর অর্কর বুকে মাথা ঠুকছেন। অর্ক এত বিহ্বল হয়ে পড়েছিল যে প্রথমে কোন কথা বলতে পারল না। সে হঠাৎ আবিষ্কার করল তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। একজনের কান্না যেন তার বুকের মধ্যে জোর করে ঢুকে পড়ছে। বৃদ্ধার মাথা তার বুকের অনেক নিচে কিন্তু সেই অবস্থায় তিনি দুহাত বাড়িয়ে ওর মুখ স্পর্শ করলেন, অনিবাবা, তুই শেষ পর্যন্ত ফিরে এলি? আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি, একদিন আসতে হবেই। তারপরেই যেন সম্বিত ফিরে পেয়ে বুক ফাটিয়ে চিৎকার করলেন, ও ছোট বউ, ও ছোট বউ, এদিকে এস, কে এসেছে দেখবে এস।

ঠিক তখনই খুব কাছ থেকে একটি স্বর ভেসে এল, তুমি কে?

অর্ক দেখল বড় বাড়ির বারান্দায় একজন মাঝবয়সী মহিলা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার মুখ। শক্ত, চোখ যেন পরীক্ষা করছে। প্রশ্নটা তিনিই করলেন।

বৃদ্ধা হেসে কেঁদে একসা হলেন, ওমা, একে চিনতে পারছ না। হায় কপাল! এ যে অনি, অনি এসেছে। আমি বলেছিলাম টেলিগ্রাম পেয়েই ছুটে আসবে, দ্যাখো, তাই হল কিনা দ্যাখো।

মহিলা বললেন, না। এ অনিমেষ নয়। আপনি খেয়ালই করছেন না ওর বয়স কত। আপনি সব ভুলে গেছেন। ওর চেহারায় অনিমেষের শুধু একটু আদল আছে। তুমি কি? প্রশ্নটা করতে গিয়ে থেমে গেলেন উনি।

বৃদ্ধার হাত তখনও অর্ককে জড়িয়ে, সেই অবস্থায় বিস্ময়ে তিনি তাকালেন। অর্ক বুঝতে পারছিল ওঁর হাতদুটো একটু একটু করে শিথিল হয়ে যাচ্ছে। অর্ক এবার নিচু হয়ে বৃদ্ধাকে প্রণাম করে মহিলার দিকে এগিয়ে গেল প্রণাম করতে। মহিলা বোধহয় দ্বিধায় ছিলেন প্রণাম গ্রহণ করবেন কিনা কিন্তু তার আগেই অর্ক সেটা সেরে বলল, আমার নাম অর্ক। আমরা এইমাত্র কলকাতা থেকে আসছি। বাবা মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। ওদিকে কড়া নেড়ে সাড়া না পেয়ে আমি এদিক দিয়ে ঢুকেছিলাম।

এবার মহিলার গলার স্বর পাল্টে গেল। কেমন যেন বিস্ময় আর অবিশ্বাস মিশে গেল তাতে, তুমি, তুমি অনিমেষের ছেলে? এত বড়!

বৃদ্ধাও যেন হতভম্ব, কি বলল? ও অনির ছেলে?

মহিলা মাথা নাড়লেন, তাই তো বলছে। তিনি খুঁটিয়ে অর্ককে দেখছিলেন। বৃদ্ধা তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলেন অর্কর সামনে। তারপর পেছনে মাথা হেলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, প্রিয় তো সেরকমই বলল। কিন্তু আমার চোখের মাথা গেছে ছোট বউ, আমি কেন অনি বলে ভুল করলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই মনে হল উঠোনে অনিবাবা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এতবড় ছেলে কখন হল?

প্রশ্নটা শুনে অর্ক হেসে ফেলল তারপর বলল, বাবা মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

এবার একটা পরিবর্তন চোখে পড়ত অর্কর। তার কথা শুনেই দুজনে যেন কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেলেন। এদের একজন যে বাবার পিসীমা এবং অন্যজন যে ছোটমা তা সে বুঝতে পেরেছে। এর মধ্যেই বৃদ্ধাকে তার খুব ভাল লাগছিল, এই প্রথম কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা ঠুকেছে। সেই তুলনায় ছোটমা একটু গম্ভীর, একটু আলাদা আলাদা। কিন্তু তার কথা শোনামাত্র দুজনে কেমন হয়ে গেল কেন?

