উত্তরাধিকার সমস্যা
১. ইসহাক ক্রমশঃ বৃদ্ধ হলেন, ক্ষীণ হল তাঁর দৃষ্টিশক্তি – আর কিছু ভাল দেখতে পান না। একদিন তিনি বড় পুত্রকে ডাকলেন, “এষৌ!” এষৌ উত্তর দিল, “আমি এখানে।”
২. ইসহাক বললেন, “আমি বৃদ্ধ হয়েছি। শীঘ্রই মারাও যেতে পারি।
৩. তাই তোমার তীরধনুক নিয়ে শিকারে যাও। আমার খাওয়ার জন্যে একটা কিছু শিকার করে আনো।
৪. আমি ভালবাসি এখন কোনও খাবার তৈরী কর। আমায় খাবার এনে দাও, আমি খাই। মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করে যাই।”
৫. তখন এষৌ শিকার করতে বেরিয়ে গেল। এসব কথা ইসহাক যখন এষৌকে বলছিলেন তখন রিবিকা সব শুনছিলেন।
ইসহাকের সঙ্গে যাকোবের চালাকি
৬. রিবিকা তাঁর প্রিয় পুত্র যাকোবকে বলল, “শোন, তোমার পিতা তোমার ভাই এষৌকে কি বলছিলেন সব শুনেছি।
৭. তোমার পিতা বললেন, ‘আমার খাওয়ার জন্যে একটা জানোয়ার শিকার করে আনো। আমায় রেঁধে দাও, আমি খাই। তাহলে আমি মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করব।”
৮. এখন শোন বাবা, আমি যা বলি তা করো।
৯. আমাদের ছাগলের খোঁয়াড়ে যাও, দুটো ছাগল ছানা নিয়ে এস। তোমার পিতা যেমন মাংস খেতে ভালবাসে তেমন করে আমি রেঁধে দেব।
১০. তারপর সেই খাবার পিতার কাছে নিয়ে যাবে। মৃত্যুর আগে তিনি তোমায় আশীর্বাদ করবেন।”
১১. কিন্তু যাকোব মা রিবিকাকে বলল, “আমার ভায়ের গা ভর্তি লোম। কিন্তু আমার শরীরের ত্বক মসৃণ।
১২. পিতা আমায় ছুঁলেই টের পাবেন যে আমি এষৌ নই। তাহলে পিতা আমায় আশীর্বাদ দেবেন না। বরং অভিশাপ দেবেন। কেন? কেননা আমি তাঁর সঙ্গে চালাকি করতে গিয়েছিলাম।”
১৩. সুতরাং রিবিকা তাকে বলল, “যদি তিনি অভিশাপ দেন তবে তা আমার ওপর আসুক। আমি যেমন বলছি তেমনটি করো। যাও, আমার জন্য ছাগল নিয়ে এস।”
১৪. তখন যাকোব দুটো ছাগল নিয়ে এসে তার মাকে সেগুলি দিল। তার মা ঠিক যেভাবে ইসহাক খেতে ভালবাসেন সেই বিশেষ ভাবে ছাগল দুটো রান্না করলেন।
১৫. তারপর রিবিকা বড় পুত্র এষৌর প্রিয় জামাকাপড় নিলেন।
১৬. আর যাকোবের হাতে ও গলায় লাগিয়ে দিলেন ছাগলের চামড়া।
১৭. তারপর রিবিকা সেই রান্না করা মাংস নিয়ে এসে যাকোবকে দিলেন।
১৮. যাকোব পিতার কাছে গিয়ে ডাকল, “পিতা।” তার পিতা সাড়া দিলেন, “তুমি কে বাবা?”
