মৌসুমী প্রসঙ্গে গণমাধ্যম
১৯৮৯-এ রকেট গতিতে প্রচারের ব্যাপকতা পেয়ে দেশ-বিদেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল পশ্চিমবাংলার রুক্ষ জেলা পুরুলিয়ার এক সাত বছরের বালিকা মৌসুমী। অবাক মেয়ে মৌসুমী যে ‘Prodigy’ অর্থাৎ ‘পরম বিস্ময়কর প্রতিভা’, এই বিষয়ে প্রচার মাধ্যমগুলো সহমত পোষণ করলেও, কত বড় মাপের ‘প্রডিজি’ এটা প্রমাণ করতে দস্তুর মত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যেন, যে পত্র-পত্রিকা বা প্রচার-মাধ্যম মৌসুমীকে যত বড় প্রডিজি বলে প্রমাণ হাজির করতে পারবে, তার তত সুনাম, সম্মান ও বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পাবে। সেই সময় মৌসুমী সম্বন্ধে প্রচার মাধ্যমগুলোর বক্তব্য কি ধরনের ছিল সেটা বোঝাতে বহু থেকে গুটিকয়েক উদাহরণ এখানে হাজির করছি।
১৩ আগস্ট ৮৯-এর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদক বিমল বসুর প্রতিবেদন প্রকাশিত হল “বুদ্ধিতে যে প্রতিভার ব্যাখ্যা নেই” শিরোনামে। প্রতিবেদক বিজ্ঞান লেখক হিসেবে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিচিত। সাতটি ছবি সহ প্রচুর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শুরুতেই বড় বড় হরফে লেখা ছিল, “অল্প বয়সে অসামান্য বিদ্যাবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি হইচই ফেলে দিয়েছে পুরুলিয়ার মৌসুমী।“ লেখাটিতে শ্রীবসুর স্পষ্ট ঘোষণা- “মৌসুমী এক বিস্ময় বালিকা। এককথায় প্রডিজি। এখন তার বয়স ঠিক সাত। কিন্তু ইতিমধ্যেই বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি – এই তিনটি ভাষায় যেমন বিস্ময়কর তার দক্ষতা, তেমনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ইত্যাদি বিষয়েও সে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।“
ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, “কলকাতা পাভলভ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা ডি এন গাংগুলী বিস্ময় বালিকা মৌসুমী সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর রাখেন। তাঁর এক ছাত্রকে পাঠিয়েও ছিলেন আদ্রায় মৌসুমীর সঙ্গে কথা বলতে। শ্রীগাংগুলীর মতে, মৌসুমীর তীক্ষ্ম বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তির পিছনে আছে সম্ভবত বহু প্রজন্ম পূর্বের কোনও সুপ্ত জিন, এই মেয়েটির মধ্যে যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।“
প্রতিবেদনটিতে ডি এন গাংগুলীর মতামত হিসেবে আরও প্রকাশিত হয়েছে, “মৌসুমীর বুদ্ধির যে স্তর তাতে তার জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা চাই। বিদেশে, বিশেষত আমেরিকায় উচ্চবুদ্ধির ছেলেমেয়েদের বাছাই করে তাদের জন্য বিশেষ ধরনের পাঠক্রম ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।“
প্রতিবেদনটিতে প্রতিবেদক জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং মিস্তিষ্কবিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডঃ জে জে ঘোষ আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, “মৌসুমীর মত প্রজিডির সন্ধান পাওয়া সত্ত্বেও এখানকার বিজ্ঞানীরা ওকে নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না, সিরিয়াস গবেষণার কথা ভাবছেন না।“