মহিলা নড়লেন, তারপর ভেতরের দিকে পা বাড়াতে যেতেই বৃদ্ধা তাকে ডাকলেন, ছোট বউ, আমি কি বলেছিলাম মনে নেই?

ও! ছোট বউর মনে পড়ে যাওয়াটা বোঝা গেল। তারপর বললেন, এখন আর ওসবের কি দরকার?

তোমার যদি ইচ্ছে না হয় তাহলে থাক। আজ বাবা বেঁচে থাকলে।

ঠিক আছে, আপনার কথাই হবে, আসুন।

বড় বাড়ির একটা ভেজানো দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলেন মহিলা। বৃদ্ধা তাঁর ছোট শরীর নিয়ে তাঁকে দ্রুত অনুসরণ করলেন। অর্ক ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল না। ওরা যেন ইশারায় কিছু বললেন। সে বড় বাড়ির বারান্দায় উঠে এল। এবং তখনই মহিলার চাপা গলা শুনতে পেল, এখনি ওঁকে কিছু না বলা ভাল।

কাকে? মহীকে? বৃদ্ধার গলা স্বাভাবিকভাবেই উঁচু, বাঃ, ছেলে আসছে এতদিন পরে বউ নিয়ে, মহীকে বলবে না?

বলব। আমি আগে বলব। এখন ওঁর উত্তেজিত হওয়া ঠিক হবে না।

অ। তুমি শাঁখটা নাও, প্রদীপ জ্বেলে দাও, পান সুপুরি আবার কোথায় গেল, হাতের কাছে সব রেখেছিলাম। বৃদ্ধার নিজের মনে বলে যাওয়া কথা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অর্ক স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল। এদিকটা অনেকখানি জমি! এই বাড়ি এই জমি বাগান সব তার ঠাকুদার! অর্কর বুকের ভেতরটা কেমন করছিল। তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনের ছবিটা এখানে এসে কি বীভৎস লাগছে। কিন্তু বাবার পিসীমা প্রথমে তাকে জড়িয়ে ধরে যেরকম করেছিলেন ওই মহিলা আসার পর সেটা যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে এরা দুজন অপরিচিত মানুষের মত ব্যবহার করছে এখন। অবশ্য সে নিজেও তো ওঁদের সঙ্গে তার বেশী কিছু করতে পারেনি। হঠাৎ অর্কর মনে হল মিষ্টির প্যাকেটটা বাইরের বারান্দায় না রেখে সঙ্গে নিয়ে এলে হতো। আর এই সময় অদ্ভুত সুরে একটি পাখি সামনের আমগাছে বসে ডেকে উঠল, ডাকতেই থাকল। তাতে, তিত আর তখনই শঙ্খ বেজে উঠল। অর্ক চমকে তাকাল দরজাটার দিকে। তারপর শব্দটা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই বৃদ্ধা একটা কুলো এবং ডালায় অনেক কিছু সাজিয়ে পায়ে পায়ে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন, পেছনে মহিলা, হাতে শঙ্খ। ওরা অর্কর দিকে না তাকিয়ে বারান্দার শেষপ্রান্তে চলে গেলেন। তারপর ডানহাতি একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন। অর্ক এবার অনুমানে কিছু বুঝতে পারল। সে দৌড়ে ওঁদের পেছনে চলে এল। একটা ছোট ঘর পেরিয়ে আর একটা বড় ঘরের মধ্যে ঢুকে বন্ধ দরজার সামনে বৃদ্ধা তাঁর হাতের জিনিসগুলো সাবধানে নামিয়ে রেখে মহিলাকে ইশারা করলেন। মহিলা ইঙ্গিতে দরজাটা খুলতে বলতেই বৃদ্ধা চট করে খিল নামিয়ে দিয়ে অনেক দূরে সরে এলেন, ঠিক অর্কর সামনে। তারপর নিজের মনেই বললেন, শুভকাজে বিধবার থাকতে নেই। শাঁখ বাজাও তারপর বরণ করো।