১৯. যাকোব বলল, “আমি তোমার বড় পুত্র এষৌ। তুমি যেমন বলেছিলে আমি সব তেমনভাবে করে এনেছি। এখন উঠে বসো, তোমার জন্যে যা শিকার করেছি, খাও আগে। আমায় পরে আশীর্বাদ কোরো।”
২০. কিন্তু ইসহাক তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি করে এত তাড়াতাড়ি জানোয়ার শিকার করলে?” যাকোব উত্তর দিল, “কারণ প্রভু, তোমার ঈশ্বর আমাকে জানোয়ারগুলি তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।”
২১. তখন ইসহাক যাকোবকে বললেন, “কাছে এস, বাবা আমি তোমায় ছুঁয়ে দেখি, তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ কিনা।”
২২. সুতরাং যাকোব তার পিতা ইসহাকের কাছে গেল। ইসহাক তার গায়ে হাত বুলিয়ে বলল, “তোমার গলার স্বর যাকোবের মত শোনাচ্ছে, কিন্তু তোমার হাত এষৌর মত লোমশ।”
২৩. ইসহাক বুঝতে পারলেন না যে এ আসলে যাকোব। কারণ তার হাত এষৌর হাতের মতোই লোমশ। সুতরাং ইসহাক যাকোবকে আশীর্বাদ করলেন।
২৪. ইসহাক নিঃসন্দেহ হবার জন্যে আবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ তো?” যাকোব উত্তর দিল, “হ্যাঁ, পিতা, আমিই এষৌ।”
যাকোবকে আশীর্বাদ
২৫. তখন ইসহাক বললেন, “আমাকে আমার পুত্রের শিকার করা পশুগুলির থেকে খাবার এনে দাও। আমি সেটা খেয়ে তোমায় আশীর্বাদ করবো।” তখন যাকোব খাবারটা দিল এবং ইসহাক তা খেলেন। তারপর যাকোব কিছু দ্রাক্ষারস দিলে ইসহাক তা পান করলেন।
২৬. তারপর ইসহাক তাকে বললেন, “কাছে এস, আমায় চুমু দাও।”
২৭. সুতরাং যাকোব তার পিতার কাছে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করল। তখন ইসহাক যাকোবের জামা কাপড়ে এষৌর জামা কাপড়ের গন্ধ পেল এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন। ইসহাক বললেন,“যে প্রান্তর প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য, আমার সন্তান সেই প্রান্তরের গন্ধ বহে।
২৮. তোমাকে প্রভু প্রচুর বৃষ্টি দিন যাতে প্রচুর ফসল আর দ্রাক্ষারস হয়।
২৯. তুমি সকলের সেবা পাবে। বহু জাতি তোমায় সেবা করবে এবং তোমার প্রতি নত থাকবে। ভাই জাতিদের ওপরে তোমার প্রভুত্ব বহাল হবে। তোমার মাতার পুত্রগণ তোমার অধীন হবে এবং তারা তোমার আদেশে চলবে। তোমাকে যারা শাপ দেবে তারা হবে অভিশপ্ত, যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে তারা আশীর্বাদ পাবে।”
এষৌর জন্য “আশীর্বাদ”
৩০. ইসহাক যাকোবকে আশীর্বাদ করা শেষ করলেন। তারপর যেই যাকোব পিতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে চলে গেল অমনি এষৌ ফিরে এল শিকার থেকে।
৩১. পিতা ঠিক যেমন খেতে ভালবাসে ঠিক সেভাবে এষৌ মাংস রাঁধল। তারপর খাবারটা নিয়ে এল পিতার কাছে। পিতাকে সে বলল, “পিতা, আমি তোমার পুত্র। ওঠো, তোমার জন্যে শিকার করে আমি মাংস রেঁধে নিয়ে এসেছি, খাও, তারপরে আমায় আশীর্বাদ করো।”
৩২. কিন্তু ইসহাক জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?” সে উত্তর দিল, “আমি তোমার পুত্র – তোমার বড় পুত্র এষৌ।”
৩৩. তখন ইসহাক মহা উদ্বিগ্ন হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে তুমি আসার আগে কে মাংস রান্না করে এনে দিল আমায়? আমি সমস্ত মাংস খেয়ে তাকে আশীর্বাদ করলাম। এখন সেই আশীর্বাদ ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষেও ঢ়েব দেরী হয়ে গেছে।”
৩৪. এষৌ তার পিতার কথা শুনল। সে খুব ক্রুদ্ধ ও তিক্ত হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। পিতাকে বলল, “তাহলে আমাকেও আশীর্বাদ করো, পিতা!”