জনপ্রিয় পাক্ষিক ‘সানন্দা’র ৭ সেপ্টেম্বর ৮৯ সংখ্যায় মৌসিমীকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ কাহিনী “বিশেষ রচনা” প্রকাশিত হয়। শিরোনামে ছিল ‘অবাক পৃথিবীর অবাক মেয়ে।‘ আটটি রঙ্গিন ছবিতে সাজান এই বিশেষ রচনার রচয়িতা সুজন চন্দ মৌসুমীর ইংরেজি উচ্চারণ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, “সেই তুলনায় বাংলা উচ্চারণ ততটা ভাল নয়। কিছুটা আঞ্চলিক টান আছে তাতে। তবে হিন্দি উচ্চারণে বেশ মুন্সিয়ানা আছে।“
মৌসুমীর টাইপের স্পিড সম্বন্ধে বলতে গিয়ে শ্রীচন্দ জানাচ্ছেন, “ও যেভাবে দ্রুত টাইপ করছিল তাতে হলফ করেই বলা যায় স্পিড কম করেও ৪৫। চমৎকার ফিঙ্গারিং।“
প্রতিবেদক আরও জানিয়েছেন, শুধু জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, বুদ্ধির ও রাজনীতির পরীক্ষাতেও মৌসুমী পাকা ডিপ্লোমেট। মৌসুমী এখন গবেষণা করছে কয়লাকে সালফার মুক্ত করা নিয়ে। এ কাজে সফল হলে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত হবে পৃথিবী। মৌসুমীর ধারণা ও সফল হবেই, নোবেল প্রাইজ পাবে ওর সাড়ে ন’বছর বয়সের মধ্যেই।
জনপ্রিয় বাংলা মাসিক ‘আলোকপাত’ মৌসুমীকে নিয়ে প্রচ্ছদকাহিনী প্রকাশ করে সেপ্টেম্বর ৮৯ সংখ্যায়। শিরোনাম- “বিস্ময় বালিকা মৌসুমীঃ সাত বছরের সরস্বতী”, সঙ্গে ছিল আধ ডজন ছবি। প্রতিবেদনটির শুরুতেই বড় বড় হরফে লেখা ছিল-
“আদ্রা রেলশহরের ৭ বছরের
মৌসুমী চক্রবর্তী বাংলা, হিন্দী,
ইংরাজি ভাষায় সারা বিশ্বের রাজনীতি,
সামজনীতি, অর্থনীতি, অধ্যাত্মবাদ এবং বিজ্ঞান
বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এবং পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা
পর্ষদ থেকে ৯ বছর বয়সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবার
অনুমতি পেয়ে ‘বিস্ময় বালিকা’ হিসেবে নিজেকে
প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিস্ময়বালা মৌসুমীর
এই জীবন কাহিনী পেশ করা হল তার সঙ্গে
দুদিনব্যাপী দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা ধরে নেওয়া
ইন্টারভিউ-এর প্রেক্ষাপটে।“
শিরোনামে মৌসুমীকে কেন সরস্বতী বলা হয়েছে, তারই উত্তর মেলে মৌসুমীর মা শিপ্রাদেবীর কথায়। প্রতিবেদকের ভাষায় শিপ্রাদেবী জানান, মৌসুমীর জন্মের আগে এক আশ্চর্য অনুভূতি মাঝে মধ্যে গ্রাস করে ফেলত শিপ্রাদেবীকে। শিপ্রাদেবী তা স্বামীকেও বলতেন। মাতৃগর্ভে মৌসুমীর আসার আগে শিপ্রাদেবী এক রাত্রে স্বপ্নে দেখেন তাঁর আরাধ্য দেবী লক্ষ্মী শ্বেতবর্ণা রূপ নিয়ে অনেক দূরের থেকে হেঁটে আসছেন তাঁর দিকে। স্বপ্নের মধ্যেই তিনি দেখলেন কোলের কাছে আসামাত্রই অদৃশ্য হয়ে গেলেন।“
শিপ্রাদেবীর এই স্বপ্নের কথা পাঠকরা ‘খেয়েছিলেন’ ভাল, যুক্তিটা তাদের অনেকেরই মনে ধরেছিল- স্বয়ং সরস্বতী ভর না করলে এমন বিদ্যে-বুদ্ধি কি এই বয়সে হওয়া সম্ভব?