এক হাতে শাঁখ বাজাতে বাজাতে অন্য হাতে দরজার পাল্লা খুললেন মহিলা। বন্ধ ঘরে শাঁখের আওয়াজ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। আর তখনি অর্কর কানে একটা গোঙানি ভেসে এল। কেউ যেন প্রাণপণে কিছু বলতে চেষ্টা করছে কোথাও। বৃদ্ধা অর্কর দিকে মুখ ফিরিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন, মহী, কথা বলতে পারে না। শব্দ হচ্ছে বলে এরকম করছে।

দরজা খুলে যেতে ঘরে দাঁড়িয়ে অর্ক বারান্দাটা দেখতে পেল। তাদের জিনিসপত্র মিষ্টির প্যাকেট এবং একটা ক্রাচ চোখে পড়ল। মহিলা শাঁখ বাজাতে বাজাতে দু’পা এগিয়ে গিয়ে থেমে গেলেন। অর্ক দেখল পাথরের মত মনে হচ্ছে তাঁর মুখ। শঙ্খ নেমে এল নিচে, তারপর অন্যহাতে মুখ চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি শব্দ করে। বৃদ্ধা বাইরের কিছুই বোধহয় দেখতে পাননি, মহিলার কান্নায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বললেন, আঃ, পরে কেঁদো। বরণের সময় কান্নাকাটি কেন? বরণ কর বরণ কর! শাঁখ নিচে নামানো হল এবং বোধহয় বৃদ্ধার কথায় শক্তি খুঁজে পেলেন মহিলা। বরণডালা তুলে নিয়ে পায়ে পায়ে বেরিয়ে গেলেন। আর তখনই ওরা অনিমেষের গলা শুনতে পেল, এখন এসবের কি দরকার ছিল? বাবা কেমন আছে??

আছে। এসো তোমরা। মহিলার গলা শুনতে পেল, আহা থাক।

অনিমেষ বলল, আমি প্রণাম করতে পারি না।

এসো, ভেতরে এসো।

মহিলা বরণডালা নিয়ে শাঁখ তুলে ঘরের মধ্যে ফিরে আসতেই বৃদ্ধা চট করে সরে গেলেন ওপাশে। সেখানে একটা খাটের ওপর পা ঝুলিয়ে বসলেন। বারান্দায় ক্রাচের শব্দ হল। তারপরেই দরজায় অনিমেষ। সরাসরি বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে অনুযোগের ভঙ্গীতে বলল, উঃ, অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলে।

সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধার মুখ কুঁচকে গেল। ছোট চোখে তিনি অনিমেষকে দেখলেন। তারপর ইশারায় মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে?

অর্কর হাসি পাচ্ছিল। বুড়ি ভাল করেই জানে তার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে। তবু এমন ভঙ্গী করছে। ততক্ষণে মাধবীলতা এগিয়ে গেছে। অনিমেষের পাশ কাটিয়ে ঝুঁকে হেমলতাকে প্রণাম করল। হেমলতা তার মাথায় হাত রাখলেন, রেগে বিড় বিড় করে কিছু বললেন নিজের মনে এবং সেটা করতে করতেই তাঁর শরীর কাঁপতে লাগল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার সামনে তাকালেন, তুমি অনিমেষ?

হ্যাঁ। অনিমেষ অবাক হল, কেন, তুমি চিনতে পারছ না?

নীরবে মাথা নাড়লেন হেমলতা। তারপর ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললেন, সত্যি এ অনিমেষ? সত্যি?

ছোট বউ তখন একদৃষ্টিতে অনিমেষের পায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। শেষে ঘাড় নেড়ে বললেন, দাঁড়িয়ে কেন, বসো।

একটা বেতের চেয়ার এগিয়ে দিলেন তিনি। অনিমেষের সত্যি কষ্ট হচ্ছিল দাঁড়াতে। বসতে পেরে বেঁচে গেল। সে লক্ষ্য করছিল পিসীমাকে প্রণাম করার পর মাধবীলতা কেমন সিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন পর্যন্ত কেউ তার সঙ্গে কথা বলেনি। সে-তুলনায় অর্ককে খুব স্বাভাবিক লাগছে। তার মনে পড়ল তখন বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেও সে ছোটমার কাছ থেকে কোন উত্তর পায়নি। তাছাড়া এত বছর পরে এখানে এসে নিজেকেই কেমন অপরিচিত ঠেকছে, এই মানুষগুলোর সঙ্গে যেন অনেক যোজন দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে। তবু আবহাওয়া সহজ করার জন্যে সে সক্রিয় হল, কি আশ্চর্য! আমি কি বদলে গিয়েছি পিসীমা?