৩৫. ইসহাক বললেন, “তোমার ভাই আমার সঙ্গে চালাকি করেছে! সে এসে তোমার আশীর্বাদ নিয়ে গেছে!”
৩৬. এষৌ বলল, “তার নাম যাকোব। ওর জন্যে ঐ নামই ঠিক। আমার সঙ্গে ভাই দুবার চালাকি করল। প্রথমবার কৌশলে সে প্রথম সন্তান হিসেবে আমার যা অধিকার ছিল তার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং এবার আমার প্রাপ্য আশীর্বাদ থেকে আমাকে বঞ্চিত করল।” তারপর এষৌ জিজ্ঞেস করল, “আমার জন্যে কি তোমার আর কোন আশীর্বাদ অবশিষ্ট নেই?”
৩৭. ইসহাক উত্তর দিলেন, “না, তার জন্যে বড় দেরী হয়ে গেছে। আমি তোমায় শাসন করার অধিকারও যাকোবকে দিয়ে ফেলেছি। আমার আশীর্বাদে সে পাবে তার সমস্ত ভাইদের সেবা। আর আমি তাকে প্রচুর শস্য আর দ্রাক্ষারসের জন্যে আশীর্বাদ দিয়েছি। তোমায় আশীর্বাদ করার জন্যে আর কিছু বাকি নেই।”
৩৮. কিন্তু এষৌ আশীর্বাদের জন্যে পিতাকে পীড়াপীড়ি করে বলল, “পিতা তোমার কাছে কি শুধুমাত্র একটিই আশীর্বাদ আছে?” এষৌ কাঁদতে শুরু করল।
৩৯. তখন ইসহাক বললেন, “তুমি কখনও উর্বর জমি পাবে না, তুমি কখনও পর্যাপ্ত বর্ষা পাবে না।
৪০. তোমাকে লড়তে হবে জীবনের জন্যে এবং ভ্রাতার ভৃত্য হবে তুমি। কিন্তু লড়ে তুমি হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মুক্তি পাবে তোমার ভ্রাতার শাসন থেকে।”
৪১. তারপর এই আশীর্বাদের জন্যে এষৌ যাকোবকে ঘৃণা করতে শুরু করল। মনে মনে এষৌ ভাবল, “আমার পিতা শীঘ্রই মারা যাবেন। তার জন্য শোক করার সময় শেষ হবার পরে আমি যাকোবকে হত্যা করব।”
৪২. রিবিকা জানলেন যে এষৌ যাকোবকে হত্যা করার কথা ভাবছে। তিনি যাকোবকে ডেকে পাঠালেন। যাকোবকে তিনি বললেন, “শোন, তোমার ভাই এষৌ তোমায় হত্যা করার কথা ভাবছে।
৪৩. তাই আমি যা বলি তা-ই করো। আমার ভাই লাবন বাস করে হারণে। তার কাছে গিয়ে তুমি লুকিয়ে থাকো।
৪৪. তার কাছে তুমি কিছুদিন থাকো যতদিন না তোমার ভাইয়ের রাগ পড়ে।
৪৫. কিছুদিন পরে তোমার ভাই, তুমি তার প্রতি কি করেছ না করেছ সব ভুলে যাবে। তখন আমি তোমায় ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি ভৃত্য পাঠাব। আমি একই দিনে আমার দু পুত্রকে হারাতে চাই না।”
৪৬. তারপর রিবিকা ইসহাককে বললেন, “তোমার পুত্র এষৌ হিত্তীয়দের কন্যাকে বিয়ে করেছে। এ আমার মোটে ভাল লাগে নি। কেননা তারা আমাদের আপনজন নয়। যাকোবও যদি ঐ মেয়েদের কাউকে বিয়ে করে তাহলে আমি নির্ঘাত মারা যাব।”