প্রতিবেদক আরও জানিয়েছেন, “মৌসুমীর সঙ্গে বর্তমান প্রতিবেদক দু-দফায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা সাক্ষাৎকার করেন। সেই সাক্ষাৎকারে সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিত্রকলা, আধ্যাত্মবাদ কিছুই বাদ ছিল না। আর প্রতিটি আলোচনাতেই মৌসুমী এই প্রতিবেদকের জ্ঞানের সীমারেখা থেকে অনেক উঁচুতে থেকে সব উত্তর দিয়েছেন।“ …”সাত বছরের মৌসুমী টাইপেও সিদ্ধহস্ত। ওর সমস্ত রিসার্চ পেপার ও নিজেই টাইপ করে। টাইপে ওর স্পিড ইংরাজিতে ৯০ এবং বাংলায় ৪০। মৌসুমী খুব ভাল গানও গাইতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, রাগপ্রধান দুধরনেরই।“
আরও বহু পত্র-পত্রিকার মত এই পত্রিকাতেও ঘুরে ফিরে মৌসুমীর রিসার্চের কথা এসেছিল। প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, মৌসুমীর বাবা “সাধনবাবুর ব্যবহার খুবই আন্তরিক। আমাদের জন্য চা পর্বের ব্যবস্থা করে এসে জানালেন – মৌসুমী একটু রিসার্চের কাজ করছে। আধঘণ্টা পরেই আসবে।
রিসার্চ? চমকে উঠলাম, সাত বছরের মেয়ে রিসার্চ করছে- সে আবার কি? মনের ভাব গোপন রেখে বললাম, – রিসার্চ? আপনার মেয়ে রিসার্চও করে নাকি?
-হ্যাঁ, তবে বিষয়টা বলতে পারব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, যে বিষয়টা নিয়ে ও রিসার্চ করছে সেটা অবশ্যই মানব কল্যাণের পক্ষে।
-মৌসুমী বহুবারই বলেছে সে ডাক্তার হতে ভালবাসে। তা এই রিসার্চ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন কাজে লাগবে?
-বললাম তো, ওর রিসার্চ সফল হলে ভারতের মর্যাদা বিশ্বের দরবারে বেড়ে যাবে। আর এই রিসার্চ এতো গোপনীয় রাখার কারণ হল, বিষয়টি এতই নতুন এবং প্রয়োজনীয় যে খবর বাইরে গেলে আমরা বিপদে পড়ে যেতে পারি।“
-আচ্ছা, এর আগে মৌসুমী কি কোন বিষয়ের উপর রিসার্চ করেছে?
-কয়লার ওপর কাজও করেছে। তবে সেটা উল্লেখ করার মত নয়। আর সে ব্যাপারটায় ওকে আগাতে দেইনি। এই বড় কাজটির দিকে তাকিয়ে। আসানসোল বি ই কলেজের ওধ্যাপকরা ওকে নিয়ে এখানে একবার একটা গ্রুপ ডিসকাশন করেছিলেন।“
মৌসুমী রিসার্চ করছে। অর্থাৎ ওর জ্ঞান বিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রীর সীমাকে অতিক্রম করেছে এবং আর আড়াই বছরের মধ্যে বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবে এই বিশ্বাস বহু বঙ্গবাসী ও ভারতবাসীকে প্রাণীত করেছিল, গর্বিত করেছিল।
৩০ জুলাই ১৯৮৯। দিল্লির দূরদর্শনের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের ইংরেজি সংবাদে প্রায় দুমিনিট ধরে নানাভাবে মৌসুমীকে হাজির করা হল কোটি কোটি দর্শকের কাছে। মানুষ দেখলেন, পরিচিত হলেন ‘ওয়ান্ডার গার্ল’-এর বিস্ময়কর প্রতিভার সঙ্গে।
এরও দু’বছর আগে আমরা একটু পিছিয়ে গেলে মন্দ হয় না। ‘দ্যা স্টেটসম্যান’ দৈনিক পত্রিকা ২১ এপ্রিল ৮৭ মৌসুমীর এক বিশাল ছবি সহ দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, “Wonder girl of Purulia Village”। প্রতিবেদক অলোকেশ সেন। তখন মৌসুমীর বয়স মাত্র চার বছর আট মাস।
প্রতিবেদক মৌসুমী প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, “Mousumi’s interest in studies became evident when she was only onek and a half years old. Since then she has learnt to read, write and speak in Bengali, Hindi and English. At present, she is learning German at home.”