হেমলতা নীরবে মাথা নাড়লেন, হাঁ।

আর তখনি পাশের ঘরে আবার গোঙানি শুরু হল। সেই জান্তব শব্দে অনেক কষ্ট মেশান। অনিমেষ চমকে উঠল, কে?

ছোটমা বললেন, তোমার বাবা।

বাবা? বাবা কথা বলতে পারেন না?

না।

অনিমেষ উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু ছোটমা বাধা দিলেন, না, এখনই যেও না। তোমাকে দেখলে উত্তেজিত হয়ে পড়বেন। মনে হচ্ছে আঁচ করেছেন কিছু। আমি বললে তবে যেও। তারপর একটু থেমে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি একেবারেই হাঁটতে পারো না?

অনিমেষ মাথা নাড়ল, এ’দুটো ছাড়া পারি না।

এবার হেমলতা খাট থেকে নেমে এলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, ছোট, ওদের হাতমুখ ধুয়ে নিতে বল, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। বলে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন পাশের দরজা দিয়ে।

ছোটমা এবার মাধবীলতার দিকে তাকালেন, তুমি আমার কাছে এস।

মাধবীলতার মাথা মাটির দিকে, কপালের প্রান্ত পর্যন্ত ঘোমটা। এরকম পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়া সত্যি কষ্টকর কিন্তু তার কোন অন্য উপায় ছিল না।

ছোটমা মাধবীলতার হাত ধরলেন, এতদিন আসোনি কেন?

মাধবীলতা মুখ তুলে একবার দেখল। সে বুঝতে পারছিল হঠাৎ তার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকায় একটা কাঁপন শুরু হয়েছে। ছোটমা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি চাকরি কর?

নিঃশব্দে হ্যাঁ বলল মাধবীলতা।

তুমি ওকে স্বার্থপরের মত আগলে রেখেছিলে কেন? কেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দাওনি? শুনেছি তুমি একটা বস্তির ঘরের অন্ধকারে ওদের নিয়ে থাকো। তোমার কেন মনে হল আমরা জানতে পারলে ওকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেব? এক নয় দুই নয়, এতগুলো বছর। ছোটমা চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিলেন।

মাধবীলতার শরীরে যে কাঁপুনি জন্মেছিল সেটা আচমকা থেমে গেল। কিছুটা বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল ওর মুখ, কি বলবে বোধহয় স্থির করতে পারছিল না। সে অসহায় চোখে অনিমেষের দিকে তাকাল। ছোটমার মুখে এই সব কথা শুনে অনিমেষ বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। মাধবীলতার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই অনিমেষ নড়ে উঠল, এসব কি বলছ তুমি? ও আমাকে কেন আটকে রাখবে? আমি কি বাচ্চা ছেলে? এরকম কথা তোমাদের মাথায় কে ঢুকিয়েছে জানি না তবে মিছিমিছি ওকে দোষ দিচ্ছ।

ছোটমা অবিশ্বাসী চোখে অনিমেষকে দেখলেন। তারপর মুখ ফিরিয়ে বললেন, আমি এখানে রয়েছি, ওখানে কি হচ্ছে আমি জানব কি করে? যা কানে এল তাই বললাম। তারপর একটু দ্বিধাগ্রস্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম মাধবীলতা?

মাধবীলতা ঠোঁট কামড়ে ছিল আলতো করে, এবার ছেড়ে দিল মাথা নাড়ার সঙ্গে।

এ তো তোমাদের ছেলে! কি নাম তোমার?

অর্ক। চুপচাপ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এতক্ষণ কথা শুনছিল অর্ক।

ঠিক আছে। আমাকে এখন ওঁর কাছে যেতে হবে। তোমরা জিনিসগুলো নিয়ে এই ঘরে এসো। পাশের ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছোটমা বললেন, এই ঘরে তোমরা থাকবে। ওপাশে যে ছোট ঘরটা আছে সেখানেও থাকতে পার। এদিকের বাথরুম পায়খানায় আজ যেও না। ওপাশে উঠোন ছাড়িয়ে যেটা আছে সেটা ব্যবহার করো। তারপরেই খেয়াল হল অনিমেষের দিকে তাকিয়ে, তুমি কি একা ওসব পারো?

