বন্যার শুরু
১. তখন প্রভু নোহকে বললেন, “তুমি যে একজন সৎ মানুষ তা আমি লক্ষ্য করেছি। এমনকি এই যুগের দুষ্ট লোকদের মধ্যেও তুমি নিজেকে সৎ রেখেছ। সুতরাং তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে তুমি গিয়ে নৌকোতে ওঠো।
২. পৃথিবীর সমস্ত শুচি পশুপাখীর সাত সাত জোড়া এবং অন্যান্য প্রত্যেক পশুর এক এক জোড়া নাও। এই সমস্ত পশুপাখীদের তুমি ঐ নৌকোতে তোমার সঙ্গে নেবে।
শুচি পশুপাখির… পাখিরা এবং পশুরা যারা বলির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলে ঈশ্বর বলেছিলেন।
৩. সমস্ত রকম পাখীর সাতটি করে জোড়া নেবে। এর ফলে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত পশুপাখী আমি ধ্বংস করে ফেলার পরেও এইসব পশুপাখী সম্পূর্ণভাবে বংশলোপের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
৪. এখন থেকে ঠিক সাতদিন পরে আমি পৃথিবীতে প্রবল বর্ষণ ঘটাবো। ৪০ দিন ৪০ রাত ধরে বৃষ্টি হবে। আমি পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত প্রাণী ধ্বংস করে দেব। যা কিছু আমি সৃষ্টি করেছি, সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”
৫. প্রভু যা যা করতে বললেন, নোহ সে সমস্তই করলেন।
৬. যখন সেই বর্ষন শুরু হল তখন নোহের বয়স ৬০০ বছর।
৭. নোহ এবং তাঁর পরিবার মহাপ্লাবন থেকে পরিত্রাণের জন্যে নৌকোতে প্রবেশ করলেন। নোহের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, তাঁর পুত্রেরা ও পুত্রবধূরা সবাই নৌকোতে ছিলেন।
৮. সমস্ত শুচি ও অশুচি পশুপাখী এবং মাটিতে যারা বুকে হেঁটে চলে সেইসব প্রাণী
৯. নোহের সঙ্গে নৌকোতে গিয়ে উঠল। ঈশ্বর যেমনটি আদেশ করেছিলেন ঠিক তেমনভাবে স্ত্রী ও পুরুষে জুটি বেঁধে সমস্ত পশুপাখী নৌকোতে চড়লে,
১০. সাত দিন পরে শুরু হল প্লাবন। পৃথিবীতে শুরু হলো বর্ষা।
১১-১৩. নোহর ৬০০তম বছরের দ্বিতীয় মাসের ১৭তম দিনে সমস্ত ভূগর্ভস্থ প্রস্রবণ ফেটে বেরিয়ে এল, মাটি থেকে জল বইতে শুরু করল। ঐদিন মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল, বাঁধ ভেঙে গেল এবং সমস্ত পৃথিবী জলপ্লাবিত হলো। সেই একই দিনে প্রচণ্ড বেগে বৃষ্টিপাত শুরু হল যেন আকাশের সমস্ত জানালা খুলে গেল। ৪০ দিন ৪০ রাত ধরে সমানে বৃষ্টি হলো। সেই দিনটিতেই নোহ ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন পুত্র শেম, হাম, যেফৎ আর তাদের তিন স্ত্রী সকলেই নৌকোয় প্রবেশ করল।
১৪. ঐ সব মানুষ আর পৃথিবীর যাবতীয় পশুপাখী নৌকোর মধ্যে আশ্রয় নিলো। সব রকমের গৃহপালিত জন্তু এবং পৃথিবীতে যত রকমের পশুপাখী চলে ফিরে আর উড়ে বেড়ায সবাই নৌকোর ভেতরে নিরাপদে থাকলো।
১৫. সমস্ত জন্তু জানোয়ার, পাখী ইত্যাদি নোহর সঙ্গে নৌকোতে জোড়ায় জোড়ায় থাকল।
১৬. ঈশ্বর যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, নোহ সেই অনুসারে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর এক এক জোড়া নৌকোতে তুললে, প্রভু বাইরে থেকে নৌকোর দরজা বন্ধ করে দিলেন।
১৭. পৃথিবীতে ৪০ দিন ধরে বন্যা চলল। জলের মাত্রা ক্রমশঃ উঁচু হতে লাগল আর সেই নৌকো মাটি ছেড়ে জলের উপরে ভাসতে থাকলো।
১৮. জল বাড়তেই থাকল আর নৌকো মাটি ছেড়ে অনেক উঁচুতে ভাসতে লাগল।
১৯. জল এত বাড়লো যে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো পর্যন্ত ডুবে গেল।
২০. পর্বতগুলোর মাথা ছাপিয়ে জল বাড়তে লাগল। সবচেয়ে উঁচু পর্বতের উপরেও ২০ ফুটের বেশী জল দাঁড়াল।
২১-২২. পৃথিবীর সমস্ত জীব মারা গেল। প্রতিটি পুরুষ ও স্ত্রী এবং পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার মারা পড়ল। সমস্ত বন্য প্রাণী, সরীসৃপ ধ্বংস হয়ে গেল। স্থলচর যত প্রাণী শ্বাস প্রশ্বাস নেয় তারাও মারা গেল।
২৩ এইভাবে ঈশ্বর পৃথিবীকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেললেন। পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত অস্তিত্ব ধ্বংস করে ফেললেন। সমস্ত মানুষ, সমস্ত জন্তু জানোয়ার, বুকে হাঁটা সমস্ত প্রাণী এবং সমস্ত পাখী এই সব কিছুই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। নোহ আর নোহের পরিবার পরিজন এবং নৌকোতে আশ্রয় পাওয়া পশুপাখী – কেবলমাত্র এইসব প্রাণের অবশেষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকলো।
২৪. একটানা ১৫০ দিন পৃথিবী বিপুল জলরাশিতে ডুবে থাকলো।