অর্থাৎ, মৌসুমীর পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ সূচিত হয় মাত্র দেড় বছর বয়সে। তারপর ও বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি পড়তে, লিখতে ও বলতে শিখেছে। বর্তমানে বাড়িতেই জার্মান শিখছে।
প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে মৌসুমী টাইপ করছে। ছবির তলায় লেখা- Mousumi Chakraborty typing out some paragraph from one of her text books.
সমাজ সচেতন বিজ্ঞান মনস্ক বলে স্ববিজ্ঞাপিত মাসিক পত্রিকা ‘উৎস মানুষ’ আগস্ট ৮৭ সংখ্যায় মৌসুমীকে নিয়ে প্রচ্ছদকাহিনী করলেন, ছবি শ।শিরোনাম ছিল, “পুরুলিয়ার আশ্চর্য মেয়ে মৌসুমী।“ প্রতিবেদক অভিজিৎ মজুমদার।
পাঠকরা একটু লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবার সময়ও মৌসুমী পাঁচের কোঠায় পা দেয়নি। প্রতিবেদক অবশ্য জানাচ্ছেন সাড়ে চার বছরের মৌসুমীকে ধানবাদের সেন্ট্রাল ফুয়েল রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীরা “অজস্র প্রশ্ন করেছে ইংরাজি, বাংলা বা হিন্দীতে। যেমন, সালফিউরিক বা নাইট্রিক অ্যাসিডের সাংকেতিক নাম কিংবা কয়লা গবেষণা বিষয়ে নানা জটিল উত্তর দিয়ে সবাইকে অবাক করেছে।“ সেই সঙ্গে প্রতিবেদক এও জানিয়েছেন, এত সব উত্তর দিচ্ছে- “যদিও সব কথা এখনো স্পষ্ট নয়।“ সত্যিই তো সাড়ে চার বছর আধো-আধো কথা বলারই বয়স।
উত মানুষ আরও জানাচ্ছে, “বিস্ময়ের ব্যাপার, মৌসুমী টাইপ মেশিনে অনায়াসে টাইপ করতে পারে নির্ভুল ফিঙ্গারিং-এ প্রায় ৪০স্পিড-এ।“ …”এই শেষ নয়। মৌসুমী জানে বাংলা ব্যাকরণ, ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানের নানা কথা। অঙ্কের অনেক ফর্মুলাই ওর ঠোঁটের ডগায়। অনুবাদ করতে পারে বাংলা, ইংরাজি বা হিন্দীতে। সম্প্রতি ও জার্মান ভাষা শিখছে।“ …”মৌসুমীর মাও খুব ভাল ছাত্রী ছিলেন।“ আর মৌসুমীর বাবা? প্রচার মাধ্যমগুলোর কল্যাণে তাও কারোই অজানা ছিল না। তিনি ছিলেন জুনিয়র সাইন্টিস্ট।
মৌসুমীকে নিয়ে গণ-উন্মাদনার মতই এক ধরনের প্রচার উন্মাদনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবং তা প্রভাবিত করেছিল বিভিন্ন পেশার মানুষকে। ফলশ্রুতিতে আমি এবং আমার সমিতি প্রচুর চিঠি পেয়েছি। চিঠিগুলো এসেছিল মৌসুমীর বিষয়ে বিভিন্ন রকম কৌতূহল নিয়ে, দ্বন্দ্ব নিয়ে, বিভ্রান্তি নিয়ে, জিজ্ঞাসা নিয়ে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত অগুনতি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মৌসুমীকে নিয়ে হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই চলেছি। প্রশ্নগুলি মোটামুটি এই জাতীয় – মৌসুমীর এই পরম বিস্ময়কর প্রতিভার ব্যাখ্যা কি? বাস্তবিকই কি মৌসুমী পরম বিস্ময়কর প্রতিভা? মৌসুমী কি তবে জাতিস্মর? অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারিণী? ও কি মানুষের ভুত-ভবিষ্যৎ বলতে সক্ষম? ওর মধ্যে বাস্তবিকই কি ঈশ্বরের প্রকাশ ঘটেছে? মা লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে ঘিরে মৌসুমীর মা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, মৌসুমীর প্রতিভা কি সেই স্বপ্নেরই বাস্তবরূপ নেওয়ার প্রমাণ নয়? মৌসুমী কি লক্ষ্মী ও সরস্বতীরই অংশ? স্বয়ং সরস্বতী মৌসুমীর জিবের ডগায় না থাকলে মুখে ভালমত বুলি ফোটার আগেই কি করে গবেষণা করে, বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানের পরিচয় দিয়ে পরীক্ষক গুণীজনদের হতবাক করে দেয়?