অনিমেষ গম্ভীর গলায় বলল, চেষ্টা করতে হবে।

ছোটমা কেমন একটা হাসি হাসলেন, অ্যাদ্দিন যদি চেষ্টা না করে থাকো আজ আর সেটা শুরু করতে হবে না। এদিকে কমোট আছে, দেখি, তোমার বাবার কি অবস্থা। আগে তো ওদিকে গিয়ে মুখ হাত পা ধোও। আমি আসছি।

ছোটমা উল্টোদিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। এই ঘরে চারটে দরজা।

অনিমেষ নীরবে মাথা নাড়ল। তারপর ক্রাচে ভর করে উঠে দাঁড়াল, চল ঘর দখল করা যাক। অর্ক, জিনিসপত্রগুলো ও-ঘরে নিয়ে চল।

দখল শব্দটা কানে যাওয়া মাত্র অবাক হয়ে তাকাল মাধবীলতা। অনিমেষের মুখের এই শব্দটা কানে কট করে লাগল। তাছাড়া একটু আগে শোনা অভিযোগগুলো এখনও ছুঁচের মত বিধছে। যদিও অনিমেষ বোঝাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু এখানকার সবাই তার সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে তা বোঝা গেল। অনিমেষ ওই ঘরে ঢুকে গেল দেখে তাকেও যেতে হল।

ঘরটি বড়। একটি বিছানা এবং তিনটি জানলা। ঘরের একপাশে আলনা আর একটি চেয়ারও আছে। অনিমেষ সেটিতে শরীর রেখে বলল, সুটকেস খাটের তলায় ঢুকিয়ে দে। ঘরটা বেশ ভাল তাই না?

অর্ক হাসল, চমৎকার। যত দেখছি তত আমাদের তিন নম্বরের কথা মনে পড়ছে। এই বাড়িতে তুমি ছিলে?

অনিমেষ মাথা নাড়ল, হুঁ। কিন্তু তখন কমোট ছিল না এ বাড়িতে।

অর্ক ওপাশের দরজা দিয়ে উঁকি মারল, বাঃ, এই ঘরটাও ভাল। আমি এখানেই থাকব বাবা।

ওখানে খাট আছে?

আছে। অর্ক ঘরটায় ঢুকে গেল।

অনিমেষ দেখল মাধবীলতা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারল এবং বলল, এই, একটু মুখ হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা করো। সারা রাত জার্নি করে এলাম আর এভাবে বসে থাকতে ভাল লাগছে না।

আমি কি করব? মাধবীলতা নিচু গলায় বলল।

এই দ্যাখো, ওসব কথায় কান দিচ্ছ কেন? প্রথম পরিচয়ে মানুষ অনেক রকম রি-অ্যাক্ট করে, ঘনিষ্ঠতা হলে সেসব আর কেউ মনে রাখে না। তাছাড়া, এই সব ভেবেই তো আমি আসতে চাইছিলাম না।

তাহলে এবার অন্তত আমিই তোমাকে ধরে নিয়েছি তা জানিয়ে দিও।

অর্ক ফিরে এল এই ঘরে, মা, দাদুর সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না কেন?

মাধবীলতা ঘাড় নাড়ল, আমি জানি না।

একবার দেখে আসব?

না। ওঁরা যা চান না তা করবি না। তুই কি ভেতরে গিয়েছিলি?

হ্যাঁ, অনেক খোলা মাঠ আছে, বাগান আছে। চল দেখবে।

মাধবীলতা অনিমেষকে বলল, আমি ভেতরের বারান্দাটা দেখে আসি।

সুটকেস থেকে একমাত্র তোয়ালেটি বের করে সে অর্ককে বলল, আয়।

মাঝের ঘর পেরিয়ে ওরা যে ঘরটায় ঢুকল তাতে জিনিসপত্র ঠাসা। অর্ক বলল, ওপাশে ঠাকুর ঘর। ছোটমা তো বাবার সৎমা, তাই না?

মাধবীলতা চাপা গলায় ধমকালো, চুপ কর।

বারান্দায় বেরিয়ে এসে মাধবীলতার চোখ জুড়িয়ে গেল। সত্যি বড় বাগান। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন কেউ যত্ন করেনি। পাখি ডাকছে অনেকগুলো, একসঙ্গে। কুয়োতলার পাশেই বাথরুমটা নজরে এল। অর্ক বলল, মা আমাকে তোয়ালেটা দাও আমি চটপট সেরে নিচ্ছি।

মাধবীলতা বলল, তুই এক বালতি জল ওই বারান্দায় নিয়ে রাখতে পারবি? তোর বাবা বোধহয় সিঁড়ি ভেঙ্গে এতটা নামতে পারবে না।

অর্ক ঘাড় নাড়ল তারপর বাথরুমে ঢুকে গেল।

মাধবীলতা চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল বাগানে। একটা শালিক রাজেন্দ্রাণীর ভঙ্গীতে হেঁটে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল। হঠাৎ মাধবীলতার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। যেন সমস্ত কলজে নিংড়ে ফেলছে কেউ। অনেক কষ্টে কান্নার ফোয়ারাটাকে সামলালো সে। খুব একা লাগছে, ভীষণ নিঃসঙ্গ। হাতের তেলোয় চোখ মুছল সে। কতদিন পরে কান্না এল, অথচ বুক খুলে কাঁদাও গেল না। সে কুয়োতলায় এসে দাঁড়াতেই বাঁ দিকের রান্নাঘর চোখে পড়ল। বড় বাড়ির তুলনায় এ নেহাতই নগণ্য। রান্নাঘরের দরজা খোলা। কয়েক পা এগোতেই কথা শুনতে পেল সে। একদম দরজার কাছেই চলে এসেছিল মাধবীলতা। ঘরের মধ্যে দুজন কথা বলছেন। একজন যে হেমলতা তা বুঝতে অসুবিধে হল না, বুঝলি, অনি ছেলেবেলায় লুচি খেতে ভালবাসতো। আমার তো ঘি নেই একটু ডালডা পড়ে আছে, তাই দিয়ে ভেজে দি। ছেলেটা এখন খেতে পায় কিনা কে জানে! চেহারা তো হয়েছে হাড়জিরজিরে। হাঁ করে তাকিয়ে দেখছিস কি? বাড়িতে বউ এল, নতুন বউ, আমাদের অনির বউ, কিন্তু কিভাবে এল? আজ যদি মাধুরী থাকত তাহলে? ডুকরে উঠলেন হেমলতা। মাধবীলতা দরজায় ততক্ষণে পাথরের মত দাঁড়িয়ে। এখান থেকে সরে যাওয়া উচিত; দুজন মানুষের নিভৃত আলাপ শোনা অবশ্যই অপরাধ। কিন্তু সে পা ফেলতে পারছে না কেন? হেমলতা সামলে নিয়েছেন, তুই বউ দেখেছিস? ধেড়ে বউ। বিরাট বড় ছেলে আছে। ছোটখাটো ছেলেমানুষ বউ হলে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া যায়। একে পোষ মানাবে কে? শিক্ষিতা মেয়ে, এম এ পাশ। প্রিয় যাওয়ার আগে বলে গেল না?

আর তখনই অর্ক বাথরুম থেকে বের হল। বেরিয়ে মাকে দেখতে পেয়ে বলল, আমি এই জামা প্যান্ট ছেড়ে ফেলছি, স্নানের সময় কেচে দেব। তোয়ালে বাথরুমে রইল। তারপর এক বালতি জল নিয়ে উঠোন পেরিয়ে বড় বাড়ির বারান্দায় রেখে ভেতরে চলে গেল।

কে? ওখানে কে দাঁড়িয়ে? রান্নাঘরের ভেতর থেকে চিৎকার করে উঠলেন হেমলতা। মাধবীলতা চমকে উঠে দ্রুত চলে যাওয়ার কথা ভেবেও পারল না। পিসীমা বুঝতেই পারবেন সে এখানে দাঁড়িয়েছিল। নিচু গলায় সে সাড়া দিল, আমি।

আমি? এদিকে এসো, দরজায় এসে দাঁড়াও। ধমকে উঠলেন হেমলতা।

পা ভারী হয়ে গেল কিন্তু আদেশ অমান্য করার উপায় নেই। দরজায় পৌঁছে অবাক হয়ে গেল সে। উনুনের পাশে হেমলতা ময়দা মাখছেন আর তার মুখোমুখি বসে আছে একদম সাদা একটা বেড়াল। হেমলতা কি এতক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলছিলেন? পিট পিটিয়ে মাধবীলতাকে আবিষ্কার করে হেমলতা বললেন, ও, তুমি। ওখানে কি করছিলে?