এরই পাশাপাশি অন্য ধরনের প্রশ্নও এসেছে- মৌসুমী ৯১-তে মাধ্যমিক দেবে, অর্থাৎ ওর বিদ্যে বুদ্ধি ক্লাস নাইনের মানের। অথচ অনেক পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে মৌসুমী গবেষণা করছে বিজ্ঞান নিয়ে। ওর বিদ্যে-বুদ্ধি অনার্স গ্র্যাজুয়েট স্তরের। ইংরেজি টাইপের স্পিড কেউ বলছেন কম করে ৪৫, কেউ ৬০, কেউবা ৯০। বাংলায় টাইপ করছে ৪০ স্পিডে। কখনো জানা যাচ্ছে মৌসুমী বিজ্ঞানী হতে ইচ্ছুক, কখনো জানা যাচ্ছে ডাক্তার হতে চায়। কোন প্রতিবেদক লিখলেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সিনেমা, রাজনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, চিত্রকলা, অধ্যাত্মবাদ, নিয়ে প্রতিটি আলোচনাতেই মৌসুমী প্রতিবেদকের জ্ঞানের সীমারেখা থেকে অনেক উঁচুতে থেকে সব উত্তর দিয়েছে। কেউ জানাচ্ছেন, মৌসুমী সাড়ে ন’বছর বয়সেই গবেষণার ফসল হিসেবে আনবে নোবেল পুরস্কার। বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি তিনটি ভাষাতেই বিস্ময়কর তার দক্ষতা। জানে ডাচ, জার্মান। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত সবেই ওর অগ্রগতি বিস্ময়কর। স্বভাবতই বহু জনের কাছেই বিরাট জিজ্ঞাসা – মৌসুমীর শিক্ষার প্রকৃত মান কি? আর এইসব জিজ্ঞাসারই মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে বার বার এবং তা শুধু সেমিনারে নয়, বিয়ের বাড়িতে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, অফিসে, সহযোগী বিজ্ঞানকর্মীদের কাছে, সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে। একাধিক সংবাদ পত্রের প্রতিনিধি এই বিষয়ে আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। প্রত্যেককেই বিনীতভাবে জানিয়েছিলাম, “এখনো মৌসুমীকে দেখিনি, মৌসুমীর মুখোমুখি হইনি। তাই মৌসুমীর বিষয়ে কোন কিছু মন্তব্য করা আমার পক্ষে অসম্ভব।“ জনৈক সাংবাদিক কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নাম জানিয়ে বলেছেন, এঁরা প্রত্যেকেই মৌসুমীকে পরীক্ষা না করেই তো মতামত জানিয়েছেন। বলেছিলাম, ওঁরা আপনাদের বা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য কারও মাধ্যমে মৌসুমীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে মতামত জানাব্র যে ক্ষমতা রাখেন আবার সে ক্ষমতা নেই। এই অক্ষমতা বিনীতভাবে স্বীকার করে নিয়েই জানাচ্ছি, মৌসুমীকে নিয়ে পরীক্ষা না করে কোন মন্তব্য করতে আমি অপারগ।“
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ২য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ কিছু কথাঃ যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে
একঃ ভূতের ভর
♦ ভূতের ভরঃ বিভিন্ন ধরন ও ব্যাখ্যা
♦ গুরুর আত্মার খপ্পরে জনৈকা শিক্ষিকা
♦ প্রেমিকের আত্মা ও এক অধ্যাপিকা
ভূতে পাওয়া যখন ম্যানিয়াস ডিপ্রেসিভ
♦ সবার সামনে ভূত শাড়ি করে ফালা
♦ গ্রামে ফিরলেই ফিরে আসে ভূতটা
♦ একটি আত্মার অভিশাপ ও ক্যারেটে মাস্টার
দুইঃ পত্র পত্রিকার খবরে ভূত
♦ ট্যাক্সিতে ভূতের একটি সত্যি কাহিনী ও এক সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
♦ এক সত্যি ভূতের কাহিনী ও এক বিজ্ঞানী
♦ বেলঘরিয়ার গ্রীন পার্কে ভূতুরে বাড়িতে ঘড়ি ভেসে বেড়ায় শূন্যে
♦ দমদমের কাচ-ভাঙ্গা হল্লাবাজ-ভূত
তিনঃ যে ভূতুরে চ্যালেঞ্জের মুখে বিপদে পড়েছিলাম
চারঃ ভূতুরে চিকিৎসা
♦ ফিলিপিনো ফেইথ হিলার ও ভূতুরে অস্ত্রোপচার
♦ ফেইথ হিলার ও জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)
♦ পরকাল থেকে আসা বিদেহী ডাক্তার
♦ বিদেহী ডাক্তার দ্বারা আরোগ্য লাভ
♦ ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতার ভূতুরে চিকিৎসা
পাঁচঃ ভূতুরে তান্ত্রিক
♦ গৌতম ভারতী ও তাঁর ভূতুরে ফটোসম্মোহন
♦ ভূতুরে সম্মোহনে মনের মত বিয়েঃ কাজী সিদ্দীকির চ্যালেঞ্জ
ছয়ঃ ডাইনি ও আদিবাসী সমাজ
বাঁকুড়া জেলা হ্যান্ডবুক, ১৯৫১ থেকে
♦ ডাইনি, জানগুরু প্রথার বিরুদ্ধে কি করা উচিৎ
♦ ডাইনি হত্যা বন্ধে যে সব পরিকল্পনা এখুনি সরকারের গ্রহণ করা উচিৎ
♦ জানগুরুদের অলৌকিক ক্ষমতার রহস্য সন্ধানে
সাতঃ আদিবাসী সমাজের তুক-তাক, ঝাড়- ফুঁক
♦ ‘বিষ-পাথর’ ও ‘হাত চালান’এ বিষ নামান
আটঃ ঈশ্বরের ভর
♦ ঈশ্বরের ভর কখনো মানসিক রোগ, কখনো অভিনয়
♦ কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’ইয়ের মেলায় ভর
♦ হাড়োয়ার উমা সতীমার মন্দিরে গণ-ভর
♦ আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
♦ একই অঙ্গে সোম-শুক্কুর ‘বাবা’ ও মা’য়ের ভর
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমী’র মধ্যে সরস্বতীর অধিষ্ঠান (?) ও প্রডিজি প্রসঙ্গঃ
♦ প্রডিজি কি? ও কিছু বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা
♦ বংশগতি বা জিন প্রসঙ্গে কিছু কথা
♦ বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথা
♦ দুর্বল স্মৃতি বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে
♦ মানবগুণ বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব জীবনে সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমীর রহস্য সন্ধানে
♦ বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মহম্মদ আলি শূন্যে ভাসেন আল্লা-বিশ্বাসে!