বাথরুমে যাব, তাই।

বাথরুমে? এ বাথরুমে কে আসতে বলল তোমাদের?

উনি বলতে গিয়েই থমকে গেল সে। তারপর বলল, ছোটমা।

কেন, ওদিকে তো বাথরুম রয়েছে। তার যা পায়ের অবস্থা এখানে আসতে পারবে? তাছাড়া জল ধরা আছে, ছোঁয়াছুঁয়ি হলে আমার ভাল লাগবে না। তোমার নাম মাধবীলতা?

হ্যাঁ।

তোমার শাশুড়ির নাম জানো?

হ্যাঁ

এদিকে এসো। বলেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাধবীলতা অবাক হয়ে গেল। কথাবার্তা যে খাতে চলছিল আচমকা যেন পাল্টে গেল। সে এক পা এগিয়ে বলল, আমার ট্রেনের জামাকাপড়, বাসি।

ও। এখনও ছাড়োনি কেন? এয়োস্ত্রীর বেশীক্ষণ বাসি কাপড়ে থাকতে নেই তা জানো না। মা বাবা নেই?

মাধবীলতা মাথা নাড়ল, আছেন। গত

অনি যায় তাদের বাড়িতে?

না।

কেন?

মাধবীলতা মুখ ফেরাল। যা সত্যি তাই বলাই ভাল। সে হেমলতার দিকে আবার তাকাল, বিয়ের পর থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

ওমা! সেকি কথা। হেমলতা আর্তনাদ করে উঠলেন! শ্বশুরবাড়ি বাপের বাড়ি দূরে ঠেলে দিয়ে ছিলে এতদিন?

আমি ঠেলে দিইনি। ওঁরাই যোগাযোগ রাখেননি।

তুমি অনিকে খুব ভালবাসো, তাই না?

আর সঙ্গে সঙ্গে মাধবীলতার চিবুক বুকের ওপর নেমে গেল। এতগুলো বছরে যে গোপন সত্যটা তার একদম একার ছিল, যার মুখোমুখি সে কোনদিন হয়নি আজ এই বৃদ্ধা হঠাৎ তাকে যেন টেনে এনে সেখানে দাঁড় করিয়ে দিল। এতক্ষণের হীনম্মন্যতাবোধ যা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরছিল তা এই প্রশ্নের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাঁপিয়ে দিল। ঠোঁট কামড়েও এবার নিজের চোখের জল আর শরীরের কাঁপুনি থামাতে পারল না সে।

হেমলতা হতভম্ব। তারপর ধীরে ধীরে মাধবীলতার সামনে এসে দাঁড়ালেন, বোকা মেয়ে, কাঁদবার কি আছে, বলতে পারছ না ভালবাসি!

মাধবীলতা আর পারল না, কান্নার দমক সামলাতে মাটিতে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ল। হেমলতা ত্রস্তে ওর দুই কাঁধ ধরে টেনে তুলতে চেষ্টা করলেন, ওঠো ওঠো, আরে এমন করে না, নতুন বউ প্রথম দিন বাড়িতে পা দিয়ে কাঁদলে অমঙ্গল হয়। ওঠো।

মাধবীলতার যে সামান্য চেতনা ছিল তাতেই সে সরে যেতে চাইল, আমাকে ছোঁবেন না, আমি এখনও বাসি।

দূর পাগলি। হেমলতা তাঁর ছোট্ট শরীর দিয়ে মাধবীলতাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর হঠাৎ পাগলের মত নিজেই মাধবীলতার শরীরে মাথা ঠুকতে লাগলেন, এতদিন কেন আসিসনি, কেন, কেন?

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x